আমরা জানি, পৃথিবীর হলো একমাত্র গ্রহ যেখানে জীবের অস্তিত্ব রয়েছে। আমরা আজ যে বন, পাহাড়-পর্বত এবং মহাসাগরগুলি দেখছি তার পরিবর্তে আমাদের গ্রহের পৃষ্ঠটি পুরোপুরি ম্যাগমা দ্বারা আবৃত ছিল- আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় উদয় হওয়া গলিত পাথুরে পদার্থ ছিল। এ বিষয়টিতে সকল বিজ্ঞানীরাও একমত।
আমাদের গ্রহটি কি আসলেই অসাধারণ? বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন, আমাদের জীবনের জন্য কি কি উপাদানগুলি অপরিহার্য ও প্রয়োজন হয়েছে, যা শুধুমাত্র এই গ্রহেই আছে। এবং এর থেকেই বোঝা যায় যে, ছায়াপথের অন্যান্য গ্রহ গুলি থেকে পৃথিবী একটি বিশেষ গ্রহ।
প্রায় কয়েক মিলিয়ন বছর আগে, পৃথিবীর পৃষ্ঠটি ম্যাগমা মহাসাগরে ঢাকা ছিল এবং সেই ম্যাগমার সমুদ্র থেকে উদীয়মান বিষাক্ত গ্যাসগুলির মতোই সম্ভবত এখন শুক্র গ্রহের পরিবেশে উপস্থিত রয়েছে। সেসময়ে পৃথিবীর ম্যাগমা সমুদ্র সম্ভবত মঙ্গল গ্রহের সমান বস্তুর সাথে সংঘর্ষের পর আংশিক কেলাসন ঘটে, তার ফলে ভূ-রাসায়নিকভাবে পৃথক এক ধরনের ভূত্বক, গুরুমণ্ডল ও গ্রহীয় কেন্দ্রস্থল নিয়ে চাঁদ গঠিত হয়। সংঘর্ষের প্রভাবে পৃথিবীর ম্যাগমা সাগরের গলিত শিলা ঠান্ডা হতে থাকে। এবং ম্যাগমা মহাসাগর ঠান্ডা হওয়ার সাথে সাথে কিছু যৌগিক পদার্থের মিশ্রণ এর ফলে গঠিত মিশ্রণটি ঘনীভূত হয়ে যায় এবং পৃথিবীর আবহাওয়ায় বায়ুমণ্ডল তৈরি হয়।
পৃথিবীর ম্যাগমা মহাসাগরের বায়ুমণ্ডল কেমন ছিলো তা নির্ধারণ করার জন্য সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওলো সোসি এবং তাঁর সহকর্মীরা একটি লেজার দিয়ে ১৯০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপীকরণের সময় গ্যাসের প্রস্তরবিশেষের উপর রাখা ছোট ছোট মার্বেল খন্ডকে ভাসিয়ে রেখে দ্রবীভূত করার জন্য অ্যারোডাইনামিক লিভিটেশন নামে একটি কৌশল ব্যবহার করেছিল।
সোসি বলেন, মার্বেলের চারপাশের প্রবাহিত গ্যাস এমন আচরণ করে যা একটি ক্ষুদ্র পরিবেশ তৈরি করে। ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকর্মীদের সাথে কাজ করে আমরা দেখতে পেলাম যে পৃথিবীর প্রথম বায়ুমণ্ডলে সম্ভবত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ছিল, যা আজ আমরা শুক্র গ্রহে যা দেখছি ঠিক তার মতোই।
তারপরও গবেষকরা পরীক্ষায় বিভিন্ন যৌগ যুক্ত করে এবং গ্যাসের প্রস্তরবিশেষের গঠনকে পরিবর্তন করে পরীক্ষাটিকে পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। পুনরায় গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেলো, একটি ঘন বায়ুমণ্ডল যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড পূর্ণ এবং কিছু পরিমাণ নাইট্রোজেন যা শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলের অনুরূপ। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও কিছুটা এমন যদিও মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল বেশি পাতলা।
প্রকৃত সত্য হলো- পৃথিবী মঙ্গল গ্রহের চেয়েও বৃহত্তর- কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ধরে রাখার যথেষ্ট পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ রয়েছে এবং শুক্রের চেয়ে শীতল হওয়ার কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠে তরল জল এবং বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেন রয়েছে। এবং আমরা একটি সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারছি।
মো: মিরাজুল ইসলাম/নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট , দ্য কনভার্সেসন