সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন গবেষণা অনুসারে, আপনি যদি শৈশবে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকেন, তাহলে আপনার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম এমনভাবে প্রভাবিত হবে যে, ভবিষ্যৎ-এ আপনি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া সত্ত্বেও শৈশবকালের ক্ষতিকর খাদ্যভ্যাস-এর প্রভাব অন্ত্রে সারাজীবন থাকবে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন। কথাটি একদম সত্যি!
এই গবেষণায় গবেষকরা ইঁদুর নিয়ে একটি গবেষণা করেন। সেখানে তারা লক্ষ্য করেন, শিশু হিসেবে যারা শৈশবকালে অধিক চর্বি এবং চিনি যুক্ত খাবার খায়, তাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে পরিবর্তন ঘটে এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শিখলেও শৈশবকালে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রভাব সারাজীবন থেকে যায়।
UC Riverside গবেষকদের সমীক্ষা অনুযায়ী, যেসকল ইঁদুর শৈশবকালে অস্বাস্থ্যকর খাবার খায় তাদের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। সম্প্রতি গবেষণাটি এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়। UCR এর বিবর্তনমূলক ফিজিওলজিস্ট থিওডোর গারল্যান্ড ব্যাখ্যা করেন, ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করার সময় তারা দেখেন, শৈশবকালে যেসকল ইঁদুর পশ্চিমা (ক্ষতিকর) খাদ্যভ্যাস অনুসরণ করে বেশি চর্বি এবং চিনি যুক্ত খাবার খায়, তাদের বয়ঃসন্ধিকালের ৬ বছর পরেও অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম পূর্বতন খাদ্যভ্যাসজনিত কারণে আক্রান্ত হয়।
[মাইক্রোবায়োম বলতে সেইসকল অণুজীবদের বোঝায় যেগুলো মানব অন্ত্রে বসবাস করে। যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবী এবং ভাইরাস]
মানব অন্ত্রে বসবাসরত অণুজীবগুলো খুবই উপকারী। কারণ, এগুলো ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে, খাদ্যকে ভেঙ্গে দেহে শোষণ উপযোগী করে তোলে এবং পাশাপাশি মূল ভিটামিন গুলো সংশ্লেষেও সহায়তা করে। শৈশব থেকেই শুরু হয় এই অণুজীবগুলো গঠনের কার্যক্রম।
একটি সুস্থ শরীরে রোগজীবাণু এবং অণুজীবের ভারসাম্য বজায় থাকে। কখনো যদি ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন শরীরে জীবাণুর আক্রমণ ঘটে এবং শরীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, গবেষকরা ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করার সময় ইঁদুর গুলোকে ৪ টি ভাগে বিভক্ত করেন এবং এরপর তারা ইঁদুরগুলোর অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বিশ্লেষণ করেন। গবেষকরা প্রথমে বিভক্ত করা অর্ধেক ইঁদুরকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ান এবং বাকি অর্ধেক ইঁদুরগুলোকে কম স্বাস্থ্যকর অর্থাৎ পশ্চিমা ডায়েট অনুসরণ করে খাবার খাওয়ান।
তিন সপ্তাহ পরে গবেষকরা লক্ষ্য করেন, সবগুলো ইঁদুর কোনো রকম অনুশীলন ছাড়াই স্বাস্থ্যকর ডায়েটে ফিরে আসে। ১৪ সপ্তাহ পরে গবেষক দলটি লক্ষ্য করেন, ইঁদুর গুলোর অন্ত্রে প্রচুর ব্যাকটেরিয়ার প্রাচুর্য এবং বৈচিত্র্যতা রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, অন্ত্রে মুরিবাকুলামের মতো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া মূলত কার্বোহাইড্রেট বিপাকে ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় আরও দেখা যায়, যেসকল ইঁদুর স্বাভাবিক খাবার খায় তাদের অন্ত্রে মুরিবাকুলাম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং যারা অস্বাস্থ্যকর খাবার খায় তাদের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা হ্রাস পায়।
আপনি হয়তো নিজেই জানেন না, শৈশবে খাওয়া খাদ্যের প্রভাব এখনো রয়েছে আপনার অন্ত্রে! সুতরাং এটা বলাই যায়, আপনি কেবল এখন যা খাচ্ছেন শুধুমাত্র সেইগুলোই আপনার অসুস্থতার কারণ নয়! তাই এখন থেকে নিজে সতর্ক হয়ে যান এবং পরিবারকে ও সচেতন করুন।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সাই-টেকডেইলি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া