কোয়ান্টাম কণার স্পিন বলতে কী বোঝায়? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+2 টি ভোট
761 বার দেখা হয়েছে
"পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (135,480 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)

Abdul Gaffar Rony

 

স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা

image

ছবি সূত্র : scx2.b-cdn.net

সোমারফেল্ডের ছাত্র উলফগ্যাং পাউলি। তিনি আবিষ্কার করেন পরমাণুর চতুর্থ কোয়ান্টাম সংখ্যা। সেটার পরিপূর্ণ কাঠামো দাঁড় করান ১৯২৪ সালের মধ্যভাগে। ততদিনে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের রিডার সত্যেন্দ্রনাথ বসু তাঁর বিখ্যাত বোস আইনস্টাইন পরিসংখ্যানের জন্ম দিয়ে ফেলেছেন। তবু আমরা পাউলির তত্ত্বই আগে আলোচনা করছি। কারণ, চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যাকে আমরা এই বইয়ে পরপর রাখতে চাই।

যে তত্ত্বের সাহায্যে পাউলি তাঁর চতুর্থ কোয়ান্টাম সংখ্যার ব্যাখ্যা দেন তার পোশাকি নাম ‘পাউলির অপবর্জন নীতি’। আগের অধ্যায়ে আমরা তিনটি কোয়ান্টাম সংখ্যা দেখে এসেছি। তিনটি কোয়ান্টাম সংখ্যার জন্য তিন ধরনের কক্ষপথ পেয়েছি। সব কক্ষপথেই একধিক ইলেকট্রন থাকতে পারে। কোনোটি ক্ষেত্রেই কিন্তু এরকম কোনো শর্ত নেই যে কোনোটিতেই একাধিক ইলেকট্রন থাকতে পারবে না। এই শর্ত না থাকাটাও একটা সমস্যা। ইলেকট্রনের চার্জ আছে। সমধর্মী চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। প্রতিটা ইলেকট্রন ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। প্রতিটার ভরও সমান। তাই ভরের পার্থক্যের কারণে চার্জের প্রভাব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই কারো। দুটো ইলেকট্রন পাশাপাশি একই কোয়ান্টাম স্তরে থাকলে তাঁরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করবে। কিন্তু বোর- সোমারফেল্ডের মডেলে এ সমস্যার সমাধান ছিল না।

পাউলি বললেন, একই কোয়ান্টাম স্তরে কখনোই দুই ইলেকট্রন একই অবস্থায় থাকতে পারে না। তারমানে এই নয় তাঁরা একই স্তরে থাকতে পারবে না। অবশ্যই থাকতে পারবে যদি তাদের চেহারা ভিন্ন থাকে। এই বিষয়টা একটু খোলসা করা দরকার। ধরা যাক, একই কক্ষপথে দুটো ইলেকট্রন পাশাপাশি আছে। তারা নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে কোনো এক কক্ষপথে ঘুরছে। ধরা যাক, এদের গতিটা পৃথিবীর বার্ষিক গতি। কিন্তু এদের মধ্যে পারস্পারিক বিকর্ষণ বলও কাজ করবে। তবে কি এরা পরস্পরকে দূরে ঠেলে দেবে? না, সেটা পারবে না। কারণ দূরে ঠেলে দিতে চাইলে কোনো একটা ইলেকট্রন হয়তো কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাবে। সেটা তো হতে পারে না। তাহলে যে পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রনের ভারসাম্যই থাকে না। বোর-সোমারফেল্ডের মডেলের অস্তিত্বই বা তখন কোথায় থাকে!

তবু বিকর্ষণের একটা প্রভাব থাকবে। পাউলি বললেন, সেই বিকর্ষণের প্রভাবে ইলেকট্রন নিজ অক্ষের ওপর ঘুরবে। তবে দুটো একদিকে নয়। একটা যদি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে তাহলে আরেকট ঘুরবে ঘড়ি কাঁটার বিপরীত দিকে। নিচের ছবিতে চোখ বুলিয়ে দেখুন বিষয়টা বেশ স্পষ্ট হবে।

image

পাউলি বললেন, নিজ অক্ষের ওপর ইলেকট্রন এই ঘূর্ণনের জন্য আরেকটা কোয়ান্টাম সংখ্যার দরকার হবে। পাউলি সেটার নাম দিলেন স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা। আর বললেন, একজোড়া ইলেকট্রনের চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যাই এক হতে পারে না। যদি প্রথম তিনটে কোয়ান্টাম সংখ্যা এক হলেও চতুর্থ কোয়ান্টাম সংখ্যা আলাদা হবে। অর্থাৎ দুইটা ইলেকট্রন একই প্রধান সংখ্যার, এই উপস্তরের একই চৌম্বক শক্তিস্তরে যদি থাকে তাহলে তাদের ঘূর্ণনের দিক আলাদা হবে। এটাই পাউলির বিখ্যাত অপবর্জন নীতি।

একই কক্ষপথের একজোড়া ইলেকট্রনের জন্য পাউলি দুটো সংখ্যা ব্যবহার করলেন, একটার জন্য +১/২ অন্যাটার জন্য -১/২। এখানে ধণাত্মক ও ঋণাত্মক চিহ্ন দিয়ে যথাক্রমে ঘড়ির কাঁটার দিকে ও বিপরীত দিকে ঘূর্ণনের কথা বলা হয়েছে।

উলফগ্যাং পাউলি

দুই
স্পিন ব্যাপারটা বড় সুবিধার নয়। সাকিব আল হাসানের ঘুর্ণিবলের নাম শুনলে আঁৎকে ওঠে বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা। তাঁর স্পিনের জাদু যে নাকাল করে ছাড়ে ব্যাটসম্যানদের। তেমনি কণাজগতের স্পিনে খেই হারায় সাধারণ বিজ্ঞানপ্রেমীরা। ডানহাতি বা বামহাতি স্ক্রু নিয়ম, আপ-ডাউন, প্লাস-মাইনাস, অর্ধস্পিন-পূর্ণস্পিন আরও কত কী! আগে অর্ধ আর পূর্ণ স্পিনের গোলমালটা ঝেড়ে ফেলা যাক।

ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম সংখ্যা +১/২ অথবা -১/২। এছাড়া ১, ২, ৩ ইত্যাদি পুর্ণসংখার কোয়ান্টাম কণিকাও আছে। অনেকেই এই বিষয়টাতে ভুল করেন। মনে করেন, যেসব কণিকা ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরার পর আবার বিপরীত দিকে ঘোরে তাদের কোয়ান্টাম সংখ্যা ১। আর যেসব কণা ১৮০ ডিগ্রি একদিকে ঘোরে, তারপর দিক পরিবর্তন করে ঘোরে বিপরীত দিকে, সেসব কণার স্পিন ১/২। কিন্তু ওটা ভুল। ১ বা ১/২ কোয়ন্টাম সংখ্যার ক্ষেত্রে এভাবে হিসাবে করলে হয়তো ফল বেরোত। কিন্তু ২ বা ৩ কোয়ান্টাম সংখ্যার হিসাব এভাবে মেলানো কি সম্ভব?

সমস্যা আছে আরও একটা। একদিকে ঘোরার পর বিপরীত দিকে ঘুরতে হলে আগে থামতে হবে কণাকে। কিন্তু কণা যদি থেমে যায়, তাহলে নষ্ট হবে তার শক্তির ভারসাম্য। এর ফল মারাত্মক। নষ্ট হবে গোটা পরমাণুরই স্থিতিশীলতা। পরমাণুর স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়া মানে গোটা মহাবিশ্বের স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়া। তাই স্থিতিশীলতা ঠিক রাখতে হলে কণাদের অবিরাম একই দিকে ঘুরতে হবে। এবং এর মধ্য থেকেই বের করে আনতে হবে কোয়ান্টামের হিসাব-নিকাশ।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, কণারা যখন ঘোরে, কিছুক্ষণ পর পর তাদের চেহারা পবিরর্তন হয়। তার মানে ঘুর্ণনের একেক পর্যায়ে একেক রকম দেখায় কণাগুলোকে। তবে একটা নির্দিষ্ট কৌণিক ব্যবধান অতিক্রম করার পর এরা আবার আগের চেহরায় ফিরে আসে। ধরা যাক, একটা তাস আছে আপনার হাতে। সেটা হলো ইস্কাপনের টেক্কা। এটাকে আপনি কিছুটা ঘোরালে একই চেহারা পাবেন না। একে ঠিক আগের চেহারায় পেতে হলে পুরো ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়ে আনতে হবে।

যেসব কণার স্পিন ১, তাদের ঘূর্ণনটা ইস্কাপনের টেক্কার সাথে তুলনা করা যেতে পারে

আসলে ৩৬০ ডিগ্রিতে একটা চক্র পূর্ণ হয়। ঠিক একটা পূর্ণ চক্র ঘুরতে যে কবার একই চেহরায় ফিরে আসে একটা কণা, তা-ই হলো ওই কণার স্পিন কোয়ন্টাম সংখ্যা। ইস্কাপনের টেক্কাকে একটা কণার সাথে তুলনা করা যাক। ঠিক এমন একটা কণা থাকলে তার স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা হত ১। কারণ প্রতিটা পুর্ণ চক্রে কণাটি একবারই আগের চেহারায় ফিরে আসে।

কোনও কোনও কণা ১৮০ ডিগ্রি ঘোরার পরেই আগের চেহারায় ফিরে যায়। এসব কণার কোয়ান্টাম সংখ্যা হবে ২। কারণ কণাটি একটি চক্র পুর্ণ করতে দুবার প্রাথমিক রূপে ফিরে আসছে। এই কণাটিকে তাসের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। হরতনের টেক্কার সাথে। হরতনের টেক্কাকে ১৮০ ডিগ্রি ঘোরালে আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

কিছু কণার স্পিন সংখ্যা ৩। সেই কণা প্রতি ১২০ ডিগ্রি পর পর আগের চেহারায় ফিরে আসে। ৩৬০ ডিগ্রি অর্থাৎ এক চক্র পূর্ণ করতে করতে প্রাথমিক চেহারায় ফিরে আসে ৩ বার । তাই ওই কণার স্পিন ৩।

এত গেল পূর্ণ সংখ্যার স্পিনের গল্প। ১/২ স্পিনের কণার সংখ্যাই প্রকৃতিতে বেশি। ওদের স্পিন সংখ্যার হিসাব তাহলে কেমন হবে? ওদের হিসেবটাও একই রকম।

হরতনের কিংয়ের ঘুর্ণনের সাথে তুলনা করা যেতে পারে ১/২ স্পিনের কণাদের

ওই কণার আগের চেহারায় ফিরে আসতে দুবার পুর্ণ চক্র পেরিয়ে আসতে হয়। অর্থাৎ ৭২০ ডিগ্রি ঘোরার পর এসব কণা আদিরূপে ফিরে আসে। তারমানে, এক পুর্ণ চক্রে অর্ধেক স্পিন পূর্ণ করে। তাই এর স্পিন ১/২। এমন বস্তু কল্পনা করা যায়? আমাদের বাস্তব জগতের যেকোনও বস্তুকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরালে আগের চেহারায় ফিরে পাওয়া সম্বব। তাই ৭২০ ডিগ্রি ঘোরার পরে প্রাথমিক চেহারায় ফিরে আসার বিষয়টা কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু কোয়ান্টাম জগতে এগুলো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
স্পিন ধনাত্মক ও ঋণাত্মকর কেন হয়? ধনাত্মক ও ঋণাত্মকের চিহ্ন দিয়ে কণার ঘুর্ণন কোন দিকে সেটাই বোঝায়। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখা জরুরি। যেসব কণার স্পিন ১,২,৩…বা -১,-২,-৩ ইত্যাদি পূর্ণ সংখ্যা তাদেরকে বোসন কণা বলে। আর যেসব কণার স্পিন ১/২ কিংবা -১/২ (ভগ্নাংশ) সেসব কণা হলো ফার্মিয়ন কণা।

লেখাটি কোয়ান্টাম ফিজিকস বইয়ের অংশ বিশেষ

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 176 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 962 বার দেখা হয়েছে
13 জুলাই 2022 "পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন স্বপ্নিল (7,560 পয়েন্ট)
+4 টি ভোট
1 উত্তর 152 বার দেখা হয়েছে
27 ফেব্রুয়ারি 2021 "পদার্থবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Martian (93,090 পয়েন্ট)
+2 টি ভোট
1 উত্তর 8,462 বার দেখা হয়েছে
+4 টি ভোট
2 টি উত্তর 834 বার দেখা হয়েছে

10,723 টি প্রশ্ন

18,367 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

241,151 জন সদস্য

64 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 64 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Ayon Ratan Agni

    390 পয়েন্ট

  2. Al Moyaj Khondokar

    210 পয়েন্ট

  3. Vuter Baccha

    150 পয়েন্ট

  4. Hasan rafi

    140 পয়েন্ট

  5. Mehedi_Bknowledge

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি প্রাণী স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া শীতকাল গরম কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ মস্তিষ্ক শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন গ্রহ রসায়ন তাপমাত্রা উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা পাখি গ্যাস মন সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম বিড়াল কান্না নাক
...