স্মরণশক্তি বৃদ্ধির সহজ উপায় ? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+19 টি ভোট
4,131 বার দেখা হয়েছে
"চিন্তা ও দক্ষতা" বিভাগে করেছেন (71,000 পয়েন্ট)

2 উত্তর

+4 টি ভোট
করেছেন (71,000 পয়েন্ট)
পরীক্ষার আগের রাতে এতো এতো পড়ার পরও হলে গিয়ে কিছুই মনে থাকে না, মাথা থেকে একদম উধাও! কেন এমনটা হলো? তাহলে কি আপনার ব্রেনের ধারণ ক্ষমতা কম? এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের ব্রেন ২.৫ পেটাবাইটস ডাটা ধারণ করতে পারে। ১ পেটাবাইটস = ১০২৪ টেরাবাইটস , ১ টেরাবাইটস = ১০২৪ গিগাবাইটস। এবার ধরি, যদি একটি কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক ১ টেরাবাইটস বা ১০২৬ জিবি হয় তাহলে ২.৫ পেটাবাইটস = ২৫৬০ টি কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের ধারণক্ষমতার সমান। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের ব্রেনে ২৫৬০ টি কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের সমান তথ্য ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছে । এবার হয়তো ভাবছেন আমাদের ব্রেনে যদি এতো ধারণ ক্ষমতা থাকে, তাহলে আমরা মনে রাখতে পারি না কেন? ঠিক ধরেছেন, এমনটা হতে পারে স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার কারণে।
.
মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে?

বহুবছর ধরেই বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে এ নিয়ে গবেষণা করছেন। বছরের পর বছর গবেষণার পর কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। আমাদের মগজের বাইরের স্তরের নিচে ছোট একটি অংশ রয়েছে যার নাম ‘হিপোক্যাম্পাস’। মাত্র কয়েক সেন্টিমিটারের এই অংশটুকু মস্তিষ্কের মূল অংশের সাথে দারুণভাবে জড়িত। এ অংশটি নতুন কিছু শেখার ও স্মৃতির জন্য কাজ করে। ইউনিভার্সিটি অব লেসিস্টারের গবেষকরা জানান, হিপোক্যাম্পাসের আশপাশের কয়েকটি অংশেই নতুন তথ্য বিশেষ প্রক্রিয়া সংরক্ষিত হয়। মস্তিষ্কের বাইরের দিকে ভাঁজ হয়ে রয়েছে কর্টেক্স। এটি আকারে হিপোক্যাম্পাসের চেয়ে বড় এবং অসংখ্য কাজ করে। দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর নড়াচড়া এর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষ কিছু অনুভূতির জন্যে, যেমন- রাতে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে তারা দেখার সময় আমরা যা অনুভব করি তার জন্যে মস্তিষ্কের কর্টেক্স বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। পুরনো বন্ধুকে চিনতে, পাখির ডাক শুনতে এবং দখিনা বাতাসের অনুভূতি পেতে কাজ করে কর্টেক্স। এ ধরনের অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কে জড়ো হয়ে থাকে। এমন বহু অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কর্টেক্সজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। পুরনো কিছু মনে করার সময় মস্তিষ্ক শুধুমাত্র এই অংশ থেকে তথ্যটা খুঁজে নেয়। নিউরোলজিস্ট গিওর্গি বুসাকি ২০০৬ সালে প্রকাশিত ‘রিদমস অব দ্য ব্রেন’ বইয়ে লিখেছিলেন, কর্টেক্স হলো মস্তিষ্কের বিশাল লাইব্রেরি, আর হিপোক্যাম্পাস সেখানকার লাইব্রেরিয়ান।
.
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়ঃ-

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন নানা গবেষণার মাধ্যমে খুঁজে বের করতে চেয়েছেন স্মরণশক্তি বাড়ানোর উপায়। এর মাঝে খুঁজেও পেয়েছেন কিছু পদ্ধতি। আসুন তাহলে জেনে নিই সেই পদ্ধতিগুলো কী কী:--

১. মেডিটেশনঃ-

একাগ্র মনের কোনো চিন্তার নাম ‘meditation’।এটি শুধু মনকেই কেন্দ্রীভূত করে জাগিয়ে তোলে না, শরীরেরও উপকার করে। আমরা জানি, মানুষের শারীরিক শক্তির অন্যতম উৎস হলোমন। মন যখন শান্ত থাকে, মানুষ তখন তার মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে।আর মনকে স্থির করার সফলতম পদ্ধতি হলো মেডিটেশন (meditation)।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটেশন স্মরণশক্তি এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। যদি এমনটা হয় যে আপনি কোনো কিছু মনে রাখতে পারছেন না, তাহলে মেডিটেশন আপনাকে সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সহায়তা করবে।

২. ব্যায়ামে মস্তিষ্কের আকার বাড়েঃ-

শরীরচর্চা করলে দেহের পেশির সাথে সাথে মস্তিষ্কের আকারও বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের সিন্যাপসের সংখ্যা বাড়ে। এর ফলে মগজে নতুন নতুন কোষ তৈরি হয়। ব্যায়ামের ফলে মগজে বেশি হারে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয়।
যেমনঃ হাঁটা খুবই সাধারণ এবং উপকারি একটি ব্যায়াম। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার ফলে ব্রেনের বিভিন্ন এরিয়ার যোগাযোগ ক্ষমতা বাড়ে। নিয়মিত হাঁটার ফলে ব্রেনের নিউরাল কানেকশনের উন্নতি ঘটে। যার ফলে পরিকল্পনা তৈরি, কাজের স্ট্র্যাটেজি সাজানো, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, প্রায়োরিটি সেট করাসহ নানা কাজে ব্রেনের ক্ষমতা বেড়ে যায়। আর আপনি যদি দিনের খোলা আকাশের নিচে ব্যায়াম করেন, তাহলে বাড়তি পাওনা হলো ভিটামিন-ডি।

৩. নতুন কিছু করুনঃ-

আমাদের ব্রেন প্রতিদিন একই ধরনের কাজ করতে করতে একটা সময় ঝিমিয়ে পড়ে। তাই ব্রেনকে সচল রাখতে নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন। ডুডলিং, ছবি আঁকা বা নতুন কোনো ভাষা শিখুন। অনলাইনে দাবা খেলতে পারেন বন্ধুর সাথে তাতে আপনার সামাজিক যোগাযোগটাও উন্নত হবে আর আপনার ব্রেনের কার্যক্ষমতাও বাড়বে। এছাড়াও নতুন কাজ করতে আমাদের মস্তিষ্ক একধরনের প্রশান্তি অনুভব করে থাকে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় হিসেবে দারুণ কাজে দেয়।

৪. বিপরীত হাত ব্যবহারের অভ্যাসঃ-

আমরা যখন ডান হাত দিয়ে কোনো কাজ করি, তখন আমাদের বাম পাশের ব্রেন কাজ করে। ডান পাশের ব্রেন কোনো কাজ করতে পারে না। তাই স্মরণশক্তি বাড়াতে বাম হাতের ব্যবহার শুরু করুন। যেমন: বাম হাত দিয়ে ব্রাশ করা, কোন কিছু লেখা ইত্যাদি। প্রথম প্রথম অসুবিধা হলেও নিয়মিত চর্চা করলে অভ্যাস হয়ে যাবে। এছাড়াও সম্প্রতি আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব মানুষের চুইংগাম খাওয়ার অভ্যাস থাকে তারা অন্যান্যদের তুলনায় বেশি স্মৃতিশক্তির অধিকারী হয়ে থাকেন। চুইংগাম খাওয়ার সময়ে নড়তে থাকা মুখমণ্ডলের হাড় ও মাংসপেশী মস্তিষ্কের ৮ টি অংশকে নাড়াতে পারে। এক্ষেত্রে মাত্রাটা হয়তো খুব একটা বেশি নয়। তারপরও মানুষকে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি স্মৃতিশক্তির অধিকারী করে তোলে চুইংগাম। তাই বলে আবার ক্লাসরুম কিংবা অফিসে চুইংগাম মুখে রাখবেন না যেন!

৫. প্রচুর পড়তে হবেঃ-

ন্যাচারাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ কাউন্সিল অফ কানাডার অর্থায়নে ২০১১ সালে একটি গবেষণাতে দেখা যায়, যারা জোরে শব্দ করে পড়ে কিংবা পড়ার সময় শ্রবণের সাহায্য নেয়, তারা ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে সেই পড়া অধিক মনে রাখতে পারে। লোহা যেমন অনেকদিন ঘরে রাখলে জং ধরে যায়, ঠিক তেমনি নিয়মিত ব্রেন চর্চা না করলেও স্মরণ শক্তি কমে যায়।
নিয়মিত পড়াশুনা মানুষের বুদ্ধিমত্তার কোষগুলোকে নতুন নতুন উপায়ে প্রশিক্ষণ দিতে থাকে। এমনকি ব্রেনের যে কোষগুলো আগে ব্যবহার হয়নি সেই কোষগুলোকেও সচল করে দিতে থাকে। পড়ার সময়টাতে মনোযোগ বাড়াতে দায়ী কোষগুলোতে রক্ত চলাচল কার্যকর করে তাই স্মরণশক্তি বাড়ে।

৬. ঘুম স্মৃতি সংরক্ষণে সহায়তা করেঃ-

দৈনিক পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুম হলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুম হলে মস্তিষ্ক সজাগ হওয়ার সময় পায় না। সূর্যের কিরণ যখন আপনার বন্ধ চোখের পাতা ভেদ করে ঢুকে পড়ে, তখন সেটা মস্তিষ্ককে কর্টিসল হরমোন ছড়িয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করে।
স্মরণশক্তি বাড়াতে ঘুম খুব কার্যকরী। রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুম হলে মস্তিষ্কে বাঁধা সৃষ্টি করে। এতে করে আপনার মস্তিষ্ক ৭ বছর বুড়িয়ে যেতে পারে।ঘুম মস্তিষ্কের অন্যতম ডিটক্সিফাইন কর্ম। সারারাত ঘুমানোর সময় মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিকর পদার্থ ব্রেন থেকে সরিয়ে দেয়, যা স্মরনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই এখন থেকে ঘুমটা হোক নিয়মিত।

স্মরণশক্তি বৃদ্ধির উপরোক্ত উপায়গুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। প্রতিদিনকার চেষ্টার মাধ্যমে নিজের স্মরণশক্তিকে বাড়িয়ে তুলুন এবং সাফল্যকে ছুঁয়ে দিন সবার আগে, সবচেয়ে কম সময়ে!
0 টি ভোট
করেছেন (43,970 পয়েন্ট)
নিজের প্রতিটি কাজ লিখে রাখার অভ্যাস--স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর একটা সহজ উপায় হল নিজের মত করে কাজের রুটিন তৈরি করা, আর সেটা পালন করা। রুটিন পালন করে কোনও কাজ করলে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি মনে রাখতে পারে। ... বা কোন কাজটা করা হল বা করা হল না। সে সবই লিখে রাখলে সহজেই তা মনে থাকে।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
4 টি উত্তর 310 বার দেখা হয়েছে
06 জুলাই 2022 "বিবিধ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন তানজীব (140 পয়েন্ট)
+11 টি ভোট
2 টি উত্তর 397 বার দেখা হয়েছে
+8 টি ভোট
1 উত্তর 871 বার দেখা হয়েছে
15 অক্টোবর 2020 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Md Akash Mia (200 পয়েন্ট)
+9 টি ভোট
1 উত্তর 240 বার দেখা হয়েছে
13 সেপ্টেম্বর 2020 "মনোবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন বিজ্ঞানের পোকা ৫ (123,340 পয়েন্ট)

10,723 টি প্রশ্ন

18,367 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

241,058 জন সদস্য

57 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 56 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Ayon Ratan Agni

    390 পয়েন্ট

  2. Al Moyaj Khondokar

    210 পয়েন্ট

  3. Vuter Baccha

    150 পয়েন্ট

  4. Hasan rafi

    140 পয়েন্ট

  5. Mehedi_Bknowledge

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি প্রাণী স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া শীতকাল গরম কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ মস্তিষ্ক শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন গ্রহ রসায়ন তাপমাত্রা উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা পাখি গ্যাস মন সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম বিড়াল কান্না নাক
...