কান্না করলে গলা ধরে আসে কেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+7 টি ভোট
885 বার দেখা হয়েছে
"লাইফ" বিভাগে করেছেন (110,340 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (43,950 পয়েন্ট)
অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে মানুষ কান্না করে। এ কান্নাকে বিশ্লেষণ করলে পুরো সাংস্কৃতিক পরিচয় থেকে শুরু করে সামাজিক অবস্থান—সবকিছুই বোঝা সম্ভব। এটির অধ্যয়ন নিজেদের ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করে। আচরণ হিসেবে কান্নাকে অনেকেই ঠাট্টা-উপহাস করেন। তারা বলেন, অশ্রু হলো মেয়েলি, প্রশ্রয়পূর্ণ ও অতিনাটকীয় বিষয়। এটা অনুমান করা কঠিন নয় যে এ ধারণা পুরুষতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

 

শিক্ষকরা সর্বদা শিক্ষার্থীদের কাঁদতে নিষেধ করেন এবং তারা এটাকে সস্তা হিসেবে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে মনোবিদরা ‘ভালো কান্নাকাটি’র প্রয়োজনীয়তা আছে বলে উল্লেখ করেন। তারা অশ্রুকে একটি পরিচয় ও মানসিক তৃপ্তি হিসেবে দেখেন, যার শারীরিক প্রভাব আছে। অনেকে কান্নাকে আত্মা-পরিষ্কারের ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করে নিজেদের ঘোষণা দেন যে ‘আমি একজন ক্রাইয়ার’।

 

তবে সব কান্নাও এক রকম নয়। মানব শরীর তিন ধরনের কান্না উৎপাদন করে। একটা হলো মৌলিক, যা শুষ্কতা থেকে রক্ষার জন্য চোখের বলের উপরে তৈলাক্ত স্তর তৈরি করে। আরেকটি হলো প্রতিবিম্ব, যা চোখে ধূলিকণা বা কিছু পড়লে সেটা থেকে চোখকে রক্ষার জন্য হাজির হয়। পেঁয়াজ কাটার সময় বা তীব্র আলোর মুখোমুখি হলেও এটা হয়ে থাকে। অর্থাৎ চোখ কোনোভাবে বিরক্ত হলে প্রতিবিম্বের মাধ্যমে চোখ দিয়ে পানি বের হয়। তৃতীয়টা হলো আবেগীয়, যা সংবেদনশীল কোনো কারণে ঘটে থাকে। আবেগীয় বা সংবেদনশীল অশ্রুতে মৌলিক ও প্রতিবিম্বের চেয়ে প্রোটিনের মাত্রা বেশি থাকে। প্রোটিনের কারণে অশ্রু অনেক ঘন হওয়ায় ধীরে ধীরে সেগুলো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে।

 

 

 

 

এ অশ্রুগুলো যত বেশি গড়িয়ে পড়বে, অন্যদের জন্য তার বার্তাগুলো তত বেশি উপলব্ধি করার সুযোগ তৈরি হবে। সংবেদনশীল অশ্রু একটি সামাজিক ও জৈবিক সংকেত। এটা যোগাযোগেরও একটা মাধ্যম। কিন্তু অনেক সময় মানুষ একা একাই কান্না করে থাকে, যেখানে কান্নার প্রেরক থাকলেও প্রাপক থাকে না। এ বার্তা সামাজিকভাবে নিজের দিকে পরিচালিত হতে পারে অর্থাৎ বার্তাগুলো সে নিজেই নেয় এবং আত্মতৃপ্তি পায়। এ মুহূর্তে কেউ হয়তো কবি অর্থার রিমবৌদের কথা ভাবতে পারেন—‘আমি অন্য একজন’। কখনো কখনো একক কোনো ব্যক্তি কান্নার প্রেরক ও প্রাপক হতে পারে। কান্নার সামাজিক যে সংকেত রয়েছে, তা সংস্কৃতিভেদে পরিবর্তিত হয়। এটা ক্রন্দনকারী ও সাক্ষীদের ব্যক্তিগত পরিচয়, ক্ষমতা ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুনির্দিষ্ট ফ্রেম রয়েছে, যার মাধ্যমে মানুষের অশ্রুকে ব্যাখ্যা করা যায়। এজন্য তারা অশ্রুর উৎপাদন পরিমাপের জন্য রোগীর চোখ থেকে অশ্রু সংগ্রহ করেন। আবার যখন কোনো মনোবিদ হতাশার রোগীর চিকিৎসা করেন, তখন রোগীর কান্নার বর্ণনা শুনে থাকেন। কান্নার বিভিন্ন ধরনের ওপর অনেক সম্ভাবনা নির্ভর করে। এদের মধ্যেও নানা পার্থক্য দেখা যায়। এমন রোগীরা বলেন, ‘আমি আগের মতো আর কান্না করি না’, ‘শরীর ও চোখ শুকিয়ে অসাড় হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি প্রতিটি ছোট ছোট বিষয়ের জন্য কেঁদেছি’, ‘আমি কান্নার মতো অনুভব করি কিন্তু কাঁদতে পারি না’। কান্না মানুষের মধ্যে গভীর বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে। আবার বিতর্কিত পৃথককরণও সৃষ্টি করতে পারে। এটা নির্ভর করে মূলত তারা কারা এবং তারা কীভাবে পৃথিবীতে বসবাস করবে, এটা পরস্পর শেয়ার করার মাধ্যমে।

 

পদ্ধতিগত নিদর্শনগুলো ও প্রত্যাশিত বিষয়গুলো পরিবর্তন হলে অশ্রু চলে আসে। এজন্য কোনো শিশু কিছু খেতে চাইলে তাকে সেটা না দিলে সে কাঁদে। সম্ভবত আপনি লক্ষ করেছেন, একই সঙ্গে কান্না করা এবং গান গাওয়া প্রায় অসম্ভব। গলার পেশি একসঙ্গে কান্না ও গানের সংকোচন-প্রসারণ করতে পারে না। এজন্য দ্য ক্রাইং বুক-এর লেখক ও গবেষক হিদার ক্রিস্টল বলেছেন, কান্নার বিপরীত শব্দ হাসি নয় বরং গান। কান্নার সময় গলা ধরে আসে, কোনো কথা পর্যন্ত বলা যায় না।

 

মানুষ যখন বলতে পারা এবং নিজেকে পরিচালনার শেষ সীমায় পৌঁছে যায়, তখনই মানুষ কান্না করে। এর অর্থ এই নয় যে শেষ সীমায় পৌঁছার আগ পর্যন্ত তার কথাগুলো ভালো, সত্য বা বিশ্বাসযোগ্য হওয়া উচিত। বরং এটা বোঝায় যে এটা মানুষের ব্রেকিং পয়েন্ট। এরপর সে আর কিছু বলতে পারে না বা নিজেকে পরিচালনা করতে আর সক্ষম হয় না। এটাই তার স্বাভাবিকের সর্বোচ্চ সীমা। এর মানে হলো, যে কারণে অশ্রুগুলো ঝরে পড়ছে, সে বিষয়গুলোর দিয়ে মনোযোগ দেয়ার সময় এসেছে।

 

গবেষক হিদার ক্রিস্টল বলেন, আমার গবেষণার বহু বছর পর এখন পর্যন্ত আমি নিজেকে শারীরিক ও রূপক রূপে কান্নাকে বোঝার বিস্ময়কর উপায়গুলো শিখছি। এটা দেখা যাচ্ছে যে অশ্রু যখন আসন্ন, তখন আপনার গলা ধরে আসছে বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন সময় আপনি শ্বাস নেয়া বা কিছু গিলে ফেলার চেষ্টা করলে পেশিগুলো তা প্রতিরোধ করে এবং বাধা দেয়ার সংবেদন তৈরি করে। তবে গবেষণায় দেখেছি এ ধরনের পরিস্থিতি পরিবর্তন করা সম্ভব। থামার জায়গা বা সর্বোচ্চ সীমা হিসেবে নয় বরং উত্তরণের পথ হিসেবে যদি কান্নার দিকে আপনি নজর দিতে পারেন, তবেই সে অশ্রু আপনি বুঝতে পারবেন। আনন্দ, নিপীড়ন, শোক, সৌন্দর্য ও হিংস্রতা বোঝার জন্য কান্না একটা অনেক বড় অবলম্বন।

 

 

 

সূত্র: গার্ডিয়ান

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+12 টি ভোট
3 টি উত্তর 3,403 বার দেখা হয়েছে
05 অগাস্ট 2020 "লাইফ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন বিজ্ঞানের পোকা ৩ (25,790 পয়েন্ট)
+2 টি ভোট
2 টি উত্তর 727 বার দেখা হয়েছে
+6 টি ভোট
3 টি উত্তর 1,871 বার দেখা হয়েছে
+12 টি ভোট
1 উত্তর 860 বার দেখা হয়েছে
28 ডিসেম্বর 2020 "লাইফ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Ahnaf Tahmid (5,090 পয়েন্ট)

10,863 টি প্রশ্ন

18,562 টি উত্তর

4,746 টি মন্তব্য

860,774 জন সদস্য

29 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 29 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. qh88kyccom1

    100 পয়েন্ট

  2. hello88appcom

    100 পয়েন্ট

  3. a789net1

    100 পয়েন্ট

  4. c168voto

    100 পয়েন্ট

  5. zeetben77blog1

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক #ask শরীর রক্ত আলো মোবাইল #science ক্ষতি চুল চিকিৎসা কী পদার্থবিজ্ঞান প্রযুক্তি সূর্য স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক #biology পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল মনোবিজ্ঞান আগুন গাছ খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার শব্দ দুধ উপায় হাত মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা বাতাস ভয় স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা বাচ্চা মেয়ে বৈশিষ্ট্য মৃত্যু হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা চার্জ অক্সিজেন দাঁত ভাইরাস আকাশ গতি কান্না বিড়াল আম
...