২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯২৮/পৃথিবীর সকল মানুষের চোখের আড়ালে আকষ্মিকভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল এক যুগান্তকারী, দিগ্ববিজয়ি আবিষ্কার।গল্পটা একজন চিকিৎসকের। তিনি চিকিৎসাবিদ্যার পাশাপাশি ছিলেন একজন জিনতত্ববিদ। স্কটিশ এই চিকিৎসাবিদ কে আমরা চিনি আলেকজান্ডার ফ্লেমিং নামে।একবার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং লন্ডনের একটা ল্যাবরেটরিতে গবেষনা করছিলেন স্টেফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) নামক একটি ব্যাক্টেরিয়ার গ্রুপ নিয়ে।
বলা বাহুল্য স্টেফাইলোকক্কাস ছিল মানুষ শারীরতত্ত্বের এক আতঙ্কের নাম। ফুড পয়জনিং, নিউমোনিয়া, হাড়ে ব্যাথা, টক্সিক শক এমনকি চামড়ার পচন পর্যন্ত ধরে যেতে পারে এ ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমনে!
এই ব্যাকটেরিয়া অধিকাংশ সময়ই হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত হয়। এদের কোষ প্রাচীরে রয়েছে একপ্রকার “Cell Adhesion Molecules” বা “কোষ আসক্ত অণু” যা এদেরকে সহজেই যেকোনো তলে আটকে যেতে সহায়তা করে। বিশেষ করে বিভিন্ন মেডিক্যাল যন্ত্রাংশে স্টেফাইলোকক্কাস দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে এবং ফিনাইল বা অন্যান্য রাসায়নিক দিয়ে পরিষ্কার করলেও অনেক সময় থেকে যায়।
এই স্টেফাইলোকক্কাস নিয়ে গবেষণার কাজ চলাকালে ফ্লেমিং দু’সপ্তাহের গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে চলে যান স্কটল্যান্ডে। যাবার সময় তিনি স্টেফাইলোকক্কাসটি রেখে যান একটি কাঁচের পাত্রে এবং ভুল করে সেই ল্যাবরেটরির জানালা খুলে রেখে চলে যান। যখন তিনি ছুটি কাটিয়ে ল্যাবে ফিরে আসেন তখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের সবচেয়ে উপকারি দূর্ঘটনাটি তার চোখে পড়ে!
ফ্লেমিং দেখতে পান, স্টেফাইলোকক্কাসটি সম্ভবত জানালা দিয়ে আসা একধরণের ছত্রাকের উপস্থিতিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ছত্রাকের আশেপাশে কোথাও কোন স্টেপাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারেনি। ফ্লেমিং তখন ঐ ছত্রাকের প্রজাতি চিহ্নিত করতে ও তার জীবাণুনাশক বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করতে আগ্রহী হন। সেই ছত্রাকটি ছিল পেনিসিলিয়াম। ফলে ফ্লেমিং পেনিসিলিয়াম দ্বারা নিসৃত ঐ পদার্থের নাম দেন পেনিসিলিন।
পেনিসিলিনকে মানবদেহে ব্যবহারের উপযোগী অবস্থানে নিয়ে আসেন দু’জন বিজ্ঞানী- হাওয়ার্ড ওয়াল্টার ফ্লোরি ও আর্নস্ট বোরিস চেইন। ১৯৩৮ সালে তারা পেনিসিলিন নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা শুরু করেন। ১৯৪০ সালে, প্রথমে তারা কিছু জীব জন্তুর উপর পরীক্ষা করে আশাতীত ভালো ফল পেলেন। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মানুষের উপর পরীক্ষা। আকস্মিকভাবে সে সুযোগও এসে গেল।
একজন পুলিশ কর্মচারী মুখে সামান্য আঘাত পেয়েছিলেন। তাতে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল তা দূষিত হয়ে জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। ডাক্তাররা তার জীবনের সব আশা ত্যাগ করেছিল। ১৯৪১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী প্রফেসর ফ্লোরি স্থির করলেন এই মুত্যু পথযাত্রী মানুষটির উপরই পরীক্ষা করবেন পেনিসিলিন। তাকে তিন ঘন্টা অন্তর চার বার পেনিসিলিন দেয়া হল। ২৪ ঘন্টা পর দেখা গেল যার আরোগ্য লাভের কোন আশাই ছিল না, সে প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছে। এই ঘটনায় সকলেই উপলব্ধি করতে পারলো চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কী যুগান্তকারী প্রভাব বিস্তার করতে চলেছে পেনিসিলিন। ডা: চেইন বিশেষ পদ্ধতিতে পেনিসিলনকে পাউডারে পরিণত করলেন এবং ডাঃ ফ্লোরি তা বিভিন্ন রোগীর উপর প্রয়োগ করলেন। এরপর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত রোগীদের সুস্থ করার জন্য এ পেনিসিলিন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
মানব কল্যাণে নিজের এ আবিষ্কারের ব্যাপক প্রয়োগ দেখে আনন্দে অভিভূত হয়ে উঠেছিলেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। ১৯৪৫ সালে মানবকল্যাণে পেনিসিলিন আবিষ্কার এবং এর স্বার্থক প্রয়োগের জন্য আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, হাওয়ার্ড ওয়াল্টার ফ্লোরি ও আর্নস্ট বোরিস চেইনের সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন।
নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর ফ্লেমিং কৌতুক করে বলেছিলেন, “এ পুরষ্কারটি ঈশ্বরের পাওয়া উচিত, কারণ তিনিই সবকিছুর আকস্মিক যোগাযোগ ঘটিয়েছেন।”
শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দাও এ গুরুত্বপূর্ন ও মজার তথ্যটি। Join the largest growing science community –Science Bee Family