পিক্সেল আবিষ্কারক এবং বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল ছবি স্ক্যান করার কৃতিত্বপ্রাপ্ত কম্পিউটার বিজ্ঞানী রাসেল কির্শ ১১ ই আগস্ট ওরেগন এর পোর্টল্যান্ডে তাঁর বাসায় মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৯১ বছর।
১৯৫৭ সালে কির্শ যখন প্রথমবারের মতো বাবা হলেন তখন তিনি আর পাঁচ জন সাধারণ বাবার মতোই তার ছেল ওয়াল্ডেনের ছবি সাথে নিয়ে অফিসে যেতেন। তিনি তৎকালীন আমেরিকার ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডসে (এনবিএস) কাজ করতেন যা বর্তমানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেকনোলজি (এনআইএসটি) নামে পরিচিত।
কির্শ ছিলেন গুটিকয়েক ভাগ্যবান এবং অনুমতিপ্রাপ্ত লোকেদের মধ্যে একজন যার স্ট্যান্ডার্ডস ইলেকট্রনিক অটোমেটিক কম্পিউটার চালানোর অনুমতি ছিল। স্ট্যান্ডার্ডস ইলেকট্রনিক অটোমেটিক কম্পিউটার হচ্ছে আমেরিকার প্রথম প্রোগ্রামযোগ্য কম্পিউটার।
আমেরিকার ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডসে কর্মরত অবস্থায় কির্শের মনে প্রশ্ন জাগে, কম্পিউটার যদি আমাদের মতো পৃথিবীকে দেখতে পারে তাহলে ঠিক কী হতে পারে ?
তার প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য কির্শ তার কয়েকমাস বয়সি ছেলে ওয়াল্ডেনের সাদা-কালো একটি ছবি তার অফিসে থাকা স্ট্যান্ডার্ডস ইলেকট্রনিক অটোমেটিক কম্পিউটারের সাথে যুক্ত স্ক্যানারের মধ্যে রাখেন। যা তার ছেলের সাদা-কালো ছবিটিকে ১৭৬ পিক্সেল x ১৭৬ পিক্সেল আকারের ছবিতে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়।
তার পুত্রের ছবি থেকে প্রতিচ্ছবি তৈরী করতে ব্যবহৃত স্ক্যানারে একটি ঘূর্ণায়মান ড্রাম এবং ফটোমালটিপ্লায়ার ব্যবহার করা হয় যা ছবিটিকে ১৭৬ পিক্সেল x ১৭৬ পিক্সেলে রূপান্তর করে এবং ওয়াল্ডেনের ছবিই হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল স্ক্যানড ছবি। পরবর্তীকে লাইফ ম্যাগাজিন প্রকাশিত ‘পৃথিবী বদলে দেয়া ১০০ টি ছবি‘-র মধ্যে কির্শের প্রথম ডিজিটাল স্ক্যানড ছবিটি স্থান করে নেয়।
১৯২৯ সালের ২০ জুন ম্যানহাটনে জন্মগ্রহণকারী কির্শ লিথুয়ানিয়া ও হাঙ্গেরি থেকে আসা অভিবাসী দম্পতির ছেলে।
তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন ফার্মাসিষ্ট এবং তার মা ছিলেন একজন গৃহকর্মী। সাধারণ অভিবাসী পরিবার থেকে উঠে আসা কির্শ নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্স, হার্ভার্ড এবং এমআইটিতে পড়াশোনা করেছেন এবং মার্কিন ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডস-এ বিজ্ঞানী হিসাবে পাঁচ দশক ধরে কাজ করেছেন।
মনের কৌতুহল থেকে কির্শের আবিষ্কার করা প্রযুক্তিই আজ ডিজিটাল ফটোগ্রাফির ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। তার কাজ স্যাটেলাইট ইমেজিং, বার কোডস, স্ক্যানের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় কির্শের এই অবদানের জন্য মানবসভ্যতা আজীবন কির্শের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
তাহমিদ শিহাব / নিজস্ব প্রতিবেদক