যদি তুমি সূর্যের রশ্মির মতো উজ্জ্বল হতে চাও, তাহলে তোমাকে প্রথমে সূর্যের রশ্মির মতো পুড়তে হবে। গভীর কালো মহা অন্ধকারের মহাকাশে আমরা একটুকরো আলো খুঁজে পাই সূর্যের কাছ থেকে। জীবনের আশার আলো দিয়ে যায় অনবরত। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি কিভাবে এই আলো উৎপন্ন হয় গভীর কালো অন্ধকারে?
আমরা সবাই জানি যে দহনে অক্সিজেনের প্রয়োজন। কিন্তু মহাকাশ তো বলতে গেলে শুন্য। সূর্যে অক্সিজেন নাই তাও কেন আগুন জ্বলে? কিভাবে জ্বলে? সূর্যে আমরা যেটা দেখি তা আগুন নয়। আগুন বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো অক্সিজেনের উপস্হিতিতে দহণ প্রক্রিয়া। কিন্তু সূর্যের ভেতরে যা ঘটে তা দহন নয়। বরং, নিউক্লীয় ফিউশন বিক্রিয়া।

নিউক্লীয় বিক্রিয়া হতে প্রচন্ড তাপমাত্রার দরকার, অক্সিজেনের দরকার হয় না। সূর্যে অক্সিজেন না থাকায় দহন বিক্রিয়ার পরিবর্তে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটে। সূর্যের মূল অংশে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিগুলি প্রচণ্ড চাপ এবং তাপমাত্রা তৈরি করে। এই স্তরে সূর্যের তাপমাত্রা প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডিগ্রি ফারেনহাইট।ফলে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলি সংকুচিত এবং একসাথে ফিউজ হয়ে হিলিয়াম তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াটিকে পারমাণবিক ফিউশন বলা হয়।
গ্যাসগুলি গরম হওয়ার সাথে সাথে পরমাণুগুলি চার্জযুক্ত কণায় বিভক্ত হয়ে গ্যাসকে প্লাজমাতে পরিণত করে। এভাবে প্রতিনিয়ত শক্তি উৎপন্ন হতে থাকে। আর এসব কণা মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময় তৈরি হয়েছিল। নক্ষত্ররা মুলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দ্বারা গঠিত। যেসব বস্তুর ভর বেশি হয় তাদের কেন্দ্রে সৃষ্টি হয় প্রচন্ড চাপ ও তাপ। কারণ, বস্তুরটি চতুর্দিক থেকে সে অংশে চাপ দেয়। নক্ষত্রদের ভর অনেক বেশি হওয়ায় তার কেন্দ্রে সৃষ্টি হয় প্রচন্ড তাপ ও চাপ। আবার আমরা জানি, গ্যাসীয় পদার্থসমূহ অনবরত গতিশীল থাকে, যা তার তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এ ছোটাছুটির গতি বৃদ্ধি পায়। কমলে, হ্রাস পায়। নক্ষত্রদের কেন্দ্রের তাপমাত্রা গড়ে থাকে সর্বনিম্ন ১০ মিলিয়ন কেলভিন থেকে তারও বেশি৷
তবে উল্লেখ্য, কেন্দ্রের এ তাপমাত্রা অবশ্যই নক্ষত্রদের ভরের উপর নির্ভরশীল। ভর যতো বেশি, তাপমাত্রা ততো বেশি সৃষ্টি হবে। কেন্দ্রে তাপ অত্যাধিক হওয়ায় এর কেন্দ্রের কোরে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস এতো দ্রুত ছোটাছুটি করে যে, তারা একে অপরের সাথে তীব্র গতিতে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ও সংযুক্ত হয়ে যায়। এভাবে, দুটো হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে হিলিয়ামে পরিণত হচ্ছে৷ সূর্যে যা ঘটে তা সাধারণ অর্থে আগুন জ্বলার মত রাসায়নিক বিক্রিয়া নয়।
সূর্যে পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটে। সূর্যসহ সব নক্ষত্র নিজের শক্তি নিজে তৈরি করে। নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমেই এই শক্তি উৎপন্ন হয়। নিউক্লিয়ার ফিউশনে দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু যোগ হয়ে একটা হিলিয়াম পরমাণুর সৃষ্টি হয় এবং কিছু শক্তির সৃষ্টি হয়। এরকম কোটি কোটি হাইড্রোজেন পরমাণু একই সঙ্গে হিলিয়াম পরমাণুতে রূপান্তরিত হয় বলে একই সাথে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় সূর্যে। আর, এ হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম হওয়ার সময় প্রচন্ড শক্তি নির্গত হয়, যা তাপ ও আলো রুপে দৃশ্যমাণ হয়। এ বিক্রিয়াকে বলে নিউক্লীয় ফিউশন। আইনস্টাইনের তত্বমতে, এই যে সূর্যের শক্তি নির্গত হয় সেখানে সূর্যের গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজন নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরীণ শক্তিরই কিছু অংশ মুক্ত হয়, যা আলো ও তাপরুপে দৃশ্যমাণ হয়। আর, সূর্যসহ নক্ষত্রদের সকল শক্তির উৎস এটিই।
তথ্যসূত্রঃ https://www.wtamu.edu/~cbaird/sq/2015/03/20/why-does-the-sun-not-run-out-of-oxygen-as-it-burns/
লিখেছেনঃ আনিকা আনতারা প্রধান | টিম সায়েন্স বী