আমরা ইচ্ছামতো কেন ছাপানোর মেশিন দিয়ে টাকা ছাপাতে পারি না বা ছাপালেও তা জাল হিসেবে গণ্য হয়? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+8 টি ভোট
3,798 বার দেখা হয়েছে
"বিবিধ" বিভাগে করেছেন (110,340 পয়েন্ট)

2 উত্তর

+4 টি ভোট
করেছেন (110,340 পয়েন্ট)
Ayesha Akhter-

ইচ্ছেমতো কেন টাকা ছাপানো যায় না, রহস্যটি জানেন কি?

টাকা! যা ছাড়া জীবন অচল। টাকার পিছনেই সারা দুনিয়ার মানুষের ছুটে চলা। অনেক হওয়ার পরও যা কম পড়ে যায়। আবার অনেকে দুঃখেরও অবসান হয়না এই টাকার জন্য।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন টাকা এত কম ছাপানো হয়? বেশি ছাপালেইতো আর কোন কষ্ট থাকে না!

“লা কাসা দে পাপেল” নামে স্প্যানিশ একটা টিভি সিরিজ বেশ শোরগোল তুলেছিল। এতে দেখে যায়, একদল ডাকাত একটা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে ঢুকে কিছু মানুষকে জিম্মি করে টাকা লুট করছে। তবে তাদের লুট করার পদ্ধতি একটু ভিন্ন। তারা ব্যাংকের টাকা লুট না করে, বরং ব্যাংকের টাকা প্রিন্ট করার মেশিন ব্যবহার করে তৈরি করে নিচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।

এটা দেখার পর অনেকের এ প্রশ্ন মাথায় এসেছে যে, তাদের মত সরকার নিজেই যদি বিলিয়ন-বিলিয়ন টাকা প্রিন্ট করে আমাদের হাতে তুলে দেয়, তাহলেই তো সব আর্থিক সমস্যা মিটে যায়! কিংবা, সরকার যদি বস্তা বস্তা টাকা প্রিন্ট করে পদ্মা সেতু, মেঘনা সেতু, বুড়িগঙ্গা সেতু তৈরী করে, তাহলেই বা সমস্যা কোথায়?

অনেক সমস্যা! এত বড় সমস্যার এত সহজ সমাধান হলে তো আর কোন চিন্তাই থাকত না। চলুন জেনে নেয়া যাক সমস্যাটা কোথায়।

নির্দিষ্ট করে বললে টাকা প্রিন্ট করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তো, সে কীসের ভিত্তিতে টাকা তৈরী করে? সে কি মন চাইলেই যত ইচ্ছা টাকা প্রিন্ট করতে পারে?

টাকা উৎপাদন করার কোনো আবশ্যক নিয়ম নেই। যেকোনো দেশের সরকারের যত ইচ্ছে টাকা প্রিন্ট করার স্বাধীনতা রয়েছে। তবে কোনো দেশই যত ইচ্ছা টাকা প্রিন্ট করে না, টাকা প্রিন্ট করা হয় সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রয়োজন অনুসারে তার সঙ্গে ভারসাম্য রেখে। টাকা উৎপাদনের পরিমাণের সঙ্গে জড়িত দেশের মানুষের উপার্জন, অর্থনৈতিক চাহিদা, দেশের সম্পদ ইত্যাদি। এর বেশি উৎপাদন করলেই শুরু হয় সমস্যা, দেশের অর্থনীতি ভারসাম্য হারাতে শুরু করে।

ধরুন, একটা দেশে সম্পদ বলতে রয়েছে দশটা আম। আর সেই দেশ বছরে ২০ টাকা প্রিন্ট করে। পরিবহন খরচ, খুচরা মূল্য পাইকারী মূল্য ইত্যাদি জটিলতা বাদ দিয়ে ধরেই নেই প্রতিটি আমের মূল্য ২ টাকা। তাহলে দেশের মোট সম্পদ আর মোট কারেন্সী ভারসাম্যপূর্ণ হল। পরের বছর ঐ দেশটি সর্বমোট ৪০ টাকা প্রিন্ট করল, কিন্তু মোট সম্পদ বলতে দশটি আমই রইল। যেহেতু দেশে নতুন কোনো সম্পদ নেই, ওই ১০টি আম কেনার জন্য বরাদ্দ হল ৪০টাকা, অর্থাৎ প্রতিটি আমের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেল। এভাবেই দেশের মোট সম্পদের তুলনায় অতিরিক্ত টাকা উৎপাদন করলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, টাকার দাম বা ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। একে বলে মূদ্রাস্ফীতি।

দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে বেশি করে টাকা ছাপিয়ে আর লাভ কি হল? তাই একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রীতিমত গবেষণা করে চাহিদা নির্ধারণ করতে হয়, সেই অনুযায়ী টাকা প্রিন্ট করতে হয়। সাধারণত একটি দেশের জিডিপির ২-৩ শতাংশ টাকা প্রিন্ট করা হয়, তবে উন্নয়নশীল দেশে এই হার আরেকটু বেশি।

এই কারণেই আমরা ইচ্ছামত টাকা তৈরি করে রাতারাতি পদ্মা সেতু বানিয়ে ফেলতে পারি না। তাহলে সেই বাড়তি টাকা শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার, ডিলার, সাপ্লায়ার এবং আরো অনেকের হাত ধরে প্রবেশ করবে মূলধারার অর্থনীতিতে এবং এর বারোটা বাজিয়ে দেবে।

মূদ্রাস্ফীতির কারণে বাড়তি অর্থ কাটাকাটি হয়ে যায় কেবল তা-ই না, এর ফলে দেশের অর্থনীতির ভারসাম্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কীভাবে হয় সেটা জানেন কি?

সঞ্চয়ের মূল্য কমে যাবে। আজকে ১০ টাকা দিয়ে চিপস না কিনে সেটা ব্যাংকে রাখলাম। এখন যদি দুইদিন পরে দেখি একটা চিপসের দাম ২০ টাকা, তাহলে তো সঞ্চয় ব্যাপারটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা হল!

আমরা অনেকেই বন্ড কিনেছি বা কাউকে বন্ড কিনতে দেখেছি। এই বন্ডের মাধ্যমে আসলে সরকার আমাদের কাছে অর্থ ধার করে। আজকে পঞ্চাশ টাকার বন্ড বিক্রি করে সেই অর্থ কাজে লাগিয়ে এক বছর পরে সরকার পঞ্চাশ টাকা ফেরত দিচ্ছে, ব্যাপারটা এরকম। এখন, সরকারের কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকার বন্ড কিনলেন, এক বছর পর সেই টাকা আদায় করার পর যদি দেখেন মুদ্রাস্ফীতির কারণে পঞ্চাশ টাকায় আগের চাইতে কম পরিমাণ চাল কিনতে পারছেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই বন্ড কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আবার বন্ড বিক্রি না করতে পারলে সরকারও প্রয়োজনীয় অর্থ থেকে বঞ্চিত হবে। টাকার ক্রয়ক্ষমতার অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ব্যাবসাখাতে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে।

যে দেশে মুদ্রাস্ফীতি হবে, সে দেশের মুদ্রার দাম অন্যদেশের মুদ্রার তুলনায় কমে যাবে। ধরুন, জার্মানীতে মুদ্রাস্ফীতির হার দিনে ২০%, আর ভারতে ০%। অর্থাৎ ১০০ টাকার একটি দ্রব্যের মূল্য কাল জার্মানীতে হবে ১২০ টাকা, ভারতে ১০০ টাকাই থাকবে। সেক্ষেত্রে ভারতের এক রুপির মূল্য হবে জার্মানীর ১.২০ মার্কের (জার্মানীর মুদ্রা) সমান।

জিম্বাবুয়ের অস্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতির কথা আমরা জানি। সেখানে এক প্যাকেট পাউরুটি কেনার জন্য এক বস্তা টাকা নিয়ে দোকানে যেতে হত, এমন কথা প্রচলিত আছে। কথাটা খুব একটা ভুলও নয়, বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন জিম্বাবুইয়ান ডলার সেখানে ডালভাত।

এই অস্বাভাবিকতা শুরু মূলত ২০০৮ সাল থেকে। ষাটের দশক থেকেই জিম্বাবুয়ের অর্থনীতির নাজেহাল অবস্থা। একুশ শতকে এসে তা একেবারে চরম আকার ধারণ করে। অর্থনীতি সামাল দিতে মুগাবে সরকার প্রচুর পরিমাণে টাকা প্রিন্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত উলটো ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিকে। প্রচুর পরিমাণে টাকা ছাপা হওয়ায় হু-হু করে দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকে। বর্তমানে জিম্বাবুয়ের মুদ্রাস্ফীতির হার দৈনিক ৯৮%, অর্থাৎ আজকে যার মূল্য ১০০ টাকা, আগামীকাল তা ১৯৮ টাকা দিয়ে কিনতে হবে! চিন্তা করা যায়! তবে মুদ্রাস্ফীতির সর্বোচ্চ হার কিন্তু এটা নয়। এই অপ্রীতিকর রেকর্ড হাঙ্গেরীর, ১৯৪৬ সালে সে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার দৈনিক ১৯৫% পর্যন্ত উঠেছিল।

অতিরিক্ত ছাপা হওয়া টাকা দিয়ে যে দেশের ঋণই শোধ করেন, যে দেশেই তা খরচ করেন, তা ঘুরেফিরে আবার নিজের দেশেই ফেরত আসবে। কারণ আমাদের দেশের মুদ্রা তো শেষতক আমার দেশের মানুষকেই গ্রহণ করতে হচ্ছে, অন্যান্য দেশে তো এই মুদ্রা দিয়ে কেনাকাটা করতে পারছেন না! সুতরাং বাড়তি টাকাটা ঘুরেফিরে আমাদের দেশের অর্থনীতিতেই প্রবেশ করছে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হল এই টাকা কিন্তু সরাসরি বৈদেশিক ঋণ শোধ করায় ব্যবহার করতে পারছি না, কারণ ঋণের চুক্তিতে একটি নির্দিষ্ট কারেন্সীতে তা শোধ করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা থাকে।

একটা দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন করতে বেশি করে টাকা তৈরি করা কোন সমাধান নয়, সমাধান হল উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এর ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। উল্টোভাবে উন্নয়ন করতে গেলে উন্নয়নও উল্টোভাবেই হবে!

[তথ্যসূত্রঃ- ডেইলি বাংলাদেশ]
0 টি ভোট
করেছেন (135,490 পয়েন্ট)

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+4 টি ভোট
1 উত্তর 2,115 বার দেখা হয়েছে
28 ফেব্রুয়ারি 2021 "প্রযুক্তি" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন মেহেদী হাসান (141,850 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
1 উত্তর 2,751 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 358 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
1 উত্তর 651 বার দেখা হয়েছে

10,853 টি প্রশ্ন

18,553 টি উত্তর

4,746 টি মন্তব্য

855,343 জন সদস্য

108 জন অনলাইনে রয়েছে
2 জন সদস্য এবং 106 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Jakiasultana53

    120 পয়েন্ট

  2. keonhacaifutbol

    100 পয়েন্ট

  3. nohu85cocom

    100 পয়েন্ট

  4. hitclub68eu

    100 পয়েন্ট

  5. Vivu88thcncom

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল #science ক্ষতি চুল চিকিৎসা কী পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক #biology পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল মনোবিজ্ঞান আগুন গাছ খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার শব্দ দুধ উপায় হাত মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা বাচ্চা মেয়ে বৈশিষ্ট্য মৃত্যু হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...