আচ্ছা প্রথমে কোনটি এসেছিল পৃথিবীতে, মুরগি নাকি ডিম? মুরগি না ডিম, আরে না মুরগি, না না ডিম। এই একটি প্রশ্নই আপনার ঘাড় থেকে মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আমরা সবাই কম-বেশি যার যার দিক থেকে যুক্তি দেখিয়েছি কিন্তু সবশেষে বেশিরভাগই এক জায়গায় গিয়ে শেষ হয় আর থেকে যায় শুধুই কনফিউশন।
হ্যারি পটারের লুনা লাভগুড নামের সেই স্বপ্নময়ী ডাইনিও এই প্রশ্নটি ধাঁধা হিসাবে জিজ্ঞেস করেছিলো এবং সেই সাথে বলেছিলো, “একটি বৃত্তের কোন শুরু নেই”।
মানুষের এই প্রশ্ন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দের কোন শেষ নেই। এনপিআর এর রবার্ট ক্রুলভিজ সম্প্রতি ভাগ্যক্রমে এই দ্বিধাদ্বন্দের শেষ সীমানায় পৌঁছেছেন। আমাদেরকে একটি ক্লু দিতে পেরেছেন আরও এক গবেষক দল। চাইনিজ একাডেমি অব সাইন্স এর কুনমিং ইনস্টিটিউট অফ জুলজি বিভাগের গবেষকরা একটি গবেষণা থেকে আবিষ্কার করেছেন যে, অনেক অনেক কাল আগে মুরগির মত এক ধরনের পাখি ছিলো। সেটি জিনগতভাবে মুরগির কাছাকাছি ছিল তবে তা পূর্ণবিকশিত কোন মুরগি ছিল না। বিশ্বের প্রথম মুরগি সাড়ে ৯ হাজার বছর পূর্বে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জন্মেছিলো বলে তারা জানায়।
এই গবেষণার অন্যতম একজন গবেষক ওয়াং বলেন- “আমাদের গবেষণার ফলাফল গুলো পূর্ববর্তী দাবির বিরোধিতা করে। যেখানে বলা হয়েছিল উত্তর চীন এবং সিন্ধু উপত্যকায় গৃহপালিত হিসেবে এগুলোকে পাওয়া যায়। এছাড়া মুরগির পূর্ণ জিনোম নিয়ে এটিই প্রথম গবেষণা”।
★চার্লস ডারউইন এ ক্ষেত্রে সঠিক আবার ভুল ছিলেন।
গবেষণাটি, মুরগি সম্পর্কে ডারউইনের অন্যতম প্রধান যুক্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এটি লাল জঙ্গল পাখি ওরফে গ্যালাস গ্যালাস স্প্যাডিসিয়াস থেকে এসেছে।
তবে তাত্ত্বিকভাবে এর গৃহ পালনের অবস্থানটি ভারতে ঘটেনি। লাল জঙ্গল পাখি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উত্তর ও দক্ষিণ চীনে বসবাস করতো।
এর ভিত্তিতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধরেই নিয়েছিলেন যে, মুরগিগুলোর ইতিহাস ৯ হাজার বছর আগে উত্তর চীন এবং পাকিস্তানের ৪ হাজার বছর আগে আবিষ্কার করা হাড়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা সম্ভবত মুরগির মতো দেখতে।
২০ বছর ধরে ওয়াং এবং তার দল এই গবেষণার জন্য ৮৬৩ টি পাখির সম্পূর্ণ জিনোম গুলোকে বিশ্লেষণ ও তাদের প্রত্যেকটির তুলনা করেছেন।
লাল জঙ্গল পাখিকে প্রোটো মুরগি বলা হয়। এই প্রোটো মুরগিটি একটি ডিম দেয় এবং প্রোটো মোরগটি সেটি নিষিক্ত করে। কিন্তু মুরগী এবং মোরগের ডিমের জিনগুলি একত্রে মিশ্রিত হয়ে গেলে একটি নতুন মুরগির জন্ম নেয় যেটি পিতা -মাতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই ডিমটি একটি নতুন প্রজাতির উত্তরসূরী হয়ে ওঠে যা যথেষ্ট আলাদা ছিল এবং তার থেকেই সৃষ্টি হয় এখনকার মুরগি। সুতরাং সংক্ষেপে বলা যায় যে, দুটি পাখি যারা আসলে মুরগি ছিল না তাদের উৎপাদিত ডিম একটি ভিন্ন প্রজাতির সৃষ্টি করে যা আমাদের কাছে মুরগি হিসেবে পরিচিত। তাই বলা যায় ডিমটি আগে এসেছিল এবং তারপর এর থেকে মুরগির সৃষ্টি হয়।
তাহলে আমাদের যে প্রশ্নটি করা উচিত তা হলোঃ কোনটি প্রথম এসেছিল-প্রোটো মুরগি নাকি প্রোটো মুরগির ডিম?
রাদিয়া আহমেদ লুবনা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
4
+1
+1
15
+1
13
+1
7
+1
12
+1
6