মানুষের মস্তিষ্ক খাওয়া যায় না কেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
308 বার দেখা হয়েছে
"জীববিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (20,400 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (20,400 পয়েন্ট)
"মানুষের দেহের সব অংশ খাওয়া গেলেও একটা অংশ খাওয়া উচিত না, আর তা হলো মানব মস্তিষ্ক"- পুনর্জন্ম ৩ এ এই ধরনের ডায়ালগ আর দৃশ্য দেখে একটু গা গুলিয়ে গেলো। এমনিতেই মানুষ আবার মানুষের মাংস খাবে এটা ভাবতেই  ঘৃণা লাগে। কিন্তু স্পেসিফিকভাবে মানুষের মস্তিষ্কে কি সমস্যা?

ক্যানিবালিজম বহুকাল আগে থেকেই এই পৃথিবীতে চর্চা হয়ে আসছে। তাই ব্যাপারটা কারও কাছে অজানা বা অপরিচিত নয়। আগেকার দিনে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় রীতিনুযায়ী অনেকে নিজের আপনজন এর দেহ ভক্ষণ করতো। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, শত্রুর মাংস ভক্ষণ করতো যাতে তাদের দেহের শক্তি নিজেদের দেহে সঞ্চয় হয়। ইউরোপে বারো শতক থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত  মানুষের হাড়, রক্ত, চর্বি বাজারে ঔষধ হিসেবে বেচাকেনা হতো।

পাপুয়া নিউগিনির মানুষদের ক্ষেত্রেও এই ধরনের কিছু রিচ্যুয়াল ছিলো- আত্মীয় বা নিকটজনের দেহ ভক্ষণ করার। কিন্তু  মাংস ভক্ষণ করার মতো নিরাপদ নয় ব্রেইন ভক্ষণ করা।  মানুষের  ব্রেইন ভক্ষণ করার ফলে দেখা দেয় কুরু (Kuru) র মতো বিরল রোগ। পাপুয়া নিউগিনির মানুষদের ক্ষেত্রে বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে কুরুর মহামারী দেখা দিয়েছিলো। ১৯৫০ এর সময়ে  মহিলাদের মৃত্যুর জন্য এই কুরু প্রধানত দায়ী ছিলো। প্রথম দিকে মোট মৃত্যুর  ২% ই ছিলো কুরু-র প্রভাবে। এটা মূলত মহিলা এবং শিশুদের বেশি আক্রমণ করেছিলো। লিঙ্গভেদে এই বৈষম্যের কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত সেই এলাকার পুরুষদের ধারণা ছিলো হয়তো মানুষের মাংস খাওয়ার ফলে হয়ত তারা দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই মহিলা ও শিশুরা মৃতদেহ ভক্ষণ করতো। আবার  মৃতদেহ ধোয়া মোছার কাজেও নারীরা থাকতো, সেইখানেই ক্ষত থেকে ইনফেকশন হওয়ার চান্স থেকে যায়।

কুরু (Kuru)-মারাত্মক ট্রান্সমিসিবল স্পঞ্জিফর্ম এনসেফালোপ্যাথি (TSE), যা  মস্তিষ্কের অবক্ষয়জনিত বিরল ব্যাধি বা প্রিয়ন রোগ। এটারই আরো একটি ধরন হলো বোভাইন স্পঞ্জিফর্ম এনসেফালোপ্যাথি (BSE), যা "ম্যাড কাউ"  ডিজিজ নামে পরিচিত। TSE  মূলত আক্রমণ করে মানুষের ব্রেইনের সেরিবেলাম এ- যেই অংশ আমাদের শরীরের অনুভুতি ও ব্যালেন্স রক্ষার কাজ করে। প্রিয়ন ডিজিজ মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক গ্লাইকোপ্রোটিন জমা করতে থাকে- যাকে বলা হয় প্রিয়ন প্রোটিন(PrP).

প্রিয়ন প্রোটিন ন্যাচারালি  নার্ভাস সিস্টেমে তৈরি হয়। আমাদের দেহ ফাংশনে প্রিয়ন প্রোটিনের কী ভুমিকা তা আজও সায়েন্টিস্টরা বের করতে পারেনি। কিন্তু এটা যে আলঝেইমার সহ বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য রোগগুলোর মতো কুরুর ক্ষেত্রে কোনো ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া কাজ করছে না, বরং এর পিছনে রয়েছে এই প্রিয়ন এর কারসাজি। প্রিয়ন প্রোটিন হলো নির্জীব, অকার্যকর প্রোটিন যা মস্তিষ্কে সংখ্যাবৃদ্ধি করে এবং ক্লম্প তৈরি করে, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।Creutzfeldt-Jakob, Gerstmann-Sträussler-Scheinker ডিজিজ  এগুলোও প্রিয়ন প্রোটিন দ্বারা সৃষ্ট আরেক ধরনের ডিজেনারেটিভ ডিজিজ। এই স্পঞ্জিফর্ম রোগগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায়, মস্তিষ্কে স্পঞ্জ এর মতো হোল ব্যাপকভাবে তৈরি হতে থাকে।

কুরুর ক্ষেত্রে দীর্ঘ ইনকিউবেশন পিরিয়ড দেখা দেয় যেখানে লক্ষণ প্রকাশ পায় না৷এই উপসর্গহীন সময়কাল সাধারণত ৫-২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৫০ বছরও অতিক্রম করে।

উপসর্গ প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনটি স্টেজ দেখা যায়।
অ্যাম্বুলেন্ট স্টেজঃ
১. মাথাব্যথা
২. জয়েন্ট পেইন
৩. কাপুনি
৪. ভারসাম্যহীনতা
৫. কথা বলার ক্ষমতা হ্রাস
৬. পেশিতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা

সেডেন্টারি স্টেজঃ
১. সাপোর্ট ছাড়া হাঁটতে অক্ষম
২.মাংসপেশিতে অনুভুতি না থাকা
৩. তীব্র কাঁপুনি
৪. মানসিক অস্থিরতা,

টার্মিনাল স্টেজঃ
১. কথা বলতে অক্ষমতা
২. কোনো কিছু খেতে অক্ষম হওয়া
৩. আশেপাশের পরিবেশে প্রতিক্রিয়া করতে না পারা
৪. পুজ,  নেক্রোসিস সহ আলসারেশন, টিস্যু ডেথ।
সাধারণত, আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথম টার্মিনাল পর্যায়ের লক্ষণ দেখা দেওয়ার 3 মাস থেকে 2 বছরের মধ্যে মারা যায়।

কুরু হলে ট্রিটমেন্ট কী?
অত্যন্ত সুখকর খবর এই যে কুরু-র নির্দিষ্ট কোনো ট্রিটমেন্ট নেই। কুরু রোগের ক্ষেত্রে দায়ী যে প্রিয়ন- তা সহজে ধ্বংসও করা যায় না। প্রিয়নযুক্ত ব্রেইন ফরমালডিহাইড বছরের পর বছর রাখার পরও তা সংক্রামক থাকে।

কুরু-র নির্দিষ্ট কোনো ট্রিটমেন্ট নেই। এবং বিভিন্ন দেশের সরকার বহু আগেই এই ক্যানিবালিজম চর্চায় নিরুৎসাহিত করে যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে কুরু-র কোনো রোগী নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এবং গবেষকদের মতে ২০০৫ সালে কুরুর সর্বশেষ রোগী মারা যায়।

Metheela Farzana Melody
Team Science Bee

#science #bee #facts #punorjonmo #three #বাংলাদেশ #পুনর্জন্ম

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+2 টি ভোট
1 উত্তর 273 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 344 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
5 টি উত্তর 1,143 বার দেখা হয়েছে
09 জুলাই 2022 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন হায়াত (20,400 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 329 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
1 উত্তর 757 বার দেখা হয়েছে

10,846 টি প্রশ্ন

18,546 টি উত্তর

4,746 টি মন্তব্য

848,005 জন সদস্য

93 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 92 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Khairul_Alom_Fardush

    140 পয়েন্ট

  2. M_H_Mueez

    120 পয়েন্ট

  3. xx88net

    100 পয়েন্ট

  4. rr88navy1

    100 পয়েন্ট

  5. ph44loginph

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল #science ক্ষতি চুল কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক #biology পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন গাছ মনোবিজ্ঞান খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার দুধ উপায় হাত শব্দ মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা বাচ্চা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...