• লেটেস্ট
  • ট্রেন্ডিং
  • সবগুলো
নাহিয়ান আল রহমান অলি: স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্যের এক মহাকাশ অভিযাত্রী

নাহিয়ান আল রহমান অলি: স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্যের এক মহাকাশ অভিযাত্রী

এপ্রিল ৯, ২০২৫
কার্বন science bee science news

কার্বন ফাইবার পুনর্ব্যবহারের নতুন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি আবিষ্কার

মে ১৬, ২০২৫
স্পেস science bee science news

বাংলাদেশের প্রথম স্পেস রকেট; প্রদর্শিত হলো ময়মনসিংহে

মে ১৪, ২০২৫
ক্যান্সার science bee science news

কোরিয়ান বিজ্ঞানীদের ক্যান্সার নিরাময়ের যুগান্তকারী পদ্ধতির আবিষ্কার

মে ১৩, ২০২৫
আমার চোখে ঢাকা; নগর নিয়ে নাগরিকের ভাবনা 

আমার চোখে ঢাকা; নগর নিয়ে নাগরিকের ভাবনা 

মে ৪, ২০২৫
সভ্যতার ভিত্তিপ্রস্তর-লোহা এর অতীত থেকে ভবিষ্যত

সভ্যতার ভিত্তিপ্রস্তর-লোহা এর অতীত থেকে ভবিষ্যত

এপ্রিল ১৭, ২০২৫
ইলেকট্রন কে ত্রিমাত্রিক কাঠামোতে বন্দী করলেন গবেষকেরা: কোয়ান্টাম জগতে নবসম্ভাবনা

ইলেকট্রন কে ত্রিমাত্রিক কাঠামোতে বন্দী করলেন গবেষকেরা: কোয়ান্টাম জগতে নবসম্ভাবনা

এপ্রিল ১০, ২০২৫
স্টেম সেল থেরাপি, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন আশার আলো

স্টেম সেল থেরাপি, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন আশার আলো

এপ্রিল ৮, ২০২৫
চিনি Science bee science news

চিনি: সু-স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় অন্তরায়

এপ্রিল ৪, ২০২৫
জিনোমের মধ্যে পাওয়া গেল ৯৫ টি অঞ্চল যা PTSD এর সাথে জড়িত

জিনোমের মধ্যে পাওয়া গেল ৯৫ টি অঞ্চল যা PTSD এর সাথে জড়িত

মার্চ ৩০, ২০২৫
পুরুষ কি শুধুই ধর্ষক? নাকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মারপ্যাঁচে লুকিয়ে আছে নিজেও ধর্ষিত হওয়ার দুর্ভোগ?

পুরুষ কি শুধুই ধর্ষক? নাকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মারপ্যাঁচে লুকিয়ে আছে নিজেও ধর্ষিত হওয়ার দুর্ভোগ?

মার্চ ২৫, ২০২৫
Science Bee Science News VSAIL

এবার আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনতে কাজ করবে VSAIL!

মার্চ ২২, ২০২৫
ক্লোনাল হেমাটোপোয়েসিস কার্ডিওভাস্কুলার রোগের অদৃশ্য কারণ

ক্লোনাল হেমাটোপোয়েসিস কার্ডিওভাস্কুলার রোগের অদৃশ্য কারণ

ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
ব্লগে লিখুন
প্রশ্ন করুন
শুক্রবার, মে ১৬, ২০২৫
বিজ্ঞান সংবাদ
  • টপিকস
    • জীববিজ্ঞান
    • পদার্থবিজ্ঞান
    • রসায়ন
  • ২১ শতক
  • প্রযুক্তিNew
  • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    • করোনাভাইরাস
  • মহাকাশবিজ্ঞান
  • পরিবেশ
  • অন্যান্য
    • ফ্যাক্ট চেক
    • উদ্যোগ
    • তারুণ্য
    • ক্যাম্পাস টাইম
    • টিপস
    • দেশান্তর
    • বইয়ের দুনিয়া
    • ইতিহাস
    • আত্মউন্নয়ন
    • গেমস এন্ড সফটওয়্যার
হোম
কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট পাওয়া যায়নি
সবগুলো রেজাল্ট দেখুন
বিজ্ঞান সংবাদ
  • টপিকস
    • জীববিজ্ঞান
    • পদার্থবিজ্ঞান
    • রসায়ন
  • ২১ শতক
  • প্রযুক্তিNew
  • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    • করোনাভাইরাস
  • মহাকাশবিজ্ঞান
  • পরিবেশ
  • অন্যান্য
    • ফ্যাক্ট চেক
    • উদ্যোগ
    • তারুণ্য
    • ক্যাম্পাস টাইম
    • টিপস
    • দেশান্তর
    • বইয়ের দুনিয়া
    • ইতিহাস
    • আত্মউন্নয়ন
    • গেমস এন্ড সফটওয়্যার
কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট পাওয়া যায়নি
সবগুলো রেজাল্ট দেখুন
বিজ্ঞান সংবাদ

Home » নাহিয়ান আল রহমান অলি: স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্যের এক মহাকাশ অভিযাত্রী

নাহিয়ান আল রহমান অলি: স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্যের এক মহাকাশ অভিযাত্রী

এপ্রিল ৯, ২০২৫
in ইন্টারভিউ ব্লগ
নাহিয়ান আল রহমান অলি: স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্যের এক মহাকাশ অভিযাত্রী

টেলিভিশন কিংবা মোবাইল স্ক্রিণের পর্দায় যখন কোনো দেশ থেকে এয়ারক্রাফট বা রকেট লঞ্চের দৃশ্য দেখা যায়, তখন নিজের অজান্তেই মনে প্রশ্ন আসে, “আমাদের দেশটাতেও এমন কবে হবে?” ছোট থেকেই এভিয়েশন সেক্টর নিয়ে নানারকম জল্পনা কল্পনা কিংবা কৌতূহল থেকে তৈরি হওয়া স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের অভাব নেই। তবুও বাস্তব জীবনের নানা প্রতিকূলতার মাঝে এই স্বপ্নগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তবে বাংলাদেশে এমনই সব প্রতিকূলতাকে টেক্কা দিয়ে রকেট নিয়ে কাজ করার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ এভিয়েশন ফ্রিক তরুণের অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছেন একজন ব্যক্তি, বলছিলাম DhumketuX এর প্রতিষ্ঠাতা নাহিয়ান আল রহমান অলি’র কথা। জীবনের নানান প্রতিকূলতাকে পার হয়ে এই পর্যায়ে আসার গল্পটাই আজ জানবো সরাসরি তার কাছ থেকে।

প্লাবন গোস্বামী: প্রথমেই আপনার পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইবো। জন্ম বেড়ে উঠা এসব নিয়ে। 

নাহিয়ান আল রহমান: আমার জন্ম মূলত রংপুরের গাইবান্ধা জেলায়, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর একদম সংযোগস্থলে। আর বেড়ে ওঠা নানির বাড়িতে, জয়পুরহাট জেলায়। শৈশবে আমি একটু বাউন্ডুলে ধরণের ছিলাম। সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম, আমার বাবা–মা ও আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন না। আমার বাবা একটা বেসরকারি কলেজের প্রফেসর ছিলেন। আর আমরা ছিলাম ১ ভাই, ১ বোন।

প্লাবন গোস্বামী: ছোটোবেলার দিনগুলো কেমন কাটতো?

আরওপড়ুন

প্রাণীবিজ্ঞানী সায়মা জাহান ও জহির রায়হানের নতুন প্রজাতির মথ আবিষ্কারের যাত্রা

নাহিয়ান আল রহমান: আমার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ওপর, প্রচুর খেলনা কিনতাম। তখনকার সময় ১০ টাকায় এক প্যাকেট বিস্কুট পাওয়া যেত, আমার কাজই ছিল প্রতিদিন এক প্যাকেট বিস্কুট খাবো আর একটা ছোট খেলনা গাড়ি কিনবো। 

সে সময় তো ১০ টাকা মানে অনেক। আমার বাবার পক্ষে প্রতিদিন এটা বহন করা সম্ভব ছিল না। আমিও ছোট ছিলাম বলে বুঝতাম না, কান্নাকাটি করতাম। যন্ত্রপাতি নিয়ে এতই আগ্রহী ছিলাম যে, কোনো খেলনা আনলেই দেখা যেত একদিনেই আমি সেটাকে ভেঙ্গে ভেতরের পার্টস সব বের করে ফেলতাম, সেগুলো দিয়ে আবার নতুন কিছু তৈরি করা যায় কিনা দেখতে থাকতাম।

বাজার থেকে খেলনা প্লেন আনলে আমি সবসময়ই চেষ্টা করতাম কীভাবে সেটা ওড়ানো যায়। আমি অনেক আর্ট করতাম, ডিজাইন করতাম এসব প্লেন–রকেট। ছোটবেলা থেকেই আমি যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতাম।

আমি ক্লাস ফাইভে প্রথম তাঁতাল কিনেছিলাম, যেটাকে সোল্ডারিং আয়রন বলে আরকি। তখন থেকেই আমি রেডিও বা ডিভিডি – এমন সব ছোটখাটো জিনিস ঠিক করতাম। তখন অনেকেই আমার বাবা–মা কে বলত যে, “আপনাদের মতো শিক্ষিত বাড়ির ছেলে সারাদিন মেকানিক এর দোকানে পড়ে থাকে”।

জুম্মান আল সিয়াম: এসব কাজে কারো সঙ্গ পেতেন?

নাহিয়ান আল রহমান: হ্যা ছিলো। এসব কাজে আমার এক বন্ধুও আগ্রহী ছিল, আমরা দুই জন এসব একসাথে করতাম। আমাদের মাঝে একটা প্রতিযোগিতার মতোও ছিল; দেখা যেত নতুন কিছু একটা বানাবো বলে প্ল্যান করলাম, ও তারপরের দিনই সেটা তৈরি করে নিয়ে আসতো।  

স্কুল লাইফে আমার এক কাছের বন্ধু ছিল, নাম সাহিদ । রকেট বানাতে আমি তখন চলে যেতাম সাহিদের বাসায়, আমাদের বাসা মোটামুটি কাছেই ছিল। ওর বাসাতেই আমরা বারুদ দিয়ে কোনো রকমে রকেট বানাতে চেষ্টা করতাম। আরেক বন্ধুর বাসার পাশেই আবার ছিল একটা পোল্ট্রি ফার্ম, তখন দেখা গেলো যে, আমরা বারুদ দিয়ে রকেট ফাটাচ্ছি – এতে ওই ফার্মের মুরগীগুলো বারুদে মরে যেত। এলাকার মানুষেরা যেত ক্ষেপে, যে এরা সারাদিন কি না কি করে। এমন করতে করতেই এসএসসি শেষ করি।

আমাদের গ্রামে প্রতি শনিবার আর বুধবার হাট বসতো। ওখানে বেশ কয়েকটা দোকানে পুরাতন নষ্ট রেডিও, টিভি-এসব বিক্রি হতো, যারা মেকানিক এর কাজ করত, তারা কম দামে কিনে নিয়ে যেত। সেই হাট থেকে ৫/১০ টাকা দিয়ে সব নষ্ট জিনিস কিনে আমরা নিজেরাই ঠিক করতাম। পরে এমনই এক একটা টিভি বা ফ্যান ঠিক করে দেখা গেলো ভালো দামেই আবার সেটা বিক্রি করে দিয়েছি। এভাবেই টাকা জমানো শুরু করি।

প্লাবন: কলেজ-ইউনিভার্সিটির দিন গুলো কেমন কেটেছে ?

নাহিয়ান আল রহমান: আমার ইচ্ছা ছিল বগুড়া আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হওয়া, কিন্তু আমার মা ভেবেছিলেন যে সরকারি কলেজে আমার পড়াশোনা কিছুই হবে না। চাপে থাকব, এমন একটা জায়গায় আমাকে দিতে হবে। পরে ভর্তি করা হয় সাইদপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। সেখান থেকেই এইচএসসি করি। কলেজ লাইফে আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা ঘটে। কলেজে তখন একটা সায়েন্স ফেয়ার আয়োজন করা হয়। আমি সেই সায়েন্স ফেয়ারের জন্য একটা রোবোটিক সাবমেরিন তৈরি করি। আমাদের সায়েন্স ফেয়ার এ চ্যাম্পিয়ন হলাম, সেটা দিয়েই পরবর্তীতে ন্যাশনাল পর্যায়েও চ্যাম্পিয়ন হই।

ওটাই ছিল আমার লাইফের এর একটা টার্নিং পয়েন্ট! এই সেক্টরে গেলে আমি সফল হতে পারি, এমন একটা ধারণা তখনি তৈরি হয়। এইচএসসি শেষ করার পর আমি চেয়েছিলাম রোবটিক্স বা অ্যারোস্পেস ধরণের সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে, কিন্তু সে সময় বাংলাদেশে এমন কোন সাবজেক্ট ছিল না। MIST তে বোধ হয় ছিল, কিন্তু সেটাও একদম নতুন নতুন শুরু হয়েছে এমন পর্যায়ে। পরে আমি ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হই EEE সাবজেক্ট এ।

প্লাবন: রকেট বানানোর যাত্রার শুরুটা কীভাবে হলো?

নাহিয়ান আল রহমান: যখন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাম্পাসে আসি,তখন পরিচয় হয় নিয়ামূলের সাথে । আমরা দুই জন তখন ভাবি যে রকেট তৈরি করবো। সেজন্য আমরা তখন একটা ক্লাবও তৈরি করি। প্রফেসরদের অনুমোদন নিয়ে নাম দিই “আলফা সায়েন্স ল্যাব”। 

আমাদের এক স্যার ছিলেন, নন্দি স্যার। অনেক মেধাবী ছিলেন! নম্র, বেশি কথা বলতেন না। আমি স্যারকে একদিন গিয়ে বলি, “স্যার, আমি রকেট বানাবো”। তখন উনি বললেন যে, “নাহিয়ান এর জন্য তো তোমাকে আরও পড়তে হবে, এত তাড়াতাড়ি পারবা না।” আমিও স্যারকে বলি যা যা বই লাগে, আমাকে দিতে, আমি পড়বো। তখনও জানতাম না রকেট বানানো এতটা জটিল। আমি ভেবেছিলাম যে এক বছরেই রকেট বানিয়ে ফেলব। উনিও আমাকে বেশ কিছু সিনিয়র ভাই আর প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে আমরা বুঝতে পারি যে রকেটের কিছুই আমরা এখনো জানি না। রকেট তৈরি করতে হলে আমাকে আরও অনেক পড়তে হবে।

প্লাবন: বাংলাদেশের এডুকেশন সিস্টেমে পড়াশোনা করেও রকেট লঞ্চ করবেন, বাংলাদেশের ইলন মাস্ক হবেন – এই অসম্ভব রকমের একটা সাহসী স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা কিভাবে পেলেন?

নাহিয়ান আল রহমান: লেখাপড়া শেষে বাসা থেকে চাপ আসা শুরু হলে আমি IELTS দিই, কিন্তু সে সময় ব্যক্তিগত কিছু কারণে আর আমেরিকায় যাওয়া হয় নি। ২০১৯ সালের প্রায় ৭ মাস আমি সম্পূর্ণ সময় বাসায় ছিলাম। ফুটবল খেলতাম, মাছ ধরতাম– এসবই করতাম। মানে আমি লাইফে আর কিচ্ছু করবো না, জীবন থেকে ফেড আপ হওয়া যাকে বলে। সে সময় বাসা থেকে বাবা–মা বলে কিছু একটা কর! মানে বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই আমি তখন একটা ইভি স্টার্টআপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কয়েক লাখ টাকা লোন নিই ব্যাংক থেকে, এরপর আবার ময়মনসিংহ চলে আসি আর কাজ শুরু করি।

আমার কোম্পানির নাম মূলত ছিল ধুমকেতু। যে নয় মাস আমি বাসায় বসে ছিলাম, সে সময় আমার কোনো ডোমেইন রিনিউ করা হয় নি। আগের ডোমেইন কিনতে গেলে অনেক টাকা চেয়েছিল। এ কারণে পরবর্তীতে “ধুমকেতু-এক্স” নাম দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে আমরা টিম তৈরি করি আবার। একটা রকেট টিম, আরেকটা ইভি টিম। তখন আমার দুইটা কোম্পানিই ছিল। DhumketuX তখনি শুরু হয় আরকি। 

এখানে একটা জিনিস বলে রাখা ভালো। তুমি যখন কোনো ব্যবসা দাঁড় করাবা, বা কোনো স্টার্টআপ শুরু করবা, তখন তোমার প্রোডাক্টের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তোমার ফান্ডিং কত আছে এবং এই টাকা বার্ন করে একটা প্রোডাক্ট বাজারে এনে রেভিনিউ আর্ন করার আগ পর্যন্ত তুমি কি অ্যাচিভ করতে পারবা। অন্ট্রাপ্রেনরশিপের এই আইডিয়া গুলো বেশির তরুণের নাই এখন।

প্লাবন: ধূমকেতু এক্সের জার্নিটা সম্পর্কে যদি বিস্তারিত বলতেন।

নাহিয়ান আল রহমান:  আমি সে সময় একটা লিকুইড রকেট ইঞ্জিন ডিজাইন করি, অ্যানালাইজ করি বাজেট কত হবে। প্রায় ৫০+ লাখ টাকা শুধু ইঞ্জিনেই খরচ হতো, এই টাকা ঢালা তখন সম্ভব ছিল না। আমার আসলে তখন উদ্দেশ্য ছিল একটা রকেট লঞ্চ করে দেখানো যে, বাংলাদেশেও রকেট লঞ্চ করা সম্ভব। একটা কোম্পানি এটা করেছে এবং আমরাও স্পেসে যেতে পারি। কিভাবে যাচ্ছি সেটা লক্ষ্য না, লক্ষ্য হচ্ছে মহাকাশে যাওয়াটা। লিকুইড রকেট ইঞ্জিনের পেছনে এত টাকা খরচ করলে আমার রকেট হবে না। ইঞ্জিনের সাথে বাকি সব খরচ মিলিয়ে প্রায় ২,০০,০০০ ডলার খরচ হয়ে যাবে। এটা ইনভেস্ট করা সম্ভব না আমার পক্ষে। আর যে টাকা লোন ছিল, তাতেও সম্ভব না। তখন ঠিক করি আমরা ইভি নিয়েই কাজ করবো।

প্লাবন: ইভি কোম্পানিটা নিয়ে আমাদের একটু বিস্তারিত বলবেন?

নাহিয়ান আল রহমান:  ইভি নিয়ে আসলে কাজ শুরু করি ২০১৮ সালে, কোম্পানির নাম ইলেক্ট্রন। টু সিটার কার বানাবো ঠিক করেছিলাম। পালকি তখনো বাজারে আসে নি। আমরা ডিজাইনও করছিলাম। ইভির চাকা, ব্যাটারি আর অন্যান্য কিছু পার্টস আমার অফিসে এখনো পড়ে আছে। সে সময় বাংলাদেশে ৭টা কোম্পানি ছিল, যারা ইভি নিয়ে কাজ করছিল। আমি সবার সাথেই কানেক্টেড ছিলাম। যেহেতু ৭টা কোম্পানি ইভি নিয়ে কাজ করছে, তার মানে আমি প্রোডাক্ট নিয়ে ২০২২ সালে বাজারে আসতে আসতে ওয়াল্টন সহ অন্যান্য কোম্পানি বাজারে থাকবে। বিভিন্ন কোম্পানিতে আমার বড় ভাই ছিলেন তাই বিভিন্ন অফার পেয়েছিলাম সে সময়। কিন্তু, ইভি আমার ইমোশন। ইমোশন দিয়ে ব্যবসা চলবে না, আমি বাজারে আসতে আসতে অন্যান্য কোম্পানি চলে আসবে। এজন্য সিদ্ধান্ত নিই ইভি বাদ দিয়ে রকেটেই আমি সম্পূর্ণ ফোকাস করবো। ইভির ফান্ডিং কমিয়ে দিয়ে ইলেক্ট্রনকে সাইডে রেখে আমরা সম্পূর্ণ ফান্ডিং নিয়ে যাই রকেট কোম্পানি ধুমকেতু-তে।

এবার ঠিক করি যে রকেট নিয়ে কাজ করলে আমি কি করতে পারবো, স্পেসে যেতে আমার কত টাকা লাগবে এবং স্টেপ গুলো কি কি। দেখা গেল যে লিকুইড রকেট ইঞ্জিন ডেভেলপ করে আসলে কোনো লাভ নাই, করলে আমার টিমকে চালাতে পারবো সর্বোচ্চ ২ বছর। এর মধ্যে কাজ শেষ না হলে টিম ভেঙ্গে যাবে, কোম্পানি ভেঙ্গে যাবে আর সব টাকা ডুবে যাবে। বাংলাদেশে একটা জিনিস প্রায় সবাই ভুল করে। তারা গ্রুপ তৈরি করে এমন একটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে, যেটা শুরু হলেও শেষ করতে করতে ফান্ডিং থাকে না এবং টিম ভেঙ্গে যায়। এসব বিষয়ে আমার জ্ঞানও একদিনে আসে নি। Dhumketu X আমার নবম স্টার্ট আপ। আমার প্রথম স্টার্ট আপ ছিল “এতই সহজ”, একটা সফটওয়ার ফার্ম। এখনো এটার প্রোডাক্ট আছে আমাদের। গাজীপুরে বিশাল অফিস ছিল। এটা ব্যর্থ হওয়ার পর আমি শিক্ষা নিই, যে কি কি ভুল করা যাবেই না। এরকম ৮টা স্টার্ট আপ ব্যর্থ হওয়ার পর আমি Dhumketu X শুরু করি।

আমি বাংলাদেশে লিকুইড বা ধরো ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনই তৈরি করলাম। গোটা পৃথিবীতে ৫–৭ টা দেশই তৈরী করতে পারে ক্রায়োজেনিক। কিন্তু, আমি বাংলাদেশে এটা বানালেও কারো কিচ্ছু আসবে যাবে না। ২০২৩ সালে আমরা লিকুইড রকেট ইঞ্জিন তৈরি করে টেস্টিং ও করে ফেলেছি। এটা কেউ জানেই না। আমরা বাংলাদেশের সাউন্ড ব্যারিয়ার ভেঙ্গেছি, এতেও কারো কিচ্ছু যায় আসে না। তার মানে কি? এদেশে কিছু করতে হলে তোমার টাকা আনতে হবে। যে কাজে কোনো বিজনেস হবে না, সে কাজে কেউ সাহায্য করতেও আসবে না। এজন্যই আমরা সলিড রকেট নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। এতে আমরা যে কোনো মিসাইল নিয়ে কাজ আগাতে পারবো। সলিড ইঞ্জিন ছাড়া মিসাইল হয় না, তাই এটা নিয়েই কাজ শুরু করি।

মজার বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন কেমিক্যাল প্রোডাকশন আমরা নিজেরাই করি। বাংলাদেশের অন্যান্য কোম্পানি কেমিক্যাল প্রোডাকশন করতে পারে না, এজন্যই অন্য কোনো রকেট কোম্পানি এখনো নাই আর কেমিক্যাল প্রোডাকশন ছাড়া হবেও না। কেমিক্যাল প্রোডাকশনই মূল কাজ, এটা তোমাকে কেউ বেচবেই না। আর রকেটের কেমিক্যাল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ, you can’t buy it from anywhere. বাংলাদেশে তো পাওয়াই যায় না, বিদেশ থেকেও আনতে পারবে না। 

যাই হোক, ধুমকেতু কোম্পানির মূল শুরুটা হয় ২০২২ সালে, এখান থেকেই আসল জার্নি শুরু। বাংলাদেশী কোম্পানি হিসেবে, শুধু অ্যারোস্পেস না, রকেট কোম্পানি হিসেবেও আমরা এখন লাইসেন্স প্রাপ্ত। আমরা যে রকেটটা প্রদর্শনী করেছিলাম, ওটা মূল রকেট ছিল না। আমাদের ইন্টার্ন টিম ওই একুশে রকেটটি বানিয়েছিল ২০২২ সালে। কিন্তু, আমরা তখন দেখাই নি কাউকে। এটাই আসলে ব্যবসার নিয়ম। তোমার কম্পিটিশন যদি কেউ তৈরিও হয়, তাদেরকে সবসময় নিচে রাখতে হবে। আমরা যখন দেখলাম যে রকেটটা লঞ্চ করবো, তখনই প্রদর্শনী করলাম।

কিন্তু, বাংলাদেশে একটা খুবই শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। এরাই এখন পর্যন্ত রকেটটি লঞ্চ করতে দেয় নি আমাদের। আমি ভেবেছিলাম যে বাংলাদেশ ২.০ এর পর অনেক কিছু চেঞ্জ হয়ে যাবে। কিন্তু উপরে তারা এখনো বসে আছে, কিচ্ছুই পাল্টায় নি। আর আমার তো ব্যবসা করতে হবে। জলে বাস করে তো আর কুমিরের সাথে ঝগড়া করে লাভ নাই, এমনিই এনাফ ঝগড়া করেছি। আমি দেশের অনেক হাই অফিশিয়ালদের সাথে অসংখ্য (৫০+) মিটিং করেছি। তাও একুশে লঞ্চ করার পারমিশন পাই নি। এখানে ইউনিভার্সিটি এবং স্পারসো আছে। সবাই, সবকিছু তাদের আন্ডারে চায়। এই দ্বন্দ্বটার কারণেই মূল সমস্যা। 

প্লাবন: কোম্পানির স্ট্রাকচার আসলে কেমন? কয়টি টিমে মানুষ কাজ করে, অপারেট করেন কিভাবে, রিক্রুটিং প্রসেস কি – ইত্যাদি নিয়ে জানতে চাই।

নাহিয়ান আল রহমান:  আমরা কোম্পানি আকারে অপারেট করি। আমাদের এমপ্লয় আছে, তারা কাজ করছে। আমাদের কিছু প্রোগ্রামও আছে। ধুমকেতু-এক্স কমিউনিটি আছে। রিসেন্টলি আমরা একটা “হাই পাওয়ার রকেট্রি কমিউনিটি” ডেভেলপ করেছি, বাংলাদেশে, এটার মাধ্যমে স্কুলগুলোতে আমরা রকেট্রি নিয়ে কাজ শুরু করবো খুব তাড়াতাড়ি। এছাড়াও, একটা VLSA কমিউনিটি আছে। যেহেতু আমরা ডিফেন্সের বিভিন্ন কাজ করি, তাই VLSA আমাদের লাগেই। আমি অনেক ইন্টারভিউ নিই, কিন্তু দেখা যায় তারা কাজ পারে না তেমন। ভাবলাম নিজেই উদ্যোগ নিবো, তাই একটা কমিউনিটি বিল্ডাপ করেছি। তারপর আমাদের রকেট্রির ক্ষেত্রে ROS2 লাগে, রোবোটিক অপারেটিং সিস্টেম। এই জিনিসগুলোই আছে আমাদের। 

আমাদের একটা ক্যাম্পাস এবং ইন্ডাস্ট্রি কোলাবোরেশন প্রোগ্রামও আছে। বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে প্রফেসরদের বড় রকেটের যে কোনো একটা পার্টের অংশ R&D কাজটা আমরা দিয়ে দিচ্ছি। তাদের ল্যাব ইউজ করে কাজটা করছেন তারা। এই মেথডের কারণেই মূলত আমরা এখনো বাংলাদেশে কাজটা করতে পারছি। কারণ, একটা রকেট ল্যাব করতে গেলে অনেক টাকা প্রয়োজন। আমাদের মূল রকেটটা হচ্ছে “নজরুল”। ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে শুধুমাত্র রকেটের ল্যাব সেটাপে, প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। বাকি সব ক্ষেত্রে মিনিমাম ২ মিলিয়ন ডলার তো লাগবেই।

এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল লাইসেন্সিং এর বিষয় আছে, কিছু ট্রিটি আছে। আমাদের টিমের এক মেম্বার, ইফতেকার। সে কম্বোডিয়া ইউনিভার্সিটি টিমের লিড, লিকুইড রকেট ইঞ্জিন ডেভেলপ করেছে। সেই রকেটটা ৪২ ফুটের, ২০২৩ সালে কাজ শেষ করে ফেলেছে। কিন্তু, বেশ কিছু ইন্টারন্যাশনাল ট্রিটি থাকায় এখনো তারা কানাডায় লঞ্চ করতে পারে নি। কিছু ইস্যু আছে যা সলভ না করলে কানাডা কেন, জার্মানিও রকেট লঞ্চ করতে পারবে না। কানাডার মতো একটা দেশের লিড টিম এই অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশে আমরা কি কি ফেইস করেছি একবার চিন্তা করো তাহলে। “বিদ্রোহী” রকেটটার জন্য জানুয়ারী মাসে অ্যাপ্লাই করবো, ২০২৫ এর শেষের দিকে অনুমতি পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। কারণ, ড. ইউনুস স্যার আছেন। 

প্লাবন: যে রকেটগুলো বানানো হয়ে গেছে, সেগুলো কোথায় রেখেছেন?

নাহিয়ান আল রহমান: ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ক্যাম্পাসে একটা রেখে দিয়েছি, এর কিছু কারণ আছে। কোম্পানিতে রকেট রাখতে গেলে কিছু ইস্যু আছে, ক্যাম্পাসে রাখলে সেটা আর থাকে না। ক্যাম্পাসের মধ্যে আমাদের Dhumketu X এর আলাদা ল্যাব আছে, সেখানে রাখা আছে। আমাদের ল্যাব মূলত দুই জায়গায়। অফিসে একটা আলাদা ল্যাব আছে, সেখানে আরএনডির কাজগুলো করি। আর ক্যাম্পাসে সেগুলো রেখে দিই আরকি। সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই – এরা মাঝে মধ্যে দেখতে আসে, এসব উটকো ঝামেলা। কোম্পানির মধ্যে রাখলে সেফটি ইস্যু, চুরি–ডাকাতির মত বিষয় থাকে। তাই ক্যাম্পাসে রাখা।

আমাদের বেশ কিছু রকেট আছে যেগুলো ‘রেডি টু লঞ্চ’। Dhumketu X এর সাইটে গেলেই পাবে, আমাদের কাজ গুলো চাইলেই দেখা যাবে। সব কিছুই ট্রান্সপারেন্ট। একুশে, বিদ্রোহী এসআর, নজরুল ০১- সব রকেট সম্পর্কে তথ্য দেয়া আছে।

বিদ্রোহী রকেটের ক্ষেত্রে আমরা বেশ ইনোভেটিভ একটা বিজনেস আইডিয়া নিয়ে আগাচ্ছি। পৃথিবীতে এমন কোনো কোম্পানি নেই যারা স্পেসে গিয়ে ব্র‍্যান্ডিং করে, আমরা সেটাই করতে চাচ্ছি। যদিও ইলন মাস্ক কাজটা করেছিল। ফ্যালকন হেভির সাহায্যে টেসলা রোডস্টারের ব্র্যান্ডিং করেছিল। এই আইডিয়াটাকে আমরা বিজনেসে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। বিদ্রোহী রকেটের সাহায্যে এই কাজটা করা হবে। আমাদের সাইটে গিয়ে লঞ্চ বুকিংও দেয়া যাবে। এই রকেটের কাজই হবে কমার্শিয়াল। বিদ্রোহী হবে একটি সাব–অরবিটাল রকেট। তবে, বাংলাদেশ থেকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে এর জন্য। আমরা কম্প্রোমাইজ করতেও চেয়েছি। উচ্চপর্যায়ের আদেশ গুলো মানার চেষ্টা করেছি। আশা করি, সামনে কিছু ভালো সংবাদ আসবে। কিন্তু, তাতেও যদি না হয় হয় তাহলে হয়তো আমাদেরকে দেশের বাইরে যেতে হতে পারে রকেট লঞ্চের জন্য। ইতোমধ্যে নিউজিল্যান্ড সরকারের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। দেশে সম্ভব না হলে সেখানে যেতে পারি রকেট লঞ্চের জন্য।

জুম্মান: বুঝতে পারছি। অবস্থা অনেকটা এমন যে, আমার কাছে হাতুড়ি–পেরেক আছে কিন্তু দেয়াল নাই। আমি চলে গেলাম সেখানে, যেখানে দেয়াল আছে। 

নাহিয়ান আল রহমান: অভিয়েসলি। আমার আসলে অফার পাবার সুযোগ আছে। কিন্তু আমি চাই যে আমার টিম যাবে, আমি যাবো না। যদি নাসা থেকে অফার পাই, তাহলেও আমার টিম যাবে। কিন্তু, আমার ইচ্ছা আমি দেশেই থাকবো। 

জুম্মান: বহির্বিশ্বের কাছে কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন এখন?

নাহিয়ান আল রহমান: এখন পর্যন্ত অনেক ভালো। আমর সাথে অনেক দেশের উচ্চপর্যায়ের লোকদের কথা হয়েছে। যদি সুযোগ হয়, তাহলে আমার টিম যাবে।

জুম্মান: এ পর্যায়ে একটু ভিন্ন একটা আলোচনা করতে চাই। আপনি জানেন, কিছুদিন আগেই ভারত চাঁদে পৌঁছেছে। এটা নিয়ে কিন্তু প্রচুর আলোচনা হয়েছিলো। আমার মনে আছে, যখন এটা নিয়ে মিডিয়া সরগরম ছিলো তখন আমাদের সায়েন্স বী’র মবিন শিকদার ভাই আমাকে একটা বিশেষ নিউজ দেন লেখার জন্য৷ শিরোনাম ছিলো, “মহাকাশ গবেষণা কি সত্যিই অপ্রয়োজনীয়?”। নিউজটা ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার বারের বেশি শেয়ার হয়। সত্যি বলতে তখন বুঝতে পারি যে, বাংলাদেশের মানুষ মহাকাশ গবেষণাকে আদতে দরকারী কোনো কিছু মনে করে না, বরং অপচয় মনে করে । এটা কি আমাদেরই সমস্যা? আমরা হয়তো টেকনলজিতে এগিয়ে গেলাম, নতুন ইনোভেশন করলাম। কিন্তু আমরা মানতে চাই না যে, আমাদের জন্য এটা দরকার। ব্যাপারটা তো এমনই মনে হচ্ছে, তাই না?

নাহিয়ান আল রহমান: হ্যাঁ! নিউজটা আমার কাছেও এসেছিলো। আমি নিজের বা আমার টিম এর কথা যদি বলি, তাহলে আমরা কেনো রকেট বিজনেস এ এসেছি? বিজনেস অ্যাসপেক্ট থেকে যদি বলি, রকেট ইন্ডাস্ট্রিতে তুমি ১০ ডলার ইনভেস্ট করলে ১০০ ডলার রিটার্ন পাবা। এই ইন্ডাস্ট্রির গ্রোথ কিন্তু অনেক। সেটা আমরা এখনো জানি না বা বুঝি না। তোমরা যারা মিডিয়াতে আছো, এটা তুলে ধরা কিন্তু তোমাদেরই দ্বায়িত্ব। মহাকাশ গবেষণায় আমাদের এগিয়ে যাওয়া অনেক জরুরি বলে আমি মনে করি।

জুম্মান: আমার মনে হয় আপনাকে যারা নিয়মিত ফলো করে, সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে যে কখন ধুমকেতুর এক্সের পক্ষ থেকে আরেকটা ইনিশিয়েটিভ দেখতে পাবে।

নাহিয়ান আল রহমান: আমাদের রকেটের রেঞ্জ প্রথমে ছিলো ৫২ কিলোমিটার। এটা ছিলো “একুশে” রকেটের রেঞ্জ। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের সাথে মিলিয়েই এটা দেয়া হয়ছিলো। কিন্তু, পরবর্তীতে আমাদের উপর থেকে চাপ দেয়া হয় রেঞ্জ কমানোর জন্য। পরে আমরা রেঞ্জ ৫২ থেকে ২১ কিলোমিটার করলাম। কিন্তু তাতেও রাজি হন নি তারা, আরো কমাতে বলা হয়। বিভিন্ন মহল থেকে আমরা অনেক বাধাই পেয়েছিলাম।

তবে, একটা ভালো খবর দিতে পারি। শীঘ্রই আমরা বাংলাদেশের প্রথম সেমি-গাইডেড মাইক্রো মিসাইল টেস্ট করবো। আমাদের “আবাবিল” ক্যারিয়ার ড্রোনের সাথে মিসাইল যুক্ত থাকবে, লঞ্চ হবে মাঝ আকাশে। দুইটাকে একসাথে “Flying Sword System” বলা হচ্ছে। 

জুম্মান: খুবই দারুণ একটা সংবাদ পেলাম। কিন্তু, সামনে যেই রকেট লঞ্চটা আমরা দেখতে পাবো, সেটা কি আমাদের দেশের মাটি থেকেই হতে চলেছে নাকি বিদেশের মাটিতে যেতে হতে পারে?

নাহিয়ান আল রহমান: সত্যি বলতে এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে, আমরা অবশ্যই চাইবো মিডিয়া যেন এই কাজগুলোকে প্রাধান্য দেয়। আমরা চাই ২০২৫ সালেই একটা লঞ্চ করতে, সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে।

জুম্মান: সামনে আমরা ভালো কিছু দেখতে পারবো মনে হচ্ছে কি? বাইরের দেশ থেকেও কোলাবোরেশান এর জন্য প্রস্তাব এসেছে আপনার কাছে। আপনি নিউজিল্যান্ডের কথা বললেন৷ তাহলে আমরা কি নতুন ভোর দেখতে পাচ্ছি?

নাহিয়ান আল রহমান: সত্য বলতে আমাদের দেশের পলিসি মেকিং এ অনেক উন্নতির প্রয়োজন আছে। তবে, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারে কিছু উপদেষ্টা আছেন, যারা দূরদর্শী। আমি আশাবাদী যে ড. ইউনূস স্যার থাকাকালীন সময়ে আমরা একটা রকেট লঞ্চ করতে পারবো। তবে, স্পেসের রকেটটার জন্য আমাদের আরো সময় নিতে হবে।

প্লাবন: গ্লোবাল মার্কেটের দিকে গেলে আপনার কোম্পানি লাভবান হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ কি আদৌ লাভবান হবে?

নাহিয়ান আল রহমান: তখন বাংলাদেশে প্রোডাক্ট বেচবো! বাংলাদেশ কিনবে, আমরা তো শুধু কিনতেই চাই।

প্লাবন: “একুশে” রকেটটা কি “বিদ্রোহী” রকেটের আগে লঞ্চ হবে নাকি পরে?

নাহিয়ান আল রহমান: “একুশে” আগে হবে। আর ‘একুশে’র এর জন্য আমরা প্রস্তুত, শুধু সরকারের সহযোগীতা চাই। প্রয়োজনে আমরা আরো লিমিটেড রেঞ্জে লঞ্চ করতেও রাজি সরকারের নিয়ম মেনে। তবে, একটা বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে রকেট লঞ্চিং সাইট নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। যেমন: সমূদ্র তীরবর্তী কোনো দ্বীপকে নির্বাচন করা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। এই সমস্যাগুলোও আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে।

জুম্মান: আলোচনার এই পর্যায়ে আমি আপনাকে কিছু দেখাতে চাই। আমি ছোটবেলায় বিমানবাহিনীর ক্যালেন্ডার থেকে বিভিন্ন এয়ারক্রাফটের ছবি কালেক্ট করতাম। এখানে ২০০০ সালের আগে–পরের বেশ কিছু বিমানের ছবি আছে। তার মধ্যে কিছু অবশ্য রিটায়ার্মেন্টে। F সিরিজের পুরাতন মডেলের কিছু বিমান, L–39, Attack–5, C–130 হারকিউলিস; এমনকি বহুল পরিচিত Mig 29 fulcrum এর ছবিও আছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি এতো চেষ্টা করছেন। আমরাও অনেক স্বপ্ন দেখছি, কিন্তু আমরা কি ঠিক পথে আছি? আমি বোঝাতে চাইছি যে, উন্নত দেশ গুলোর তুলনায় আমরা যে পর্যায়ে আছি, সেখান থেকে আমাদের এই ধরনের কাজগুলো করার চেষ্টা কতটা যুক্তিযুক্ত? 

নাহিয়ান আল রহমান: দারুণ একটা প্রশ্ন! হ্যাঁ আমাদের লিমিটেশনটা আমাদের জানতে হবে। তোমরা যদি Dhumketu X এর সাইটে যাও, তাহলে দেখবা যারা ডিরেক্টর পদে আছেন তাদের ৮০% ই বাংলাদেশী না। পিএইচডি করা ৫ জন আছেন, তারাও বাইরের। কয়েকজন রাশিয়ারও আছেন। কেউ আছেন চীনে। কারো কারো আছে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা। তাদেরই আমি নিয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্যটা বুঝতে হবে। 

আমরা কিন্তু কোনো ফুলসাইকেল রকেট ইঞ্জিন বানাচ্ছি না। এটা আমাদের লক্ষ্য না। আমরা যেটা করবো সেটা হলো R&D (research and development)। মানুষকে বুঝতে হবে যে, আমরা স্পেস এক্স না। এটাকে বলে রিয়েলিটি চেক। আমাকে আমার লিমিটটা জানতে হবে, এটা খুবই জরুরি। আর আমার স্ট্র‍্যাটেজি হচ্ছে আমি যদি কোনো কাজের ৮০% একা না পারি, তাহলে আমি সে কাজে হাত দেই না। হ্যাঁ টিম থাকবে। আমি কাজ করাতে পারবোও হয়তো, কিন্তু একটা পর্যায়ে টিম ভেঙ্গে যাবে। আরেকটা ব্যাপার দেখবা, আমরা কিন্তু টেকনোলজির দিক দিয়ে এখনো ৬০ এর দশকেই পরে আছি।

জুম্মান: এক্সাক্টলি! আমি যেই এয়ারক্রাফটগুলো দেখালাম সেগুলো সব ১৯৯০ এর আগের মডেল।

নাহিয়ান আল রহমান: হ্যাঁ। কিন্তু, আমরা খুবই দ্রুত ক্যাচ আপ করতে পারবো পাশের দেশ ভারতের সাথে। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আমাদের কিন্তু অটোনোমাস রকেট ল্যান্ডিং প্রজেক্টটা আছে। আমরা লিকুইড রকেট ইঞ্জিন তৈরি করেছিই এটার জন্য। আর ১ বছরের মধ্যেই দেখবা আমাদের রকেট আমরা ল্যান্ড করাচ্ছি। এটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে আমরা ভারতকে বাইপাস করে যাবো।

কিন্তু এসব ক্ষেত্রে বিজনেস নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে, এটাকে এড়িয়ে যাবার কোনো সুযোগ নাই। ধরো কোনো কিছু আমাদের নাই এবং আমাদের পক্ষে বানানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই, আমরা বাইরে থেকে নিয়ে এনে বিক্রি করলাম। এখান থেকে যেই অর্থ আসবে, সেটা দিয়ে ফিউচারে কী আসবে- এসব ভেবে কম্পিটিশনে নামতে হবে। তাই, অটোমাস ল্যান্ডিং নিয়ে আমাদের টিম কাজ করছে।

আর এর জন্য যেই সফটওয়্যার আছে, সেটা আমরা ওপেন সোর্স করে দেবো। এটা MIT ওপেন সোর্স লাইসেন্স এর আন্ডারে। যে কেউ কোডিং করতে পারবে। এতে আমাদের খরচটা বাঁচলো। ইঞ্জিন আমাদের, কিন্তু সফটওয়্যার গোটা বাংলাদেশ মিলে তৈরি করবে।

জুম্মান আল সিয়াম: যারা এভিয়েশন ফ্রিক, বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর গুলো নিয়ে কথা বলে বা জ্ঞান রাখে, তারা সবাই আপনাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে, আপনাকে ফলো করার চেষ্টা করে।

আমি দেশ ছাড়িনি মূলত এই কারণেই। যেহেতু আমরাই প্রথম রকেট তৈরী করেছি, আমি যদি দেশ ছাড়ি তাহলে এদেশে আগামী ১০–১৫ বছরে আর কেউ রকেট নিয়ে কাজ করার সাহস পাবে না।

জুম্মান: মানে এই গুরু দায়িত্ত্বটা চলে আসছে আপনার উপর। আমার পরের প্রশ্ন ধুমকেতু এক্সের রকেটগুলোর নাম নিয়ে। নজরুল, বিদ্রোহী, আবার ধূমকেতু-এক্স নামটিও! এই ব্যাপারটা নিয়ে যদি কিছু বলতেন। কাজী নজরুল ইসলাম কি আপনাকে খুব ইন্সপায়ার করেন?

নাহিয়ান আল রহমান: অবশ্যই। আমি তো কাজী নজরুলের বড় ভক্ত। বিশেষ করে কলেজ লাইফে তার বিদ্রোহী কবিতারটা আমি সম্পূর্ণ মুখস্থ করেছিলাম। আমি ভালো আবৃত্তি পারি না, কিন্তু আমি কবিতাটা আমি প্রায়ই শুনি। কাজী নজরুলের অন্যান্য কবিতা গুলোও পড়তে ভালো লাগে। আমার আবার হিমু রোগ ছিলো।

জুম্মান: মহাপুরুষ হবার ইচ্ছা?

নাহিয়ান আল রহমান: হ্যাঁ হ্যাঁ; এটাই। আর ছোটবেলায় একটা বই পড়েছিলাম। ১০০ মনীষীর কথা – মাইকেল এইচ হার্ট এর। আসলে তখন থেকেই একটা ইচ্ছা ছিলো মহামানব হবো। পরে অবশ্য বাস্তবতায় ফিরে আসতে হয়। আমার কিন্তু নাটক পরিচালনার অভিজ্ঞতাও আছে। ইউটিউবে পাবা, নাম ‘লব্ধি শুন্য’। আমি ছিলাম ডিরেক্টর। আমার মুভি বানানো নিয়েও অনেক আগ্রহ ছিলো। একসময় ক্রিপ্টও লিখেছিলাম। ২০১০ এর আগ পর্যন্ত হলিউডের এমন কোনো মুভি নেই যেটা আমি দেখি নি। এখনো ইচ্ছে আছে মুভি নিয়ে কিছু করার, কিন্তু সময় হয় না। আমার কাজ মূলত ডিফেন্স সেক্টর নিয়ে।

জুম্মান: যেমনটা আলোচনা করলাম, আমাদের টেকনোলজি অ্যাডভান্সড নয়। আমরা অনেকটা পিছিয়ে, পাশাপাশি আপনিও যেহেতু ডিফেন্স সেক্টরে কাজ করছেন – তাই প্রশ্নটা করছি। ভৌগোলিকভাবে বিবেচনা করলে আমরা কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা অবস্থানে আছি। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা অবস্থান থেকে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা কি আমাদের জন্য কি হুমকি স্বরূপ নয়? 

নাহিয়ান আল রহমান: অবশ্যই। এটা তো বলার অবকাশ রাখে না। তোমাদেরকে একটা বিষয় শেয়ার করি। সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। যেমনটা বলেছিলাম, পলিসি মেকিং এ আমাদের বেশ ঘাটতি আছে। আমরা যদি ডিফেন্স সেক্টরে ডেভেলপমেন্ট এর কথা চিন্তা করি তাহলে মোটা দাগে দুইটা ধরণ দেখা যায়। একটা ধরনের উদাহরণ স্বরূপ দেখতে পারো পাকিস্তানে। তাদের সব ধরনের ডেভেলপমেন্ট থাকে ডিফেন্সের আন্ডারে। চীনেও কিন্তু একই অবস্থা।

অন্যদিকে যদি ভারত অথবা আমেরিকার দিকে তাকাও, তাদের উন্নয়নগুলো একপ্রকার স্বাধীন। যেমন আমেরিকায় আছে DARPA আর DRDO, মিলিটারি থেকে বলা হয় তাদের কি ধরনের টেকনোলজি লাগবে। সে অনুযায়ী অর্গানাইজেশন গুলো কাজ করে। এতে উন্নয়নগুলো স্বতঃস্ফূর্ত হয়, পাশাপাশি প্রাইভেটাইজেশনটা বজায় থাকে। আমরা যদি পাকিস্তানের দিকে তাকাই, তাদের অবস্থা কিন্তু ভালো নয়। পাকিস্তানে আর্মির ইনফ্লুয়েন্স অনেক বেশি, সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায় তারা। 

জুম্মান: এক্সাক্টলি। কোথাও একবার শুনেছিলাম যে, পৃথিবীর সব দেশের একটা সেনাবাহিনী আছে। কিন্তু, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটা দেশ আছে ।

নাহিয়ান আল রহমান: হ্যাঁ এটাই। আমাদের দেশেও একই ব্যাপারটা ঘটতো। একমাত্র Dhumketu X ই এই পলিসিটা বিপরীতে কাজ করেছে। তবে, এতটুকু সত্য যে এটা একটা রিস্ক।

প্লাবন: আচ্ছা আমরা আবারো রকেটে ফিরে আসি। পে–লোড নিয়ে রকেট লঞ্চ করা আর সাউন্ডিং রকেট লঞ্চ করা – দুইটার মধ্যে বেসিক পার্থক্য কী?

নাহিয়ান আল রহমান: সত্য বলতে খুব একটা পার্থক্য নাই। একটা সামান্য পার্থক্য আছে গাইডেন্স সিস্টেমে। সাউন্ডিং রকেটের অরবিটার ক্যাপাসিটি থাকে না । যদি স্পেসে একটা রকেট পাঠানোর কথা বলি, তাহলে কিন্তু নির্দিষ্ট একটা ইমাজিনারি লাইন ফলো করাতে হবে। একটা নির্দিষ্ট Way Point থাকতে হবে যাকে আমররা টেজেকটরি বলি। 

জুম্মান: আপনার আরো কিছু প্রজেক্ট সম্পর্কে আমরা জানতে চাই। যেমনঃ ব্লু বার্ড, নর্থবার্ড, চড়ুই, ফায়ারফ্লাই টি এক্স– এগুলো সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

নাহিয়ান আল রহমান: মূলত ব্লু বার্ডটা এখন বন্ধ। আমার ফান্ডিং শেষ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সাল থেকে ওটা ওভাবেই পড়ে আছে। উইংসের কিছু অংশ তৈরী করা আছে, ইঞ্জিনও ল্যাবেই পড়ে আছে। আমি দুই–তিন বছর দেখিও নি। ইচ্ছা আছে যে, আমার যখন টাকা হবে এনাফ, আমি আবার ওটা ডেভেলপ করবো।

প্লাবন: ব্লু বার্ড কি কোনো প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার প্লেন?

নাহিয়ান আল রহমান: ওটা আর বানাবো না। আমার মূল উদ্দেশ্য এখন VTOL বানানো। আমার ইচ্ছা দুবাই ভিত্তিক কিছু হিউম্যান ড্রোন বা ফ্লাইং কার নিয়ে আগাতে। কারণ হচ্ছে, ইনভেস্টমেন্ট তোলাটা কষ্টকর। আমি হেলিকপ্টারও ডিজাইন করেছি, আমার কোম্পানী ছিল। সেখানে ইনভেস্টমেন্ট তুলেছিলাম ৩ কোটি টাকা। এই টাকায় কাজ হবে না, তাই আর এই কাজ নিয়ে আগানো হয়নি।

প্লাবন: আচ্ছা ফায়ারফ্লাই-টি এক্স কি কোনো অগ্নি নির্বাপক ড্রোন?

নাহিয়ান আল রহমান: আমাদের টিমের এটা নিয়ে আগে প্ল্যান ছিল। পরবর্তীতে এটা নিয়ে কাজ করেছে ইসতিয়াক। বাংলাদেশ এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটির লেকচারার ছিল, আজকেই জব ছেড়ে দিয়েছে।

জুম্মান: এখানে আমার পড়ার শখ ছিল।

নাহিয়ান আল রহমান: বাংলাদেশের কোন অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিতে পড়াই উচিত না । সেখানে ইসতিয়াক নিজের টাকা খরচ করে ড্রোন বানিয়েছিল। কিন্তু তাও সেখানে সে বেশিদিন জব করতে পারে নাই।

প্লাবন: থ্রী ইডিয়েটসের মতো অনেকটা। আচ্ছা, অ্যারোস্পেস বিষয়ে স্পেশালাইজড ডিগ্রি নেওয়া মানুষ কি আদৌ আমাদের দেশে আছে? মানে আমি যদি শিখতে চাই, কার কাছে যাবো?

নাহিয়ান আল রহমান: অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিকে আসলে এক্সপোর্ট কন্ট্রোল ইন্ডাস্ট্রি বলা হয়। আমি চাইলেই আমেরিকায় গিয়ে জব করতে পারবো না। কারণ আমি by birth আমেরিকান না। আমি চাইলেই রাশিয়ায় জব করতে পারবো না, চীনে জব করতে পারবো না, ইউরোপে জব করতে পারবো না। আমাকে ওখানে জন্মগ্রহণ করতে হবে অথবা ওখানে দশ বছর থেকে এক্সপেরিয়েন্স দেখাতে হবে। ওখানকার নাগরিক হয়ে যেতে হবে।

এখন বাংলাদেশে যেসব শিক্ষার্থীরা অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ছে, এরা চাকরি কোথায় করবে? ধরো, Dhumketu X প্রতি বছর সর্বোচ্চ দুই জনকে রিক্রুট করে। ফান্ডিং বেশি আসলে হয়তো পাঁচ জন নিবো। কিন্তু পাশ করে বের তো হচ্ছে ৬০ জন। বাকি ৫৫ জন কি করবে?

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি নাই, আমি অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি দিয়ে কি করবো? আমি বার বার বলেছি যে ইন্ডাস্ট্রি নাই, Dhumketu X কে ফান্ডিং করেন, আমরা ইন্ডাস্ট্রি করে দিচ্ছি। দরকার পড়লে স্পারসো কাজ শুরু করুক রকেট নিয়ে, আমরা কাজ টেন্ডার নিই, রকেটের পার্টস বানিয়ে দিই। তাও তো এখানে একটা জব সেক্টর তৈরী হবে। নাসার রকেট তৈরী করে বোয়িং, ইউএলএ – সেখানে ফান্ডিং দেয় নাসা। বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা হচ্ছে আমলতন্ত্র। ২০২২ এর ফেব্রুয়ারী মাসে নিউজ হলো, আমরা অনেকগুলো মিটিং করলাম। ২০২২ এর জুন–জুলাইয়ের মধ্যে রকেট লঞ্চ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বিভিন্ন জায়গায় মিটিং এ গিয়ে তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হলো আমরা বড় একটা পাপ করে ফেলেছি এদেশে। “কার অনুমতি নিয়ে তুমি তৈরী করেছ রকেট?” – এই তাদের ভাষা।

আমলারা তোমাকে সবসময় ঘুরাবে, প্রজেক্ট delay করাবে। এর ফলে হয় কোম্পানি ধ্বসে যায়, নাহলে গবেষকরা দেশ ছেড়ে চলে যায়। এটা তারা ইচ্ছাকৃত ভাবেই করে।

জুম্মান: এত কিছুর মধ্যে কোনো থার্ড পার্টি কি লাভবান হচ্ছে?

নাহিয়ান আল রহমান: হ্যাঁ, সবসময় হচ্ছে। তোমার যখন মনে হবে অমুক কাজটা এমন কেন, তমুক আত্মঘাতী নীতিমালা কেন তৈরী করলো – যেটা একটা বাচ্চাও বোঝে। এই অসঙ্গতিগুলোই ব্যবসা।

ধরো কালকে বলল, ঢাকার মধ্যে ৪০ কিমি/ঘন্টার উপরে কোনো মোটর সাইকেল চলতে পারবে না। এখানে ব্যবসাটা কোথায় বলো দেখি?

প্লাবন: পরিবহন বিজনেস?

নাহিয়ান আল রহমান: এইতো বুঝতে পারছো। বাস মালিক সমিতি। যেমন: ময়মনসিংহ থেকে সিলেটে ২০১৫ সালে রেললাইন তৈরী করেছে। এখনো একটা ট্রেন চালু হয় নি। এই দেশে যা কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ আছে, সব কিছুর একটা বেনিফিশিয়ারী পার্টি আছে। আমার কোম্পানির চেয়ে বাংলাদেশের ফকিরদের সিন্ডিকেট বেশি বড়লোক!

অ্যারোনটিক্যাল সেক্টরেও ব্যাপারটা একই। এখানেও কয়েকটা সিন্ডিকেট আছে, ওরাই পুরোটা ধরে রাখছে। আমরা যখন আমাদের রকেট দেখিয়েছি, তখনি ইউএসের কয়েকটা কোম্পানি বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। সব আন্ডার কভার কোম্পানি। বাংলাদেশে ৩০+ টার উপরে স্যাটেলাইট কোম্পানি আছে!

বাংলাদেশে ফুয়েলের দাম অনেক, এখানে লঞ্চ করলে আমার টাকা আসবে না। আমি লঞ্চ করে দিলাম রকেট, তারপরে কি হবে? মানুষ হাততালি দিবে! কিন্তু, আমার তো টাকা দরকার। বিজনেস করা দরকার। বিদ্রোহী রকেটটার মূল উদ্দেশ্য হলো স্পেসে কোনো কোম্পানির প্রোডাক্ট লঞ্চ করে লাইভ স্ট্রিমে মার্কেটিং করা। বাজারে আমাদের কিছু প্রোডাক্টও আসবে সামনে। বিদ্রোহী রকেটের পে–লোড হিসেবে একটা স্পেস বিল বোর্ড যাবে।

প্লাবন: বিল বোর্ডের ওজন কিরকম হতে পারে?

নাহিয়ান আল রহমান: এটা এখনো আরএনডি ফেইজে আছে, আমি নিজেও জানি না ওজন কেমন হবে। তবে ২৫ কেজির বেশি হবে না। এখানে অরিগ্যামী টেকনোলজি ইউজ করা হয়েছে।

জুম্মান: এই প্রশ্নটা যদিও অনেকে মজা করে করে, তাও বলি। বসার রকেট কোথায়? মানে আমরা বসতে পারবো এমন রকেট?

নাহিয়ান আল রহমান: এটা ইম্পসিবল বাংলাদেশে।

২০৪৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কি কি করতে পারবে, কত টাকা ফান্ডিং লাগবে– সব কিছুর ডিটেইলড প্ল্যানিং করে দিয়েছিলাম আগের সরকারকে। ২০৫০ সালের পর হিউম্যান মিশনও ইনক্ল্যুডেড ছিল।

প্লাবন: আপনি বললেন যে রকেট লঞ্চের জন্য আগের সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মীরা ইস্যু সৃষ্টি করেছে, তো সমস্যাটা আসলে কোথায় দেখিয়েছে তারা?

নাহিয়ান আল রহমান: সেইফটি ইস্যু।

প্লাবন: এটা সমাধান করা কি অনেক কঠিন?

নাহিয়ান আল রহমান: আমরা তো করেছি। আমরা সরকারি ফান্ডিং নিয়েই কাজ করেছি। তিন বছরের ফান্ডিং পাওয়ার কথা, কিন্তু এখনো ল্যাবের টাকাই দেয় নি।

জুম্মান: সেইফটি বলতে তারা আসলে কি বোঝাচ্ছে? জনগণের সেফটি নাকি বহির্বিশ্বের সাপেক্ষে আমাদের সেইফটি?

নাহিয়ান আল রহমান: আসলে একটা গল্প আছে না? পানি কেন ঘোলা করলি?

আমি সেফটি ইস্যু নিয়ে প্রায় ৬০ পেইজের কমপ্লায়েন্স পেপার সাবমিট করেছি। তারা একের পর এক বানান ভুল, গ্রামার ভুল ধরেছে। আবার এক মাস পর মিটিং! আবার যাই, বলে এখানে অমুক ডাটা নাই। আমি আবার সাবমিট করি। আবার ভুল ধরে। পরে আমি নাসার সেফটি কমপ্ল্যায়েন্সটা কপি করে নিয়ে গিয়েছিলাম। তারা সেখানেও ভুল ধরেছে।

প্লাবন: বাংলাদেশে যারা অ্যারোনটিক্যাল বা মেকানিক্যাল নিয়ে পড়তে চায়, কিংবা ইইই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে রোবোটিক্সে যেতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার কিছু বলার আছে?

নাহিয়ান আল রহমান: অ্যারোস্পেস আসলে রকেট সাইন্সের একটা অংশ। অ্যারোস্পেস হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং আর রকেট হচ্ছে সায়েন্স। পার্থক্য আছে। আমি প্রফেশনালি ইঞ্জিনিয়ার। আমি রকেট তৈরী করি নি, আমার টিম করেছে। এখানে প্রোগ্রামার আছে, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আছে, ইইই ইঞ্জিনিয়ার আছে, সিভিল আছে, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার আছে, প্রয়োজনীয় প্রতিটা সেক্টরের মানুষ আছে। আমার মতে, বাংলাদেশে অতি আবেগে অ্যারোস্পেস পড়ার দরকার নাই। এখানে তো জব নাইই, তুমি বিদেশে গিয়েও জব করতে পারবা না। তার চেয়ে মেকানিক্যাল পড় বা অন্য সেক্টরে পড়। পরবর্তীতে বিদেশে গিয়ে চেঞ্জ করো।

জুম্মান: আপনার কোনো বিশেষ উক্তি বা কোনো ইন্সপায়ারেশন আছে যা আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান? অথবা যেটা ভবিষ্যত প্রজন্মকে মোটিভেট করবে?

নাহিয়ান আল রহমান: আমার ছোট থেকেই একটা ধারণা আছে। Creativity starts from belief. তুমি যদি বিশ্বাস করো তুমি করতে পারবা, তাহলেই তুমি পারবা। তবে, স্যাক্রিফাইস করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবেই।

প্লাবন গোস্বামী, জুম্মান আল সিয়াম, আমিনুল ইসলাম / সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী

Science Bee Science news

 

আপনার অনুভূতি কী?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
3
+1
0
+1
0
ট্যাগ: Attack–5C–130 হারকিউলিসCreativity starts from beliefDARPADhumketuXDRDOFlying Sword SystemL–39Mig 29 fulcrumMIT ওপেন সোর্স লাইসেন্সঅ্যারোনটিক্যালএকুশেএক্সপোর্ট কন্ট্রোল ইন্ডাস্ট্রিএনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারএভিয়েশন ফ্রিকএয়ারক্রাফটগাইবান্ধাটেসলা রোডস্টারড্রোননাহিয়ান আল রহমানপ্লেনবিদ্রোহী রকেটবিল বোর্ডব্লু বার্ডমেকানিক্যালমেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররকেটরকেট লঞ্চরোবোটিক্সসাউন্ডিং রকেটসেফটি কমপ্ল্যায়েন্সহিউম্যান মিশন
Science News

Science News

footer_logo    

বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম “ডেইলি সায়েন্স” সায়েন্স বী এর একটি অন্যতম অনুষঙ্গ প্রোগ্রাম। এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল সংবাদ, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার আইনত ও নৈতিকভাবে বেআইনি।

   

যা গুরুত্বপূর্ণ


  • যোগাযোগ করুন
  • প্রশ্ন ভাণ্ডার
  • বী ব্লগ
  • অফিসিয়াল পেইজ

আরও…


  • আমাদের সম্পর্কে
  • যুক্ত হোন
  • অফিসিয়াল গ্রুপ
  • আমাদের টীম

প্রধান সম্পাদক


মবিন সিকদার

 

বার্তা সমন্বয়ক


দিদারুল ইসলাম
সাদিয়া বিনতে চৌধুরী

 
 

© Science Bee Bangladesh. 2020 All rights reserved.

Designed & Developed By Mobin Sikder

কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট পাওয়া যায়নি
সবগুলো রেজাল্ট দেখুন
  • ২১ শতক
  • অন্যান্য
  • আত্মউন্নয়ন
  • ইতিহাস
  • গেমস এন্ড সফটওয়্যার
  • টিপস
  • তারুণ্য
  • দেশান্তর
  • ফ্যাক্ট চেক
  • বইয়ের দুনিয়া
  • উদ্যোগ
  • ক্যাম্পাস টাইম
  • টপিকস
  • জীববিজ্ঞান
  • পদার্থবিজ্ঞান
  • রসায়ন
  • পরিবেশ
  • প্রযুক্তি
  • মহাকাশবিজ্ঞান
  • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
  • করোনাভাইরাস

Copyright © 2020 Science Bee.