অনলাইন ক্লাস বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় তুমুল আলোচিত টপিক। অনেকেই আছেন এর পক্ষে, অনেকে বলছেন বিপক্ষে। অনেকে তুলে ধরছেন ভালো দিক গুলো, আবার অনেকে ডিভাইস, নেটওয়ার্ক সহ শত রকমের ইস্যু সামনে নিয়ে আসছেন। সমস্যা আছে অনেক, কিন্তু সমাধান কি নেই? অবশ্যই আছে!
আর বাংলাদেশে এই সিস্টেমে হার্ভার্ডের মত আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।
ই-লার্নিং বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়। প্রথমত, ধরাবাঁধা শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে, তার সাথে মহামারির সমস্যা- সব মিলিয়ে ই-লার্নিং এখন বেশ জনপ্রিয়। এতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রীও বেশ কম- কম্পিউটার বা স্মার্টফোন, সাথে দরকার ইন্টারনেট সংযোগ। ব্যাস! যে কোনো বিষয়ে আপনার দক্ষতা অর্জনে ইচ্ছা ছাড়া আর কোনো বাধাই থাকলো না!
প্রশ্ন হলো ই-লার্নিং কি?- প্রথাগত বা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি ক্লাস করা কিংবা কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার পদ্ধতিই হলো ইলেকট্রনিক লার্নিং বা ই-লার্নিং। এলিয়ট মাইসি (Elliott Masie) ১৯৯৯ সালে “eLearning” শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেছিলেন।
গতানুগতিক ক্লাসের ব্যাপার না থাকায় নিজের সুবিধামত সময়ে ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে শেখার কাজটি সহজেই এখন সু-সম্পন্ন করা যায়। বলা চলে আমাদের সনাতন বা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে একেবারেই আলাদা এই ই-শিক্ষা ব্যবস্থা।
লিন্ডা, কোর্সেরা, ইউডেমির মত ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মকে অনুসরণ করে বাংলাদেশের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এই বছরের জুন মাসে তাদের নতুন ই-লার্নিং প্লাটফর্ম উন্মুক্ত করে, যার নাম হলো বিইউএক্স (BuX)।
বিইউএক্সের মাধ্যমে দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগেও শিক্ষার্থীরা যে কোনো স্থান থেকে সহজে ক্লাসে অংশ নিতে পারবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং বলেন, “স্প্রিং-২০২০ সেমিস্টারে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হই এবং তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই আমরা বিইউএক্স (BuX) প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করি।” তিনি আরও জানান, বিইউএক্স এর অনলাইন শিখন পদ্ধতি জুমের মত ভিডিও কনফারেন্সিং টুলস ব্যবহার থেকে ভিন্ন ধাঁচের। শিক্ষা পদ্ধতির এই রূপান্তর কোর্স আধুনিকায়নের সুযোগ করে দেবে এবং তা আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বিইউএক্স প্লাটফর্মটিতে নির্দিষ্ট কোর্সসমূহের প্রয়োজনীয় লেকচার এবং ডকুমেন্টস রয়েছে। পাশাপাশি এসাইনমেন্ট এবং আলোচনা করার সুযোগও প্লাটফর্মটি প্রদান করছে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ‘কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের একজন শিক্ষার্থী জানান, “এই মহামারির দুঃসময়ে আমাদের পড়ালেখা বিঘ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও, ভার্সিটির BuX প্লাটফর্মটি আমাদের যথেষ্ট কাজে এসেছে। প্লাটফর্মটি ব্যবহার করে নিজের সুযোগ মতো যেকোনো সময়ই আমরা আমাদের ক্লাস গুলো করে নিতে পারি”।
পাশাপাশি তিনি স্বীকার করেন অফলাইনে সামনাসামনি ক্লাসের যে অভিজ্ঞতা, তা অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে কিছুটা হলেও অনুপস্থিত। “ল্যাপটপের সামনে সারাদিন বসে থাকার কারণে মাথা ব্যথা তো আছেই”, তিনি যুক্ত করেন।
ই-লার্নিং যেহেতু পুরোটাই প্রযুক্তিনির্ভর, সে কারণে বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশের সামগ্রিক তথ্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর দিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া আবশ্যক। পাশাপাশি দেশের সর্বত্র ভাল ব্যান্ডউইথ, সহজলভ্য ও কমমূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা গেলে বাংলাদেশে ই-লার্নিং নতুন এক সংস্কৃতি ও চর্চার জায়গায় উপনীত হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ই-লার্নিং দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী রূপান্তর ঘটাতে পারবে আশা করা যায়।
তথ্যসূত্র: ডেইলি স্টার, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
This news is written by all 10 members of Science Bee NewsRoom-2
+1
5
+1
3
+1
5
+1
3
+1
7
+1
1
+1
2