বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প, এক দিন না একদিন হবেই!
বাংলাদেশের ভেতরে-বাইরে অনেকগুলো ফাটল আছে। যেমন:
হিমালীয় মুখ্য ফাটল বা Himalayan subduction zone
আজ থেকে সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে মিলিত ভারত-বার্মা পাত ইউরেশীয় পাতকে সজোরে ধাক্কা দিলে হিমালয় জেগে ওঠে। ধাক্কার পর ভারতীয় পাত ইউরেশীয় পাতের নিচ দিয়ে গতিশীল হয় । এইভাবে প্রায় ২,২০০ কিলোমিটার লম্বা হিমালীয় সাবডাকশন জোন গঠিত হয়। গতিশীল ভারতীয় পাতের চাপে ইউরেশীয় পাতে শক্তি জমা হয় যা আকস্মিকভাবে মুক্ত হলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এখান থেকে স্লেমোনের সূত্রানুযায়ী সর্বোচ্চ ৯.২ - ৯.৩।
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত সবচেয়ে লম্বা ফাটলটা হলো চট্টগ্রাম-আরাকান ফাটল যা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল ও মিয়ানমারের উপকূলে অবস্থিত। ৯১২ কিলোমিটার লম্বা এই ফাটল সর্বোচ্চ ৮.৮ - ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্প উৎপন্ন করতে পারে। ১৭৬২ সালে এই ফাটল থেকে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। সমস্ত শক্তি ছেড়ে দেওয়ায় তখন ৮.৫ - ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প উৎপন্ন হয় যার ফলে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ বদলে যমুনা নদীর জন্ম হয়। এই ফাটলের অবস্থান চট্টগ্রাম বিভাগে তাই এখান থেকে ভূমিকম্প তৈরি হলে সেখানেই ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হবে।
সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সীমান্তে অবস্থিত ফাটলটার নাম হলো দাউকি। ৩৫৫ কিলোমিটার লম্বা এই ফাটল সর্বোচ্চ ৮.৩ - ৮.৪ মাত্রার ভূমিকম্প উৎপন্ন করতে পারে। ১৮৯৭ সালে এই দাউকি ফাটল এবং ভারতের ওলধাম ফাটল মিলিতভাবে ৮.২ - ৮.৩ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করে । ছোট সোনা মসজিদ, বাঘা মসজিদ, কুসুম্বা মসজিদ, কান্তজিউ মন্দিরসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঢাকা শহরের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক ফাটল হলো মধুপুর ফাটল যার দক্ষিণভাগ সরাসরি ঢাকা শহরের মধ্যে পড়ে। ১১৮ কিলোমিটার এই ফাটল দেশের সবচেয়ে ছোট ফাটলগুলোর একটা। তবু এটা সর্বোচ্চ ৭.৮ - ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করতে পারে।
সব মিলিয়ে যেহেতু দেশের ভেতরে ও আশেপাশে বড় বড় ফাটল আছে এবং তারা যথেষ্ট বড় ভূমিকম্প তৈরি করতে পারে তাই বাংলাদেশে যে বড় ভূমিকম্প একদিন হবে সেটা খুবই স্বাভাবিক। তবে কবে হবে, কোন ফাটল থেকে হবে, কত বড় ভূমিকম্প হবে এসব একমাত্র আল্লাহই জানেন ।
- রাশিক আজমাইন
