মহাকাশে যাওয়া এবং গবেষণা করা এখন বুঝি আর স্বপ্ন নয়। বরং তা অর্জনের লক্ষ্যে আরো একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশের প্রথম বারের মত স্পেস রকেট নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ধূমকেতু এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস লিমিটেড (ধূমকেতুএক্স)।
দেশের প্রথম সাব-অরবিটাল স্পেস রকেট এর প্রদর্শনী করলো প্রতিষ্ঠানটি। চলতি মাসের ৬ তারিখ ময়মনসিংহ নগরীর টাউনহল এলাকায় অবস্থিত অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে এই রকেট প্রদর্শনী করা হয়।
ধূমকেতুএক্স থেকে জানানো হয়, দেশের প্রথম বাণিজ্যিক সাব-অরবিটাল রকেট বিদ্রোহী পর্যায়ক্রমে দেশের ৮টি বিভাগে প্রদর্শন করা হবে।
এ রকেটের মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণাসহ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি এটি ব্যবহার করে দুই বছরের মধ্যে ডিফেন্স সিস্টেম বদলে দেওয়া সম্ভব। এটি বাংলাদেশের মহাকাশ উন্নয়নের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। যা জাতির প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও মহাকাশ গবেষণায় বাংলাদেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করে। ধূমকেতুএক্স এর এই সাব-অর্বিটাল রকেটটির নাম “বিদ্রোহী‘’।
সাব অরবিটাল রকেট হলো এমন এক বিশেষ যান যা পুরোপুরি স্থায়ীভাবে মহাকাশ অবস্থান করে না। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে নির্দিষ্ট একটি উচ্চতায় পৌঁছে আবারো তা পৃথিবী পৃষ্ঠে ফিরে আসতে পারে। এ ধরনের রকেট সাধারণত গবেষণা, প্রযুক্তিগত পরীক্ষা কিংবা মহাকাশ পর্যটনের মতো কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি অবশ্যই একটি মহাকাশযানের আওতায় পড়ে সে দিক থেকে চিন্তা করলে বাংলাদেশের প্রথম মহাকাশযান বা স্পেস রকেট তৈরি করার তকমা পেলো ধূমকেতু এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস লিমিটেড।
বিদ্রোহী সাব অরবিটাল রকেট এর বৈশিষ্ট্য হলো এটি ৩৫ থেকে ৫৫ কেজি পে-লোড বহন করতে সক্ষম। সাব অরবিটাল রকেটে পে-লোড হিসেবে সাধারণত গবেষণায় ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ (হতে পারে ক্যামেরা বা বিশেষ রকমের মিটার কিংবা অন্যান্য যন্ত্রাংশ) যুক্ত করা যায়। এক্ষেত্রে ধূমকেতুএক্স পে-লোডকে তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার চিন্তা ব্যক্ত করে। যা একই সাথে ভিন্নধর্মী এবং নতুন চিন্তা। ভূপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার উচ্চতায় ওঠার সক্ষমতা রাখা এই রকেটটিতে ব্যবহার করা হবে লিকুইড রকেট ইঞ্জিন।
উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লিকুইড রকেট ইঞ্জিন সাধারণত তরল জ্বালানিতে চালিত হয় (যেমন তরল হাইড্রোজেন বা RP-1)। অনেক সময় একে লিকুইড প্রোপালান্ট ইঞ্জিনও বলা হয়।
উক্ত প্রদর্শনীতে ধূমকেতুএক্স ‘বিদ্রোহী’’ রকেটের স্ট্রাকচারটি সকলের সামনে উন্মোচন করে যা ছিল তাদের একটি মাইল ফলক। ভবিষ্যতে এই বিদ্রোহী রকেট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে ধূমকেতুএক্স তাদের মহাকাশে যাওয়ার সর্ব প্রথম সক্ষমতার পরীক্ষা করবে বলে আশাবাদী ধূমকেতুএক্সের সিইও নাহিয়ান আল রহমান।
প্রদর্শনীর দিন তিনি আরো বলেন,
“আজকের দিনটি শুধু ধূমকেতুএক্সের জন্য নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বিদ্রোহীর মাধ্যমে আমরা শুধু একটি রকেট উৎক্ষেপণ করছি না, বরং বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণা ও রকেট প্রযুক্তির ভবিষ্যতের জন্য একটি জাতীয় আন্দোলন শুরু করছি। সাব-অরবিটাল রকেট মহাকাশে পৌঁছানো, বায়ুমণ্ডলীয় গবেষণা, বৈজ্ঞানিক যন্ত্র, শিক্ষার্থী বানানো কিউবস্যাট এবং বাংলাদেশের ২০ কোটি নাগরিকের নাম সম্মানার্থে খোদাই করা হবে। গবেষণা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, এখন আমাদের মূল ফোকাস উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি।”
ইতঃপূর্বে, সায়েন্স বী নিউজ টিমকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে ধূমকেতু এক্সের কর্ণধার নাহিয়ান আল রহমান ধূমকেতু এক্স এর জন্ম, এবং অগ্রযাত্রার গল্প পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় গোয়েন্দা নিরাপত্তা শাখার (এনএসআই) অতিরিক্ত পরিচালক মো. খালেকুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মো মুফিদুল আলম, অ্যাডভান্সড রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুল হাসান মিলন সহ আরো অনেকে।
ধূমকেতুএক্স এর এভিনিক্স টিমের প্রধান হানজালা রহমান জানান,
“বিদ্রোহী রকেটের যাত্রা কে আমরা সর্বমোট দশটি মাইলস্টোনে ভাগ করেছি, ইতোমধ্যে আমরা সপ্তম মাইলস্টোন হিসেবে রকেটের স্ট্রাকচারাল দিকটি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেছি। পরবর্তীতে বিদ্রোহী রকেটটি উৎক্ষেপণের জন্য আমাদের একটি লঞ্চপ্যাড এবং গ্রাউন্ড স্টেশন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমরা সরকারের সহযোগীতা কামনা করছি।”
এর আগে ধূমকেতু এক্স পরীক্ষামূলকভাবে “পুটিমাছ ০.১” নামে একটি প্রোটোটাইপ রকেট সফলভাবে লঞ্চ করে যা বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবারের মতো রকেট উৎক্ষেপণ করার রেকর্ড।
দীর্ঘদিন ধরে ধূমকেতুএক্স এর সাথে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের ২৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি দেশের বাইরে থাকা বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে লেখাপড়া ও কাজ করা এমন অনেকেই ধূমকেতু এক্স এর সাথে যুক্ত রয়েছেন।
ভবিষ্যতে সরকারের সহযোগিতা ও অর্থায়ন থাকলে ধূমকেতুএক্স মহাকাশ নিয়ে গবেষণা, মহাকাশযান তৈরি ও উন্নতিকরনের কাজে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
ধূমকেতুএক্স এর এই অগ্রযাত্রা আরো দীর্ঘায়িত হোক এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থে মহাকাশ গবেষণাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক এই শুভকামনাই এখন রকেটপ্রেমীদের।
সংবাদ সংগ্রহ, আলোকচিত্র গ্রহণ ও প্রতিবেদনে-
জুম্মান আল সিয়াম
সায়েন্স নিউজ রিসার্চার / টিম সায়েন্স বী