মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সঙ্গে দুধের কী সম্পর্ক? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+3 টি ভোট
419 বার দেখা হয়েছে
"জ্যোতির্বিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (141,850 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (141,850 পয়েন্ট)
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর

আমরা পৃথিবীর বাসিন্দারা ‘মিল্কিওয়ে’ নামে একটি গ্যালাক্সির অংশ। পৃথিবীসহ সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ নিয়ে এই গ্যালাক্সিকে আবর্তন করছে সূর্য। শহর থেকে দূরে গ্রামের দূষণমুক্ত আকাশে একটু লক্ষ করলে মিল্কিওয়ের দেখা পাওয়া যাবে। চাঁদ ওঠেনি কিংবা উঠলেও উজ্জ্বলতা একদমই অল্প, এ রকম কোনো রাতে লক্ষ করলে আকাশের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি প্রণালি দেখা যাবে। অনেক তারার লম্বা একটি লাইন এবং এই লাইনের তারাগুলোর উজ্জ্বলতাও বেশি। মনে হবে, পুরো আকাশকেই ঘিরে রেখেছে এই লাইন বা প্রণালি, এটিই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। ভালো করে বললে বলতে হবে মিল্কিওয়ের অংশবিশেষ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গ্যালাক্সির এ রকম নাম কেন? খাবারের নামে গ্যালাক্সির নাম কেন হলো? আর এত কিছু থাকতে সেখানে মিল্ক বা দুধই বা কেন এল?

গ্যালাক্সির নাম সাধারণত এ রকম হয় না। নতুন নতুন যত গ্যালাক্সি, নক্ষত্র ও গ্রহ আবিষ্কৃত হয়, সেগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নামকরণ করা হয়। তবে কিছু কিছু গ্যালাক্সি বা নাক্ষত্রিক বস্তু আছে, যেগুলো প্রাচীনকালের মানুষেরাও আলাদাভাবে শনাক্ত করতে পেরেছিল। গ্যালাক্সি যে আসলে অনেক নক্ষত্রের সমাহার, তারা হয়তো এটা জানত না। কিন্তু এগুলো যে আকাশের অন্যান্য সাধারণ তারা থেকে আলাদা, সেটি ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। আকাশে বসবাসকারী বিশেষ বিশেষ এই বস্তুগুলোকে তারা আলাদা নাম দিয়েছিল।

আকাশের এসব বস্তুকে তারা দেব-দেবী বলে মনে করত এবং সে অনুসারে নাম দিত।

আমরা যে গ্রহটিকে শুক্র গ্রহ বলে জানি, সেটি ছিল প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী ভেনাস। এন্ড্রোমিডা নামের একটি গ্যালাক্সি আছে, যার নামকরণ হয়েছিল গ্রিক পুরাণের এক দেবীর নামে। বৈজ্ঞানিকভাবে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির নাম হচ্ছে M31। তেমনই মিল্কিওয়ের নামও এসেছে পৌরাণিক কাহিনি থেকে।

গ্রিক পুরাণে দেবতাদের রাজা হচ্ছেন জিউস এবং তাঁর স্ত্রী হেরা। হেরার অজান্তে দেবরাজ জিউস সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মর্ত্যের এক নারীর সঙ্গে। ওই নারীর গর্ভে জন্ম নেয় একটি ছেলেসন্তান। এই সন্তানের নাম হারকিউলিস। পুরাণমতে, আকাশের দেব-দেবীরা অমর, আর মর্ত্যের মানুষেরা মরণশীল। পিতা অমর ও দেবতা, অন্যদিকে মাতা মরণশীল ও সাধারণ মানুষ। এই দোটানায় হারকিউলিস না হয়েছেন অমর, না হয়েছেন মরণশীল, না হয়েছেন মানুষ, না হয়েছেন দেবতা। পড়েছেন মাঝামাঝিতে।

তবে পুরোপুরি দেবতা ও অমর হওয়ার জন্য একটা রাস্তা খোলা আছে। হারকিউলিসকে যদি আকাশলোকের দেবী হেরার মাতৃত্ব দেওয়া হয় এবং তাঁর দুধ খাওয়ানো হয়, তাহলে তিনি অমর হতে পারবেন। একই সঙ্গে দেবতার সম্মান পাবেন। সে জন্য দেবরাজ জিউস তাঁর সন্তানকে নিয়ে এলেন আকাশলোকে। কিন্তু বেঁকে বসলেন জিউসের স্ত্রী দেবী হেরা। তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করে মর্ত্যের মানুষের সঙ্গে যে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন জিউস, তাকে নিজের দুধ খাওয়াবেন না কোনোক্রমেই।

উপায় না দেখে জিউস অন্য পন্থার কথা ভাবলেন। হেরা যখন ঘুমিয়ে থাকবেন, তখন সুযোগ বুঝে দুধ খাইয়ে নেবেন হারকিউলিসকে। ঘুমন্ত অবস্থায় যখন দুধ খাওয়াতে গেলেন, তখন একপর্যায়ে হেরা জেগে উঠলেন এবং শিশু হারকিউলিসের কাছ থেকে দ্রুত নিজের স্তন ছাড়িয়ে নিলেন। তড়িঘড়ি করার কারণে ছাড়িয়ে নেওয়ার মুহূর্তে স্তন থেকে কিছু দুধ ছিটকে গিয়ে সারা আকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

বড় একটি আধারে দুধ রেখে যদি তাতে ছোট একটি ছিদ্র করা হয়, তাহলে ছিদ্র দিয়ে লম্বা একটি ধারায় দুধ পড়তে থাকবে। ছোট ছোট দুগ্ধকণা চিড়চিড় করে ছড়িয়ে গিয়ে একটি শ্বেত-শুভ্র প্রণালি তৈরি করবে। ঠিক এ রকমই হয়েছিল দেবী হেরার নির্গত দুধের বেলায়। শ্বেত-শুভ্র দুগ্ধ চিড়চিড় করে। দুধ থেকে সৃষ্ট এই প্রণালি বা রাস্তাকেই তখনকার মানুষ নাম দিয়েছিল ‘দুগ্ধ প্রণালি’ বা ‘মিল্কিওয়ে’। তবে গল্পটি পুরোই পৌরাণিক। এর বাস্তব ভিত্তি নেই।

মিল্কিওয়ে নামটি এসেছে রোমান শব্দ থেকে। রোমানরা এই গ্যালাক্সির নাম দিয়েছিল ভায়া লেকটা (Via lactea)। এর অর্থ হচ্ছে দুধের রাস্তা (Road of milk)। তবে রোমানরাই প্রথম নয়, যারা এ রকম নাম দিয়েছিল। রোমানরা শব্দটি পায় গ্রিক শব্দ Galaxias kyklos থেকে। এর অর্থ হচ্ছে দুগ্ধময় বৃত্ত (Milky circle)।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির জন্য এ রকম কাহিনি কল্পনা করে নেওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, এটি দেখতে বেশ উজ্জ্বল এবং কিছুটা দুধের মতো। প্রণালিও অনেক লম্বা। মিল্কিওয়ের মতো আরও সাত-আটটি গ্যালাক্সি আছে, যাদের নাম এমন ব্যতিক্রম।

একেক এলাকায় মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একেক নাম। কারণ, সারা পৃথিবী থেকেই এটি দেখা যায়। তাই পরস্পর যোগাযোগবিচ্ছিন্ন আলাদা এলাকার মানুষ আলাদা নামকরণ করবে, এটাই স্বাভাবিক। ভারতবর্ষে গ্যালাক্সিটির নাম ‘আকাশগঙ্গা’। প্রাচীন ভারতের আকাশ পর্যবেক্ষকদের কাছে এটিকে নদীর ধারার মতো মনে হয়েছিল। তাদের বিশ্বাস অনুসারে, গঙ্গা একই সঙ্গে মর্ত্যলোকে এবং আকাশলোকে বিরাজমান। আকাশের ‘আকাশগঙ্গা’ আর ভূমির ‘গঙ্গা’ একই ধারায় প্রবাহিত। সে জন্যই গঙ্গা নদীকে অনেক সম্মান করা হয় সনাতন ধর্মে।

যে অংশটি দেখে মিল্কিওয়ের নামকরণ করা হয়েছিল, সেটি আসলে পুরোপুরি মিল্কিওয়ে নয়, ছোট একটি অংশ মাত্র। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি সর্পিলাকার। এর ব্যাস প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ। কেউ যদি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কোনো বিরতি ছাড়াই সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার ভ্রমণ করে, তাহলে মিল্কিওয়ের এ মাথা থেকে ও মাথায় যেতে এক লাখ বছর লেগে যাবে। এই গ্যালাক্সির মূল সর্পিল আকৃতি আর বিস্তৃতির পরিমাণ সম্বন্ধে যদি তখনকার মানুষ জানত, তাহলে এর নাম মনে হয় না কখনোই ‘মিল্কিওয়ে’ রাখত।

[লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ]

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 321 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
2 টি উত্তর 853 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 489 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 269 বার দেখা হয়েছে
20 জুলাই 2023 "রসায়ন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Taskin Rahman Ratul (120 পয়েন্ট)

10,826 টি প্রশ্ন

18,535 টি উত্তর

4,745 টি মন্তব্য

841,972 জন সদস্য

18 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 17 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. thomohomnaygalad

    100 পয়েন্ট

  2. jordanretrosvn

    100 পয়েন্ট

  3. bet88vnin

    100 পয়েন্ট

  4. lvbugcom1

    100 পয়েন্ট

  5. 99okvndesign

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল #science কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন গাছ মনোবিজ্ঞান খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার দুধ উপায় হাত শব্দ মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য বাচ্চা হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...