ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি কী এবং কেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
709 বার দেখা হয়েছে
"প্রযুক্তি" বিভাগে করেছেন (20,390 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (20,390 পয়েন্ট)
আপনি কি কখনো 'সাজেক ভ্যালি' তে গিয়েছেন? আপনার কি খুব ইচ্ছে করে সুন্দরবনে হাঁটতে? কিংবা কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে বালুতে খালি পায়ে হাঁটতে? আপনি কি চীনের মহাপ্রাচীরে ঘুরতে যেতে চান? কিংবা কখনো প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে যেতে চেয়েছেন? নীল আর্মস্ট্রং এর মত আপনিও কি চাঁদের মাটিতে হাঁটতে চান? না-কি যেতে চান মঙ্গল গ্রহে? কখনো কি সমুদ্ররের তলদেশ দেখার সাধ জেগেছে আপনার? বিভিন্ন কারণে হয়ত আমাদের এত জায়গা ভ্রমণ করা হয় না। কারণ, অনেকের বাসায় বলে, "যেখানেই যাস না কেন, সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরবি।" কিংবা "তুই এখনো বড়ো হসনাই।" যার কারণে ঘোরাঘুরির স্বপ্নটা অনেকের স্বপ্নই থেকে যায়। তবে তাদের কষ্টের দিন শেষ হতে চলল বলে। কারণ 'ভার্চুয়াল রিয়েলিটি' প্রযুক্তি সাহায্যে সাজেকে না গিয়েও আপনি সাজেক ভ্রমণের অনুভূতি লাভ করতে পারেন! আপনার মাথায় একটি বিশেষ ধরণের হেলমেট পরিয়ে দেওয়া হবে, হাতে থাকবে বিশেষ ধরণের গ্লাভস আর পায়ে থাকবে বিশেষ ধরণের জুতা! তারপর সাজেক ভ্যালির জন্য নির্দিষ্ট সিমুলেশন অন করে দিলেই আপনি সাজেক ভ্রমণের অনুভূতি লাভ করতে পারবেন। আপনার মনে হবে আপনি সাজেকেই আছেন। সাজেক ভ্যালির মেঘ স্পর্শ করতে পারবেন আপনার ঘরে বসেই! এটিই মূলত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, যা বাস্তব না হলেও বাস্তবের মতই সত্য। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রিমাত্রিক ছবি ব্যবহৃত হয়, যা ব্যবহার করে কেউ যেকোনো সময় সাজেক, কক্সবাজার, কুয়াকাটা কিংবা চাঁদ, মঙ্গলেও ভ্রমণ করতে পারবে। এটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এমন একটি পরিবেশ, যেখানে আমাদের দৈহিক এবং মানসিক অনুভূতি হয় বাস্তবের মতই!  



ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কী?

Virtual শব্দের অর্থ সামনে এবং Reality শব্দের অর্থ বাস্তবতা। সেক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় 'সামনের বাস্তবতা'! এটি মূলত কম্পিউটার সিমুলেশন নিয়ন্ত্রিত অবাস্তব চিত্রপট, যা আমাদের বাস্তব চেতনার উদ্রেক করে। এটি 3D বা 5D প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্পিউটার মাধ্যমে বিশেষ ধরণের কাল্পনিক জগৎ। এটার মাধ্যমে আপনি কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে পারবেন। এখানে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কল্পনার এক নতুন জগতে পা রাখা যায়! যেখানে আপনি চাইলেই সমুদ্রের গভীরে সাতার কাটতে পারবেন! আবার আপনার দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন! আপনি চাইলেই আপনার দেহের রক্তনালিতে সাতার কাটতে পারবেন কিংবা ডাইনাসোরের দৌড়ানি খেতে পারবেন! যদিও এটি অবাস্তব কল্পনার জগৎ, কিন্তু আপনি ফিজিক্যালি এবং মেন্টালি অনুভব করতে পারবেন সবকিছু!  

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ছোট্ট ইতিহাস

১৮৩৮ সালে Stereoscope তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে দর্শকের সামনে উপস্থাপনের জন্য টুইন মিরর ব্যবহার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি নানা বিজ্ঞানীর হাত ধরে বিকশিত হতে থাকে। ১৯৫৭ সালে 'মরটন হেইলিং' ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। তবে তা বর্তমানের মত এত উন্নত ছিল না!

ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে কী কী যন্ত্র ব্যবহার করা হয়?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মূলত হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে, ডেটা গ্লাভস, বডি স্যুইট, উচ্চমানের অডিও ব্যবস্থা, রিয়েলিটি ইঞ্জিন ইত্যাদি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।

কীভাবে কাজ করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পরিচালনা করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারের সাহায্যে ব্যবহারকারীর সামনে একটি পরাবাস্তব ভার্চুয়াল জগতকে উন্মোচন করা হয়। আর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য উচ্চতর ভার্চুয়াল গ্রাফিক্স ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় দৃশ্য এবং শব্দ সৃষ্টি করা হয়। ফলে ব্যক্তি একটি পরাবাস্তব ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে যান। তার কাছে মনে হয় তিনি বাস্তব জগতেই আছেন!

দৃষ্টি : ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য সেই ব্যক্তিকে একটি বিশেষ ধরণের হেলমেট পরানো হয়, সেখানে একটি বহুমাত্রিক ডিসপ্লেযুক্ত বিশেশব চশমা থাকে। যার ফলে ব্যক্তিটি পরাবাস্তব ত্রিমাত্রিক জগতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়!

শব্দ : ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে ব্যবহারকারীর নিকট বাস্তব করার জন্য পরিবর্তনশীল বিশেষ ধরণের ত্রিমাত্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যাতে করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে বাস্তব মনে হয়! এতে করে একটি বাস্তব(পরাবাস্তব) ত্রিমাত্রিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যক্তি মনে করেন শব্দটি বাস্তব জগতেরই!

স্পর্শ : ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিতে বিশেষ ধরণের গ্লাভস, পোষাক, জুতো ব্যবহার করা হয়। যা ব্যক্তিকে বাস্তব পরিবেশের অনুভূতি প্রদান করে! এসব যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবতার অনুভূতি নেওয়া যায়।


এভাবে নানা রকম প্রযুক্তি সমন্বয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়!  


ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রকারভেদ


Fully-immersive Virtual Reality :

এই ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে আপনি ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। এটি আপনাকে সম্পূর্ণভাবে পরাবাস্তব জগতের অনুভূতি দিবে। এখানে অতি উন্নতমানের হেলমেট, গ্লাভস, পোষাক ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই প্রযুক্তিতে আপনি বাস্তব আর পরাবাস্তবের পার্থক্য করতে পারবেন না। সবকিছুই আপনার কাছে বাস্তব মনে হবে! তবে এই প্রযুক্তিটি খুবই ব্যয়বহুল।

Semi-immersive Virtual Reality

এটি মূলত Full-immersive এবং Non-immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সংমিশ্রণ। এখানে আপনাকে কম্পিউটার স্ক্রিন এবং হ্যান্ডসেটের ব্যবহার করতে হবে। তবে এখানে Full-immersive এর মতো নড়াচড়া করার প্রয়োজন হয় না। এক জায়গায় বসে আপনি এই ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি উপভোগ করতে পারেন!  

Non-immersive Virtual Reality

এই ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে আপনি স্ক্রিনের ভেতরের কার্যক্রম নিজের মত করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন! তবে এতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সম্পূর্ণ মজা পাবেন না। বিভিন্ন হাই-গ্রাফিক্স গেইমগুলো এর অন্তর্ভূক্ত।  যেমন : Call of Duty। এখানে আপনি স্ক্রিনকে নিজের মতো করে কন্ট্রোল করতে পারবেন। বিভিন্ন VR গেইমগুলোও Non-immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অন্তর্ভূক্ত।


ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নানামুখী ব্যবহার

একুশ শতকে এসে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। নানা ক্ষেত্রে আমরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে থাকি। যেমন :


১। শিশু শিক্ষায়

২। ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ এবং প্র্যাকটিস
গেমিং

৩। কার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ

৪। বিমান চালনার প্রশিক্ষণ

৫। সেনাবাহিনীতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ

৬। ব্যবসায় বাণিজ্যে

৭। মহাশূন্য অভিযানে

৮। গেইমস তৈরি

৯। নগর উন্নয়নে

১০। মিলিটারি ট্রেনিং এবং প্রশিক্ষণ

১১। স্পোর্টস

১২। শিক্ষা ক্ষেত্রে

১৩। সেফটি ট্রেনিং

১৪। মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রে

১৫। জব ট্রেনিং

১৬। সেলস ট্রেনিং

১৭। ভার্চুয়াল মিটিং

১৮। আর্কিটেকচার বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন


ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের সুবিধাগুলো

১. শিক্ষা এবং ট্রেইনিং এ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি খুবজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
২. সহজেই পরাবাস্তব কাল্পনিক জগৎ থেকে ঘুরে আসা সম্ভব হচ্ছে।
৩. ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ভূমিকা অনেক।
৪. গেমিংকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অন্যতম অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে।


ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কিছু অসুবিধা  

১. জটিল এবং ব্যয়বহুল। সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
২. মানুষকে সহজেই বাস্তব জগৎ বিখুমী করে করে ফেলতে পারে।  


আমরা একুশ শতকের বাসিন্দা। এই সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্মেষকাল চলছে। বিজ্ঞান যেমন আমাদের উপকার করছে, তেমনি পরোক্ষভাবে আমাদের মানবসভ্যতাকেও হুমকিতে ফেলে দিতে সক্ষম। তাই, আমাদের মাথায় রাখতে হবে একটি প্রযুক্তি যেন মানব সভ্যতাকে হুমকিতে না ফেলে দেয়!  

- হায়াত মোহাম্মাদ ইমরান আরাফাত

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+3 টি ভোট
2 টি উত্তর 948 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 336 বার দেখা হয়েছে
+8 টি ভোট
1 উত্তর 264 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 978 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 869 বার দেখা হয়েছে

10,729 টি প্রশ্ন

18,374 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

242,135 জন সদস্য

48 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 48 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. amir

    110 পয়েন্ট

  2. TashaMcCorkl

    100 পয়েন্ট

  3. LashundaDunf

    100 পয়েন্ট

  4. JermaineHaga

    100 পয়েন্ট

  5. SarahQuong9

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য প্রাণী বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া গরম শীতকাল কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক শব্দ ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম হরমোন বিড়াল কান্না
...