ধরুন আপনি সমুদ্র সৈকতে হাঁটছেন, হঠাৎ দেখলেন একটি চকচকে, নীলাভ-ধূসর রঙের পাথর সমুদ্রের কিনারে ছেয়ে আছে। আপনার কাছে সেটি প্রকৃতির কারুকার্য মনে হলেও, গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলছেন এটি হচ্ছে স্টিল এর গাদ যা মাটিতে মিশে এধরনের পাথর তৈরি করেছে। তারা প্রথম এমন পাথর দেখতে পান যুক্তরাজ্যের কাম্বিয়া প্রদেশের ‘ডারওয়েন্ট হো’ উপকূলে। চমকপ্রদভাবে এমন পাথর তৈরি হয়েছে মাত্র ৩৫ বছরে। তারা এটিকে একটি দ্রুত ‘Anthropoclastic Rock cycle’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন, যা প্রাকৃতিক পাথর গঠন প্রক্রিয়ার অনুরূপ কিন্তু এখানে অংশ নেয় মানবসৃষ্ট কলকারখানার বর্জ্য।

১৯ ও ২০ শতক জুড়ে ডারওয়েন্ট হো তে বিদ্যমান বিভিন্ন লোহা ও স্টিল ঢালাইয়ের কারখানা থেকে এসে জড়ো হয়েছে প্রায় ২৭ মিলিয়ন ঘন মিলিমিটার গাদ। এসব গাদ জমা হয়ে উপকূলবর্তী খাড়া বাঁধ তৈরি করেছে, যা আবার ঢেউয়ের কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আঁকাবাঁকা পাথরের গঠন ধারণ করে।
গবেষক দলটি উপকূলের ১৩টি অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করে। ল্যাব টেস্টে এসব পাথরে তারা ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজের মতো উচ্চ-বিক্রিয়া প্রবণ পদার্থ খুঁজে পায় যা মূলত এই পাথরের দ্রুত গঠিত হওয়ার পেছনে দায়ী। ঢেউয়ের কারণে পাথর ক্ষয়প্রাপ্ত হলে এসব উপাদান সমুদ্রের পানি ও বাতাসে উন্মুক্ত হয় এবং বিক্রিয়া করে প্রাকৃতিক সিমেন্ট- ক্যালসাইট, গোথাইট, ব্রুসাইট তৈরি করে। মূলত এই উপাদানগুলোই প্রাকৃতিক পাললিক শিলার গঠনকে ধরে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু এই নতুন ধরনের শিলায় এই উপাদানগুলো প্রাকৃতিক শিলার তুলনায় দ্রুত তৈরি হয়।

এই ঘটনায় উপকূলের নরম বালি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে দৃঢ় শিলায় যা জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিকতা নষ্ট করতে পারে; সেইসাথে মাছের ডিম ছাড়া ও উপকূলের পাখিদের তাদের ছানাপোনাদের খাওয়ানোর কার্যকলাপেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এছাড়া এটি পানির PH বাড়িয়ে দিতে পারে যা সেখানকার অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের জন্য প্রাণঘাতি হতে পারে। ফলস্বরূপ, উপকূলটিতে কমে যেতে পারে জীববৈচিত্র্য। তবে এই পাথরের একটি ভালো দিক হচ্ছে এর সিমেন্ট উপাদানগুলো তৈরিকারী বিক্রিয়া ঘটার সময় কিছু কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষিত হয়। তাই, গবেষকরা একে সাশ্রয়ী কার্বন সিঙ্ক হিসেবে ব্যবহারের কথা ভাবছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করা গেলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে।
+1
+1
+1
+1
+1
+1
+1