বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বহুল চর্চিত রোগগুলোর একটি Alzheimer’s, যা এক ধরনের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিবিভ্রম রোগ। একটি ক্রমবর্ধমান নিউরোলজিক্যাল কন্ডিশন যা মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে এবং ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে। এখন পর্যন্ত Alzheimer’s হওয়ার পেছনে সুস্পষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সারাবিশ্বে প্রায় ৩২ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত এই অসুখে।
Alzheimer’s নিয়ে এখন পর্যন্ত গবেষণায় যতটুকু জানা সম্ভব হয়েছে, এটি মূলত জিনগত। বিশেষভাবে আরো কিছু জেনেটিক ভ্যারিয়ান্ট এর পেছনে ক্রিয়া করে (নির্দিষ্ট জিনের ডিএনএ তে মিউটেশনের ফলে নতুন সৃষ্ট ফাংশনাল ভ্যারিয়েন্ট)।
বর্তমানে Alzheimer’s সংশ্লিষ্ট গবেষণায় জেনেটিক ভ্যারিয়েন্টই সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়। আমাদের দেহের প্রত্যেকটি ক্রিয়া, বৈশিষ্ট্যের পেছনে অসংখ্য নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট জিন কাজ করে থাকে। পূর্ববর্তী কিছু গবেষণায় দেহের APOE gene ও myeloid cells 2(TREM2) নামের জিনের ভ্যারিয়েন্ট গুলোর সম্পৃক্ততার ধারণা পাওয়া গিয়েছিল।
২০২৪ এর মার্চের নতুন এক গবেষণা অনুযায়ী ৫টা ভিন্ন ভিন্ন জিনোমিক অঞ্চলে মোট ১৭ টি এরূপ জেনেটিক ভ্যারিয়েন্ট Alzheimer’s এর সাথে সম্পৃক্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এর সূত্র ধরেই সম্প্রতি Columbia University Vagelos College of Physicians and Surgeons এর গবেষণায় নতুন আরেকটি জেনেটিক ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যা Alzheimer’s প্রতিরোধে কাজ করে। Alzheimer’s আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এরূপ ৭১% পর্যন্ত মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করছে এটি।
আর বিশেষ এই জিনের ভ্যারিয়েন্টটি শরীরে ফাইব্রিনেকটিন নামের একটি প্রোটিন এক্সপ্রেশনে কাজ করে। এই ফাইব্রিনেকটিন পাওয়া যায় আমাদের Blood-brain barrier এ যেখানে এটি দেহ থেকে মস্তিষ্কে কী কী উপাদান যাবে বা আসবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
পূর্বের গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী Alzheimer’s আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ফাইব্রিনেকটিন এর পরিমাণ স্বাভাবিক ব্যক্তির তুলনায় বেশি থাকে। এখন গবেষকদের বিশ্বাস, এই ফাইব্রিনেকটিন প্রোটিন তৈরির জিনে মিউটেশন ঘটে Blood-brain barrier এ অতিরিক্ত ফাইব্রিনেকটিন তৈরি হওয়া রোধ করে, যা আমাদের Alzheimer’s থেকে রক্ষা করতে পারে।
গবেষণাটির সহকারী পরিচালক Richard Mayeux এর মতে,
“এই মিউট্যান্ট জিনটির ফাংশন কে কাজে লাগিয়ে হয়তো ফাইব্রিনেকটিন কে টার্গেট করে একটি থেরাপি উৎপাদন করার মাধ্যমে Alzheimer’s বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা দাড় করানো সম্ভব।”
পূর্ববর্তী গবেষণায় পাওয়া APOE gene এর Alzheimer’s সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়েছে। বর্তমান গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী উক্ত জিনের উপস্থিতি রয়েছে এমন ব্যক্তির শরীরেও পাওয়া গিয়েছে উপরে আলোচিত ফাইব্রিনেকটিন প্রোটিনের মিউট্যান্ট জিনের অস্তিত্ব।
এই গবেষণার সাথে Stanford ও Washington ইউনিভার্সিটির যৌথ গবেষণার ফলাফল একীভূত করে তারা সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এই মিউট্যান্ট জিনের প্রভাবে Alzheimer’s এর জন্যে দায়ী APOE gene বহন করে এমন ৭১% এরই আক্রান্তের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
Kaghan Kizil, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। তিনি তুলে ধরেন,
“Alzheimer’s এর শুরুটা হতে পারে মস্তিষ্কে Amyloid এর জমা হওয়ার মাধ্যমে (এটি একধরনের ন্যাচারাল প্রোটিন, যা Alzheimer’s আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিস্কে ভেঙে Beta-amyloid 42 নামের বিষাক্ত সংস্করণে পরিবর্তন হয়ে মস্তিষ্কে জমাটবদ্ধ হয়ে কোষের স্বাভাবিক ফাংশন কে নষ্ট করে)।
যার পর থেকেই মূলত Alzheimer’s এর সূত্রপাত ঘটা শুরু হয়। হয়তো এই গবেষণার ফলাফল থেকে আমরা এই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী একটি প্রতিষেধক তৈরি করতে পারবো।”
সর্বোপরি গবেষক দলের মতামত, মস্তিষ্কে ফাইব্রিনেকটিন এর পরিমাণ কমাতে পারে এমন যে কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ থেকে কোনো ঔষধ তৈরি করা হবে চমৎকার একটি সাফল্য। কারণ এখন পর্যন্ত এই রোগের বিরুদ্ধে চিকিৎসা শাস্ত্রে তেমন কার্যকরী কোনো ঔষধ তৈরি সম্ভব হয়নি।
ভবিষ্যতে এই ফলাফলের ভিত্তিতে আলোচ্য গুরুত্বপূর্ণ এই ফাইব্রিনেকটিন জিনের ভ্যারিয়েন্ট বহনকারী ব্যক্তিদের উপর আরো ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে Alzheimer’s প্রতিরোধ এর উপর আরো সাফল্যের আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।
সাদ ইবনে ওমর / নিজস্ব প্রতিবেদক
সোর্স: সায়েন্স ডেইলি, স্প্রিংয়ার লিংক