সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র সব কেন ঘুরছে ? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
267 বার দেখা হয়েছে
"জ্যোতির্বিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (4,210 পয়েন্ট)

3 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (4,210 পয়েন্ট)
সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র ঘোরার মূল কারণ মহাকর্ষ বল। এ আকর্ষণের জন্যই পৃথিবী ঘুরছে সূর্যের চারপাশে, চাঁদ ঘুরছে পৃথিবীর চারপাশে...। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ শক্তির এমন কি জাদু আছে, যা দিয়ে সে মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে এভাবে ঘোরাচ্ছে? সেটাই আজ বোঝার চেষ্টা করব।

বলা হয়, গাছ থেকে মাটিতে আপেল পড়তে দেখে বিজ্ঞানী নিউটনের মনে প্রশ্ন দেখা দেয় এবং তিনি মাধ্যাকর্ষণ বলের সূত্র আবিষ্কার করেন। আসলে ব্যাপারটি সে রকম নয়। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন শ বছর আগে ১৬৬৫ থেকে ১৬৬৬ সালে ইউরোপে মারাত্মক প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লে আইজ্যাক নিউটন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ থেকে নিজের বাড়ি লিঙ্কনশায়ারে চলে আসেন। সেখানে অলস মুহূর্ত কাটানোর সময় তিনি উপলব্ধি করেন, মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে। এটাই মাধ্যাকর্ষণ (মহাকর্ষ) বল, যা নির্ভর করে বস্তুগুলো কত বড় এবং পরস্পর থেকে কত দূরে তার ওপর।

মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে পৃথিবীসহ সৌর পরিবারের সদস্যরামহাকর্ষ বলের প্রভাবে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে পৃথিবীসহ সৌর পরিবারের সদস্যরা
নিউটনের সূত্র অনুযায়ী, তুমি যদি সূর্যকে নড়িয়ে দাও, তাহলে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবীও নড়ে উঠবে। কারণ, এরা একে অপরের সঙ্গে মহাকর্ষ বলের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সূত্রমতে, এই বল মহাশূন্যে অবস্থিত দুটি বস্তু পরস্পরের ওপর এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে তাত্ক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে। পাশাপাশি এটা যে শুধু আলোর গতির চেয়েও বেশি দ্রুত কাজ করে তাই নয়, এর গতি অসীম!

সেকালে নিউটনের এই আবিষ্কার ছিল যুগান্তকারী। এর আগে সবাই দেখেছে মহাবিশ্বের গ্রহ-নক্ষত্র ও অন্যান্য বস্তু একে অপরের চারদিকে ঘুরছে। একে অপরকে আকর্ষণের কারণেই যে ঘুরছে সেটা সবাই বুঝত। কিন্তু কীভাবে এই আকর্ষণশক্তি কাজ করে, সেটা তখন পর্যন্ত জানত না। নিউটনই প্রথম এর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন এবং গাণিতিক সূত্রও আবিষ্কার করেন।

কিন্তু দুটি প্রশ্ন থেকে যায়। প্রথমত, সূর্যের তো কোনো হাত-পা নেই বা দড়ি দিয়ে সে পৃথিবীকে বেঁধে রাখছে না। তাহলে নয় কোটি ত্রিশ লাখ মাইল দূর থেকে সূর্য কীভাবে পৃথিবীকে টানছে, কীভাবে মহাকর্ষ বল কাজ করছে? আরেকটি প্রশ্ন হলো, এই আকর্ষণ বল তাত্ক্ষণিকভাবে ক্রিয়াশীল হয় বটে, কিন্তু সেটা কি আলোর গতির চেয়েও দ্রুততর গতিতে কাজ করে?

এ দুটি প্রশ্নের উত্তর বের করেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। নিউটনের প্রায় আড়াই শ বছর পর তিনি স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি আবিষ্কার করেন। এর মাধ্যমে আইনস্টাইন দেখান, মহাজগতে বস্তুগুলো পারিপার্শ্বিক মহাশূন্যকে (স্পেস) এমনভাবে প্রভাবিত করে, যার মাধ্যমে মহাকর্ষ বল ক্রিয়াশীল হয়। তিনি এটাও আবিষ্কার করেন যে বিশ্বের কোনো কিছুই আলোর গতির চেয়ে দ্রুততর গতিতে চলতে পারে না।

তাহলে নিউটনের সূত্রের সঙ্গে আইনস্টাইনের এই তত্ত্বের একটু গরমিল দেখা গেল। নিউটনের সূত্র সৌরজগতের ক্ষেত্রে যে ঠিক তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু নিউটন নিজেও ব্যাখ্যা করতে পারেননি কীভাবে মহাকর্ষ বল এত দূর থেকে একে অপরকে আকর্ষণ করে। এই ব্যর্থতার বিষয়টি তিনি তাঁর একটি লেখার ফুটনোটে উল্লেখও করে গেছেন। কিন্তু প্রায় দুই শ বছর পর্যন্ত সেটা সবার অজানাই ছিল। আইনস্টাইনই প্রথম বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন।

শেষ পর্যন্ত আইনস্টাইন এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, মহাকর্ষ বল নিশ্চয়ই মহাশূন্যের দ্বারাই প্রযুক্ত হয়। কিন্তু কীভাবে, সেটাই প্রশ্ন। ১৯১৫ সালে তিনি এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গাণিতিক সূত্র উপস্থাপন করেন। তাঁর চমত্কার ব্যাখ্যাটি হলো এ রকম: মহাশূন্যে সূর্য ও পৃথিবীর মতো বস্তুগুলোর প্রভাবে তাদের চারপাশের মহাশূন্য (স্পেস) বক্রাকার (কার্ভ) ধারণ করে। মহাশূন্যের এই বাঁকানো আকৃতির কারণে তার পাশ দিয়ে অতিক্রমের সময় অন্য বস্তুর গতিপথ প্রভাবিত হয়। এভাবে মহাশূন্যের মধ্য দিয়ে মহাকর্ষ বল কাজ করে।

সূর্যের ভরের প্রভাবে তার চারপাশের স্পেস বেঁকে যায়। সে কারণে দূরের নক্ষত্রকেও আমরা সঠিক অবস্থানে দেখতে পাই না
আইনস্টাইনের এই আবিষ্কার নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ বলের সূত্রকে পূর্ণতা দান করে। আইনস্টাইন তখন বার্লিনে একজন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছিলেন। তাঁকে প্রুশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এ সময় স্ত্রী মিলেভা ম্যারিকের সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দুই সন্তান নিয়ে স্ত্রী চলে যান জুরিখে। এই দুঃসময় অবশ্য তাঁকে একটি বিরল সুযোগও এনে দেয়। তিনি দিনরাত কাজ করে যান। এভাবে ১৯১৫ সালের ২৫ নভেম্বর বার্লিনে প্রুশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সে স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটির গাণিতিক সূত্র পরিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করেন। এ সূত্রের মাধ্যমে মহাকর্ষ বল সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানা ও বোঝা সম্ভব হয়। এই তো গত বছর নভেম্বরে আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির শতবর্ষ পূর্ণ হয়।

মহাশূন্যের মধ্য দিয়ে মহাকর্ষ বল কীভাবে কার্যকর হয় তার একটি ব্যাখ্যা আমরা এভাবে দিতে পারি। ধরা যাক, একটি সমতল পিঠের কাঠের খণ্ডের ওপর দিয়ে একটা মার্বেল গড়িয়ে দিলাম। তাহলে মার্বেলটি সোজা পথে গড়িয়ে যাবে। এদিক-ওদিক বাঁকাবে না। কিন্তু যদি পানিতে ভিজে সেই কাঠের খণ্ডটির উপরিতল আঁকাবাঁকা হয়ে যায়, তাহলে মার্বেলটি আর সোজা গড়িয়ে যাবে না, আঁকাবাঁকা পথে চলবে। ঠিক সে রকম, মহাশূন্যে কোনো বস্তুর প্রভাবে চারপাশের স্পেস যখন বক্রাকার ধারণ করে, তখন সেই স্পেস দিয়ে অতিক্রমের সময় অন্য বস্তুও বক্রাকার পথেই চলে। এ জন্যই সূর্যের চারদিকে পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে ঘুরছে। এভাবেই মহাকর্ষ বল এত দূর থেকেও পৃথিবীর গতিপথকে প্রভাবিত করছে।

আইনস্টাইনের স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভি এটাও প্রমাণ করে যে, বিশ্বের কোনো বস্তুর গতি আলোর গতির চেয়ে বেশি হতে পারে না। এর গাণিতিক প্রমাণও তিনি দেন।

আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী, দূরের কোনো তারার আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে হলে সূর্যের পাশ দিয়ে আসার সময় বাঁকা পথে ঘুরে আসতে হবে। এটা ঠিক কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দিনের বেলা তো আকাশের তারা দেখা যায় না। তাহলে কীভাবে পরীক্ষা করে দেখা যাবে যে তারার আলো বাঁকা পথ ঘুরে আসে কি না?

বিজ্ঞানীরা ভেবে দেখলেন, এটা পরীক্ষা করা সম্ভব সূর্য গ্রহণের সময়। তখন চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। তাতে সে সময় তারার আলোর গতিপথ পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু পরবর্তী সূর্যগ্রহণের তারিখ ছিল ২৯ মে, ১৯১৯। একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিজ্ঞানীরা সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন। নির্দিষ্ট দিনে সূর্যগ্রহণের সময় বিজ্ঞানীরা ব্রাজিল, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল প্রভৃতি স্থান থেকে পূর্ণ সূর্যগ্রহণের ছবি তোলেন। তাঁরা দেখতে পেলেন, সূর্যের পাশ দিয়ে দূরের তারার আলো বাঁকা পথে ঘুরে আসছে। এতে প্রমাণিত হলো, আইনস্টাইনের তত্ত্ব সঠিক। এভাবে আইনস্টাইনের যুগান্তকারী আবিষ্কার জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি বাস্তবে প্রমাণিত হয়। আর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন।

- প্রথম আলো
0 টি ভোট
করেছেন (28,740 পয়েন্ট)
সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র ঘোরার মূল কারণ মহাকর্ষ বল। এ আকর্ষণের জন্যই পৃথিবী ঘুরছে সূর্যের চারপাশে, চাঁদ ঘুরছে পৃথিবীর চারপাশে...। ... কারণ, এরা একে অপরের সঙ্গে মহাকর্ষ বলের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সূত্রমতে, এই বল মহাশূন্যে অবস্থিত দুটি বস্তু পরস্পরের ওপর এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে তাত্ক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে।
0 টি ভোট
করেছেন (8,570 পয়েন্ট)
মহাকর্ষের কারণে নক্ষত্র গ্রহগুলোকে আকর্ষণ করে। আর গ্রহগুলো যেহেতু গতিশীল, কিন্তু অপরদিকে মহাকর্ষ গ্রহগুলোকে টানছে। ফলে গ্রহ নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরতে থাকে।

এখানে গ্রহগুলো নক্ষত্রে মহাকর্ষের কারনে পতিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিবারই নক্ষত্রটিকে মিস করে যাচ্ছে। তাই নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহটি ঘুরতে থাকে।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+7 টি ভোট
1 উত্তর 159 বার দেখা হয়েছে
+8 টি ভোট
1 উত্তর 160 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
3 টি উত্তর 170 বার দেখা হয়েছে

10,723 টি প্রশ্ন

18,367 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

241,082 জন সদস্য

92 জন অনলাইনে রয়েছে
3 জন সদস্য এবং 89 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Ayon Ratan Agni

    390 পয়েন্ট

  2. Al Moyaj Khondokar

    210 পয়েন্ট

  3. Vuter Baccha

    150 পয়েন্ট

  4. Hasan rafi

    140 পয়েন্ট

  5. Mehedi_Bknowledge

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি প্রাণী স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া শীতকাল গরম কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ মস্তিষ্ক শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন গ্রহ রসায়ন তাপমাত্রা উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা পাখি গ্যাস মন সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম বিড়াল কান্না নাক
...