মহাকাশে কেউ কোনো অপরাধ করে থাকলে বিচার কীভাবে হবে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+5 টি ভোট
477 বার দেখা হয়েছে
"জ্যোতির্বিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (135,490 পয়েন্ট)

1 উত্তর

+2 টি ভোট
করেছেন (34,670 পয়েন্ট)

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী মহাসাগরের মতো ‘মহাকাশ’ ও “Res Communis” অর্থাৎ, পৃথিবীর সবার মালিকানাধীন বা কারো একার মালিকানাধীন নয়- কোন একক দেশ এই মহাকাশ বা মহাকাশস্থিত চাঁদ-সূর্য বা কোন গ্রহ- নক্ষত্রের একক মালিকানার দাবিদার হবে না।

তবে মহাকাশে অভিযান পরিচালনা, মহাকাশযানের মালিকানা এবং মহাকাশযানের অভ্যন্তরে নভোচারীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঁচটি আন্তর্জাতিক চুক্তি বলবৎ আছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ১৯৬৭ সালের- ‘Outer Space Treaty’। এই চুক্তি অনুসারে- কোন মহাকাশযানের ভেতরে কোন নভোচারী দ্বারা যদি কোন অপরাধ সংঘটিত হয় তাহলে সেই মহাকাশযানের মালিকানা যেই দেশের সেই দেশ ওই অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রাখবে, বলা বাহুল্য- মহাকাশে যেহেতু কোন পুলিশ বা আদালত নেই তাই নভোচারী পৃথিবীতে ফেরত আসার পরেই তার বিচার শুরু হবে। বিষয়টা ঘোঁট পাকাবে যদি মহাকাশযানের মালিকানার দেশ আর নভোচারীর দেশ যদি ভিন্ন হয়, যেমন মনে করুন- একটি মার্কিন মহাকাশযানে একজন অস্ট্রেলিয়ান নভোচারী কোন অপরাধ করলো এবং অস্ট্রেলিয়া নিজের নাগরিকের বিচার নিজ দেশে করতে চাচ্ছে! এই সংকটের উত্তর কী?

বিষয়টি আরো জটিল হয়ে উঠে যখন অপরাধটি ‘আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন’-এ সংঘটিত হয় কারন এটি একক কোন দেশের মালিকানায় নেই- আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এর মালিকানা পাঁচটি দেশের – যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ, জাপান এবং ক্যানাডা। এখানে ইউরোপকে একটি দেশ হিসেবে দেখা হয়। মহাকাশ স্টেশন পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে ১৯৯৮ সালে এই পাঁচটি দেশের মধ্যে যে আন্ত:সরকার চুক্তি হয় সেখানে বলা আছে- 
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, এটির যন্ত্রপাতি এবং এই স্টেশনে অবস্থান করা নভোচারীদের ওপর এই দেশগুলোর নিজস্ব আইন নভোচারীদের জাতীয়তার ভিত্তিতে কার্যকর হবে। সুতরাং, কোন ক্যানাডিয়ান নাগরিক যদি মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে কোন অপরাধ ঘটান, তাহলে তিনি ক্যানাডিয়ান ফৌজদারি আইনের আওতায় পড়বেন। একইভাবে রুশ নভোচারীরা রাশিয়ার আইনের অধীন থাকবেন।

এটি জলবৎ পরিস্কার যে, উপরে উল্লেখিত ঘটনায় অভিযুক্ত- অ্যানি ম্যাক্লেইন এবং অভিযোগকারী- সামার ওর্ডেন দু’জনেই যেহেতু মার্কিন নাগরিক তাই এই ঘটনার বিচার যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজদারি আইনেই হবে। যদি দু’জনের একজন ভিন্ন দেশের নাগরিক হতো সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিজের দেশে বিচারে আগ্রহী না হলে অপর দেশের ফৌজদারি আইন প্রযোজ্য হতো।

মুশকিল হচ্ছে- আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বিভিন্ন পার্ট বা মডিউলের মালিক ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি দেশ। এখন নভোচারীদের দেশ আর স্টেশনের যে পার্টে অপরাধটি সংঘটিত হলো সেই দেশের মালিকানা যদি ভিন্ন কোন দেশের হয় তাহলে কোন দেশের আইন প্রযোজ্য হবে? উদাহরণ দিই-

‘ক’ নামের নভোচারী ‘ক’ নামক দেশের নাগরিক। সে ‘খ’ দেশের ‘খ’ নামের আরেক নভোচারীর মোবাইল চুরি করলো মহাকাশ স্টেশনের এমন একটি অংশ হতে যেটির মালিকানা আবার ‘গ’ দেশের। কীয়েক্টাবস্থা তাই না? এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে- পার্টনার দেশগুলো পারষ্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে।

কিন্তু কোন নভোচারী যদি দ্বৈত নাগরিকত্ব (Dual Citizenship) ধারণ করে সেক্ষেত্রে তার বিচার কোন দেশে হবে? ঘটনা জটিলতর হয়ে উঠবে- সন্দেহ নেই।

সমস্যা আরো আছে- পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের ভূখণ্ড নির্ধারিত কিন্তু মহাকাশে তো আর এমন কোন বাউন্ডারি নেই। তাহলে আকাশের ঠিক কোন উচ্চতা থেকে মহাকাশ বা স্পেস- জুরিসডিকশান শুরু হবে- সেই প্রশ্নেও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

মহাকাশ থেকে পৃথিবীর কারো ব্যাংক একাউন্টে বেআইনি অনুপ্রবেশ মহাকাশে সংঘটিত প্রথম অপরাধ এবং প্রকৃতি বিবেচনায় হয়তো খুব গুরুতর অপরাধ নয় কিন্তু সেটি আরো গুরুত্বপূর্ণ যেসব প্রশ্নের দরোজা খুলে দিয়েছে তা হল- মহাকাশে কেউ খুন, ধর্ষণ, আকাশ- দস্যুতা বা মানবাধিকার লংঘনের মতো অপরাধ করলে কী হবে? বা মহাকাশে বসে পৃথিবীতে অপরাধ পরিচালনা করলে কী হবে? এখনো হয়তো মহাকাশে বিচরণ নাসা এবং মহাকাশ স্টেশনের গুটিকয়েক নভোচারীদের মধ্যে সীমিত আছে কিন্তু মহাকাশ পর্যটন বা স্পেস ট্যুরিজম এর সম্ভাবনা দিন দিন উজ্জ্বলতর হচ্ছে।

২০০১ সালে মার্কিন ধনকুবের ডেনিস টিটু প্রথম মহাকাশ- পর্যটক হিসেবে মহাকাশ থেকে বেড়িয়ে এসে স্পেস- ট্যুরিজমের যে দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন তারপর এই অব্দি সাতজন পর্যটক মহাকাশে নিজের টাকায় ঘুরে এসেছেন। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে: স্পেস-রিসোর্ট, স্পেস- রেস্টুরেন্ট, স্পেস-পার্ক গড়ে উঠবে, কেউ কেউ হয়তো মহাকাশে বিয়ে করতে চাইবে, কেউ সন্তান জন্ম দেবে মহাকাশে, কেউ চাইতে পারে বিচ্ছেদ, কেউ মঙ্গল গ্রহে কিংবা চাঁদে বসতি গাড়তে চাইতে পারে। এই নিয়ে মহাকাশে লাগতে পারে দ্বন্দ্ব- সংঘাত, সূচনা হতে পারে নানান ফৌজদারি অপরাধের। স্পেস-পুলিশ, স্পেস-জেল, স্পেস-কোর্ট ইত্যাদির সম্ভাবনাও কি উড়িয়ে দেওয়া যাবে?

‘No One is Above the Law’- এটিই আইনের সৌন্দর্য- পাতাল থেকে অন্তরীক্ষ- আইন কোথায় নেই! আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।

 

লিখেছেন সাঈদ আহসান খালিদ 

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
1 উত্তর 706 বার দেখা হয়েছে
+4 টি ভোট
1 উত্তর 748 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
1 উত্তর 322 বার দেখা হয়েছে
23 ফেব্রুয়ারি 2021 "জ্যোতির্বিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,490 পয়েন্ট)

10,844 টি প্রশ্ন

18,544 টি উত্তর

4,746 টি মন্তব্য

846,364 জন সদস্য

13 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 13 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Khairul_Alom_Fardush

    140 পয়েন্ট

  2. 7jogosnetbr

    100 পয়েন্ট

  3. dom88casino

    100 পয়েন্ট

  4. ai88betbar

    100 পয়েন্ট

  5. Bong88cash

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল #science ক্ষতি চুল কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক #biology পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন গাছ মনোবিজ্ঞান খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার দুধ উপায় হাত শব্দ মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা বাচ্চা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...