অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সম্প্রতি লন্ডন শহরে এইচ-আই-ভি (HIV) ভাইরাসে আক্রান্ত ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এই ভাইরাস থেকে সুস্থতা লাভ করেছেন!
আমরা প্রায় সবাই এইচ-আই-ভি ভাইরাসের সাথে পরিচিত। মানুষ যখন এইচ-আই-ভি দ্বারা সংক্রমিত হয় তখন তাদের এইডস রোগ হয়ে থাকে। এই এইডস রোগ এক মরণব্যাধির নাম, যার নাম শুননেই যে শব্দটা প্রথমে মাথায় আসে তা হচ্ছে মৃত্যু। এখন পর্যন্ত এইডস এর কোনো প্রতিকার বা উপশমের উপায় আবিষ্কার না হওয়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়াই ছিলো এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। কিন্তু আজ বিজ্ঞানের অবদানে আমরা হয়ত পেতে চলেছি এই মরণব্যাধি ভাইরাসের প্রতিষেধক। কারণ, এবার ২য় বারের মত একজন ব্যক্তি এই ভাইরাস থেকে সুস্থতা লাভ করেছেন।
লন্ডনে বসবাসরত অ্যাডাম ক্যাস্তেলিজো নামের ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, যিনি তার অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি বন্ধ করার প্রায় ৩০ মাস পরে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি “লন্ডন রোগী” হিসেবে মেডিকেল কমিউনিটিতে বেশ পরিচিত। তার রক্ত, বীর্য বা টিস্যুতে কোনও সনাক্তকারী সক্রিয় এইচ-আই-ভি ভাইরাস নেই বলেই চিকিৎসারা জানিয়েছেন।
মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, যখন তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য স্টেম সেলের প্রতিস্থাপন করিয়েছিলেন তখন তার সাথে শরীরে থাকা এইচ-আই-ভি ভাইরাস থেকেও মুক্তি মিলে। বিজ্ঞানীদের মতে, স্টেম সেলগুলি দেহের আক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ কোষগুলির সাথে নিজেদের প্রতিস্থাপন করে দেহের অভ্যন্তরে নিজেকে প্রতিরূপকরণের মাধ্যমে ভাইরাসটির কার্যক্ষমতা বন্ধ করে দেয়।
মিঃ ক্যাস্তেলিজোর উপর পরীক্ষা করে দেখা যায় যে তার ৯৯ শতাংশ রোগ প্রতিরোধক কোষ দাতাদের স্টেম সেল গুলো দ্বারা প্রতিস্থাপন করে নিয়েছে। তাছাড়াও, দেখা যায় যে মিঃ কাস্টিলিজোকে স্টেম সেল ডোনেট করা দাতাদের একটি অস্বাভাবিক জিন রয়েছে যা তাদের এইচ-আই-ভি (HIV) থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
এছাড়াও, এইচ-আই-ভি থেকে প্রতিকার পাওয়া প্রথম ব্যক্তি ও একই রকমের চিকিৎসা পেয়েছিলেন এবং প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তার নাম হলো টিমোথী ব্রাউন। যিনি কিনা ২০১১ সালে দিকে “বার্লিনের রোগী” হিসাবে বেশ পরিচিত ছিল।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় গবেষক প্রফেসর রবীন্দ্র কুমার গুপ্ত বিবিসি নিউজকে বলেছেন: “আমরা প্রায় এইচ-আই-ভি এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের খুবই কাছাকাছি চলে এসেছি। তবে, আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে স্টেম সেল এর প্রতিস্থাপন এইচ-আই-ভি ভাইরাসের প্রতিকারের ব্যবস্থা হতে পারে। যা কিনা আমরা নয় বছর আগে বার্লিনের রোগীর প্রথম রিপোর্টেই পেয়েছিলাম। তবে সবচেয়ে বড় একটি বিষয় হলো এটি সাধারণত ক্যান্সারের চিকিৎসা জন্য ব্যবহৃত হয়েছিলো, এইচ-আই-ভি এর জন্য নয়।”
অধ্যাপক গুপ্ত আরও বলেছেন যে, এইচ-আই-ভি আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা কেবলমাত্র সর্বশেষ সমাধান হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং যাদের জীবনের হুমকির সাথে হায়মাটোলজিকাল ম্যালিগন্যান্সি রয়েছে। তবে এই চিকিৎসাটি ব্যাপক হারে প্রদান করা হয় না। বিশেষ করে যেসব এইচ-আই-ভি আক্রান্ত রোগীরা সফলভাবে অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এই চিকিৎসাটি একদম নয়।
তাছাড়াও, মিঃ কাস্টিলিজো বা মিঃ ব্রাউন এর শরীরে এইচ-আই-ভি যে ফিরে আসবে না এ ব্যাপারেও কোনও পুরোপুরি নিশ্চয়তা নেই, কারণ উভয়ের রোগীর শরীরে এখনও ভাইরাসের কিছুটা অবশিষ্টাংশ রয়েছে। কিন্তু এতটুকু এগিয়ে এসে বিজ্ঞানীরা এখন প্রতিষেধক আবিষ্কারের ব্যাপারে আশাবাদী।
আল-আমিন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে, দ্যা ল্যানসেট