একটা সময় ছিল যখন মহাকাশে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হতো। কিন্তু, সেসময় এই প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) ও আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে প্রতিযোগীর সংখ্যা বেড়েছে। যুক্ত হয়েছে চীন, ভারত, কিংবা আরব আমিরাতের মতো দেশও।
বর্তমানে এই প্রতিযোগিতায় অন্যতম শক্তিশালী এক প্রতিযোগী হলো চীন। মঙ্গলে (Mars) মহাকাশযান পাঠানোর পাশাপাশি মহাকাশে স্পেস স্টেশনও তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবীর কক্ষপথে একটি বিশাল স্পেস টেলিস্কোপ পাঠানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। টেলিস্কোপটির সক্ষমতা হাবল টেলিস্কোপকেও (Hubble Telescope) ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের মধ্যে পাঠানো হবে The Chinese Space Station Telescope (CSST)। একে জুনশিয়ান নামেও ডাকা হচ্ছে, যার অর্থ হলো “survey the heavens“.
সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার মতে, আকাশ সমীক্ষা চালানোর ক্ষেত্রে চীনা বিজ্ঞানীদের জন্য একটি অপটিক্যাল অবজারভেটরি হিসেবে কাজ করবে এটি। এই টেলিস্কোপটির ডাটা নিয়ে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে চীন জুড়ে চারটি জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
Xuntian এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, এতে থাকবে প্রায় ৬.৬ ফুট (২ মিটার) ব্যাসের লেন্স, অত্যাধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন এই টেলিস্কোপের ২.৫ বিলিয়ন পিক্সেল ক্যামেরায় নজরদারির ক্ষেত্র হবে ৩১ বছরের পুরনো হাবল টেলিস্কোপ-এর থেকে প্রায় ৩০০ গুণ বেশি! এর বিশালাকার ২.৫ গিগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে আগামী দশ বছরে আকাশের ৪০ শতাংশ পর্যবেক্ষণ করা হয়ে যাবে। এছাড়াও CSST অতিবেগুনি ও দৃশ্যমান আলো পর্যবেক্ষণ করবে। ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির বৈশিষ্ট্যের রহস্য জানতে, এমনকি মহাজগৎ ও গ্যালাক্সির বৃহৎ স্কেল গঠন উদঘাটনের বিষয়েও কাজ করবে এটি।
চীনের হিউম্যান স্পেসফ্লাইট প্রোগ্রামের প্রধান ডিজাইনার ঝোউ জিয়াপিং চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশনকে জানান, “টেলিস্কোপটিকে একটি অপটিক্যাল মডিউলে স্থাপন করা হবে, যা মহাশূন্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উচ্চতর সক্ষমতা নিয়ে স্বাধীনভাবে কক্ষপথে উড়ে বেড়াতে পারবে।”
টেলিস্কোপটিকে ভবিষ্যৎ স্পেস স্টেশনের কাছাকাছি কক্ষপথে ছাড়া হবে। এতে টেলিস্কোপে পুনরায় জ্বালানি সরবরাহ করা যাবে এবং কক্ষপথের আপগ্রেডও চালিয়ে নেয়া যাবে। পরবর্তীতে টেলিস্কোপের মেরামত, আপগ্রেড, প্রতিস্থাপনেও এটি কার্যকরী হবে।
দেশের ভবিষ্যৎ স্পেস স্টেশন নির্মাণ ও ক্রু মিশনের জন্য চীনের নভোচারীরা এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। CSST ট্রান্স নেপচুনিয়ান অবজেক্ট এবং পৃথিবীর নিকটে আসা গ্রহাণু শনাক্তকরণ সমীক্ষায়ও কাজ করবে বলে আশাবাদী এর কর্মীরা। প্রকল্পের নির্মাণ পর্যায়ে চারটি ক্রু মিশনসহ ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে ১১টি মিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কর্মকর্তারা। চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
মো. মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ লাইভসায়েন্স