আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই AI বলতে কি বুঝায়? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
787 বার দেখা হয়েছে
"তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে করেছেন (71,000 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (20,390 পয়েন্ট)
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স :-

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বাংলায় যাকে বলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে এক প্রকার সিমুলেশন যা মেশিনে মানুষের মত করে কোন কিছু চিন্তা এবং জটিল সমস্যা সমাধান করে থাকে। এটি একই সাথে নতুন কিছু শিখতে পারে, এবং ঐ লব্দ জ্ঞান ব্যবহার করে পরবর্তী সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করতে পারে।অন্যভাবে বলতে,  মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা" শব্দটি প্রয়োগ করা হয় তখন যখন একটি মেশিন "জ্ঞানীয়" ফাংশনগুলিকে কার্যকর করে যা অন্যান্য মানুষের মনের সাথে মিল থাকে, যেমন "শিক্ষা গ্রহণ" এবং "সমস্যা সমাধানের" সাথে সংযুক্ত। আন্দ্রেয়ার কাপলান এবং মাইকেল হেনলিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞায় বলেন "এটি একটি সিস্টেমের বহির্ভূত তথ্য সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারার ক্ষমতা, এমন তথ্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং ঐ শিক্ষা ব্যবহার করে নমনীয় অভিযোজনের মাধ্যমে বিশেষ লক্ষ্য করা।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় :-
১. উইক এআই (Narrow AI) : এই ইন্টেলিজেন্স শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কাজ করতে পারে। বর্তমানে আমরা এই ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করছি।
২. স্ট্রং এআই (Artificial General Intelligence) : মেশিন বা কম্পিউটার যখন মানুষের মতো কাজ করতে পারবে তখন তাকে বলা হবে স্ট্রং এআই।
৩. সিঙ্গুলারিটি (Super Intelligence) : এটা হলো এমন একটা ইন্টেলিজেন্স যা কিনা সবচেয়ে প্রতিভাধর মানুষের ক্ষমতাকেও অতিক্রম করবে।

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ইতিহাস :-
চিন্তা করতে সক্ষম কৃত্রিম মানুষ মূলত গল্প বলার যন্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে কার্যকর যুক্তি প্রদর্শনের জন্য একটি যন্ত্র তৈরির চেষ্টা করার ধারণাটি সম্ভবত রামন লোল (১৩০০ খ্রিস্টাব্দে) এর সাথে শুরু হয়। তার ক্যালকুলাস রেটিওসিনেটরের সাথে, গটফ্রিড লিবিনিজ গণিত মেশিনের ধারণাকে সম্প্রসারিত করেছিলেন (উইলহেলম স্কিকার্ড ১৬২৩ এর কাছাকাছি সময় প্রথম একটি প্রকৌশলগত কাজ করেছিলেন), সংখ্যার পরিবর্তে ধারণার উপর অপারেশন পরিচালনার উদ্দেশ্যে। উনিশ শতক থেকে কৃত্রিম মানুষ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছিল, যেমন মেরি শ্যালীর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বা কারেল কেপেক এর আর.ইউ.আর. (রাসোসের ইউনিভার্সাল রোবটস) এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

যান্ত্রিক বা "আনুষ্ঠানিক" যুক্তি অধ্যয়ন প্রাচীনকালে দার্শনিক ও গণিতবিদদের সাথে শুরু হয়েছিল। গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান অধ্যয়ন অ্যালান টুরিং এর গণিতের তত্ত্বের সূত্রপাত করেছিল, যা একটি মেশিন, "0" এবং "১" প্রতীক চিহ্ন দ্বারা গাণিতিক সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারে। এই অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে যে ডিজিটাল কম্পিউটার আনুষ্ঠানিক যুক্তির কোন প্রক্রিয়া অনুকরণ করতে পারে তা চার্চ-টুরিং থিসিস হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল। স্নায়ুবিদ্যা, তথ্য তত্ত্ব এবং সাইবারনেটিক্সের আবিষ্কার গবেষকদের মধ্যে বৈদ্যুতিক মস্তিষ্ক নির্মাণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল । প্রথম কাজ যা বর্তমানে এআই হিসাবে স্বীকৃত হয় যা ম্যাককুল্লাচ এবং পিটসের ১৯৪৩ টুরিংয়ের জন্য সম্পূর্ণ "কৃত্রিম নিউরন" ছিল প্রথাগত নকশা।

এআই গবেষণা ক্ষেত্র ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ কলেজের একটি কর্মশালায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অ্যালেন নিউয়েল (সিএমইউ), হারবার্ট সিমন (সিএমইউ), জন ম্যাকার্থি (এমআইটি), মার্ভিন মিনস্কি (এমআইটি) এবং আর্থার স্যামুয়েল (আইবিএম) এআই গবেষণার প্রতিষ্ঠাতা এবং নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তারা এবং তাদের ছাত্ররা যে প্রোগ্রাম তৈরি করেছিল সংবাদপত্র তাকে "বিস্ময়কর" হিসাবে বর্ণনা করেছিল: কম্পিউটার চেকারদের মধ্যে বিজয়ী হয়, বীজগণিতের মধ্যে শব্দের সমস্যার সমাধান করে, যুক্তিগত তত্ত্বগুলি প্রমাণ করে এবং ইংরেজি কথা বলতে সক্ষম হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা বিভাগ দ্বারা গবেষণার জন্য ব্যাপকভাবে তহবিল প্রদান এবং বিশ্বব্যাপী ল্যাবরেটরিস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এআই এর প্রতিষ্ঠাতারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী: হারবার্ট সাইমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, "মেশিন বিশ বছরের মধ্যে একজন মানুষ যা করতে পারে তা করতে সক্ষম হবে ।" মার্ভিন মিন্স্কি একমত হয়েছিলেন, "একটি প্রজন্মের মধ্যে ... কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে"

তারা অবশিষ্ট কিছু কাজের অসুবিধা বোঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। অগ্রগতি ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে পড়েছিল এবং ১৯৭৪ সালে স্যার জেমস লাইটহিল এর সমালোচনার জবাবে ব্রিটিশ সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের কাছ থেকে চলমান চাপের কারণে এআইএর গবেষণামূলক গবেষণা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক বছর পরে একে "এআই শীতকালীন" বলা হবে যখন এআই প্রকল্পের অর্থায়ন কঠিন ছিল।

১৯৮০ এর দশকের শুরুতে এআই গবেষণা বিশেষজ্ঞ সিস্টেমের বাণিজ্যিক সাফল্য দ্বারা পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, এআই প্রোগ্রামের একটি ফর্ম যা মানব বিশেষজ্ঞের জ্ঞান এবং বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতাগুলিকে অনুকরণ করে। ১৯৮৫ সাল নাগাদ এআইয়ের বাজার এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পৌঁছেছিল। একই সময়ে, জাপানের পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার প্রকল্প ইউএস এবং ব্রিটিশ সরকারকে একাডেমিক গবেষণার জন্য অর্থায়নে ফিরিয়ে আনার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। যাইহোক, ১৯৮৭ সালে লিস্প মেশিন বাজারের পতনের শুরুতে, এআই আবারও দুর্নীতিতে পড়ে এবং দ্বিতীয় দীর্ঘস্থায়ী মন্দা অবস্থায় পতিত হয়।

১৯৯০ এবং একবিংশ শতকের প্রথম দিকে সরবরাহ, ডেটা মাইনিং, চিকিৎসা নির্ণয়ের এবং অন্যান্য এলাকার জন্য এআই ব্যবহার করা শুরু করেছিল। সাফল্য ছিল গণনীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি(মুরের আইন দেখুন), নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান, এআই এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মধ্যে নতুন সম্পর্ক এবং গবেষকগণের গাণিতিক পদ্ধতি এবং বৈজ্ঞানিক মানকে একটি প্রতিশ্রুতির উপর অধিকতর গুরুত্বের কারণে। ডিপ ব্লু ১১ই জুন, ১৯৯৭ তারিখে একজন দাবা চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে পরাজিত করার জন্য প্রথম কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত দাবা খেলোয়াড় হয়ে ওঠে।

উন্নত পরিসংখ্যান কৌশল (শিথিলভাবে গভীর শিক্ষার নামে পরিচিত), বড় পরিমাণে তথ্যের মধ্যে প্রবেশ এবং দ্রুত কম্পিউটারে মেশিন শিক্ষার এবং উপলব্ধির ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করে। ২০১০ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত, সারা পৃথিবীতে মেশিন লার্নিং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করা হতো। একটি বিপদ! আইবিএম এর প্রশ্নের উত্তর সিস্টেমের কুইজ শো প্রদর্শনী ম্যাচে ওয়াটসন একটি উল্লেখযোগ্য মার্জিন দ্বারা দুজন সর্বশ্রেষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন ব্র্যাড রাদার এবং কে জেনিংসকে পরাজিত করেছিল। কিনিট, যা Xbox 360 এবং Xbox One এর জন্য 3D শরীর-গতি ইন্টারফেস প্রদান করে যা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে যা দীর্ঘ এআই গবেষণা থেকে উদ্ভূত হয় যেমন স্মার্টফোনে বুদ্ধিমান ব্যক্তিগত সহায়ক হিসাবে কাজ করে। মার্চ ২০১৬ এ, আলফাগো গো চ্যাম্পিয়ন লি সেডোলের সাথে একটি ম্যাচে ৫টি গেমের মধ্যে ৪টিতেই জিতে নেয়, হ্যান্ডিক্যাপস ছাড়াই একজন পেশাদার গো খেলোয়াড়কে পরাজিত করার জন্য প্রথম কম্পিউটার গো-সিস্টেমিং পদ্ধতিতে পরিণত হয়। ভবিষ্যতের গো সম্মেলনের ২০১৭ আলফাগো কে জেইয়ের সাথে তিনটি খেলায় জিতেছে যিনি ক্রমাগতভাবে দুবছর ধরে বিশ্বের এক নম্বর রেঙ্কিং অর্জন করেছিল।

ব্লুমবার্গের জ্যাক ক্লার্কের মতে ২০১৫ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য একটি মাইলফলক বছর ছিল, গুগলের মধ্যে এআই ব্যবহার করার জন্য সফটওয়্যার প্রকল্পগুলোর সংখ্যা ২০১২ সালে ২৭০০ এরও বেশি প্রকল্পে "স্পোরাইডিক ব্যবহার" বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্লার্ক তথ্যপ্রযুক্তি তথ্যও তুলে ধরেছেন যে চিত্র প্রক্রিয়াকরণ কর্মের ত্রুটির হার ২০১১ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। তিনি ক্লাউড কম্পিউটিং অবকাঠামোর উত্থানের ফলে এবং গবেষণা সরঞ্জাম ও ডাটাসেটগুলির বৃদ্ধির কারণে সাশ্রয়ী মূল্যের স্নায়ুবিক নেটওয়ার্কগুলির বৃদ্ধি নিয়ে এটিকে গুরুত্ব দেন। অন্যান্য উল্লিখিত উদাহরণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মাইক্রোসফটের স্কাইপ সিস্টেমের ডেভেলপমেন্ট যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করতে পারে এবং ফেইসবুক সিস্টেম অন্ধ মানুষদের কাছে চিত্রের বর্ণনা করতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টিতে শেখা, যুক্তিসংগত চিন্তা, সমস্যা সমাধান, উপলব্ধি, এবং অন্যান্য ভাষা  ব্যবহার, এই কয়েকটি উপাদানের উপর নির্ভর করতে হয়।নিচে তা দেয়া হলো:-

১.শেখা :-
মানুষকে কোন কিছু শেখানোর যেমন অনেকগুলো পথ রয়েছে তেমনি কম্পিউটারকে শেখানোর জন্য হরেক রকম কৌশল রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ট্রিয়াল এবং ইরর। আপনি যদি কম্পিউটার-এর সাথে খেলেন, তাহলে দেখবেন মেশিন অটোমেটিক ‘চাল’ দিতে থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না চেকমেট হবে। যদি চেকমেট হয় তাহলে সে পুরো গেমপ্ল্যান’টি সেভ করে রাখবে। এভাবে প্রত্যেকটি সম্ভাব্য গেমস সংরক্ষন করে রাখবে।

এখন কম্পিউটার উক্ত গেইমের প্রতিটি মুভ’কে সলভিং হিসেবে ধরে  নিবে। এই সমস্যা সমাধানের প্রয়োগকে বলা হয় ‘জেনারেলাইজেশন।’ জেনারেলাইজেশন এর মাধ্যমে নতুন সমস্যার সমাধান পদ্ধতির সাথে পূর্বের সংরক্ষিত সমস্যার তুলনা করে তারপর নতুন সমাধান দিয়ে থাকে।

২.যুক্তিসংগত চিন্তা :-
যেকোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত চিন্তা করা অবশ্যই প্রয়োজন। এখন কম্পিউটার কিভাবে যুক্তিসংগত চিন্তা করবে? কম্পিউটার এটিকে দু’ভাগে করতে পারে। ডিডাকটিভ এবং ইন্ডাক্টিভ উপায়ে। ডিটেকটিভ হচ্ছে অনুমাননির্ভর যেমন ধরুন ‘হয়তো সামিউল চায়ের দোকানে নতুবা অডিটোরিয়ামে।’ এখন কম্পিউটার যেটা বুঝবে সেটা হচ্ছে প্রথম চেক করে দেখবে সামিউল কি চায়ের দোকান আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে তো উত্তর পেলে। আর যদি না থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে অডিটরিয়ামে আছে।

আর ইন্ডাক্টিভ উপায় হচ্ছে, আগে থেকেই কোন বিষয়টি কিভাবে চিন্তা-ভাবনা করবে সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া। যেমন ধরুন বিজ্ঞানের কোন বিষয় যদি আগে থেকে ব্যাখ্যা করে কম্পিউটারকে বোঝানো হয়, তাহলে সে খুব সহজে ধরতে পারবে তার এই ক্ষেত্রে সমাধান কি দেওয়া উচিত।

৩.সমস্যা সমাধান :-
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সমস্যার সমাধান বলতে কিছু নির্দিষ্ট উপায় সার্চ করতে করতে সলিউশন খোঁজাকে পদ্ধতিকে সমস্যার সমাধান বলে। এ ধরনের সমস্যার সাধারণত দুই ভাবে করা সম্ভব। স্পেশাল পারপোজ এবং জেনারেল পারপোজ। স্পেশাল পারপোজ এর ক্ষেত্রে আগে থেকেই কোন সমস্যার সমাধানের একটি রোডম্যাপ দেয়া থাকে। যেটি ধরে সামনে এগোতে থাকলে সমস্যাটি একটা সমাধান বের করা যায়।

অপরটি হচ্ছে জেনারেল জেনারেল পারপোজ। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি পদক্ষেপ ধীরে ধীরে গ্রহণ করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে। যেমন কোন রোবটকে প্রথমে বলা হলো, ডান দিকে যাও। তারপর বাম দিকে, উপরে, নিচে এভাবে প্রত্যেকটা দিকে বর্ণনা করে সমস্যাটির সমাধান এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

৪.উপলব্ধি :-
সেলফ ড্রাইভিং কার সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি। এই কারণগুলো সাধারণত ক্যামেরার বিশেষ সেন্সর এর মাধ্যমে কাজ করে থাকে। গাড়ির উপরে থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রী ক্যামেরা সেটআপ করা থাকে। এই ক্যামেরাগুলো অবস্থার পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে গাড়ির পরবর্তী মুভমেন্টে ভূমিকা রাখে।

তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও উপলব্ধি বিষয়টি এভাবে কাজ করা থাকে। বিভিন্ন উপায়ে তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা সমাধান করা হয়, যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এ ডিসিশন নিতে সহায়তা করে থাকে।

৫.ভাষা  ব্যবহার :-
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভাষা একটি বড় ধরনের ফ্যাক্টর। সেলফ ড্রাইভিং কার গুলো যখন কোন স্পেসিফিক লোকেশন এর মধ্য দিয়ে যায়, তখন সেখানকার সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো তাকে বুঝতে হয়। যেমন রাস্তায় যে ধরনের ট্রাফিক ইন্ডিকেটরগুলো দেয়া থাকে সেগুলোর মধ্যে ও স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়। এই ভাষাগুলো যদি সিস্টেম বা মেশিন ধরতে না পারে তাহলে সে ভুল নির্দেশনা দিতে পারে।

এছাড়াও অনেক ভাষা আছে উচ্চারণের উপর নির্ভর করে বা ভাষার গতির উপর নির্ভর করে সবকিছু পরিবর্তন হয়। তাই ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অনেক বেশি সতর্ক থাকে। যদি কোন উপায়ে ভুল উপাত্ত গ্রহণ করে, তাহলে তার পুরো ডিসিশন মেকিং-এ সেট এর প্রভাব পড়বে।

 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার হওয়া ক্ষেত্রগুলো হলো :-

১.স্মার্ট গাড়ি ও ড্রোন : স্বয়ংক্রিয় তথা চালকহীন গাড়ির স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিয়েছে এআই। সেক্ষেত্রে নজির তৈরি করেছে মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা টেসলা। এআই নির্ভর এই গাড়ি বুঝতে পারে কী করে, কখন ব্রেক মারতে হয়, কীভাবে বদলাতে হয় রাস্তার লেন এবং কীভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে হয়। এছাড়া নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এই গাড়ি ঘুরতে এবং ম্যাপ ব্যবহারও করতে পারে। বর্তমানে আমেরিকাতে ৫০ হাজারেরও বেশি টেসলার এই গাড়ি চলছে। আবার অ্যামাজন ও ওয়ালমার্টের মতো বহুজাতিক সংস্থা তাদের পণ্য গ্রাহকের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেয়ার কাজে ড্রোন ব্যবহার করছে। একইভাবে মাল পরিবহণের জন্য ব্রিটেনে স্বয়ংক্রিয় ট্রাক পরিষেবার কাজ শুরু করেছে ব্রিটেনের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি)।

 
২.সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট : আমরা ফেসবুক, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা শেয়ার চ্যাটের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলেও বুঝতে পারি না কীভাবে একের পর এক আপডেট আমাদের কাছে আসছে! তা সে পরিচিত ব্যক্তিকে খোঁজাই হোক বা ফ্রেন্ডস সাজেশান। একটা কিছু লাইক, শেয়ার করলেই সেই সম্পর্কিত আরেকটা নিমেষে হাজির হয়ে যায়। সবকিছুই গ্রাহকের অচিরে হচ্ছে কৃত্রিম মেধার দৌলতে। আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা, মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে ‘কাস্টমাইজড’ (ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্দিষ্ট) আপডেট পাঠাতে থাকে এআই প্রযুক্তি।

৩.মিউজিক ও মিডিয়া : কেউ যখন স্পটিফাই, নেটফ্লিক্স বা ইউ টিউব ব্যবহার করে, গ্রাহকের জন্য পুরো সিদ্ধান্তই নেয় এআই। একজন যদি মনে করে সে বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করছে বা তার নিয়ন্ত্রণে পুরো মিডিয়া চলছে, তা একেবারে ভুল। কারণ, একটি গান শুনতে শুনতে বা একজন শিল্পীকে খোঁজার সময় ‘রিলেটেড’ বা ‘সাজেস্টেড’ গান বা শিল্পী চলে আসে। একইভাবে আজকের জনপ্রিয় পাবজি, সিএস গো বা ফোর্টনাইট-এর মতো উন্নত ভিডিও গেমে এআই ব্যবহার সফল।

৪.অনলাইন বিজ্ঞাপন : এআই প্রযুক্তির একটা বড় গ্রাহক হল অনলাইন বিজ্ঞাপন সেক্টর। এ ক্ষেত্রে এআই শুধু ইন্টারনেট সার্চকারী ব্যক্তিদের উপর নজর রেখে তথ্য তল্লাশি করে তাই নয়, গ্রাহকদের পছন্দ-অপছন্দ বিচার করে সেইমতো তাঁদের সামনে বিজ্ঞাপন হাজির করে। ফলে বিশ্বব্যাপী অনলাইন বিজ্ঞাপনের ব্যবসা ২৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

৫.নেভিগেশন এবং ট্রাভেল : ম্যাপের পুরোটাই এআই প্রযুক্তিচালিত। যখন গুগল, অ্যাপেল বা অন্য সংস্থার ম্যাপ ব্যবহার করে আমরা ক্যাব বুকিং করি, তখন এআই বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রাস্তার সেই সময়ের যানজট বা ভাড়া সম্পর্কে আমাদের জানায়।

৬.ব্যাঙ্ক পরিষেবা : বর্তমানে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার একটা বড় অংশ কৃত্রিম মেধা। কোনো একটা লেনদেন করলে আমরা তৎক্ষণাৎ যে এসএমএস বা ইমেল অ্যালার্ট পাই, তা চালনা কার এই এআই প্রযুক্তি। এইভাবে প্রতিটি গ্রাহকের লেনদেন, লগ্নি, প্রতারণা রোধে নীরবে কাজ করছে এআই।

 
৭.স্মার্ট হোম ডিভাইস : নিত্যদিনের ব্যবহার্য স্মার্ট হোম ডিভাইস বা যন্ত্রগুলোতে ব্যাপকভবে ব্যবহার হচ্ছে এআই। আমাদের ব্যবহার, পছন্দ-অপছন্দ বুঝে সেই প্রযুক্তি নিজেই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের সেটিংস পরিবর্তন করছে এবং গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আগেই গুগলের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, স্মার্ট টিভি, স্মার্ট রেফ্রিজেরাটর, স্মার্ট এসি, স্মার্ট মাইক্রোওয়েভের কথা উল্লেখ করা যায়।

৮.নিরাপত্তা ও নজরদারি : এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি কৃত্রিম মেধা ব্যবহার হচ্ছে এক্ষেত্রে। ড্রোন তো ছেড়েই দেওয়া যাক। নজরদারির কাজে বিভিন্ন পয়েন্টে লাগানো হাজার হাজার ক্যামেরা থেকে লক্ষ লক্ষ তথ্য একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্লেষণ করা এআই ছাড়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এআই নির্ভর অবজেক্ট রিকগনিশন বা ফেস রিকগনিশনের মতো প্রযুক্তি প্রতিদিন উন্নত হচ্ছে।

৯.বিজনেস ম্যানেজমেন্ট : আজকের জনপ্রিয় অনলাইনে কেনাকাটা বা ই-কমার্সে ব্যবহার হচ্ছে এআই। যার জেরে গ্রাহক ঠিক কী চইছে সেই পণ্য দ্রুত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। একঝাঁক পণ্য বা পরিষেবার মধ্যে থেকে বেছে বেছে গ্রাহকের সামনে তুলে ধরা। আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা, মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে ‘কাস্টমাইজড’ (ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্দিষ্ট) আপডেট পাঠাতে থাকে এআই প্রযুক্তি।

 
- আসিকি দিনা ফারিয়া

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
1 উত্তর 2,222 বার দেখা হয়েছে
+5 টি ভোট
1 উত্তর 403 বার দেখা হয়েছে
01 ফেব্রুয়ারি 2021 "প্রযুক্তি" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন JannatulFerdous (2,850 পয়েন্ট)
+4 টি ভোট
1 উত্তর 179 বার দেখা হয়েছে

10,723 টি প্রশ্ন

18,367 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

241,020 জন সদস্য

82 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 82 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Ayon Ratan Agni

    390 পয়েন্ট

  2. Al Moyaj Khondokar

    210 পয়েন্ট

  3. Vuter Baccha

    150 পয়েন্ট

  4. Hasan rafi

    140 পয়েন্ট

  5. Mehedi_Bknowledge

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি প্রাণী স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া শীতকাল গরম কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ মস্তিষ্ক শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন গ্রহ রসায়ন তাপমাত্রা উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা পাখি গ্যাস মন সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম বিড়াল কান্না নাক
...