পৃথিবীর যুগান্তকারী আবিষ্কারগুলোর মধ্যে চাকার আবিষ্কার অন্যতম। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ সালে চাকার আবিষ্কার ছিলো এক নতুন সভ্যতার সূচনা। এর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে চাকাওয়ালা গাড়ি থেকে মানুষ পাড়ি জমায় আকাশ-এ। উড়োজাহাজের আবিষ্কার ছিলো যোগাযোগ ব্যবস্থার আরেক ধাপ উন্নয়ন। সময়ের সাথে সাথে মানুষ অতি সাধারণ একটি উড়োজাহাজকে আরো আধুনিক করে তোলে।
স্বচালিত বাহন ব্যবস্থা এ সমস্যার অন্যতম সমাধান হিসেবে দাবী করছে অনেক বিশ্লেষক। তবে ইভিটোল জাতীয় গাড়ি (eVTOLs – Electric vertical take-off and landing vehicles) এ সমস্যার অন্যতম সমাধান হিসেবে কাজ করবে বলে দাবী অনেকের।
আগের পর্বে এমন অসাধারণ ৫ টি বাহন সম্পর্কে জেনেছি আমরা, চলুন এ পর্বে জেনে নিই বাকি ৫ টি সম্পর্কে!
প্রথম পর্বঃ মাটি থেকে আকাশ: ভবিষ্যতের সর্বাধুনিক ১০টি গাড়ি (পর্ব-১)
এস্টন মার্টিনঃ ভোলান্টে ভিশন (Aston Martin: Volante Vision Concept):
তিনজন যাত্রী নিতে সক্ষম এই গাড়িটি আসলে ব্যাক্তিগত বিলাসবহুল একটি ইভিটোল বাহন। রোলস-রয়েসের বিশেষজ্ঞ দ্বারা হাইব্রিড-বিদ্যুৎ প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি এ গাড়িটি একটি সেমি-স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ব্যবস্থাসম্পন্ন হবে যা ডেভেলপ করেছে ক্রানফিল্ড।
এস্টন মার্টিনের এক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মতে, এটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হতে পারে তবে তা নতুন করে চালক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিবে যার স্বয়ংক্রিয়তা পুরোপুরি নির্ভর করবে চালকের দক্ষতার উপর।
তিনি এটিও বলেন যে, এটি মাত্র এক ঘন্টায়ই লন্ডন থেকে প্যারিসে যেতে সক্ষম হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ এটি প্রস্তুত হবে বলে কোম্পানিটি আশা করছে।
ভোলোকপ্টারঃ ভোলোসিটি (Volocopter: Volocity):
২০১১ সালে জার্মানির ভোলোকপ্টার কোম্পানির প্রথম প্রোটোটাইপ ভিসি-১ (VC-1) পৃথিবীর প্রথম ইভিটোল টেক-অফ এবং ল্যান্ডিং ফ্লাইট হিসেবে নাম অর্জন করে। ২০১৬ তে ভিসি-২০০ অন্যসব সাধারণ উড়োজাহাজের মতো আকাশ-এ উড়ানোর জন্য প্রথম ইভিটোল হিসেবে অনুমতি পায়। এখন ভোলোসিটির নতুন প্রজেক্টটির ব্যাপারে আশা করা হচ্ছে, এটি প্রথম ইভিটোল বাহন হিসেবে বানিজ্যিক লাইসেন্স পাবে।
বৃত্তাকারে সজ্জিত বিমানপাতের উপরদিকে ১৮টি রোটার ছড়ানো এ বাহনটি নকশার দিক দিয়ে অনন্য। ঘন্টাপ্রতি ১১০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন এ বাহন নয়টি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি সহ নকশা করা হয়েছে যার কারনে এটি পুনরায় চার্জড হতে মাত্র ৫ মিনিট সময় নেয়।
ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (European Aviation Safety Agency) এর মতে একটি এয়ার ট্যাক্সির যা যা নিরাপত্তা থাকা দরকার তার সবই আছে ভোলোসিটিতে যার কারনে এটি প্রথম বানিজ্যিক এয়ার ট্যাক্সির খেতাব অর্জন করবে বলে ধারণা করা যায়।
জবি এভিয়েশনঃ (Joby Aviation: eVTOL):
উবার এলিভেট প্রোগ্রামের আরেক সহযোগী জবি এভিয়েশন বিখ্যাত গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান টয়োটা থেকেও ফান্ড পেয়েছে। টয়োটা এ বছর জানুয়ারিতে কোম্পানিটির উপর ৩৯ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করে।
ক্যালিফোর্নিয়ার এ কোম্পানি ১০ বছর ধরেই ইভিটোল ডেভেলপ করছে এবং ২০১৭ সালে প্রথম এর ফ্লাইট প্রোটোটাইপ পরীক্ষা করে।
সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক এই এয়ার ট্যাক্সিটি চারজন যাত্রী নিয়ে আকাশ-এ উড়তে সক্ষম। ছয়টি কাঁত করা রোটার বাহনটিকে ২০০ মিটার/ঘন্টা গতি দিতে সক্ষম। স্বয়ংক্রিয়তার ব্যাপারে কোন গুঞ্জন না শুনায় ধারণা করা হচ্ছে এটি পাইলট দ্বারা চালিত হবে।
টেরাফুজিয়াঃ টিএফ২ (Terrafugia: TF2):
ইভিটোলের এই প্রতিযোগিতায় টেরাফুজিয়া আরো অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে; কারণ এটি ইতোমধ্যে তাদের প্রথম উড়নক্ষম গাড়ি বা ফ্লাইয়িং কার তৈরি করে ফেলেছে এবং দ্বিতীয় ফ্লাইয়িং কার তৈরিতে ব্যস্ত কোম্পানিটি।
এমআইটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা পাঁচজন তরুণের এ কোম্পানিটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠালাভ করে। যখন তারা তাদের হাইব্রিড যান এর কথা সবাইকে জানান, যা অন্যসব সাধারণ গাড়ির মতোই রাস্তায় চলবে, তবে প্রয়োজনে এক মিনিটের মধ্যেই দুটি পাখা সম্পন্ন দুইজন যাত্রী বহনে সক্ষম পেট্রোল-ক্ষমতার একটি আকাশযানে পরিণত হতে পারে।
টিএফ২ চারজন যাত্রী বহন করতে পারে এবং এখানে যাত্রীর ক্যাবিন ও চালকের ক্যাবিন বিচ্ছিন্ন।
হোভারসার্ফঃ হোভারবাইক এবং ফর্মূলা (Hoversurf: Hoverbike and Formula):
হোবারসার্ফ একমাত্র কোম্পানি যারা ইভিটোল বাহন হিসেবে একটি বাইকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সারা বিশ্বকে। চারটি রোটার যুক্ত এই বাইকটি সাধারণ বাইকের মতোই একজন মাত্র যাত্রী বহন করতে পারে।
যদিও ভেবে থাকেন যে এটির ধারণাটি অদ্ভুত, তাহলে বলে রাখা ভাল, ”দুবাই এয়ারশো” এর মতো অনুষ্ঠানে এর উপস্থিতি ছাড়াও এটি ইতিমধ্যে ব্যবহার করা শুরু হয়ে গেছে।
৬০ মিটার/ঘন্টা গতিসম্পন্ন এ বাইকটি জরুরী ল্যান্ডিং সহ অনেক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফিচারসম্পন্ন। একটি পোর্টেবল চার্জিং প্যাক বাইকটিকে আড়াই ঘন্টার মধ্যে পুরো চার্জ করতে সক্ষম।
বলে রাখা ভাল, হোভারসার্ফ একটি একক-আসনের এয়ার ট্যাক্সিও বানিয়েছে যা একটি সাধারণ গাড়ি পার্কিং স্পেসের মধ্যেই পার্ক করা সম্ভব। “ফর্মূলা” নামের এই গাড়িটি ঘণ্টাপ্রতি ১৫৫ মিটার গতি নিয়ে ১৮৬ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে।
তন্ময় দাস/ নিজস্ব প্রতিবেদক