সূর্যমুখী ফুল কেন সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+8 টি ভোট
487 বার দেখা হয়েছে
"তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে করেছেন (110,320 পয়েন্ট)

2 উত্তর

+3 টি ভোট
করেছেন (110,320 পয়েন্ট)
Ayesha Akhter-
সূর্যমুখী কেন সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে?

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা প্যারেড দলের মতো পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। ঐ দিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিমদিক বরাবর থাকে। অস্ত যাবার পরে তারা সারারাত ব্যাপী আবার উলটো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। নতুন একটা দিনে আবার সূর্যের মুখোমুখি হয়। এভাবে চক্রাকারে চলতেই থাকে। বুড়িয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যমুখীর এই প্রক্রিয়া অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছিল। কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাঁদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন।

সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহ ঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে। একটা উদাহরণ দেই। কোনো একজন লোকের সবসময় রাত ১১ টায় ঘুমিয়ে অভ্যাস। একদিন তার অজান্তে ঘড়ি নষ্ট হয়ে গেল। দুই ঘণ্টা পিছিয়ে পড়লো ঘড়ির কাটা। এমতাবস্থায় ৯ টায়-ই ঘুম ধরবে ঐ লোকের। যান্ত্রিক ঘড়ির সময় যাই হোক, দেহের নিজস্ব ঘড়ি ঠিকই উপযুক্ত সময়ে ঘুমের কথা জানান দিয়ে দিবে। এই আভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা চক্রই হচ্ছে সার্কাডিয়ান চক্র।

উদ্ভিদের মাঝে সাধারণত এই চক্রের উপস্থিতি থাকে না। খুব অল্প সংখ্যক ব্যতিক্রমের মাঝে একটি হচ্ছে সূর্যমুখী। এই চক্রকে ব্যবহার করে সূর্যমুখী ফুল সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকলে ফুল আকারে বড় হয় এবং পরাগায়নের জন্য মৌমাছিকে আকৃষ্ট করতে সাহায্য করে। এই বৈশিষ্ট্য সূর্যমুখীকে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে। যে ফুল আকৃতিতে বড় হবে এবং পরাগায়নের জন্য অধিক পরিমাণ মৌমাছি পাবে সেই ফুলের বীজ হওয়া তথা টিকে থাকার সম্ভাবনা অবশ্যই বেশি।

সূর্যমুখীদের এই বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। প্রথমে তাঁরা গাছকে কাঠির সাথে আটকে রাখেন যেন নড়াচড়া করতে না পারে। পাশাপাশি গাছ যে সময় পূর্বদিকে মুখ করে থাকার কথা ঐ সময় জোর করে গাছকে পশ্চিমমুখী করে দেয়া হয়। এতে দেখা যায় গাছেরা এই পরিবর্তনকে কাটিয়ে উঠতে পারে। আবার চক্রে ফিরে যেতে পারে।

তারপর তাঁরা ফুল গাছগুলোকে ঘরের ছায়ায় নিয়ে আসেন। এখানে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কোনো বিরতি ছাড়াই কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করেন। সূর্যমুখীর কাছে সূর্যের বিরামহীন অবস্থা উপস্থাপন করা হয়। এতেও দেখা যায় গাছেরা আগের মতোই চক্রাকার দোলায় দুলছে। গবেষকরাও এদের কাছে এমন আচরণই আশা করছিলেন।

এরপর তাঁরা কৃত্রিমভাবে দিন-রাতের চক্রের সৃষ্টি করলেন। পূর্ব দিক থেকে আলোকের উদয় হয় এবং নিয়ম মেনেই ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। এই চক্র যখন সূর্যের চক্রের অনুরূপ ছিল অর্থাৎ প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার করে চক্র সম্পন্ন হয় তখন পর্যন্ত সূর্যমুখীরা তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা চক্রের মাঝে কিছু পরিবর্তন আনেন। ২৪ ঘণ্টার বদলে চক্র নিয়ে যান ৩০ ঘণ্টায়। যখন থেকে চক্র পালটে ৩০ এ চলে গেল তখন থেকে সূর্যমুখীদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হতে লাগলো। তাদের আভ্যন্তরীণ সার্কাডিয়ান ঘড়িতে বিঘ্ন ঘটতে লাগলো।

একইসাথে সূর্যকে অনুসরণ করা এবং আভ্যন্তরীণ ঘড়ি মিলিয়ে চলা সম্ভব হয়ে উঠে না এদের বেলায়। তাই ৩০ ঘণ্টার চক্রে এরা তালগোল পাকিয়ে ফেলে। হয় ২৪ ঘণ্টার চক্রে সূর্যের আলো দাও নয় সারাদিনই দাও, এতে সমস্যা নেই, গাছেরা মানিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু বিভ্রান্তিমূলকভাবে ৩০ ঘণ্টা বা তার থেকে বেশি সময় ব্যাপী চক্র উপস্থাপন করলে তাতে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হবে।

মানুষের বেলাতেও এরকম হয়। কেউ যদি রাতের বেলায় সবসময় লাইট জ্বালিয়ে রাখে তাহলে তার চক্র ২৪ ঘণ্টায় সম্পন্ন না হয়ে ধীরে ধীরে ২৫ ঘণ্টায় আবর্তিত হয়। আজ ১১ টায় ঘুমালে আগামীকাল ১২ টায় ঘুমাবে। পরের দিন ১ টায়। এরকম করে এগোবে।

তবে এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, চক্র হোক আর যাই হোক, ঠিক কোন কার্যপ্রণালীর উপস্থিতির কারণে গাছের এমন পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়? গবেষকরা দেখতে পান এর পেছনে দায়ী আছে সূর্যমুখীর এক পেশে বৃদ্ধি। একপেশে বলতে বোঝানো হচ্ছে গাছের কাণ্ডের এক দিক অন্য দিকের চেয়ে বেশি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। দিনের বেলা কাণ্ডের পূর্ব পাশে তুলনামূলকভাবে বেশি বিভাজন হয়, ফলে বেশি বৃদ্ধি হয়। দুই দিকে একটা তারতম্যের সৃষ্টি হয় এবং এতে করে কাণ্ড পূর্বদিক থেকে ধীরে ধীরে পশ্চিমমুখী হয়। সন্ধ্যার পর থেকে আবার এই চক্র উল্টোভাবে সম্পন্ন হয়। কাণ্ডের পশ্চিম পাশের অংশ পূর্বপাশের তুলনায় বেশি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ফলে ধীরে ধীরে কাণ্ড পূর্বমুখী হয়ে যায়। ভোর হবার আগেই এই চক্র সম্পন্ন হয়ে যায় এবং সূর্য উঠার সাথে সাথে নতুন আরেকটি চক্রের শুরু হয়।

এই চক্রের উপস্থিতির কারণে এরা কিছুটা সুবিধা পায়। গবেষকরা দেখেছেন যে সকল ফুলদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয় বা চক্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয় তারা স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ১০ ভাগ ছোট হয়ে থাকে।

সূর্যের দিকে মুখ করে থাকার ফলে শুধু সূর্যমুখীই না, উল্লেখ করার মতো প্রায় সকল উদ্ভিদই সূর্যের দিকে মুখ করে থাকতে চায়। হয়তো সূর্যমুখীর মতো প্রতিদিন দিক পাল্টায় না কিন্তু সবসময়ই সূর্যের দিকে মুখ করে থাকতে চায়। উদ্ভিদের এই বৈশিষ্ট্যকে বলে আলোকমুখীতা বা Heliotropism। টবে গাছ লাগিয়ে ঘরে রেখে দিলে দেখা যাবে গাছগুলো জানালামুখী হচ্ছে। যেদিকে সূর্যের আলো আসে সেদিক দিয়ে বাড়তে চায় গাছগুলো। উদ্ভিদ সূর্যের আলোর মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পানি ব্যবহার করে নিজেদের খাদ্য তৈরি করে।

তবে অন্যান্য উদ্ভিদগুলোতে সার্কাডিয়ান চক্র না থাকাতে সূর্যমুখীর মতো এরা দিন-রাতে নিজেদের অবস্থান পাল্টাতে পারে না।

[নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সায়েন্স এলার্ট অবলম্বনে লিখেছেন: সিরাজাম মুনির শ্রাবণ, বিজ্ঞানব্লগ]
0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)
সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+3 টি ভোট
1 উত্তর 569 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 583 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 711 বার দেখা হয়েছে
31 ডিসেম্বর 2021 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,480 পয়েন্ট)
+3 টি ভোট
1 উত্তর 586 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 213 বার দেখা হয়েছে

10,720 টি প্রশ্ন

18,361 টি উত্তর

4,729 টি মন্তব্য

240,079 জন সদস্য

74 জন অনলাইনে রয়েছে
1 জন সদস্য এবং 73 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Ayon Ratan Agni

    390 পয়েন্ট

  2. Vuter Baccha

    150 পয়েন্ট

  3. almoyaj_k

    130 পয়েন্ট

  4. Mehedi_Bknowledge

    110 পয়েন্ট

  5. Monojit Das

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী চোখ রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #ask চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি প্রাণী স্বাস্থ্য বৈজ্ঞানিক মাথা গণিত মহাকাশ পার্থক্য এইচএসসি-আইসিটি #science বিজ্ঞান #biology খাওয়া শীতকাল গরম কেন #জানতে ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা মাছ মস্তিষ্ক শব্দ ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস গ্রহ স্বপ্ন রসায়ন তাপমাত্রা উদ্ভিদ কালো কি বিস্তারিত রঙ পা পাখি গ্যাস মন সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত আম বিড়াল কান্না নাক
...