আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে মোবাইলের মতো অনেক দারুণ সব প্রযুক্তি আমাদের কাছে অনেক প্রচলিত হলেও, ৩৬ বছর আগে, ১৯৮৪ সালে তৈরি থ্রিডি প্রিন্টার এখনো অন্যান্য সব প্রযুক্তির মতো এত সাধারণ হয়ে ওঠেনি। এর পিছনে মূল কারণ হলো এর ব্যয়বহুলতা।
থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে এখন পর্যন্ত ছোট ছোট খেলনা বা মডেল ও প্রোটোটাইপ বানানো হচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশেই। তবে এর মানে এই না যে থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে বড় কিছু তৈরি করা সম্ভব নয়। আর তাই এবার ইউরোপের সবচেয়ে বড় থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে বেলজিয়ান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ক্যাম্প সি (Kamp C) তৈরি করলো আস্ত একটি দোতলা বাড়ি। থ্রিডি প্রিন্টার এর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটিই সবথেকে বড় প্রজেক্ট।
৩২ বাই ৩২ ফুট এই থ্রিডি প্রিন্টারটির কার্যপদ্ধতি অন্যসব ছোট সাইজের থ্রিডি প্রিন্টার এর মতোই (যেগুলো প্লাস্টিক ও কিছুর সংকর ধাতুর মিশ্রণ নিয়ে কাজ করে)। পার্থক্য শুধু এই বিশালাকার থ্রিডি প্রিন্টারটি প্লাস্টিকের পরিবর্তে বিশেষভাবে তৈরি কনক্রিট এর মিশ্রণ নিয়ে কাজ করে যা স্তরের উপর স্তর তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর আগেও থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে দ্বিতল বাড়ি তৈরি হয়েছে দুবাইতে কিন্তু এই ভবনটি কিছুটা আলাদা কারণ এটি প্রিন্ট করা হয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে।
ডেনমার্কের কোম্পানি কোবোড (COBOD) এই বিশাল প্রিন্টারটি তৈরি করে এবং এর প্রাথমিক রূপ, মিশ্রণ উপাদান, কনক্রিট তৈরি করে ক্যাম্প সি এর পার্টনার কোম্পানি ওয়েবার (Weber)।
দ্বিতল বাড়ির শুধু উপরের খোলকটি তৈরি করতে প্রিন্টারটি ব্যবহৃত হয়েছে। বাদবাকি অন্যসব আকৃতি যেমন ছাদ, জানালা ইত্যাদি গতানুগতিক উপায়েই তৈরি করা হয়েছে। বাড়িটিতে সোলার প্যানেল ও আন্ডারফ্লোর হিটিং এর মতো দারুণ কিছু সুবিধাও রয়েছে।
ক্যাম্প সি এর প্রজেক্ট ম্যানেজার এস্কিওনে বলেন, ”এটি একটি দালান যা কিনা প্রায় ৯৮০ বর্গ ফুট এবং এটিকে আমরা বসবাসের জন্য বাড়ি হিসেবে বানাতে চাইনি। আমরা এটিকে বাড়ি বলছি কারণ এর মাত্রা ও আকার সাধারণ বাড়ির মতো দেখতে। বস্তুত এটি সভা-সম্মেলন, প্রদর্শনী বা এ জাতীয় কিছু ইভেন্টের জন্য ব্যবহৃত হবে।“ তিনি আরও বলেন, ”একটি আস্ত দালান প্রিন্ট করা এখন অসম্ভব কিছু নয়। এটি আসলে প্রমাণ করে নির্মাণ শিল্পে থ্রিডি প্রিন্টারের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু এবং প্রযুক্তি হিসেবে এর ক্ষমতা কতটুকু”।
থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে বাড়ি তৈরির উপকারিতাঃ
১। সর্বপ্রথমে থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে বাড়ি তৈরি করতে গেলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে তা হলো দ্রুততা।প্রচলিত বাড়ি তৈরির ধরণ থেকে আলাদা হওয়ায় এটি অনেক দ্রুত বাড়ি তৈরি করতে পারে এবং নিখুঁতভাবে এর উপাদানগুলোকে কাজে লাগায়।
২। এর উপাদানের সংবেদনশীল ক্ষমতা ৩ গুন বেশি হওয়ায় এটি প্রচলিত ইটের তৈরি বাড়ি থেকে বেশি ভাল বাড়ি তৈরি করতে পারে। তাছাড়াও কনক্রিটের মধ্যকার ফাইবার ও তারজাল আগের থেকে অনেক সীমিত হওয়ায় এটি ৬০ শতাংশের মতো বাড়ি তৈরির উপাদান, সময় ও খরচ কমিয়ে দিতে সক্ষম।
৩। সবথেকে বড় যেই সুবিধা, সেটি হলো এটি জটিলতামুক্ত একটি প্রক্রিয়া। এস্কিয়নে জানান, ”আপনি এর সাহায্যে কয়েকটি বাড়ি ধারাবাহিকভাবে বানাতে পারবেন এবং খরচের উপর কোন রকম পরিবর্তন ছাড়াই আপনি প্রত্যেকটি বাড়িকে ইউনিক বা অনন্য করে তুলতে পারবেন।“
কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার বিশ্বাস করেন থ্রিডি প্রিন্টার এর কারণে ভবিষ্যতের বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়ায় আরো অনেক উন্নতি করা সম্ভব। এখন যেখানে একটি হাতের নাগালের মাঝে বাড়ি পাওয়া একটা কঠিন ব্যাপার, সেখানে এই প্রযুক্তিটি সামনের দিনে মৌলিক বাড়ি তৈরি করতে পারবে যা সাশ্রয়ীমূল্যের সাথে অনেক মান-সম্পন্নও হবে।
তন্ময় দাস/ নিজস্ব প্রতিবেদক