বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড যে পরমাণু মডেলের ধারণা দিয়েছিলেন, সেখানে পরমাণুর এই গঠন সম্পর্কে তিনি কীভাবে ধারণা লাভ করেছিলেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
262 বার দেখা হয়েছে
"রসায়ন" বিভাগে করেছেন (8,580 পয়েন্ট)
পরমাণু তো দেখা সম্ভব নয়, তাহলে রাদারফোর্ড পরমাণুর অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে জানলেন কীভাবে?

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (2,290 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন

ইলেকট্রন আবিষ্কারের পর পরমাণুর গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানী থমসন প্রস্তাবিত (1898 খ্রিষ্টাব্দে ) plum pudding পরমাণু মডেল সম্বন্ধে নিশ্চিত প্রমাণ লাভের উদ্দেশ্যে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে রাদারফোর্ড আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষাটি করেন। তাঁর পরীক্ষার কিছুদিন পূর্বেই আবিষ্কৃত হয় যে, রেডিয়াম (Ra), ইউরেনিয়াম (U) ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলফা কণা বিকিরিত হয়।

হিলিয়াম পরমাণু হতে দুটি ইলেকট্রন বের করে নিলে যে দ্বিধনাত্মক হিলিয়াম নিউক্লিয়াস অবশিষ্ট থাকে; তাকে আলফা কণা বলে।

আলফা কণার বৈশিষ্ট্য :

 (১) যৌগিক কণা বা, কম্পোজিট কণার শ্রেণিভুক্ত এ আলফা কণার প্রচণ্ড গতি থাকে। 

(২) আলফা কণার গতি 1.0 x 10^7 ms^-1 হতে 2.5 x 10^7 ms^-1 পর্যন্ত হয়ে থাকে।

(৩) আলফা কণাতে দুটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রন থাকে (He2+)। (৪) তাই আলফা কণার ভর সংখ্যা হয় 4।

আলফা কণার বৈশিষ্ট্য :

রাদারফোর্ডের পরীক্ষায় ব্যবহৃত উপকরণ :

(১) তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে নির্গত আলফা কণা।
(২) পাতলা সোনার পাত ( 0.0004 cm পুরু)। 
(৩) জিঙ্ক সালফাইড (ZnS) আবরণযুক্ত পর্দা। 

রাদারফোর্ডের পরীক্ষার বর্ণনা : বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড প্রচণ্ড শক্তিসম্পন্ন দ্বিধনাত্মক চার্জযুক্ত আলফা কণাসমূহকে একটি পাতলা সোনার পাতের (0.0004 cm) ওপর টার্গেট বা নিক্ষেপ করেন। সোনার পাতের চারদিকে ঘিরে জিঙ্ক সালফাইড (ZnS) আবরণযুক্ত একটি গোলাকার পর্দা রাখেন । ZnS আবরণীর ওপর পতিত আলফা কণা আলোকচ্ছটা সৃষ্টি করে ।

[ ZnS হলো অনুপ্রভা সৃষ্টিকারী পদার্থ (Phosphorescent substance)। অনুপ্রভা সৃষ্টিকারী পদার্থ বিভিন্ন শক্তির photon শোষণ করে পরে তা দৃশ্যমান আলোর পরিসরে বিকিরণ করে। এজন্য এক্ষেত্রে ZnS ব্যবহৃত হয় । 

 পর্যবেক্ষণ : তিনি লক্ষ্য করেন যে,
 (১) প্রায় 99% আলফা কণাই এ সোনার পাত ভেদ করে সোজাসুজি চলে যায় এবং ZnS পর্দাকে আলোকচ্ছটায় দীপ্তিমান বা আলোকিত করে। 

(২) তবে মাত্র কয়েকটি আলফা কণা তাদের পথ থেকে বেঁকে পেছন দিকে চলে যায়।

(৩) খুব কম সংখ্যক আলফা কণা ( প্রায় ২০০০০ এর মধ্যে ১ টি) বিপরীত দিকে ফিরে আসে।

সিদ্ধান্ত: এ পরীক্ষা থেকে রাদারফোর্ড নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন :

(১) পরমাণুর অধিকাংশ স্থানই ফাঁকা। যেহেতু আলফা কণার তুলনায় ইলেকট্রনের ভর অতি নগণ্য, সেহেতু এই ফাঁকা স্থানে ইলেকট্রন থাকতে পারে। তবে এরা আলফা কণার গতিপথের কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।

(২) যেহেতু খুব কমসংখ্যক কণা বিপরীত দিকে ফিরে আসে, এতে প্রমাণিত হয় ঐ আলফা কণা  সোজাসুজি এর অপেক্ষা বহু ভারী কোনো কিছুর সাথে সংঘর্ষে পতিত হয় বা তা দ্বারা বিকর্ষিত হয় অর্থাৎ পরমাণুর কেন্দ্রে পরমাণুর প্রায় সমগ্র ভর (পরমাণুর ভরের 99 97% ভর) অতি ক্ষুদ্র স্থান দখল করে আছে।

(৩) যেহেতু আলফা কণাসমূহ ধনাত্মক চার্জযুক্ত এবং এক্ষেত্রে বিকর্ষিত হয়, সেহেতু পরমাণুর কেন্দ্রটিও ধনাত্মক চার্জযুক্ত হবে । তিনি ভারী ও ধনাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণুর এ কেন্দ্রকে নিউক্লিয়াস (nucleus) নামকরণ করেন।

(৪) আলফা কণার গতিপথের পরিবর্তন হিসাব করে দেখান যে, পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক চার্জের পরিমাণ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যার সমান। [রাদারফোর্ড জানতেন আলফা কণার ভর ইলেকট্রন  কণার ভরের চেয়ে 7000 গুণ বেশি এবং এটি দ্বিধনাত্মক চার্জযুক্ত।]

(৫) পরমাণুর আকার (H পরমাণুর ব্যাস 1 x 10 cm বা, 0.1 nm) এর তুলনায় নিউক্লিয়াসের আকার (ব্যাস 1 × 10^-12 থেকে 10^-13 cm) খুবই ছোট। এ আকারগত সম্পর্ক হলো পরমাণুটি এর নিউক্লিয়াস থেকে ১০ হাজার থেকে ১ লক্ষ গুণ বড়।

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল

1911 খ্রিস্টাব্দে আলফা কণা পরীক্ষার সাহায্যে পরমাণুতে নিউক্লিয়াস শনাক্তকরণের মাধ্যমে রাদারফোর্ড প্রদত পরমাণু মডেলটির প্রস্তাবনাসমূহ নিম্নরূপ :

(১) গোলাকার পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারী বস্তু বিদ্যমান। এই ভারী বস্তুকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলা হয় । পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগণ্য। নিউক্লিয়াসে পরমাণুর সমস্ত ধনাত্মক চার্জ ও প্রায় সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত।

(২) পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ। তাই নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জ সংখ্যার সমান সংখ্যক ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন থাকে ।

(৩) সৌরজগতে সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান গ্রহসমূহের মতো পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো এর কেন্দ্রস্থ নিউক্লিয়াসের দিকে নিজ নিজ কক্ষপথে সতত ঘূর্ণায়মান থাকে। ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট নিউক্লিয়াসের ও ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট ইলেকট্রনসমূহের পারস্পারিক স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণজনিত কেন্দ্রমুখী বল এবং আবর্তনশীল ইলেকট্রনের কেন্দ্রবহির্মুখী পরস্পর সমান অর্থাৎ পরস্পরকে ব্যালেন্সড বা সমভার করে (counter balanced) |

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলে নিউক্লিয়াসের ধারণা আছে বলে একে পরমাণুর নিউক্লিয়ার মডেলও বলে । সৌরজগতের সাথে মিল রেখে মডেলটি দেয়া হয়েছে বলে একে সোলার সিস্টেম এটম মডেল (Solar system atom model) ও বলা হয়। 

Source - Hazari and Nag chemistry HSC book. 

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+9 টি ভোট
1 উত্তর 626 বার দেখা হয়েছে
11 ডিসেম্বর 2020 "রসায়ন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Zubayer Mahmud (11,220 পয়েন্ট)
+2 টি ভোট
1 উত্তর 523 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
1 উত্তর 286 বার দেখা হয়েছে
28 ফেব্রুয়ারি 2021 "রসায়ন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,480 পয়েন্ট)

10,775 টি প্রশ্ন

18,461 টি উত্তর

4,743 টি মন্তব্য

270,054 জন সদস্য

27 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 27 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Tazriyan

    190 পয়েন্ট

  2. Khandoker Farhan

    110 পয়েন্ট

  3. Eyasin

    110 পয়েন্ট

  4. JasminWeis38

    100 পয়েন্ট

  5. Noelia145653

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...