আপনি যদি একটি প্লেন চালিয়ে সূর্যের দিকে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে উড়তে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য সূর্যাস্ত হবে কি না, সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার গতি, অবস্থান (অক্ষাংশ), উচ্চতা, এবং পৃথিবীর আবর্তনগতির সাথে আপনার আপেক্ষিক গতির পার্থক্যের উপর। পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার নিজের অক্ষরেখা ঘুরে, এবং এই ঘূর্ণনের ফলেই আমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখি। নিরক্ষরেখায় এই ঘূর্ণনের স্পিড প্রায় ১,৬৭০ কিমি/ঘণ্টা। যদি আপনি এই গতির সমান বা তার চেয়ে বেশি গতিতে সূর্যের দিকে (পশ্চিমে) উড়তে পারেন, তাহলে আপনি সূর্যাস্তকে এড়িয়ে যেতে পারবেন।
উদাহরণ হিসেবে ধরুন, কনকর্ড (Concorde) প্লেনের কথা, যেটা প্রায় ২,১৮০ কিমি/ঘণ্টা বেগে উড়তে পারত। কনকর্ড যখন লন্ডন থেকে নিউইয়র্কের দিকে সূর্যের বিপরীত দিকে উড়ত, তখন যাত্রীরা একই স্থানে থেকে একসাথে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখতে পেত। আবার নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন গেলে তারা সময়কে পিছনে ফেলে সূর্যোদয়ের আগে পৌঁছে যেত। অর্থাৎ, উচ্চ গতির কারণে তারা সময় ও সূর্যাস্তকে আপেক্ষিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।
কিন্তু আপনি যদি সাধারণ যাত্রীবাহী প্লেনের মতো (প্রায় ৮০০-৯০০ কিমি/ঘণ্টা) গতি নিয়ে সূর্যের দিকে যাওয়া শুরু করেন, তাহলে সূর্যাস্ত পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হবে না। তবে হ্যাঁ, আপনি সূর্যাস্তের সময়টাকে আপনার জন্য অনেকটা ধীর করতে পারবেন। যেমন, যদি আপনার সামনে দিগন্তে সূর্য থাকে এবং আপনি যথেষ্ট পশ্চিমমুখী গতি বজায় রাখেন, তাহলে সূর্য অনেকক্ষণ ধরে স্থির থাকবে বা ধীরে ধীরে অস্ত যেতে থাকবে।
তবে এই পুরো বিষয়টি কোন জায়গার উপর দিয়ে উড়ছেন, তার ওপরও নির্ভর করে। নিরক্ষরেখার কাছে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি বেশি, কিন্তু মেরুর দিকে গেলে সেই গতি অনেক কম। তাই নিরক্ষরেখার কাছে আপনি যত দ্রুত পশ্চিমে উড়বেন, সূর্যাস্ত তত সহজে ধরা যাবে বা বিলম্বিত করা যাবে। মেরুর কাছে এই প্রভাব কমে যাবে, কারণ পৃথিবী সেখানে তুলনামূলক ধীরে ঘোরে।
সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, সূর্যাস্ত নিজে কোনো বস্তুর গতি নয়, বরং এটি আলো ও ছায়ার একটি আপেক্ষিক ভিজ্যুয়াল এফেক্ট, যেটা শুধুই আমাদের অবস্থান ও গতি অনুযায়ী ঘটে। আপনি যদি পর্যাপ্ত উচ্চতা এবং গতি নিয়ে সূর্যের মুখোমুখি এগিয়ে যান, তাহলে দিনের আলোকে টেনে বাড়িয়ে নিতে পারবেন, সূর্যাস্তকে থামিয়ে দিতে পারবেন, এবং একধরনের কৃত্রিম সময়চক্র তৈরি করতে পারবেন, যেটা শুধুই আপনার দৃষ্টিকোণের জন্য সত্যি হবে।