কোমায় থাকলে মানুষের মস্তিষ্কে কী ঘটে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
756 বার দেখা হয়েছে
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন (141,820 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (141,820 পয়েন্ট)
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর

আচ্ছা কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কোমা ব্যাপারটা আসলে কেমন? টিভিতে বা চলচ্চিত্রে কোমায় থাকা রোগীদেরকে সবসময় দেখানো হয় একজন ঘুমন্ত ব্যক্তির মতো। বাহ্যিক দিক থেকে ভাবলে, ব্যাপারটা তো ঠিকই আছে, কোমা তো আসলে ঘুমের মতই দেখতে! চোখ বন্ধ থাকবে, নিঃশ্বাস হবে ধীর, মুখের অভিব্যক্তিটা হবে শান্তিপূর্ণ- কোমা সত্যিকার অর্থে এমনটাই।

তবে বাইরে থেকে একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি আর কোমায় থাকা রোগীকে একই রকম দেখা গেলেও, ভেতরে, বিশেষ করে মস্তিষ্কের কার্যক্রম দু’ক্ষেত্রে পুরোই আলাদা। মস্তিষ্কের চোখে ঘুম আর কোমার মাঝে কোনো সাদৃশ্যই নেই।কোমাকে তার মেডিক্যাল সংজ্ঞায় দেখানো হয়েছে একধরনের অচেতনতা হিসেবে, যে অচেতনতা থেকে মানুষটিকে জাগানো সম্ভব নয়; আলো, শব্দ বা সাধারণ ব্যথার স্টিমুলির প্রতি কোমায় থাকা ব্যক্তি থাকবে অসাড়, তার কোনো স্বাভাবিক ঘুমচক্র বা স্লিপ সাইকেলও থাকবে না, তাকে কোনো স্বেচ্ছাকৃত নড়াচড়াও করতে দেখা যাবে না।  

কোমার সংজ্ঞাটি বিশদ বটে, কিন্তু কোমায় থাকার সময়ে আসলে একজন মানুষের মস্তিষ্কে কী চলে, সে ব্যাপারটি ভালোই কৌতূহলোদ্দীপক। কোমাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সম্বোধন করেন এক চেতনার ব্যাধি  বা 'Disorder of Consciousness' হিসেবে। চেতনার ব্যাধিগুলো সাধারণত হয় মস্তিষ্ক কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে। ক্ষতিগ্রস্থতা অনেকভাবেই হতে পারে। স্ট্রোক হতে পারে, অক্সিজেনের অভাব হতে পারে, মাথায় বড়সড় আঘাতে ফলেও হতে পারে এই ক্ষতি। আর মস্তিষ্কের কোনো একটা ক্ষতি মানুষের মাঝে গভীর অচেতনতার সূত্রপাত ঘটাতে পারে, যে অচেতনতা টিকতে পারে দিনের পর দিন, কিংবা মাসের পর মাস। এই অচেতনতার নামই কোমা। যদিও দর্শন মানুষের চেতনার স্বরূপ নিয়ে অনেক তর্ক করেছে, কিন্তু মেডিকেলের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই সোজাসাপ্টা। 

কারো চেতনা আছে তখনই বলা যাবে, যখন তার দুটি বৈশিষ্ট্য ঠিকঠাক থাকবে। তাকে হতে হবে awake বা সজাগ এবং aware বা সচেতন। সজাগ বলতে বোঝানো হচ্ছে কোনো মানুষের যদি স্বেচ্ছায় দেহকে সঞ্চালন করতে পারা, হাত নাড়ানো বা চোখের পাঁপড়ি নাড়ানো। আর সচেতন বলতে বোঝায়, আশেপাশের ঘটনার প্রতি প্রতিক্রিয়া থাকতে হবে। অর্থাৎ কেউ আঘাত করলে ব্যথা পেতে হবে, বা কেউ ডাকলে সাড়া দেবার ক্ষমতা থাকতে হবে। কারো কোনো চেতনার ব্যাধি হলে, এ দু’টো অন্তত যেকোনো একটিতে ঘাটতি দেখা যায়। কোমার ক্ষেত্রে দু’টো বৈশিষ্ট্যের একটিও থাকে না।

তবে একজন কোমায় থাকা রোগীর মস্তিষ্ক যে চলছে, তা বোঝা যায় রোগীর কিছু অটোমেটিক ব্যাসিক রেস্পন্স থেকে, যেমন তাদের চোখের পিউপিল ডাইলেটেড অবস্থায় থাকে। কিন্তু এই চলাটা সাধারণের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। মস্তিষ্ক কোমায় থাকা অবস্থায় অনেক কম শক্তি ব্যবহার করে, আপনার সবচেয়ে গভীর ঘুম থেকেও ১০-২০% কম শক্তি, আর জাগ্রত অবস্থার তুলনায় ৫০-৬০% কম। এই কম শক্তির ব্যবহার থেকেই বোঝা যায়, সারা মস্তিষ্কের কার্যক্রম তখন কতটা শিথিল রয়েছে। এই শিথিল থাকার কারণে, মস্তিষ্কে তখন আর রেগুলার স্লিপ সাইকেল থাকে না।

সাধারণত ঘুমন্ত ব্রেইনে REM বা র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বলে একটা ব্যাপার আছে, এই সময়ে আমাদের মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রিকাল অ্যাক্টিভিটি চলে বেশ হাই ফ্রিকোয়েন্সিতে, যেটা কিনা জাগ্রত অবস্থারই সমান অনেকটা। কিন্তু কোমায় থাকা মস্তিষ্ক এই ধরনের কোনো অ্যাক্টিভিটিই দেখায় না। বিভিন্ন ব্রেইন স্ক্যানও আমাদের এটাই বলে, কোমায় থাকা সময়ে মস্তিষ্কে কোনো REM সাইকেল থাকে না। আর যেহেতু মানুষ স্বপ্নও দেখে REM সাইকেল চলাকালে, তাই কোমায় থাকা মানুষেরা স্বপ্নও দেখে না খুব সম্ভবত। তবে অন্যান্য অচেতনতার সাথে কোমার সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা হয় মস্তিষ্কের সেরেব্রাল করটেক্সে। সেরেব্রাল করটেক্স হলো মস্তিষ্কের মূল অংশ। কোমার সময়ে, সেখানকার কার্যক্রম চলে ঠিকই, কিন্তু খুবই বেসিক পর্যায়ে সেগুলো। এবং তথ্যের প্রসেসিংও ঠিকঠাক হয় না তখন। তাই মস্তিষ্ক বুঝতে পারে না তার সেন্সরি সিগন্যালগুলো, যেগুলো ইন্দ্রিয়ের বিভিন্ন অনুভূতি থেকে আসছে, সেগুলো আসলে কী অর্থ বহন করছে। 

উদাহরণস্বরূপ, ২০০০ সালে 'ব্রেইন' নামক জার্নাল কোমায় থাকা পাঁচজন রোগীর উপর স্টাডি করে। তারা দেখায়, বিভিন্ন শব্দের প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্কে কিছু সিগন্যাল যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই সিগন্যাল বোঝার জন্য মস্তিষ্কের যে জায়গায় যেতে হবে সিগন্যালকে, সেই জায়গায় তা পৌঁছাচ্ছে না। এ কারণে আমরা যে শুনি, কোমায় থাকা মানুষেরা আমাদের শুনে বুঝতে পারে কিন্তু উত্তর দিতে পারে না, এসব আসলে গল্পই, এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। হ্যাঁ, তারা আমাদের শুনতে পায়, তা হয়তো ব্যবহারিকভাবে সত্য, কিন্তু আমরা কী বলছি, তা বোঝার ক্ষমতা তাদের একদমই থাকে না। এখানেই আসলে ঘুমের সাথে কোমার পার্থক্য, ঘুমন্ত মস্তিষ্ক যা শুনছে সবই বুঝতে পারে, আমাদের স্মৃতিতে পরে সেটা থাকুক আর না থাকুক- ঘুম নিয়ে হওয়া গবেষণাগুলো এটাই বলে।

কেন এই বোঝার ঘাটতিটা তৈরি হচ্ছে, কেন সিগন্যাল ঠিকঠাক জায়গায় পৌঁছাচ্ছে না? আসলে কোমার সময়, মস্তিষ্কের করটেক্সের মেজর দুটো নেটওয়ার্ক ব্যাহত হয়ে যায়। একটা অভ্যন্তরীণ সজাগতার নেটওয়ার্ক, আরেকটা বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণ সজাগতা মস্তিষ্কের ভেতরের ব্যাপারস্যাপার নিয়ে কাজ করে, চিন্তা, নিজের সাথে নিজের বলা কথা এসব নিয়ে। আর বাহ্যিক সজাগতা কাজ করে বাইরে থেকে আসা ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া নিয়ে। এসব নেটওয়ার্ক অন্যান্য ব্যাধিতেও ব্যাহত হয়, যেমন লকড ইন সিন্ড্রম, যেখানে একজন মানুষের চেতনা আছে ঠিকই, কিন্তু নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটা নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একমাত্র কোমার ক্ষেত্রেই হয় দু’টোই। তাই কোমায় থাকা ব্যক্তি আসলে তেমন কিছুই বোঝে না।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, কোমায় থাকা মস্তিষ্ক অন্যান্য অবস্থা বা ঘুমের তুলনায় অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন থাকে। একে তুলনা করা যায় জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়ার সাথে। জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া হচ্ছে দেহকে কোনো অপারেশনের জন্য কৃত্রিমভাবে অবশ করার পদ্ধতি। এ কারণে অনেক ডাক্তারই অ্যানেস্থেসিয়াকে বলেন রিভার্সিবল কোমা, অর্থাৎ যে কোমা থেকে চাইলেই মানুষকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। আর তাই সত্যিকারের কোমার উপর গবেষণা করতেও অ্যানেস্থেসিয়াকে ব্যবহার করা হয়। একজন কোমায় থাকা রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক চেতনায় ফিরে আসতে পারেন। তবে তা হবে কি না, তা নির্ভর করে আঘাতের তীব্রতার উপর। আর স্বাভাবিক চেতনায় ফিরে আসলে, কোমায় থাকা অবস্থায় তার আশেপাশে কী হয়েছিল, তার কোনো স্মৃতিই সেই ব্যক্তির থাকবে না। 

যদিও একজন কোমার রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে সুস্থ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন ডাক্তাররা, কোমা নিয়ে গবেষণা করা এবং এর স্বরূপ বুঝতে পারা আসলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের চেতনার প্রকৃতিকে বোঝার অনেক কার্যকরী উপায় হচ্ছে কোমাকে বুঝতে পারা। যখন আমাদের চেতনা থাকে না, তখন আমাদের মস্তিষ্কে আসলে কী থাকে না, তা যদি আমরা বুঝতে পারি, তবে চেতনা থাকবার জন্য দায়ী কোন কোন ফ্যাক্টর, তাও আমরা বুঝতে পারবো। এ কারণে কোমা মেডিকেল সায়েন্সের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

লেখক : Sadman Fakid

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+2 টি ভোট
1 উত্তর 221 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 568 বার দেখা হয়েছে
12 ফেব্রুয়ারি 2022 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন R Atiqur (43,970 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 206 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 453 বার দেখা হয়েছে

10,722 টি প্রশ্ন

18,365 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

240,609 জন সদস্য

40 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 40 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Ayon Ratan Agni

    390 পয়েন্ট

  2. Al Moyaj Khondokar

    210 পয়েন্ট

  3. Vuter Baccha

    150 পয়েন্ট

  4. Hasan rafi

    140 পয়েন্ট

  5. Mehedi_Bknowledge

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি প্রাণী স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া শীতকাল গরম কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ মস্তিষ্ক শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন গ্রহ রসায়ন তাপমাত্রা উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা পাখি গ্যাস মন সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম বিড়াল কান্না নাক
...