নতুন এক বৈপ্লবিক চিকিৎসা প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে একদল গবেষক এমন এক পদ্ধতির সফল প্রয়োগ করেছেন, যার মাধ্যমে একটি শিশুর শরীরে এসেছে তিনজন মানুষের ডিএনএ। বাবা ও মায়ের পাশাপাশি আরও একজন নারীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে জিনগত উপাদান এবং এর ফলেই জন্ম নিয়েছে আটটি পুরোপুরি সুস্থ শিশু।

এই পদ্ধতির নাম মাইটোকন্ড্রিয়াল ডোনেশন থেরাপি, যা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (IVF) বিশেষ একটি সংস্করণ। মূলত এই পদ্ধতির লক্ষ্য ছিল এমন মায়েদের জন্য, যাদের শরীরে এমন জিনগত সমস্যা আছে যা সন্তানের দেহে গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ, যা শিশুর পেশি, হৃদযন্ত্র বা মস্তিষ্কে জটিলতা তৈরি করতে পারে, এমনকি অনেক সময় কম বয়সেই মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে থাকে মাইটোকন্ড্রিয়া, যা এক ধরনের ক্ষুদ্র শক্তিকেন্দ্র। এই মাইটোকন্ড্রিয়া শুধু মায়ের দিক থেকেই সন্তানের শরীরে আসে। আর যদি মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়ায় সমস্যা থাকে, তাহলে সেটা সন্তানের মধ্যেও পৌঁছে যেতে পারে। যেহেতু এই রোগের চিকিৎসা এখনও নিশ্চিতভাবে নেই, তাই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেছেন; কীভাবে এমন সন্তান জন্ম দেওয়া যায়, যার শরীরে মায়ের এই ক্ষতিকর জিন না পৌঁছায়

এই সমাধান থেকেই এসেছে তিনজনের ডিএনএ ব্যবহার করার ভাবনা। পদ্ধতিটা খুব জটিল না, মায়ের ডিম্বাণু থেকে মূল ডিএনএ বের করে নেওয়া হয়, আর তা রাখা হয় এক সুস্থ ডোনার নারীর ডিম্বাণুতে, যার মাইটোকন্ড্রিয়া ঠিকঠাক কাজ করে। তারপর এতে বাবার শুক্রাণু যোগ করে তৈরি করা হয় ভ্রূণ। ফলে, শিশু পায় মা ও বাবার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য, সঙ্গে ডোনার নারীর সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া। তবে একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার, এই শিশুরা ‘তিন অভিভাবকের সন্তান’ নয়। ডোনার নারীর ডিএনএ থাকলেও সেটা খুবই অল্প। তার কোনো সামাজিক বা আইনগত অভিভাবকত্বও থাকে না। এই পদ্ধতিতে যুক্তরাজ্যে ২২ জন নারীর ওপর গবেষণা করা হয়। তাদের মধ্যে সাতজন গর্ভধারণে সফল হন এবং জন্ম দেন আটটি শিশুকে। গবেষকদের মতে, এই শিশুদের মধ্যে মায়ের ক্ষতিকর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএর উপস্থিতি প্রায় পুরোপুরি কমে গেছে। একজন শিশুর হৃদযন্ত্রে কিছু জটিলতা দেখা গেলেও চিকিৎসায় তা স্বাভাবিক হয়েছে।এই সাফল্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য এক বড় অগ্রগতি। তবে এটি কতটা নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদি ফলপ্রসূ হবে, সেজন্য যথাযথ গবেষণা ও আবেগঘন নৈতিক পর্যালোচনা একান্ত প্রয়োজন।
মিসবাহুল ইসলাম সায়াদ
তথ্যসূত্রঃ- দা গার্ডিয়েন, বিবিসি নিউজ
+1
+1
+1
+1
+1
+1
+1