ভ্যাম্পায়ার : পৌরাণিক লোককথা নাকি বাস্তবে রক্তচোষাদের অস্তিত্ব আছে? ভ্যাম্পায়ার কাহিনীর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কি? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
613 বার দেখা হয়েছে
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন (7,950 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (7,950 পয়েন্ট)

রহস্যময় ভ্যাম্পায়ার বা রক্তচোষাদের গল্পের প্রচলন প্রায় হাজার হাজার বছর থেকে। ভ্যাম্পায়ার বলতেই মানুষের চোখের সামনে ভাসে রক্তচোষা ড্রাকুলা বা Twilight সিরিজের ১০৪ বছর বয়সী সুদর্শন ভ্যাম্পায়ার Edward৷ মূলত ভ্যাম্পায়ার মিথ এর প্রচলন ব্রাম স্টোকার এর কাউন্ট ড্রাকুলা বা Twilight সিরিজের আরও কয়েক হাজার বছর আগে থেকেই। আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে মেসোপোটেমিয়াতে ভ্যাম্পায়ার বিশ্বাস প্রচলন ছিলো। তাছাড়া গ্রিক, রোমান ও হিব্রু উপকথাতে ভ্যাম্পায়ার এর মতো অপদেবতার গল্প আছে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, ভ্যাম্পায়ার লোককথার আদৌ কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? রক্তচোষা মানুষ বাস্তবে আছে? মূলত ভ্যাম্পায়ার মিথগুলোর সাথে পোরফিরিয়া এর সংযোগ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পোরফিরিয়া উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এক ধরণের ব্লাড ডিজঅর্ডার। পোরফিরিয়া হয় মূলত রক্তে পোরফিরিন উৎপাদন করে এমন রাসায়নিক উপাদান থেকে। রক্তের হিমোগ্লোবিন এর ক্রিয়ার জন্য পোরফিরিন গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় উপস্থিত একটি প্রোটিন হচ্ছে হিমোগ্লোবিন। হিমোগ্লোবিন মানুষের শ্বাসযন্ত্র থেকে অক্সিজেন দেহের টিস্যুগুলোতে ছড়িয়ে দেয়। তাছাড়া হিমোগ্লোবিন পোরফিরিন লিংক তৈরি করে, আয়রনকে ধরে রাখে। মূলত পোরফিরিয়া রোগীদের দেহে এনজাইম এর অভাবে হিমোগ্লোবিন এর হেম (Heme) এর উৎপাদন কমে যায় এবং পোরফিরিন উৎপাদন বেড়ে যায়। এর ফলে দেহে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ধারণা করা হয় এই ডিজঅর্ডার থেকে ভ্যাম্পায়ার মিথ এর প্রচলন হয়েছে।

Porphyria বা পোরফিরিয়া এর দুটি ক্যাটাগরি আছে। এগুলো হলো Acute Porphyria এবং Cutaneous Porphyria। আবার অনেকের মাঝে উভয় ধরনের পোরফিরিয়াই দেখা যায়। এই ব্যধির লক্ষণ একেক জনের মধ্যে একেক রকম হতে পারে। পোরফিরিয়া এর কিছু লক্ষণঃ-

▪️ সূর্যের আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, সূর্যের আলোতে গেলে জ্বালাপোড়া অনুভব হওয়া। ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফুলে যাওয়া। মুখ, হাত ও পা এর ত্বকে ফোসকা দেখা দেওয়া। শরীর চুলকানো, রোদ লাগা জায়গার লোম বৃদ্ধি পাওয়া। অনেকক্ষেত্রে প্রস্রাব এর রঙ লাল বা বাদামী দেখা দেওয়া। 

▪️ পেটে অসহ্য ব্যথা হওয়া, পাগলের মতো প্রলাপ করা। মাথা ঘুরানো, বমি বমি ভাব হওয়া, প্যারালাইসিস এর মতো অনুভব হওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। হেম এর অনিয়মিত উৎপাদন এর ফলে কিছু পোরফিরিয়া রোগীদের মুখ ও দাঁতও লালচেও দেখা যায়।

পৌরাণিক ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় যে পোরফিরিয়া ব্যধির চিকিৎসা হিসেবে পশুর রক্ত খাওয়ানো হতো। সম্ভবত এ থেকেই রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারদের প্রচলন হয়েছে। তবে এই ঘটনার কোন স্বচ্ছ প্রমাণ নেই। এছাড়াও পেলাগ্রা নামক একটি ব্যধি দিয়েও ভ্যাম্পায়ার উপকথাকে ব্যাখ্যা করা যায়। পেলাগ্রা পুষ্টিজনিত অসুখ। এটি হয় মূলত ভিটামিন বি-৩ বা নিয়াসিন এর অভাবে হয়। এই রোগের লক্ষণগুলো অনেকটাই পোরফিরিয়া এর মতো। এর মধ্যে আছে সূর্যের সংস্পর্শে এলে ত্বকে লালভাব, চুলকানি, জ্বালাপোড়া, ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। পেলাগ্রা হলে মানুষের মস্তিষ্কের নিউরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। এর সাথে লোককথায় প্রচলিত ভ্যাম্পায়ারদের অনেক মিল আছে। science bee

ভ্যাম্পায়ারিজম এর সাথে চিকিৎসকরা ক্যাটালেপ্সি বা পক্ষাঘাত রোগের সাদৃশ্যও পেয়েছেন। পক্ষাঘাত রোগের সাথে মৃগীরোগ, স্কিজোফ্রেনিয়া ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় স্নায়ুবিক রোগের সংযোগ আছে। পক্ষাঘাত হলে একজন মানুষ বলতে গেলে পুরোপুরি ফ্রিজ হয়ে যায়, মাংসপেশি দৃঢ় হয়ে পড়ে, হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস ধীর গতিতে চলে। তখন মনে হয় যে মানুষটি মৃত। এমন অবস্থায় বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্ণয় করা যাবে যে মানুষটি জীবিত আছে কিনা তবে আদিকালে এটি সম্ভব ছিলোনা। পক্ষাঘাত দশা প্রায় কয়েক দিন চলতে পারে, ততদিনে দেখা যায় মানুষটিকে মৃত ভেবে সবাই কফিনবন্দী করে রেখে দেয়। মানুষটি স্বাভাবিক হওয়ার পর যদি ভাগ্যক্রমে কফিন থেকে বের হয়ে আসে তখন তাকে সবাই ভ্যাম্পায়ার ভাবা শুরু করতে পারে। আবার সে যদি স্কিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত হয় তখন দেখা যাবে সে সত্যিই ভ্যাম্পায়ারদের মতো ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। 

পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও ব্যধি দিয়ে ভ্যাম্পায়ার দের ব্যাখ্যা করা যায়। এইসব রোগ থেকে হয়তো ভ্যাম্পায়ার নামক রহস্যময় রক্তচোষাদের অস্তিত্বের গল্প বা লোককথার প্রচলন হয়েছে। আপনার কি মতামত? আদৌ কি অশরীরি ভ্যাম্পায়ার এর অস্তিত্ব ছিলো কোন কালে?

© নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+6 টি ভোট
1 উত্তর 282 বার দেখা হয়েছে
31 জানুয়ারি 2021 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Samsun Nahar Priya (47,710 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 17 বার দেখা হয়েছে

10,809 টি প্রশ্ন

18,512 টি উত্তর

4,744 টি মন্তব্য

559,235 জন সদস্য

105 জন অনলাইনে রয়েছে
31 জন সদস্য এবং 74 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

    1280 পয়েন্ট

  2. Dibbo_Nath

    370 পয়েন্ট

  3. Fatema Tasnim

    340 পয়েন্ট

  4. _Polas

    160 পয়েন্ট

  5. Arnab1804

    140 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে ডিম চাঁদ কেন বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মাছ মস্তিষ্ক মশা শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...