বর্ণান্ধতা তথা কালার ব্লাইন্ডনেস হচ্ছে চোখের দৃষ্টিশক্তির এমন একটি অবস্থা যখন আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক আলোতে বিশেষকিছু রঙের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পান না। নীল, সবুজ, হলুদ বা লাল রং আলাদা করে চেনা কিংবা এইসব রঙের সংমিশ্রণ রয়েছে এমন রং দেখে বুঝতে পারা তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। মূল রংটি আসলে কি সেটি বুঝতেই তাঁদের হিমশিম খেতে হয় আবার মজার ব্যাপারটা হচ্ছে, অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা ভুল রং দেখছেন! মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় এইসব মানুষই কালার ব্লাইন্ড। এই ব্যাপারটির অন্য একটি নামও আছে আর তা হলো “কালার ভিশন ডেফিসিয়েন্সি” (CVD)।
কালার ব্লাইন্ড হওয়ার পেছনে জেনেটিক আর বংশগত- উভয় কারণই রয়েছে। সাধারণত নারীদের থেকে পুরুষদের কালার ব্লাইন্ড হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আর পুরো ব্যাপারটাই সেক্স লিঙ্কড জিনের ইনহেরিটেন্সের কারণে হয়ে থাকে।
একজন বর্ণান্ধ ব্যক্তির চোখের কোণ কোষ একজন সাধারণ ব্যক্তির চোখের কোণ কোষের তুলনায় আলোর প্রতি ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। জেনেটিক প্রতিস্থাপনের ফলে বর্ণান্ধ ব্যক্তিদের কোষের রাসায়নিক কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন সাধিত হয় যার ফলে চোখের কোণ কোষে আলোর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অধিক্রমন ঘটে, যা ঐ ব্যক্তির কয়েকটি রঙের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা হ্রাস করে ফেলে।
কালার ব্লাইন্ড মানুষজন যাতে রঙের দেখা পায় সেই জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এনক্রোমা নামক একটি প্রতিষ্ঠান কালার ব্লাইন্ডদের জন্য তৈরি করে ফেলেছে এনক্রোমা গ্লাস। এনক্রোমা অপটিক্যাল লেন্স প্রযুক্তি নির্দিষ্ট স্থানে নির্বাচিতভাবে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে ফিল্টার করে ফলে আলোর অধিক্রমন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং M-কোণ কোষ ও L-কোণ কোষ আলোর প্রতি পৃথক পৃথক ভাবে সাড়া দেয়। যা লাল ও সবুজ রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে এবং একজন বর্ণান্ধ ব্যক্তিকেও রঙিন দুনিয়া দেখতে সাহায্য করে।
ফ্রান্সের আইএনএসআরএম স্টেম সেল এবং ব্রেন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি নতুন ইউসি ডেভিস আই সেন্টার সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ফিল্টারযুক্ত এই বিশেষ চশমাগুলি লাল-সবুজ বর্ণান্ধ ব্যক্তির চোখের ফটোরিসেপ্টরগুলিকে বিভিন্ন রং আরও স্পষ্ট এবং প্রাণবন্তভাবে বেছে নিতে সহায়তা করে।
আর জেনে রাখা ভালো যে ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দা ডার্ক নাইট, ইন্টারস্টেলার, ইন্সেপশন কিংবা দা প্রেস্টিজ- সহ দুনিয়া কাঁপানো এই সব হলিউড মুভির পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান এবং ডিউক অফ ক্যামব্রিজ প্রিন্স উইলিয়ামও কিন্তু বর্ণান্ধ।
সাধারণ দৃষ্টি শক্তির অধিকারী না হয়েও এই মানুষগুলো আমাদের অসাধারণ সব সৃষ্টি উপহার দিয়েছেন। তাঁদের এইসব অনবদ্য সৃষ্টি আমাদেরকে নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছে।
তাহমিদ শিহাব/ নিজস্ব প্রতিবেদক