আপনি কি কখনো কল্পনা করেছেন, আপনার অজান্তেই কেউ আপনার ব্রেনওয়েভ কাজে লাগিয়ে আপনার ব্যক্তিগত যেকোনো ধরনের পাসওয়ার্ড চুরি করে ফেলতে পারে? একটি প্রতিবেদনে বামিংহামের আলবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেন, হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড ব্যবহারকারী ব্যক্তির ব্রেনওয়েভ পর্যবেক্ষণ করে তাদের ব্যক্তিগত যেকোনো পাসওয়ার্ড চুরি করতে সক্ষম। আপনি হয়তো ভাবছেন এটা আবার কিভাবে সম্ভব?
হ্যাঁ, এটাও সম্ভব! পিএইচডি, ইউবি কলেজের কম্পিউটার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগ এবং কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নীতেশ স্যাক্সেনা, শিক্ষার্থী অজায়া নিউপন এবং মাস্টার্সের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোঃ লুৎফর রহমান এই বিষয়ে একটি অনুসন্ধান করেন। সেখানে দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি যদি EEG বা ইলেক্ট্রোয়েন্সফ্লোগ্রাফ হেডসেট পরিধান করে গেইম খেলে এবং হঠাৎ গেইম খেলা বন্ধ করে কোনো ব্যাংক একাউন্টে লগ ইন করে, তাহলে তার একাউন্টের গুরুত্বপূর্ণ পাসওয়ার্ডটি হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কারণ, EEG হেডসেট পরে গেইম খেলার সময় তার ব্রেইনে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। ফলস্বরুপ, সে যখন গেইম খেলা অবস্থায় কোনো কিছু লগ ইন করে তখন সেখানেও একইভাবে তরঙ্গটির প্রভাব কাজ করে। তখন হ্যাকাররা ব্রেইন ওয়েবের প্রভাবটি কাজে লাগিয়ে তার একাউন্টের পাসওয়ার্ড চুরি করে এবং বড় বড় ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করতেও সক্ষম হয়।
EEG হেডসেট কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন দেয়, বিশেষ ধরনের রোবোটিক খেলনা এবং ভিডিও গেইম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হেড সেট গুলো ব্যবহার করা যাবে। হেডসেট গুলোর দাম ১৫o থেকে ১৮o ডলারের মধ্যে। কিন্তু হ্যাকাররা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাসওয়ার্ড চুরি করে।
স্যাক্সেনা এবং তার দল একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা করার জন্য ক্লিনিক্যাল গ্রেডের হেডসেট ব্যবহার করে। সেখানে দেখা যায়, খুব সহজেই যেকোনো ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহারকারীর ব্রেইনওয়েভে নিষ্ক্রিয় ভাবে কাজ করতে পারে। ব্যবহারকারী হেডসেট পরিধান করা অবস্থায় যদি কোনো কিছু টাইপিং করে এবং ভিজ্যুয়াল প্রসেসিং এর পাশাপাশি হাত, পা এবং মাথার পেশিগুলোর গতি একইসাথে সামঞ্জস্য করে তখন EEG হেডসেট ঐ গতিবিধি গুলো ক্যাপচার করে।
গবেষক দলটি ১২ জন ব্যক্তিকে নিয়ে একটি গবেষণা করেন। সেখানে তাদের বলা হয়, EEG হেডসেট পরিধান করে যেকোনো অনলাইন একাউন্ট লগ ইন করতে হবে। যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী টাইপিং করার সময় সফটওয়্যারটির সাথে তার ব্রেইন ওয়েভের যেন একটি সামঞ্জস্য তৈরি করতে পারে এবং নিজেকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে, কিভাবে ব্রেইন ওয়েভের সাহায্যে চুরি করা সম্ভব।
গবেষক দলটি বলেন, কোনো কিছু হ্যাক করার পূর্বে হ্যাকাররা ২oo টি পাসওয়ার্ড দিয়ে হ্যাক করার চেষ্টা করে। এরপর তারা সফটওয়্যারে ক্যাপচারকৃত অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সঠিক পাসওয়ার্ডটি অনুমান করে। গবেষণায় দেখা যায়, ১o,ooo জনের মধ্যে মাত্র ১ জন ৪ অঙ্কবিশিষ্ট পাসওয়ার্ডটি হ্যাক করতে সক্ষম হয় এবং ৬ অঙ্কবিশিষ্ট পাসওয়ার্ডটি ৫oo জনের মধ্যে ১ জন হ্যাক করতে সক্ষম।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে EEG হেডসেটটি Noninvasive পদ্ধতিতে বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ রেকর্ড করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্রেইনওয়েভ বা মস্তিষ্কের তরঙ্গগুলো শনাক্ত করতে মাথার ত্বকে ইলেক্ট্রোড গুলো স্থাপন করা হয় এবং EEG মেশিনের সাহায্যে তরঙ্গগুলোকে প্রশস্ত করা হয়। এরপর কম্পিউটার সেগুলোকে তরঙ্গের প্যার্টান হিসেবে রেকর্ড করে। পূর্বে গবেষণার কাজে EEG হেডসেট সর্বাধিক ব্যবহৃত হতো। যেমন-প্রতিবন্ধী ব্যক্তির গতিবিধি, চিন্তা-ভাবনা গুলো ক্যাপচার করা জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে বেতার সেট হিসেবে গ্রাহকদের কাছে এটি অধিক পরিচিত। বর্তমানে গেইমিং এবং বিনোদন শিল্পে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে EEG হেডসেট।
পরিশেষে, স্যাক্সেনা বলেন, EEG হেডসেট ব্যবহারকারীদের ডিভাইসটির নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। হেডসেটটি পরিধান করা অবস্থায় ব্যবহারকারীকে যেকোনো ধরনের পাসওয়ার্ড টাইপিং থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায়, পাসওয়ার্ডটি হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : Phys.org, Tech Explore