Nishat Tasnim
মেমোরি কথাটা যতটা ছোট। এর মেকানিজম আসলে ততটাই জটিল। ঠিক কি কি কারণে কি পরিমাণ মেমোরি লস হবে আর যেটা লস হবে সেটা আর কখনো ফিরে আসবে কিনা। আর আসলেও কতখানি আসবে আর তার স্থায়িত্ব কতখানি হবে সেটা এক বিস্তর আলোচনা। কয়দিন ধরে বেশ কয়েক জায়গায় মেমোরি নিয়ে আমার মত কল্পনা প্রসূত চিন্তাবিদের আনাগোনা দেখছি। ভাবলাম একটু পড়াশোনা করে সামারাইজ করা যায় কিনা।
মেমোরি প্রথমত ৩ রকমের।
১. সেনসরি মেমোরি (Sensory Memory) : যেটার স্থায়িত্ব ১ সেকেন্ডেরও কম। আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে কিছু অনুভব করার পরে আমরা সেটাকে যার মাধ্যমে চিনতে পারি।
২. শর্ট টার্ম মেমোরি (Short term Memory) : যার স্থায়িত্ব ১০-১৫ সেকেন্ড থেকে শুরু করে কয়েক দিন পর্যন্ত হতে পারে। এর মনে রাখার ক্ষমতা +/-৭। মানে +/- ৭ টার মত আইটেম একই সাথে মনে রাখতে পারে এই মেমোরি। একটা বাক্য পড়া শুরু করলে তার শেষ পর্যন্ত যেতে যেতে প্রথম অংশটুকু মনে রাখা দরকার। একই সাথে মনে রাখা আর ইনফরমেশন প্রসেসিং করা এই মেমোরির কাজ।
৩. লং টার্ম মেমোরি (Long term Memory) : এর স্থায়িত্বকাল আজীবন।
এখন মেমোরি লসের যে ব্যাপারটা ,এর মানে যে শুধু আগের সব স্মৃতি ভুলে যাওয়া, তা না। এর মধ্যে নতুন কোন কিছু আয়ত্ত্ব করা আর সেটা মনে রাখতে পারার ব্যাপারও আছে। কোন বিষয় আয়ত্ত্ব করতে না পারা আর সেটা মনে রাখতে না পারার এই অক্ষমতা বলা হয় "এ্যামনেসিয়া"।
এ্যামনেসিয়া ৪ ধরনের হতে পারে। যেমনঃ
ইনফ্যান্টাইল এ্যামনেসিয়া (Infantile Amnesia) : ছোটবেলায় আমরা অনেক কিছুই শিখেছি, আমাদের সাথে অনেক কিছুই ঘটেছে। তার বেশিরভাগই আমাদের মনে নেই, অল্পকিছু ছাড়া। ২-৪ বছর বয়সের ঘটনাগুলো সাধারণত ১০ বছর পর্যন্ত মনে থাকে। তারপর তা আর মনে থাকে না। এর কারণ হচ্ছে শিশু আর প্রাপ্ত বয়ষ্কের আলাদা মেমোরি সিস্টেম ।
ট্র্যান্সিয়েন্ট এ্যামনেসিয়া ( Transient Amnesia) : মাইগ্রেন, এপিলেপ্সি, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, পোস্টেরিয়র সেরেব্রাল আর্টারিতে রক্ত চলাচলে বাঁধা ইত্যাদি কারণে এ্যাটাকের কয়েক ঘণ্টা আগের মেমোরি লস হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের মেমোরি লস পার্মানেন্ট হতে পারে। অর্থ্যাৎ এই সব ক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি সাধারণত আর ফিরে আসে না।
এন্টেরোগ্রেড এ্যামনেসিয়া ( Anterograde Amnesia) : এই ক্ষেত্রে রোগী নতুন স্মৃতি তৈরী করতে অক্ষম হয়। প্রিয়জনের মৃত্যু, অতিরিক্ত মদ্যপান, হিপোক্যাম্পাস (Hippocampus) ড্যামেজ ইত্যাদি কারণে এই ধরনের এ্যামনেসিয়া হয়।
রেট্রোগ্রেড এ্যামনেসিয়া ( Retrograde Amnesia) : (এটাই হল সেই ঐতিহাসিক মেমোরি লস। যার জন্য নায়ক নিজের পরিচয় ভুলে যায় কিন্তু লিখতে পড়তে ভুলে না। )
এই ধরনের এ্যামনেসিয়ায় রোগী বর্তমান ও অতীতের স্মৃতি ভুলে যায়। কিন্তু লিখতে,পড়তে, কথা বলতে বা যে সকল স্কিল সে আগে শিখেছে ( যেমন : সাঁতার, সাইক্লিং ) সেসব ভুলে না।