পিরামিড কীভাবে তৈরি হয়েছে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+4 টি ভোট
3,596 বার দেখা হয়েছে
"তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে করেছেন (141,820 পয়েন্ট)

4 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (141,820 পয়েন্ট)
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর

কেউ মিশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, প্রথমেই মাথায় আসে পিরামিডের কথা। কারণ আমরা ছোট থেকেই মিশরের পিরামিডের কথা শুনে বা পড়ে আসছি। যদিও পিরামিড শুধু মিশরেই না, বিশ্বের অনেক জায়গায়ও কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু গঠনশৈলী, রহস্য, সৌন্দর্য্যতার সমন্বিত দিক থেকে মিশরের পিরামিডগুলই জগৎবিখ্যাত। 

পিরামিড ও তার নির্মাণশৈলী নিয়ে যুগ যুগ ধরে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। পিরামিডের ভিতরের দেয়ালে আঁকা নানা রকমের ছবি, চিত্রলিপিতে লেখা ধর্মসংগীত আর দেয়ালে খোদাই করা প্রাচীন লিপি উদ্ধার করে এ সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপরও ঠিক কী কৌশলে সুউচ্চ পিরামিডগুলো তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল,তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অবশ্যই এটা জানা গেছে যে, পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়েই এতো নিঁখুতভাবে এগুলো তৈরি করা হয়। 

সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় হচ্ছে গিজা'র পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং এতে শ্রমিক কাজ করছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। প্রতিটি পাথর খন্ডের ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন।

এখন কথা হচ্ছে অনেকে ধারণা করছে পিরামিড নাকি এলিয়েন-এর তৈরি। এমন ধারণা শুধু সাধারণ মানুষের নাহ, স্বয়ং স্পেস-এক্স-এর প্রধান ইলন মাস্ক টুইট করেন "পিরামিড অবশ্য এলিয়েনরাই নির্মাণ করেছে''। তার এই টুইট ৮৪ হাজার বার রি-টুইট করা হয়। এতো বেশি ভাইরাল হওয়ায় তা মিশরের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী রানিয়া আল-মাশাতের নজরে আসে। তিনি মাস্কের টুইটারের উত্তর দিয়ে বলেন তিনি মাস্কের কাজকর্ম সম্পর্কে খবর রাখেন এবং তার কাজ তিনি পছন্দ করেন। সাথে অনুরোধ জানান পিরামিডগুলো দর্শন করে আসার যেন এ বিষয়ে আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ১৯৯০ এর দশকে পিরামিড নির্মাতাদের সমাধিগুলি প্রমাণ করে যে প্রাচীন মিশরীয়রা এই স্থাপনাগুলি স্থাপন করেছিলেন।

পরে, মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাহি হাওয়াস ইলন মাস্কের দাবির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তার তত্ত্বকে "সম্পূর্ণ হ্যালুসিনেশন" বলে অভিহিত করেন। তিনি তার ফেসবুক পেইজে একটি ভিডিও-র মাধ্যমে বলেন, ''যারা পিরামিডগুলো বানিয়েছিল আমি তাদের স্মৃতিসৌধ খুঁজে পেয়েছি এবং সেগুলো দেখেছি। সেখানে লিপিবদ্ধ আছে প্রত্যেক পিরামিড নির্মাণকারী মিশরীয় ছিলেন। পিরামিড এবং আশপাশের পিরামিডগুলো কোন রাজা বা রাজপরিবারের সদস্যদের, তা স্মৃতি সৌধগুলোতে লেখা রয়েছে। শুধু তাই নয়, কারা এগুলোর স্থপতি এবং নির্মাণ কারিগর তাদের নামও ভেতরে খোদাই করে লেখা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পিরামিড মিশরের জাতীয় সম্পদ এবং স্পেস এর সাথে পিরামিডের কোন সম্পর্ক নেই"।

মাস্ক অবশ্য পরে তার আনুষ্ঠানিক টু্‌ইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বিবিসির ইতিহাস বিষয়ক ওয়েবসাইটের একটি লিংক টুইট করেন এবং লিখেন, ''বিবিসির এই নিবন্ধে যুক্তিসঙ্গত তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে পিরামিড কীভাবে তৈরি হয়েছিল।"

অবশেষে মাস্কও স্বীকার করলো, পিরামিড মানুষের তৈরি। আশা রাখি, এতো প্রমাণ পাওয়ার পর আপনাদের মধ্যেও আর কারও মনে সন্দেহ থাকার কথা না।তাই আজ থেকে আর কেউ বলবেন না যে পিরামিড এলিয়েন-এর তৈরি।

 

লেখক: Tanjina Sultana Shahin

করেছেন (100 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
করেছেন (141,820 পয়েন্ট)

মিশরের পিরামিড রহস্য!

বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি হল পিরামিড। আসলেই আশ্চর্যকর নির্মাণকৌশলসমৃদ্ধ এক স্থাপনা এই পিরামিড। পিরামিড ও তার নির্মাণশৈলী নিয়ে যুগ যুগ ধরে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। পিরামিডের ভিতরের দেয়ালে আঁকা নানা রকমের ছবি, চিত্রলিপিতে লেখা ধর্মসংগীত আর দেয়ালে খোদাই করা প্রাচীন লিপি উদ্ধার করে এ সম্পর্কে সঠিক খবর জানার চেষ্টা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপরও নিশ্চিত হওয়া যায়নি- ঠিক কী কৌশলে তখনকার দিনে সুউচ্চ পিরামিডগুলো তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। তবে এতটুকু অবশ্যই জানা গেছে যে, পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে এতই নিঁখুতভাবে এগুলো তৈরি যে একটি পাথর থেকে আরেকটি পাথরের মাঝে এক চুল পরিমাণ ফাঁক নেই। 

কারো কারো মতে, নির্মাণাধীন পিরামিডের এক পাশ থেকে মাটি বা পাথরের ঢাল তৈরি করে তার ওপর দিয়ে ভারী পাথর টেনে টেনে তুলে পিরামিড বানানো হয়েছে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞই এ মত প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের মত-পিরামিড যত উঁচু হবে, ঢাল তত প্রশস্ত করতে হবে। এভাবে পিরামিডের চূড়া পর্যন্ত পৌঁছতে ১৩ মাইল লম্বা ঢাল বানাতে হবে, যা অসম্ভব। আবার আরেক মতানুসারে, পিরামিড বানানো হয়েছে ধাপে ধাপে চারপাশ দিয়ে ছোট ছোট ঢাল বানিয়ে। অপর একটি মতে, পিরামিডের চারপাশ মাটি দিয়ে ভরাট করে নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। পরে মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বলা বাহুল্য সবকিছুই ধারণা মাত্র। এর প্রকৃত রহস্য অজানা। এর অভ্যন্তরীন নকশাও ছিল দারুণ।

পিরামিড পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের একটি। প্রাচীন মিশর শাসন করতেন ফিরাউনরা (প্রাচীন মিশরীয় শাসক বা রাজাদের ফিরাউন (Pharaoh) বলা হতো)। তাদেরকে কবর বা সমাধী দেয়ার জন্যই পিরামিড নির্মান করা হতো। মিসরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে। সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় হচ্ছে গিজা'র পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথর খন্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত। চার হাজারের বছরের পুরানো এক সমাধিতে অঙ্কিত এক চিত্রে দেখা যায় এক বিশাল স্তম্ভকে স্লেজে করে সরানো হচ্ছে; অনেক মানুষ রশি দিয়ে সেই স্লেজ টেনে নিচ্ছে। আর তাদের মধ্যে একজন পাত্র থেকে জল ঢালছে বালির উপরে। এতে ঘর্ষণ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আড়াই টন ওজনের এক একটা ব্লক। মিশর ছাড়াও আরও বেশ কিছু জায়গায় পিরামিড রয়েছে যেমনঃ তিওতিহুয়াকানের চাঁদের পিরামিড, ইন্দোনেশিয়ার ক্যান্ডি সুকুহ, কম্বোডিয়ার কোহ কের, স্পেনের গুইমার এর পিরামিড। কিন্কু গঠনশৈলী, সৌন্দর্যতার দিক থেকে মিশরের পিরামিডগুলই জগৎবিখ্যাত।

 

পিরামিড কি?

পিরামিড হলো এক প্রকার জ্যামিতিক আকৃতি, যার বাইরের তলগুলো ত্রিভুজাকার, যা একটি শীর্ষবিন্দুতে মিলিত হয়। পিরামিড একটি বহুভুজাকৃতি ভূমির ওপর অবস্থিত। বহুভুজের ওপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর একটি শীর্ষবিন্দু থাকে এবং যার পার্শ্বতলগুলোর প্রতিটি ত্রিভুজাকার।

 

পিরামিড সম্পর্কিত কতিপয় সংজ্ঞাঃ

পিরামিড : কোনো বহুভূজের উপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর একটি শীর্ষবিন্দু থাকে এবং যার পার্শ্বতলগুলোর প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকার তাকে পিরামিড (Pyramid) বলে।

সুষম পিরামিড : যে পিরামিডের ভূমি সুষম বহুভূজ এবং পার্শ্বতলগুলো সর্বসম ত্রিভুজ তাকে সুষম পিরামিড বলে।

পিরামিডের ভূমি : যে বহুভূজের উপর পিরামিড অবস্থিত, তাকে পিরামিডের ভূমি (Ground/Base) বলে।

পিরামিডের পার্শ্বতল : পিরামিডের ভূমি ব্যাতিত একটি বিন্দুতে মিলিত অন্যাব্য ত্রিভূজাকাত তলগুলোকে পিরামিডের একটি পার্শ্বতল (Outer Surface) বলে।

পিরামিডের ধার : পিরামিডের দুইটি সন্নিহিত তল অর্থাৎ দুইটি পার্শ্বতল অথবা একটি পার্শ্বতল ও ভুমি যে রেখায় মিলিত হয়, তাকে পিরামিডের একটি ধার (Edges) বলে। আবার, পিরামিডের শীর্ষবিন্দু ও ভূমির যেকোনো কৌণিক বিন্দুর সংযোজক সরলরেখকে পিরামিডের ধার বলে।

পিরামিডের শীর্ষবিন্দু : পিরামিডের পার্শ্বতলগুলো যে একটি সাধারণ বিন্দুতে মিলিত হয়, তাকে পিরামিডের শীর্ষবিন্দু (Vertex) বলে।

পিরামিডের উচ্চতা : পিরামিডের শীর্ষ হতে ভূমির উপর অঙ্কিত লম্বদৈর্ঘ্যকে পিরামিডের উচ্চতা (Height)

 

পিরামিড নির্মাণের কারণ :

প্রাচীন মিসরীয়দের ধর্মবিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল পুনর্জন্মে বিশ্বাস। তারা বিশ্বাস করত, মৃত্যুপরবর্তী জগতেও প্রয়োজন হবে ধন, দৌলত ও অন্যান্য জাগতিক বিষয়ের।

তাই রাজা ও রানিদের মৃত্যুর পর মৃতদেহের সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হতো সোনা, রুপা ও মূল্যবান রত্নাদি। তাদের দেহকে মমি বানিয়ে সংরক্ষণ করা হতো এবং তাদের সব দাস-দাসীকে হত্যা করা হতো, যাতে পরকালে তাদের সেবার অভাব না হয়। এই সমাধিসৌধ বা পিরামিডে মৃতদেহগুলোকে সমাহিত করার আগে মমি তৈরি করা হতো। মমি তৈরি করার পেছনে ছিল এক অভিনব পদ্ধতি। মমিগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করা হতো, যাতে সেগুলো পচে-গলে নষ্ট না হয়ে যায়।

কিন্তু সমস্যা ছিল, এই মমি ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী একটি নিরাপদ স্থানে না রাখলে চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় আছে। তাই পিরামড তৈরির আগে নির্মাণ করা হতো ট্রপিজয়েড আকৃতির মাস্তাবা নামক সমাধি। প্রাচীনকালে মাস্তাবায় রডের ব্যবহার ছিল না। সেকারণে এই মাস্তাবাগুলো বেশি উঁচু বানানো ছিল অসম্ভব। কালক্রমে এই মাস্তাবাগুলোর পরিবর্তে স্টেপ পিরামিডের ডিজাইন জনপ্রিয় হতে লাগল। এর পেছনের মূল কারণ পিরামিডের জ্যামিতিক গঠন। সাধারণত বিল্ডিংয়ের পুরো ওজন তার ভিতের ওপর পড়ে। তাই উচ্চতা যত বেশি হবে ভিত হতে হবে তত শক্ত। পিরামিডের ক্ষেত্রফল উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পেতে থাকে। পিরামিডের ভিত্তির ক্ষেত্রফল ওপরের স্তরগুলোর চেয়ে বেশি হওয়ায় এর ওপর চাপও পড়ে কম এবং স্থাপনাটি শক্তিশালী হয়। তাই অনেক উঁচু সমাধি নির্মাণের একমাত্র রাস্তা ছিল পিরামিড শেপের ডিজাইন গ্রহণ করা।

প্রথম দিকের পিরামিডগুলো ছিল অমসৃণ স্টেপ পিরামড, যেগুলো মিসরের প্রথম তিন রাজবংশের আমলে নির্মিত হতো। তবে চতুর্থ রাজবংশের সময় থেকে নির্মাণ শুরু হলো প্রকৃত পিরামিড আকৃতির সমাধি।

 

পিরামিডের অভ্যন্তরীন গঠন কৌশল :

পিরামিড তৈরি করার কারণ হিসেবে নানারকম কাহিনী প্রচলিত আছে। তবে সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনী হচ্ছে, প্রাচীনকালে মিশরীয়রা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো, মৃত্যুর পরও তাদের আত্মা বেঁচে থাকে। তারা অনন্ত জীবন নিয়ে সুর্যের প্রহরী হয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু যদি তাদের দেহে পচন শুরু হয় বা কোনও আঘাত লাগে তাহলে তারা অনন্ত জীবন থেকে বঞ্চিত হবেন। তাতে সুর্য ধ্বংস হবে আর পৃথিবীতে নেমে আসবে মহাপ্রলয়। তাই মৃত্যুর পর তাদের দেহকে মমি বানিয়ে পচন রোধ করে নিরাপদ ও দুর্ভেদ্য স্থানে রাখার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছিল পিরামিড। 

আবার অনেক ইতিহাসবেত্তাদের মতে, জীবনটাকে যাতে উপভোগ করা যায়, সে চিন্তায় মিশরীয়রা অস্থির থাকতো। ব্যক্তির গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে গুরুত্ব আরোপ করা হতো এ ব্যাপারে। ব্যক্তি যতো গুরুত্বপূর্ণ হতো এ কাজে গুরুত্ব ততো বেশি বেড়ে যেতো। পরবর্তী জীবনের আরাম-আয়েশের জন্য স্বভাবতই ফারাওদের ব্যাপারেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। ক্ষমতায় আসা নতুন ফারাওয়ের প্রথম কাজ সম্পন্ন করা। প্রত্যেকেই চাইতেন বিশাল আয়তনের হোক তার সমাধিক্ষেত্র। অনেকেই মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সমাধিক্ষেত্র তৈরির কাজ চালিয়ে যেত। এসব সমাধিক্ষেত্র আসলে মৃতের আত্মার ঘর। মিশরীয়রা মনে করত, লাশ বা মৃতদেহ টিকে থাকার ওপরই নির্ভর করে আত্মার বেঁচে থাকা বা ফিরে আসা। এ কারণেই মৃতদেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মমি করতো তারা। আত্মার বেঁচে থাকার জন্য চাই প্রয়োজনীয় নানা জিনিষ। তাই নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বিশেষ করে খাবার-দাবার মৃতদেহের সাথে দিয়ে দিতো তারা। সমাধিস্তম্ভ প্রধানের দায়িত্ব ছিলো দস্যুদের হাত থেকে মৃতদেহ আর তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র রক্ষা করার। কিন্তু কবরে সমাধিত ব্যক্তিটি কত বিপুল পরিমাণ বিত্ত আর ক্ষমতাবান ছিল তা জাহিরের উদ্দেশ্যেও নির্মাণ করা হতো পিরামিড। তাই ফারাওদের মৃতদেহের সাথে কবরস্থ করা হতো বিপুল ধন-সম্পদ। সমাজের বিত্তশালীদের কবরেও মূল্যবানসামগ্রী দেয়া হতো। এমনকি, নিন্মশ্রেণীর মানুষদের কবরেও সামান্য পরিমাণ হলেও কিছু খাবার রেখে দেয়া হতো।

মিশরীয়দের অনুকরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পিরামিড তৈরি করলেও মিশরের গীজা শহরের পিরামিড চারটিই বেশি জনপ্রিয়। 

 

মমি :

মমি হলো একটি মৃতদেহ যা জীবের শরীরের নরম কোষসমষ্টিকে জলবায়ু (বায়ুর অভাব অথবা অনাবৃষ্টি অথবা মৌসুমীয় অবস্থা) এবং ইচ্ছাকৃত কারণ (বিশেষ দাফন প্রথাগুলো) থেকে রহ্মা করে। অন্যভাবে বলা যায়, মমি হলো একটি মৃতদেহ যা মানবিক প্রযুক্তির মধ্যে অথবা প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস এবং হ্ময়প্রাপ্ত হওয়া থেকে রহ্মা করে। মমি শব্দটি মধ্যে যুগের লাতিন শব্দ mumia থেকে এসেছে, একে পারস্য ফার্সি ভাষা mūm (موم) থেকে আনা হয়েছে যার অর্থ দাহ্য খনিজ পদার্থবিশেষ , অদ্রি (bitumen)।

কোনো মরদেহকে মমি করার জন্য সবার আগে সেটিকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখা প্রয়োজন। সাধারণত পানির উপস্থিতিতেই ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। সে কারণে মমি করার জন্য মরদেহকে দ্রুত পানিমুক্ত করা হতো যাতে সেখানে ব্যাকটেরিয়া ভিড়তে না পারে। মমি তৈরি করার পদ্ধতিকে মোটামুটি দীর্ঘমেয়াদি বলা চলে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুগন্ধি কেমিক্যাল দিয়ে একটি দেহ মমি করতে প্রায় ৭০-৮০ দিন লেগে যেত।

প্রথমে রাজার শরীর পাম-ওয়াইন ও নীল নদের পানি দিয়ে ধুয়ে শরীরের ভিতর থেকে পচনশীল দ্রব্য(যেমনঃ হৃৎপিন্ড, ফুসফুস ইত্যাদি) বের করে ফেলা হত এবং অভ্যন্তরীণ নাড়ি-ভুঁড়িগুলো বের করে ফেলে দেওয়া হতো। থাকত শুধু চামড়া আর হাড়গোড়। এরপর পাথর ঢোকানো হত। এরপর লবণ দ্বারা তাদের ঢেকে দেয়া হত যাতে করে শরীরের পানি বেরিয়ে গিয়ে শরীর শুকিয়ে যায়।

এরপর লিনেন নামক কাপড় দ্বারা তাদের শরীরটিকে পেঁচানো হতো। লিনেন কাপড়কে তারা পবিত্র কাপড় মনে করত। এরপরের ধাপে মমির দুই হাতের মাঝে একধরনের রক্ষাকারী মন্ত্র লিখে দেওয়া হত। তারা মনে করত যে এই মন্ত্র তাদের রাজাকে খারাপ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করবে। তারপর শরীরকে আবার লিনেন দিয়ে মুড়ে বিশেষ ফিতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হত ।

এরপর শেষধাপে আবার লিনেনে মুড়ে বুকের উপর ‘আসিরিস’ নামক দেবতার প্রতীক লাগিয়ে দেওয়া হত। এভাবে মমি তৈরি করে তাদের একটি বিশেষ শক্ত ও মজবুত বাক্সে রেখে পিরামিডে স্থাপন করা হত।

 

লেখক: শাকিল সাজ্জাদ

 

করেছেন (100 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)

পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথর খন্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত।

0 টি ভোট
করেছেন (9,280 পয়েন্ট)

পিরামিড (Pyramid) হলো এক প্রকার জ্যামিতিক আকৃতি বা গঠন যার বাইরের তলগুলো ত্রিভূজাকার (Triangular) এবং যারা শীর্ষে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। পিরামিড একটি বহুভূজাকৃতি ভূমির উপর অবস্থিত। বহুভূজের উপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর একটি শীর্ষবিন্দু থাকে এবং যার পার্শ্বতলগুলো প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকার, তাকে পিরামিড বলে। পিরামিডের ভূমি যেকোনো আকারের বহুভূজ (Polygon) হতে পারে এবং এর পার্শ্বতলগুলো যেকোনো আকারের ত্রিভূজ (Triangle) হতে পারে। একটি পিরামিডের কমপক্ষে তিনটি ত্রিভূজাকার পার্শ্বতল (Triangular outer surfaces) থাকে, অর্থাৎ পিরামিডের ভূমিসহ কমপক্ষে চারটি তল থাকে। বর্গাকার পিরামিড (Square Pyramid) হলো এমন একটি পিরামিড যা একটি বর্গাকার ভূমির উপর অবস্থিত এবং যার চারটি ত্রিভুজাকার পার্শ্বতল আছে। এই ধরনের পিরামিডের বহুল ব্যবহার আছে।

খুফু'র পিরামিড

আকাশ থেকে দেখা মিশরীয় গিজার পিরামিড

চাঁদের পিরামিডতিওতিহুয়াকান

জাভা,ইন্দোনেশিয়ার ক্যান্ডি সুকুহ

কোহ কের,ক্যাম্বোডিয়াতে অবস্থিত প্রসাদ থম মন্দির

গুইমার এর পিরামিডটেনেরিফ (স্পেন)

পিরামিডের ডিজাইন এমনভাবে করা হয় যেব এর বেশি ওজন ভূমির নিকটে থাকে, ফলে এর আয়তনকেন্দ্র (Centre of volume) শীর্ষ হতে লম্ব দূরত্বের এক-চতুর্থাংশে অবস্থিত।

পিরামিড পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের একটি। প্রাচীন মিশর শাসন করতেন ফিরাউনরা (প্রাচীন মিশরীয় শাসক বা রাজাদের ফিরাউন (Pharaoh) বলা হতো)। তাদেরকে কবর বা সমাধী দেয়ার জন্যই পিরামিড নির্মান করা হতো। মিসরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে। সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় হচ্ছে গিজা'র পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথর খন্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত। চার হাজারের বছরের পুরানো এক সমাধিতে অঙ্কিত এক চিত্রে দেখা যায় এক বিশাল স্তম্ভকে স্লেজে করে সরানো হচ্ছে; অনেক মানুষ রশি দিয়ে সেই স্লেজ টেনে নিচ্ছে। আর তাদের মধ্যে একজন পাত্র থেকে জল ঢালছে বালির উপরে। এতে ঘর্ষণ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আড়াই টন ওজনের এক একটা ব্লক।

(উইকিপিডিয়া)

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+4 টি ভোট
1 উত্তর 257 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 228 বার দেখা হয়েছে
+5 টি ভোট
3 টি উত্তর 1,622 বার দেখা হয়েছে
26 জুলাই 2021 "পরিবেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন মেহেদী হাসান (141,820 পয়েন্ট)
+5 টি ভোট
1 উত্তর 5,488 বার দেখা হয়েছে
02 ফেব্রুয়ারি 2021 "পরিবেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন মেহেদী হাসান (141,820 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর 903 বার দেখা হয়েছে

10,723 টি প্রশ্ন

18,367 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

241,218 জন সদস্য

47 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 46 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Ayon Ratan Agni

    390 পয়েন্ট

  2. Al Moyaj Khondokar

    210 পয়েন্ট

  3. Vuter Baccha

    150 পয়েন্ট

  4. Hasan rafi

    140 পয়েন্ট

  5. Mehedi_Bknowledge

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি প্রাণী স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া শীতকাল গরম কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ মস্তিষ্ক শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন গ্রহ রসায়ন তাপমাত্রা উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা পাখি গ্যাস মন সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম বিড়াল কান্না নাক
...