বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা নেই এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যা পৃথিবীতে অনেক বেশি আলোচিত। এমন কিছু জিনিস আছে যার সমাধান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল বা শয়তানের ত্রিভুজ) এর মধ্যে অন্যতম আলোচিত একটি বিষয়। রহস্যময় আর আশ্চর্যজনক নানা কাহিনী প্রচলিত আছে একে ঘিরে।
এটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি ত্রিভুজাকৃতির বিশেষ স্থান, যেখান থেকে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর অদ্ভুত ভাবে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় নি, এমনকি কোন ধ্বংসাবশেষ বা চিহ্ন পর্যন্ত কেউ খুঁজে পায় নি। এটি এমন এক ধাঁধার নাম, যা সমাধানে যুগের পর যুগ বিজ্ঞানীরা কাজ করে গেছেন ।
এখন আসা যাক, কিভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল হলো?
১৯৪৫ সালের ৫ই ডিসেম্বরে ফ্লোরিডার নেভি ক্যাম্প হতে ১৪ জন এয়ারম্যান প্রতিদিনের মতই রুটিন প্র্যাকটিসে বের হন। দেড়ঘন্টা পর তাদের লিডার চার্লস টেইলর ফ্লোরিডার কন্ট্রোলরুমকে এলার্ট করে বার্তা পাঠান যে, তাদের তিনটি কম্পাস ঠিকভাবে কাজ করছে না এবং তাদের সাথে খারাপ কিছু ঘটছে কারণ, তারা একদমই দিক বুঝতে পারছেন না, সাথে সমুদ্রও অপরিচিত লাগছে। তারপর আর কোন সিগনাল ঐ ফ্লাইট থেকে পাওয়া যায়নি। আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে বারমুডা, ফ্লোরিডা ও পুয়ের্তো রিকোর তিনটি পয়েন্ট যোগ করলে যে ত্রিভুজটি পাওয়া যায়, তার মাঝখানেই চিরতরে হারিয়ে যায় প্লেনটি, যার নাম ছিল ফ্লাইট-১৯। ঐদিন সন্ধ্যার দিকে একটি অনুসন্ধানী প্লেন পাঠানো হয় ফ্লাইট-১৯ কে খুঁজতে, কিন্তু ঐ প্লেনটিও ফ্লোরিডা থেকে রওনা হওয়ার ২৭ মিনিট পর আর কোন সিগনাল পাঠায়নি। ১৩ জন ক্রু–মেম্বারসহ দ্বিতীয় প্লেনটিও চিরতরে গায়েব হয়ে যায়।
এরকম ভয়ংকর ঘটনার কথা সর্বপ্রথম জানিয়েছিলেন কলম্বাস। ১৪৯২ সালে তিনি যখন আমেরিকা মহাদেশের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন সমুদ্রে হঠাৎই আলোর খেলা দেখতে পান এবং জাহাজের কম্পাস উল্টোপাল্টা ঘুরতে থাকে, যা দেখে জাহাজের সবাই খুব ভয় পেয়ে যায়।
লেখক ভিনসন প্যারিস প্রথম আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে বারমুডা, ফ্লোরিডা ও পুয়ের্তো রিকোর তিনটি পয়েন্ট যোগ করলে যে ত্রিভুজটি হয় তাকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নাম দিয়েছিলেন। তিনি এই অদ্ভুত হারিয়ে যাওয়াকে তুলে ধরেছিলেন একটি ম্যাগাজিনে; যেখানে তিনি ফ্লাইট–১৯ এর পাশাপাশি তুলে এনেছিলেন ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে নিখোঁজ হওয়া জাহাজটিকে, যার নাম ছিল ইউএস সাইক্লপস (US Cyclops)। জাহাজটি ৩০৬ জন মানুষ আর ১১ হাজার টন ম্যাঙ্গানিজসহ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, যা এক নতুন বিস্ময় আর রহস্য তৈরি করে।
ঠিক কতগুলো জাহাজ বা প্লেন এই রহস্যময় স্থানে হারিয়ে গেছে তার হিসাব জানা নেই কারো, কিন্তু ধারণা করা হয়, ৫০ টির মতো জাহাজ আর ২০ টি উড়োজাহাজ হারিয়ে গেছে, যাদের খোঁজ তো দূরের কথা, কোন ধ্বংসাবশেষ বা চিহ্নও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি! একদম হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে এসব মানুষ, জাহাজ আর উড়োজাহাজ!
নতুন নতুন থিওরি দাঁড় করিয়েও কোন কূল–কিনারা খুঁজে পায়নি কেউ। বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছেন যেমনঃ কেউ কেউ মনে করেন, এটা এলিয়েনদের কাজ, কেউ বলছেন ওখানকার সমুদ্রে বিশাল ফাটল আছে, আবার কেউ ব্যাখ্যা করেছেন ফোর্থ ডাইমেনশন অর্থাৎ চতুর্থ মাত্রার, তাদের মতে ঐ স্থানে কোন দরজা ব পোর্ট আছে, যে পোর্ট দিয়ে জাহাজ বা উড়োজাহাজগুলো অন্য কোন প্যারালাল ইউনিভার্সে চলে যায়!
আরো রহস্যের জন্ম তখন হয়, যখন এলান অস্টিন ইউএস জাহাজে করে ফেরার পথে এই অঞ্চলে মানুষ বিহীন একটি খালি জাহাজ দেখতে পান, ঠিক সমুদ্রের মাঝখানে একদম মানুষের চিহ্নমাত্র নেই এমন অক্ষত জাহাজ আসলেই অবাক করে দেয় সবাইকে।
রহস্যের সুরাহা এখনো হয়নি, তবে কিছু মতবাদ রয়েছে যা বিজ্ঞানীরা ও গবেষকগণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন, যা আসছে দ্বিতীয় পর্বে!!
জাকিয়া খানম তিশা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
পর্ব ২ পড়ুন এখানেঃ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল: অতিপ্রাকৃত ঘটনা নাকি অন্যকিছু; পর্ব-২