হঠাৎ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটা বন্ধ ছিল কেন? ৪ অক্টোবর, ২০২১ সালে সন্ধ্যা থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে Facebook, Messenger, Instagram ও WhatsApp এক বিরাট Outage (বিদ্যুৎ বা পাওয়ার সাপ্লাই বিভ্রাট)-এর সম্মুখীন হয় ও ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয় ।
৫ অক্টোবর, বাংলাদেশ সময় রাত ১ টা পর্যন্ত এর কারণ সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি । কর্তৃপক্ষ “আমরা জানি আপনাদের অসুবিধা হচ্ছে…” এবং “…আমরা দ্রত সম্ভব সব ঠিক করবো…” ইত্যাদি দায়সারা মন্তব্য করে ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছে । উক্ত সময়েই ফেসবুকের শেয়ার প্রায় ৫-৫.৭% পর্যন্ত কমেছে !
টানা ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চালু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। একই সময়ে ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের সেবাও পুনরায় চালু হয়।
তবে ধারনা করা হচ্ছে, এই Outage-এর সাথে ফেসবুকের সবচেয়ে বড় ‘Whistleblower’ ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে । রয়টার্স, গার্ডিয়ানসহ প্রায় সকল আন্তর্জাতিক পত্রিকা একযোগে এ ঘটনাকে টেনে আনছে । এই রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১, ফেসবুকের Civic Integrity Team-এর সাবেক Product Manager, Frances Haugen (37), 60 Minutes নামক প্রোগ্রামে ফেসবুকের অনেক গোপন ও ‘অনৈতিক’ বিষয় নিয়ে বোমা ফাটান ! এর আগে ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল ও US আইন সংস্থাকে হাজার হাজার ডকুমেন্ট শেয়ার করে “ঘৃণা, সহিংসতা ও ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে ফেসবুক”-এর অবস্থানকে মিথ্যাচার দাবি করেন ।
Haugen জানান যে, ফেসবুকের বর্তমান ভার্সন সমাজকে বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি উপজাতি নির্যাতনে (রোহিঙ্গা নিধনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ফেসবুক ব্যবহারের ঘটনা—cbsnews.com) ভূমিকা রাখছে । ২০২০ সালের US-নির্বাচনকেন্দ্রীক দূর্ঘটনায়ও তাদের পলিসি ছিল শোচনীয় । তিনি আরো জানান, Instagram কিশোর-কিশোরীদের মানসিক ঝুঁকিতে ফেলছে এবং ৩০% কিশোরী তাদের স্বাস্থ্য ও শরীর নিয়ে হতাশা ও বিতৃষ্ণায় ভুগছে এবং ১৩.৫% কিশোরী আত্মহত্যাকেন্দ্রীক হয়ে যাচ্ছে যা তাদের সোশাল মিডিয়া ব্যবহারে আরো প্রলুব্দ করছে!
Haugen মনে করেন, সকল সুযোগ ও উপকরণ থাকা সত্ত্বেও ফেসবুক এ বিষয়ে কঠোর হচ্ছে না । কেননা গুজব, ভুয়া তথ্য, আবেগময় বিষয়, Polarizing কন্টেন্ট, ধর্মীয় উগ্রবাদ ইত্যাদি বিষয়ে মানুষ সংবেদনশীল এবং এসব নিয়ে পড়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। এখন Safety Algorithm চেঞ্জ করলে ব্যবহারের পরিমাণ কমে যাবে, অ্যাডে ক্লিকের পরিমাণ কমে গেলে ইনকামও কমে যাবে ।
উল্লেখ্য, অক্টোবর, ২০২০ সালে ফেসবুক Cambridge Analytica Scandal-এ জড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার জরিমানা দেয় । এছাড়াও Privacy ও পক্ষপাতীত্ব নিয়ে প্রায়ই ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
এখন এই Outage হওয়ার পিছনে ৪টি কারন থাকতে পারে বলে আমি মনে করি :
- এটা কেবলই একটা দূর্ঘটনা
- কোনো ভেতর/বহিঃশত্রু দ্বারা Sabotage-এর শিকার
- ফেসবুক তাদের পুরো প্রযুক্তি ব্যবস্থায় কোনো মেজর আপডেট আনতে গিয়ে Outage হয়ে গেছে/করা হয়েছে
- Whistleblowing-এর পর বড় কোনো অভিযোগ থেকে দৃষ্টি সরাতে বা ভিকটিম সাজার জন্য অথবা আত্মরক্ষার জন্য Outage-কে ব্যবহার করে তাদের গোপন, সেনসিটিভ তথ্য ও নিরাপত্তাত্রুটিকে আড়াল করা/মেরামত করা হবে।
Update : বাংলাদেশ সময় রাত ৪:২৪
Bloomberg-এর দেয়া তথ্য মতে, ফেসবুক ও সহসেবা কার্যক্রমগুলো প্রায় ৬ ঘন্টা বন্ধ থাকার কারণ DNS error যার উৎস BGP (Border Gateway Protocol) । DNS-হচ্ছে ইন্টারনেটের ফোনবুকের মতো আর BGP হলো পোস্টাল সেবা । ইউজার যখন ডেটা ইনপুট দেয়, BGP তখন ইন্টারনেটের সবচেয়ে সেরা ও সহজলভ্য ভ্রমণ পথ নির্ধারণ করে । এ ঘটনায় ফেসবুকের পাবলিক ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ব্যহত হয় । Cloudflare Inc.-এর ভাষ্যমতে, Outage-এর কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকের BGP route-গুলোতে বড় বড় কিছু পরিবর্তন আনা হয় ।
সত্য যেটাই হোক, “ফেসবুক বন্ধ ছিল কেন” ঘটনা কখনোই আমরা জানতে পারবো না। কারণ টেক জায়ান্টগুলো তাদের সব ত্রুটি পুরোপুরি প্রকাশ করে না। এটা তাদের দূর্বলতাকে উন্মুক্ত করার মতো।