এলোপেসিয়া কী? কেন হয়? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
337 বার দেখা হয়েছে
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন (15,750 পয়েন্ট)

1 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (15,750 পয়েন্ট)


অ্যালোপেশিয়া : চুল পড়ার সমস্যা

মাথাভর্তি চুল কে ই বা অপছন্দ করে? প্রাচীনকাল থেকেই কবি-সাহিত্যিকরা সৌন্দর্যের বর্ণনা করার সময় চুলকে তুলে ধরেছেন বিশেষভাবে। আমরাও আমাদের জীবনের একটা বড়ো সময় চুলের যত্নে কাটাই। তারপরেও হাতে হাতে কিংবা বালিশে দেখা যায় কিছু চুল পড়ে। এতে অনেকেই চিন্তিত হন। তবে একজন মানুষের দৈনিক ৫০-১০০ টা চুল পড়া স্বাভাবিক। এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কিন্তু চুল পড়ার পরিমাণ, এর চাইতে বেশি হয়ে গেলে (দিনে ১২০-১৫০ টা কিংবা আরোও বেশি) সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তখন সেটা হবে চুল পড়ার সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় চুল পড়ার এই সমস্যাকে অ্যালোপেশিয়া বলা হয়।

একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৩০-৫০ বছর বয়সের প্রায় ৫৮% পুরুষরা অ্যালোপেশিয়ায় ভুগছেন এবং ২০-২৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ১২% চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন।

চুল পড়ার শ্রেণিবিভাগ :

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ চুল পড়ার সমস্যাকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলো হচ্ছে -

১। অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া (Androgenetic Alopecia) বা বয়সজনিত চুল পড়া : এটি অনেক লোকের হয়। মহিলা ও পুরুষ উভয়েই এই রোগের শিকার হতে পারেন। এটি খুব তাড়াতাড়ি শুরু হতে পারে যেমন: টিনেজ (teenage) বয়সে এবং বয়স বাড়ার সাথে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

২। মেল প্যাটার্ন ব্যাল্ডনেস (Male pattern baldness) : একটি বিশেষ বিন্যাস অনুযায়ী চুল পড়া শুরু হয়। প্রথমে কপালের দুই পাশ থেকে এবং সময়ের সাথে হেয়ারলাইন পিছিয়ে ‘M’ আকৃতি ধারণ করে। ব্রহ্মতালুর চুলও পাতলা হয়ে আংশিক বা পুরো ফাঁকা হয়ে যেতে পারে।

৩। ফিমেল প্যাটার্ন ব্যাল্ডনেস (Female pattern baldness) : এতে চুল মাথার উপরের দিক থেকে ফাঁকা হওয়া শুরু হয় এবং মাঝখানের সিঁথি ক্রমশ চওড়া হয়ে যায়। তবে হেয়ারলাইন পিছায়না। কখনো বা পুরো মাথায় টাক পড়ে যেতে পারে।

৪। অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা (Alopecia areata) : এই ধরণের চুল পড়াতে মাথার ত্বকের কিছু বিক্ষিপ্ত জায়গায় গোল করে টাক পড়ে যায়। কিন্তু বাকি চুল স্বাভাবিক থাকে। তবে অনেকসময় পরে পুরো মাথাতেই টাক পড়ে যেতে পারে। এটি শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তি দেহের সুস্থ টিস্যুর ক্ষতি করে তাকে নষ্ট করে দেয়।

৫। স্কারিং অ্যালোপেশিয়া (Scarring alopecia) : একে সিকাট্রিশিয়াল অ্যালোপেশিয়াও (cicatricial alopecia) বলা হয়। এটি খুব বেশি দেখা যায় না। এতে বিভিন্ন অসুখের ফলে মাথার ত্বকে প্রদাহ বা ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়ে নতুন চুল গজানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

হেয়ার গ্রোথ সাইকেলে সমস্যা হওয়ার কারণে চুল পড়ে। চুলের বৃদ্ধির এই নিম্নলিখিত পর্যায়গুলি থাকে :

১. অ্যানাজেন বা সক্রিয় বৃদ্ধির পর্যায় (২-৭ সপ্তাহ)

২. ক্যাটাজেন বা রূপান্তরের পর্যায় (১-২ সপ্তাহ)

৩. টেলোজেন বা বিশ্রামের পর্যায় (৫-১২ সপ্তাহ)

মোটামুটিভাবে, মাথার সুস্থ ত্বকে ৯ থেকে ১০% চুল টেলোজেন পর্যায়ে থাকে। অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়াতে চুল ক্রমাগত ছোটো ও পাতলা হয়ে যেতে থাকে এবং চুলের ফাঁক দিয়ে ত্বক দেখা যেতে থাকে। অ্যানাজেন পর্যায় ছোটো হয়ে যায় এবং টেলোজেন পর্যায় লম্বা হয়ে যায়। শেষে চুল পড়ে মাথা ফাঁকা হয়ে যায়।

চুল পড়ার সমস্যা বা অ্যালোপেশিয়া হওয়ার কারণগুলো জেনে নিই। এগুলো হচ্ছে :

১। বংশগত : আপনার পরিবারে কারোর চুল পড়ার ইতিহাস থাকলে আপনারও অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে। পুরুষদের টাক পড়া বা হেয়ারলাইন পিছিয়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হওয়া এবং মহিলাদের সিঁথি চওড়া হয়ে যাওয়া ও চুলের ফাঁক দিয়ে মাথার ত্বক দেখা যাওয়ার সমস্যা তৈরি হতে পারে।

২। হরমোনের সমস্যা : গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের সময় হরমোনের তারতম্যর ফলে চুল পড়া শুরু করতে পারে। এছাড়াও গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে, প্রসবের পরে বা হিস্টারেক্টমি (গর্ভাশয় কেটে বাদ দেওয়া) হলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যানাজেন পর্যায়টি ছোটো হয়ে গিয়ে চুল পড়তে পারে। ইনসুলিন রেসিস্টেন্স আরেকটি কারণ। পুরুষদের ক্ষেত্রেও চুল পড়ার পিছনে হরমোনের তারতম্য থাকতে পারে।

৩। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন : স্ট্রেস, বাজে খাদ্যাভ্যাস, অপুষ্টি এবং ভুল জীবনশৈলী অনুসরণের কারণে চুল পড়তে পারে।

৪। ওষুধ : ক্যান্সারের কেমোথেরাপি চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে চুল পড়তে পারে।

৫। টেনে চুল বাঁধা ও চুলে রাসায়নিক চিকিৎসা করানো : টেনে চুল বাঁধার (যেমন: ঝুঁটি বাঁধা) ফলে হেয়ার ফলিকলে টান পড়ে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। ব্লিচ, রং দিয়ে চুলের রাসায়নিক চিকিৎসা করালে চুল সাময়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে যেতে পারে।

৬। অন্যান্য কারণ : অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কারণের মধ্যে পড়ে দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেমন: থাইরয়েডের রোগ, লুপাস (lupus) এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ (পিসিওডি)। ক্র্যাশ ডায়েট , চিন্তায় নিয়মিত চুল টানা বা মাথা চুলকানোর অভ্যাস, দ্রুত ওজন কমানো, ইনফেকশন, চুলের কসমেটিক্স, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বা সোরিয়াসিস জাতীয় রোগের কারণে হঠাৎ করে চুল পড়া শুরু হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন যে আপনার চুল পড়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে?

১। ক্রমাগত অতিরিক্ত চুল পড়া।
২। ব্রহ্মতালুর চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
৩। গোলাকৃতি আকারে বিভিন্ন জায়গায় টাক পড়া।
৪। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জন্য হঠাৎ করে চুল উঠে যাওয়া, সঙ্গে ব্যথা বা চুলকানি।
৫। বিক্ষিপ্ত ভাবে চুল গজানো।
৬। ‘M’ আকারে হেয়ারলাইন ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়া।

প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই উত্তম। কীভাবে প্রতিরোধ করবেন এই চুল পড়ার সমস্যা?

১। উগ্র রাসায়নিক সামগ্রী ব্যবহার করা কসমেটিক্স প্রোডাক্ট চুলে ব্যবহার করবেন না। তাপ দিয়ে চুল সোজা করা বা এই জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকুন।

২। রুটিন করে চুলের পরিচর্যা করুন। সপ্তাহে দুই-তিন দিন রুটিন মেনে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে কতবার মাথায় শ্যাম্পু করবেন, সেটা নির্ভর করবে আপনার চুলের প্রকৃতি, ময়লা ও পলিউশনের উপরে।

৩। প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট ও ভিটামিন (আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই) গ্রহণ করুন।

৪। একটি সুস্থ্য জীবনশৈলী মেনে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। চুল এমনভাবে বাঁধবেন না, যাতে চুলের গোড়ায় বেশি চাপ পড়ে।

নিজে চুলের ব্যাপারে সচেতন হোন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আপনারও হবে মাথাভর্তি চুল 

- হায়াত মোহাম্মাদ ইমরান আরাফাত, সায়েন্স বী

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 269 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 667 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 272 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 469 বার দেখা হয়েছে
+6 টি ভোট
4 টি উত্তর 7,093 বার দেখা হয়েছে

10,729 টি প্রশ্ন

18,374 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

241,815 জন সদস্য

48 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 47 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. DickConn560

    100 পয়েন্ট

  2. JooGabrielNu

    100 পয়েন্ট

  3. AbbeyCatts3

    100 পয়েন্ট

  4. VidaMcInnes2

    100 পয়েন্ট

  5. Britney26927

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য প্রাণী বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া গরম শীতকাল কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক শব্দ ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম হরমোন বিড়াল কান্না
...