চীনে নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গত শনি ও রবিবারে তিন গুন বেড়ে গেছে। ভাইরাসটি এখন উহান থেকে অন্যান্য বড় বড় শহরেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এক কোটিরও বেশি মানুষের শহর উহানে নতুন করে ১৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছে।
রাজধানী বেইজিং-এ আক্রান্ত হয়েছে আরো দুজন এবং শেনঝেনে এখনও পর্যন্ত একজন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাস এ আক্রান্ত প্রায় ৪১ জন এখন পর্যন্ত মারা গেছে ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৩০০ ছাড়িয়েছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সরকারি হিসেবের চাইতেও অনেক বেশি। তাদের ধারণা প্রায় ১,৭০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
কখন থেকে শুরু:
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা গত ডিসেম্বর মাসে উহানে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করেছিলেন। তারা বলছেন, এটি করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতি। এই ভাইরাসের ফলে লোকজন নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়েছে। তবে ভাইরাসের এই ধরনটি সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায় নি।
প্রথমে ধারণা করা হয় যে একটি মাছের বাজার থেকে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে কিন্তু এটি ঠিক কিভাবে ছড়িয়ে পড়ছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা এখনও সেটা নিশ্চিত করতে পারেন নি। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, পশু থেকেই এই ভাইরাসের উৎপত্তি। সম্ভবত তারাই এর প্রাথমিক উৎস। কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষ থেকেও মানুষে ছড়াতে পারে।
চীনের বাইরে আরো তিনটি দেশেও এই ভাইরাসটি পাওয়া গেছে। দেশগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং জাপান। নতুন এই ভাইরাসের প্রকোপ সার্স ভাইরাসের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সার্স ভাইরাসও এক ধরনের করোনাভাইরাস। ২০০০ সহস্রাব্দের শুরুর দিকে সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৭৪ জন নিহত হয়েছিলো। মূলত এশিয়ারই বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল।
নতুন ভাইরাসটির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এর সাথে সার্স ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এটি করোনাভাইরাসের একটি নতুন প্রজাতি।করোনাভাইরাস একটি সাধারন ফ্লু ভাইরাস এর পরিবারেরই অংশ।
কিন্তু এর এই মিউটেশনটি এর আগে কখনোই দেখা যায়নি। এই ভাইরাসটি অনেকটা SARS ভাইরাসের মতোই আক্রান্ত করে, এছাড়াও এটি শ্বসনতন্ত্রের মারাত্মক ইনফেকশনের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর লক্ষন গুলো শুরু হয় জ্বর, সাথে শুকনো কাশি দিয়ে। প্রায় ১ সপ্তাহের মাঝেই এটা শ্বাসকষ্টে রুপান্তরিত হয় আর এর কারনে অনেক রোগীকেই হাসপাতালে নিতে হয়। করোনাভাইরাসের মধ্যে রয়েছে অনেক ধরনের ভাইরাস। এসবের মধ্যে ৬টি সম্পর্কে জানা গেছে যা মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে। এই প্রজাতিটি নিশ্চিত করা হলে এখনও পর্যন্ত জানা করোনাভাইরাসের সংখ্যা হবে ৭।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে যা যা করণীয় :
১. ঘরে বাহিরে মাস্ক ব্যবহার করুন।
২. গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৩. প্রচুর ফলের রস ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
৪. ঘরে ফিরে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
৫. কিছু খাওয়া বা রান্না করার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
৬. ডিম বা মাংস রান্নার সময় ভালো করে সেদ্ধ করুন।
৭. ময়লা কাপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলুন।
৮. নিয়মিত থাকার ঘর ও কাজের জায়গা পরিষ্কার করুন।
৯. অপ্রয়োজনে ঘরের দরজা জানালা খুলে রাখবেন না।
১০. হাঁচি কাশির সময় টিস্যু ব্যবহার করুন ও এরপর ডাস্টবিনে ফেলে দিন।
১১. অযথা হাত দিয়ে নাক বা মুখ ঘষা থেকে বিরত থাকুন।
এছাড়াও যেহেতু এখনো জানা যায়নি রোগটি ছোঁয়াচে কিনা, তাই লোকজনকে জীবন্ত পশুর অনিরাপদ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সর্দি কাশিতে ভুগছে এমন লোকজনের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে না যাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে চীনে প্রায় ১৩০০ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু এটা অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
রবিবার, অস্ট্রেলিয়াতে এ রোগে আক্রান্ত প্রথম ৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এটা এর মাঝেই ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ফ্রান্সে ও যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছে।চীনের প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল সবগুলো দেশেই এই রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। এমনকি আমেরিকাতেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছে।
বাংলাদেশে সর্তকতা:
ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআর বলছে, তারা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে, কারণ চীন থেকে আসা সব বিমান এই বিমানবন্দর দিয়েই ওঠানামা করে। এছাড়া অন্যান্য বন্দরেও চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসে কারো আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করে আইইডিসিআর-এর পরিচালক ডাঃ সেবরিনা বলেন, স্বাস্থ্য-কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বিমান বন্দরে স্থাপিত হেলথ ডেস্কে এসব কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। যেসব ফ্লাইট চীন থেকে আসছে সেসব ফ্লাইটের যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “যারা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা- জ্বর,কাশি,গলাবাথ্যা এসব নিয়ে আসছেন তাদের চেক করা হচ্ছে”। বাংলাদেশে এখনো আক্রান্ত রোগী না পাওয়া গেলেও বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মনিটরিং করা হচ্ছে।