বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন একটি হেলমেট উদ্ভাবন করেছেন, যা চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগ করে ব্রেইন টিউমার এর উপর কাজ করবে।
ক্যান্সার মানেই ভয়ংকর ও বিশ্রী রোগ। এই কুৎসিত ক্যান্সার যদি মস্তিষ্কে শেকড় গড়ে, তবে তা জীবনকে নিয়ে যাবে চরম সংকটে। ক্যান্সারের এরকমই একটি রূপ গ্লিওব্লাস্টোমা। গ্লিওব্লাস্টোমা হলো একরকম টিউমার যা, মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের স্টেম সেলে আগ্রাসীভাবে বেড়ে ওঠে। সাধারণভাবে এটি নিরাময়যোগ্য নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর ফলাফল অত্যন্ত মারাত্মক। গ্লিওব্লাস্টোমা চিকিৎসায় প্রয়োজন ইনটেনসিভ রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সেবাগুলো নিশ্চিত করা রোগী ও তার পরিবারের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে এবার হয়তো বিজ্ঞানীরা ব্রেইন টিউমার নিরাময়ের একটি সহজলভ্য পদ্ধতি পেয়েছেন। ৫৩ বছর বয়সী একজন গ্লিওব্লাস্টোমা রোগীর উপর বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত হেলমেটটির পরীক্ষা চালানো হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রোগীর মস্তিষ্কের টিউমারটি আকৃতিতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছোট করা সম্ভব হয় এর মাধ্যমে।
প্রথমবারের মতো চৌম্বকীয় হেলমেট ব্যবহার
Science Alert এর রিপোর্ট অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি ২০১৮ সালের মে মাসে তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কিত ব্যাপারে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানেই ধরা পড়ে তার মস্তিষ্কে বিশাল টিউমার রয়েছে। ততদিনে টিউমারটি মস্তিষ্কের পুরো ফ্রন্টাল লোব জুড়ে ছড়িয়ে কর্পাস ক্যালোসামে পৌছে গিয়েছে। সে বছরই তিনি তার মস্তিষ্কে থাকা গ্লিওব্লাস্টোমা টিউমার অপসারণের জন্য অপারেশন করাতে চান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত টিউমারটি তখন পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আবারও তার মাথায় টিউমার দেখা দেয় এবং চিকিৎসা চালানো সত্ত্বেও এটি বড় হতে থাকে।
যখন দেখা গেল সচরাচর চিকিৎসা পদ্ধতিতে টিউমার নির্মূলের কোন সম্ভবনা নেই, তখন চিকিৎসকেরা তাকে চৌম্বকীয় হেলমেট ট্রায়ালের জন্য নির্বাচিত করেন।
গত বছরের এপ্রিলে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরের পর রোগীকে হেলমেটের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়। প্রথম তিনদিন রোগীকে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ সময় তার স্ত্রীকে হেলমেটের যথাযথ ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় যত্নাদির ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তিনদিন পর থেকে তিনি বাড়িতে চিকিৎসা নিতে থাকেন।
চিকিৎসা পদ্ধতি
হেলমেটটি তিনটি শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বকের সাথে আটকানো থাকে। এই চৌম্বকগুলো একটি অস্পষ্ট চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করে। বিজ্ঞানীরা দেখতে পান এই চৌম্বকক্ষেত্রটি ক্রমাগত চলমান বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন পরিবহন কমিয়ে আনতে সক্ষম। ফলে মাইটোকন্ড্রিয়া রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে অসুস্থ কোষগুলোতে শক্তি সরবরাহ করতে পারে না, এতে কোষের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
ফলাফল
বাড়ি যাবার পর রোগীটিকে মোট ৩৬ দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ে গ্লিওব্লাস্টোমা ৩১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। রোগীর দেখভালকারীরা জানিয়েছেন এ সময়ে রোগীর কথা বলা ও জ্ঞানভিত্তিক অন্যান্য কাজেও উন্নতি ঘটে। কিন্তু অত্যন্ত দুখঃজনক ব্যাপার ৩৬ দিন পরই তার চিকিৎসা বন্ধ করতে হয়। কারণ তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান এবং মারা যান।
রোগীর আকস্মিক দুর্ঘটনার মৃত্যু সত্যিই বেদনার। পরীক্ষা সম্পন্ন করা গেলে হেলমেটের কার্যকারিতা ও বিপদ সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যেত। তবে মাত্র একজন রোগীর উপর চালানো ব্রেইন টিউমার এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের এই পরীক্ষা ইতোমধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে। অন্যান্য রোগীর উপরও যদি হেলমেটটির কার্যকারিতা পাওয়া যায়, তবে তা ক্যান্সার নির্মূলে একটি সহজ চিকিৎসাতে পরিণত হবে। কেমোথেরাপি বা রেডিও থেরাপি ছাড়াই ব্রেইন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই অভাবনীয় সাফল্য!
নিজস্ব প্রতিবেদক/ মো. মাসরুল আহসান
তথ্যসূত্রঃ দ্য সায়েন্স টাইমস, সায়েন্স এলার্ট