বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস কী? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+3 টি ভোট
1,848 বার দেখা হয়েছে
"লাইফ" বিভাগে করেছেন (141,820 পয়েন্ট)

1 উত্তর

+2 টি ভোট
করেছেন (141,820 পয়েন্ট)
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর

‘বোবায় ধরা', এই পরিভাষাটির সাথে একদমই পরিচয় নেই, এমন মানুষ বোধ হয় পাওয়াই যাবে না। মাঝরাতের ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা বা মনঃস্তত্ত্বের জ্ঞান নিয়ে নাড়াচাড়া কিংবা লোকমুখে শোনা নানা উপকথা-কুসংস্কার থেকে বোবায় ধরা সম্পর্কে জেনেছেন। বোবায় ধরার পেছনের কারণ কী বা প্রকৃত অর্থেই কী ঘটে থাকে, এ ব্যাপারে দু’রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যায়- একটি অতিপ্রাকৃতিকের প্রতি বিশ্বাস নির্ভর অধিজাগতিক ব্যাখ্যা, অন্যটি মনঃশারীরবৃত্তিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

তবে যা-ই হোক, ব্যক্তিভেদে অভিজ্ঞতার ধরন মোটামুটি একই রকম- ঘুম ভেঙে যাওয়া এবং কিছুক্ষণের জন্য বাকশক্তি, চলনশক্তি হারিয়ে ফেলা। এর বাইরে ঘুম ভাঙার আগে-পরে অনেকে অনেক কিছু অনুভব করেন, হয়তো দেখতেও পান। এই পুরো ঘটনাটিই হচ্ছে বোবায় ধরা।

‘বোবায় ধরা’র নামের উৎপত্তি :

বাংলায় ‘বোবায় ধরা’ নামকরণটি মূলত এসেছে লোকাচারীয় কুসংস্কার হতে। বলা হয়, বোবা নামের ভূত ঘুমের ভেতর মুখ চেপে ধরে, তাই চোখ খুলেও মানুষ তখন কথা বলতে পারে না। একেই ‘বোবায় ধরা’ বলে। তবে সেই ভূতটির নাম কেন ‘বোবা’, সেটিও বোঝা কঠিন নয়। বোবা বানিয়ে দেয়, তাই ‘বোবা’। যা হোক, ‘বোবা ধরা’ পরিভাষাটি বহুল প্রচলিত একটি বাগধারা মাত্র, কোনো বৈজ্ঞানিক পরিভাষা নয়। বোবা ধরার বাংলা পরিভাষাটি ‘নিদ্রি পক্ষাঘাত’, ইংরেজিতে ‘Sleep/Sleeping Paralysis’। বোবায় ধরলে ব্যক্তি যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে অতি-অল্প সময়ের জন্য বাক ও চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেন, সেহেতু এটিকে ঘুমের পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস বলা হয়।

কী হয় যখন বোবায় ধরে?

পেনিসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ব্রায়ান শার্পের মতে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসের ক্ষেত্রে তিন ধরনের দৃষ্টিভ্রম বা হ্যাল্যুসিনেশন তৈরি হতে পারে। প্রথমটি ইনট্রুডো বা ঘরের ভেতর কোনো অতিপ্রাকৃত কিছুর উপস্থিতি টের পাওয়া। দ্বিতীয়টি ইনকিউবিস। আপনার মনে হতে পারে যে, কোনো দৃশ্যমান বা ঈষৎ-অদৃশ্য সত্তা আপনার বুকের ওপর চেপে বসে আছে। সর্বশেষ, লেভিটেশন। আপনার মনে হতে পারে, আপনাকে কেউ শোয়া অবস্থাতেই শূন্যে তুলে ফেলেছে এবং কোনো অচেনা গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ তিন অবস্থার ভেতর একটি সাধারণ পরিস্থিতি আপনি অনুভব করবেন, আর তা হলো, না পারবেন বলতে, না পারবেন নড়তে। চিৎকার করতে চাইলেও মুখ ফুটে শব্দ বের হবে না। হাত-পা ছুঁড়তে পারবেন না। এ পক্ষাঘাত দশা স্থায়ী হবে সর্বোচ্চ কয়েক সেকেন্ড। এই পক্ষাঘাত অবস্থায় সৃষ্ট হ্যাল্যুসিনেশনের জন্যই ভূত-প্রেত জড়িয়ে তৈরি হয়েছে নানা গালগপ্পো।

প্রায় সব লোকগাঁথাতেই ভূত একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাতের বেলায় অশরীরীরা নানা বেশে এসে মানুষকে ভয় দেখায়, এমনটিই প্রচলিত। এই ভয়ের অনুভূতির সাথে বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস জড়িয়ে গেছে আষ্টেপৃষ্ট। আর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানবার আগে সব অস্বাভাবিকতার পেছনেই অলৌকিকতা খোঁজা হতো। এ কারণেই বোবায় ধরাকে অনেকেই শয়তান বা ভূতের উপস্থিতি মনে করতেন।

বোবায় ধরার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা :

নিদ্রা বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা তেমন গুরুতর কোনো অস্বাভাবিকতা নয়। তাই ঐ অর্থে কোনো রোগ বা রোগের আলামত বলতেও তারা চান না। তাদের মতে, বোবায় ধরা হচ্ছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থা, যেখানে আমরা ঘুম ও জাগরণের একটি মাঝামাঝি দশায় অবস্থান করি। ঘুমোনোর সময় আমাদের মস্তিষ্ক কথা বলা সহ চলনক্ষমতা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে, যাতে আমরা ঘুমের মাঝে চলতে গিয়ে আঘাত না পাই। কিন্তু এমন স্থিতাবস্থার মাঝেই অনেক সময় আমরা জেগে উঠি। অর্থাৎ কখনো কখনো মস্তিষ্কের চেতন অংশের পুরোটা একত্রে কার্যকর হয় না। তখন অন্য অনুভবশক্তি সচল থাকলেও চলন ও বাকশক্তি ফিরতে একটু সময় নেয়। এর মাঝেই তৈরি হয় সাময়িক পক্ষাঘাত বা বোবায় ধরা।

ঘুম ও জাগরণের মধ্যবর্তী এ অবস্থার প্রকরণ হলো দুটি। একটি হতে পারে, যখন আপনি জাগ্রত অবস্থা থেকে ঘুমাচ্ছেন বা ঘুমাবো ঘুমাবো করছেন। অন্যটি হতে পারে যখন আপনি ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জেগে উঠছেন বা উঠবেন। প্রথমটিকে বলা হয় প্রিডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস এবং দ্বিতীয়টিকে পোস্টডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস।

প্রিডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস :

আপনি যখন ঘুমাতে যান তখন অনুভূতিগুলো হালকা হয়ে আসতে থাকে। সে অবস্থায় আপনি শরীরের ঘটমান ও আসন্ন পরিবর্তনগুলো টের পান না বা অচেতন হতে থাকেন। কিন্তু কোনোভাবে যদি চেতনা পান, তবে দেখতে পাবেন যে আপনি কথা বলতে বা নড়তে পারছেন না।

পোস্টডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস :

REM (Rapid Eye Movement) ও NREM (Non-Rapid Eye Movement) নামে দুটো পরিভাষা রয়েছে। ৩টি NREM ও একটি REM দ্বারা ঘুমের একটি চক্র আবর্তিত হয়, যা ৯০ মিনিট ব্যাপী স্থায়ী হয়। NREM আগে সংঘটিত হয় এবং তা মোট নিদ্রিত অবস্থার ৭৫ ভাগ। এ সময় শরীর নিজেকে পুরোপুরি ছেড়ে দেয় ও দেহজ ক্ষয়পূরণ করে।

দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ REM এ চোখের বিক্ষিপ্ত পরিচলন শুরু হয় এবং মানুষ স্বপ্ন দেখতে থাকে। এ সময়ে চোখ ব্যতীত পুরো দেহ থাকে স্থিতাবস্থায়, পেশীগুলোর কার্যকারিতাও বন্ধ থাকে। এই REM চক্র শেষ হবার আগে আপনি জেগে গেলে তখন আপনি আবিষ্কার করবেন যে আপনি কথা বলতে বা নড়তে পারছেন না।

বোবায় ধরার কারণসমূহ :

মায়ো ক্লিনিকের গবেষণা অনুযায়ী, ১০-২৫ বছর বয়সীদের ভেতর বেশি দেখা যায় সমস্যাটি। স্লিপ অ্যাপ্নি কিংবা নার্কোলেপ্সি ধরনের নিদ্রাজনিত রোগে আক্রান্তদের বেলায় বোবায় ধরার হার বেশি বলে নিউ ইয়র্কের মন্টেফিওর হেলথ সিস্টেমের স্লিপ -ওয়েক ডিজঅর্ডার সেন্টারের চিকিৎসক ডা. শেলবি হ্যারিস উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল ডেনিস ৮৬২ জন ভাই-বোনের মধ্যে চালানো গবেষণার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে আসেন যে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিসে বংশগতি বা জিনগত যোগ রয়েছে। ২০১১ সালে পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে চালানো এক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বের ৭.৬ ভাগ মানুষ এ সমস্যায় ভোগেন। বিষণ্ণতা বা উদ্বিগ্নতার রোগীদের শতকরা প্রায় ৩২ ভাগের ভেতরেই বোবায় ধরার সমস্যাটি দেখা যায়। এর বাইরে সাধারণভাবে যেসব কারণে বোবা ধরা দেখা যায়, সেগুলো হলো-

- কম ঘুমানো।
- ঘুমের সময় পরিবর্তন।
- উপুড় হয়ে ঘুমানো।
- মাদকাসক্তি।
- বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা এ জাতীয় মানসিক সমস্যা থাকা।
- নার্কোলেপ্সি বা অতি ঘুমকাতরতা, ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছোঁড়া বা হাঁটা সহ অন্যান্য নিদ্রাজনিত রোগ থাকা।
- সক্রিয়তা বর্ধক ঔষধ ব্যবহার।

বোবায় ধরার সমস্যা থেকে বেরোতে কী করবেন :

আগেও বলা হয়েছে, বোবায় ধরা আসলে গুরুতর কোনো রোগ বা এমন কিছুই নয়। তাই এর জন্য কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। তবে এটি যদি বাড়াবাড়ি রকমের হয় অর্থাৎ আপনার ঘুমে নিয়মিতভাবে ব্যাঘাত ঘটায় বা উদ্বিগ্নতার দরুণ আপনার রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বা কমে যায়, তখন এই বোবায় ধরা থেকে বের হবার জন্য আপনাকে কিছুটা উদ্যোগী হতে হবে বৈকি।

প্রথমত, আপনি একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কাছে যাবেন। তিনি আপনার মেডিকেল রেকর্ড ঘেঁটে দেখবেন এবং আপনার অন্য কোনো নিদ্রাজনিত রোগ আছে কিনা দেখবেন। এরপর প্রয়োজন হলে তিনি আপনাকে ঘুম বিশেষজ্ঞের কাছে সুপারিশ করতে পারেন। তবে যে কাজগুলো আপনার করতে হবে, তা হলো-

- নিয়মিত কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাবেন।
- ঘুমানোর পদ্ধতি পাল্টান। বিশেষত উপুড় হয়ে কখনোই ঘুমাবেন না।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট বড়ি সেবন করতে পারেন ঘুমের জন্য।
- অন্যান্য নিদ্রাজনিত বা মানসিক সমস্যা থেকে থাকলে সেগুলোর চিকিৎসা নিন।

লেখক : Tariq Ul-Islam

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+3 টি ভোট
1 উত্তর 119 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
1 উত্তর 135 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
1 উত্তর 235 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
1 উত্তর 210 বার দেখা হয়েছে
28 ফেব্রুয়ারি 2021 "লাইফ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন মেহেদী হাসান (141,820 পয়েন্ট)
+3 টি ভোট
1 উত্তর 134 বার দেখা হয়েছে
28 ফেব্রুয়ারি 2021 "লাইফ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন মেহেদী হাসান (141,820 পয়েন্ট)

10,729 টি প্রশ্ন

18,374 টি উত্তর

4,730 টি মন্তব্য

241,952 জন সদস্য

66 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 66 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. FrankFinney

    100 পয়েন্ট

  2. MathewJeffer

    100 পয়েন্ট

  3. AnyaThorby75

    100 পয়েন্ট

  4. LynwoodSayre

    100 পয়েন্ট

  5. CarrieWwr30

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য প্রাণী বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া গরম শীতকাল কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক শব্দ ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম হরমোন বিড়াল কান্না
...