একটি বাড়ি যা জমিনে থাকবে আবার পানিতেও ভাসবে, অন্যদিকে হিট ওয়েভের সময় শীতল ও থাকবে। না, এটি রূপকথা বা কল্পবিজ্ঞানের কোনো বাড়ি নয়; এটি বাংলাদেশে একটি বাড়ি।
তবে এই ধরনের বাড়ি বাংলাদেশে নতুন নয়। এর ইতিহাস আমাদের নিয়ে চলে সূদুর ১৭ শতকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘তাহখানা’ কমপ্লেক্সে, যার বাংলা অর্থ ‘তাপ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট’। বিদ্যুতবিহীন সেকালে মুঘল স্থাপত্যবীদরা এই কমপ্লেক্স তৈরি করেছিলেন যাতে ছিলো গাছ, বড় জলাশয়, উঠান, বাগান এবং দেয়াল ও জানালার সঠিক অবস্থান যা পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নিশ্চিত করত। কিন্ত দেশের আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় এই ধরনের বাড়ি হারিয়ে গিয়েছে।
উভচর বাড়িটির কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। প্রথমত, এটি পোড়ামাটি বা কংক্রিটের পরিবর্তে মাটির ব্লক দিয়ে তৈরি। এই ব্লকগুলো মানবদেহের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মতোই বাড়ির মধ্যে বাতাস চলাচল বজায় রাখে ফলে বছরজুড়ে বাড়িতে একটি ধ্রুব তাপমাত্রা (২৬ ডিগ্রী সে.) বজায় থাকে। এছাড়া এই ব্লকগুলো বাড়িটিকে পরিবেশবান্ধবও করে তুলেছে। কাদামাটিকে বালি ও চুনের সাথে চাপ প্রয়োগ করে এই ব্লক তৈরি হয় বলে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণকারী বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় যা একইসাথে ব্লকগুলোকে মজবুত করে তোলে। এই ব্লকগুলো ভাটিতে পোড়ানোরও দরকার পড়েনা, যার ফলে প্রতিবছর দেশের ইটভাটাগুলো থেকে তৈরি হওয়া কয়েক মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ অনেকাংশে কমবে।
দ্বিতীয়ত, বাড়িটি দুর্যোগ সহনশীল। কারণ, বাড়িটির ভিতে রয়েছে একটি স্টিল ফ্রেম এবং চারকোণায় চারটি কলাম। বন্যার পানি আসলে তা ফ্রেমের নিচে থাকা একটি গর্তে জমা হয়ে বাড়িটিকে উপরের দিকে তুলে ভাসিয়ে রাখে অনেকটা খেয়া নৌকার মতো। আর কলামগুলো ভেসে থাকাকালীন বাড়ির পার্শ্বগতি রোধ করে।
