মানুষখেকো বাঘ ব্যতিত অন্যান্য বাঘগুলো অকারণে বিপজ্জক নয়।যতক্ষণ না কেউ তার ক্ষতি করছে বা পথ আটকাচ্ছে অথবা বেঁচে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পরে ততক্ষণ পর্যন্ত এরা কারও উপর হামলা করে না।
সুন্দরবনে বেঁচে থাকার প্রতিকূল পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা ও পর্যাপ্ত খাদ্যাভাবে বাঘ সুন্দরবন সংলগ্ন খাল এবং নদী পেরিয়ে লোকালয়ে এসে মানুষকে আক্রমণ করতে বাধ্য হয়। সুন্দরবনের প্রতিকূল পরিবেশে বর্তমানে বেঁচে থাকা সীমিতসংখ্যক বাঘ ও পশুপাখির আবাসস্থলের অভাব এবং প্রবল খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনের তিন দিকে থাকা ঘনবসতিও বাঘের অস্তিত্ব বিপন্নের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সুন্দরবনের রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বসতি স্থাপন, আবাদি জমি তৈরি, গৃহনির্মাণ ও জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের তাগিদে নির্বিচারে কাটা হয়েছে সুন্দরবনের সুন্দরী গাছসহ নানা প্রজাতির গাছপালা। সুন্দরবনকে ঘিরে থাকা ৬৭টি গ্রামের মানুষের কার্যকলাপ ও আচরণের ওপর নির্ভরশীল সুন্দরবন ও সুন্দরবনে বাঘের বেঁচে থাকা। সুন্দরবনের নৌপথ দিয়ে বিপজ্জনক নৌযান চলাচল বন্ধ না হলে বাঘের জীবনযাপন বির্বিঘ্ন হবে না।
বাঘ সাধারণত মানুষকে আক্রমণ বা হত্যা করে না। লোকালয়ে এসে মানুষ হত্যাসহ অস্বাভাবিক আচরণ করার পেছনে অমানবিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। চোরা শিকারিরা বাঘকে নানা রকম অখাদ্য-কুখাদ্য ও নেশাদ্রব্য খাইয়ে ক্রমে দুর্বল করে ফেলে। এমনকি দূর থেকে বাঘের দেহে বিষাক্ত ইনজেকশন ছুড়ে মারার মতো নৃশংস কাজ করতেও শিকারিরা দ্বিধাবোধ করে না। মাতাল বাঘ খাবারের সন্ধানে সুন্দরবন সংলগ্ন নদী পার হয়ে লোকালয়ে এসে নিরীহ গবাদিপশু, এমনকি মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়।
লোকালয়ে আসা বাঘকে পিটিয়ে হত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ১৯৮০ থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, চোরা শিকারি, বনদস্যু ও গণপিটুনিতে ৬৭টি বাঘ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে বাঘ, চিত্রা হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী ও পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় হরহামেশা চোরা শিকারিরা সুকৌশলে হত্যার পর বাঘের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত ও চর্বি উচ্চমূল্যে বিক্রি করে অবৈধ অর্থ উপার্জনের উন্মত্ত নেশায় মেতে ওঠে। ফলে সুন্দরবনে বাঘের নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।