ধরুন আপনার দেহের কোনো অংশে চুলকাচ্ছে। তবে আপনি কি করবেন? অবশ্যই সে স্থানে চুলকাবেন। কিন্তু, কেমন হয় যদি যেখানে চুলকাচ্ছে, সেখানে না চুলকিয়ে তার বিপরীত পাশে আঁচড়ে দেন? তাহলে কি চুলকানো থেমে যাবে?
এই অদ্ভুত বিষয়টি নিয়েই গবেষণা করেছেন একদল বিজ্ঞানী এবং তাদের গবেষণায় তারা পেয়েছেন বিস্ময়কর ফলাফল। অবশ্যই বুঝতে পারছেন কি পেয়েছেন তারা; গবেষণায় তাঁরা দেখিয়েছেন, শরীরের কোনো একপাশে চুলকালে আয়নায় দেখে যদি তার বিপরীত পাশে চুলকানো হয়, তবে চুলকানো থেমে যাবে!
এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিলো, আমাদের দেহে চুলকানোর ফলে যে স্বাভাবিক প্রতিবর্তী ক্রিয়া সংঘটিত হয়, তা অন্য কোনো প্রভাবকের মাধ্যমে কি নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা তা দেখা। এজন্য তাঁরা প্রথম ধাপে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দেহের একপাশে অর্থাৎ ডান পাশের বাহুতে ইচ্ছাকৃত ভাবে চুলকানোর অনুভূতি তৈরি করেন এবং তাদের সামনে একটি আয়না স্থাপন করে অন্যপাশে অর্থাৎ বাম দিকের বাহুতে আঁচড়ে দেওয়া হয়। এটি পার্টিসিপেন্টসদের মাঝে একটা ভিজুয়াল ইল্যুশন তৈরি করে যেন তাদের ডান বাহুই আঁচড়ে দেওয়া হচ্ছে।@Science Bee
দ্বিতীয় পরীক্ষণে এবার গবেষকরা পার্টিসিপেন্টের সামনে এই এক্সপেরিমেন্টেরই রিয়েল টাইম লাইভ ভিডিও ফ্লিপড এবং আনফ্লিপড (মিররড ও নন- মিররড) ভিডিও ডিসপ্লে রাখেন, যেন তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবার অংশগ্রণকারী তার কোন বাহুতে চুলকানোর অনুভূতি পাচ্ছেন, ডান, বাম, উভয় বাহুতেই নাকি কোনো বাহুতেই নয়!@Science Bee
উভয় পরীক্ষাতেই তারা দেখেছেন, আয়নায় দেখে বিপরীত বাহু, অর্থাৎ যে বাহুতে চুলকাচ্ছিলো না, সেখানে চুলকানোর মাধ্যমে যে বাহুতে চুলকাচ্ছিলো তা থেমে গেছে, অর্থাৎ বাম বাহু তখন আয়নার দৃশ্যমান প্রভাবে অংশগ্রহণকারীর কাছে ডান বাহু হিসেবে অনুভূত হয়েছিলো।
এই পরীক্ষা থেকে গবেষকরা এটা প্রমাণ করেন, চুলকাতে থাকা বাহু বা পেশির ভিজুয়াল ইল্যুশনের মাধ্যমে বিপরীত বাহুতে আঁচড়ে দিলে তা বাস্তবিক ভাবেই চুলকানো থেকে মুক্তি দেয়, অর্থাৎ চুলকানো থেমে যায়। এই গবেষণা ত্বক ও চর্মরোগ বিষয়ক সমস্যা গুলোর চিকিৎসায় নতুন মাত্রা যুক্ত করবে, কারণ চর্মরোগ সংক্রান্ত রোগ গুলোতে আক্রান্ত স্থানে চুলকানোর ফলে অনেক সময় ইনফেকশন হয় বা রোগটা ত্বকের উপরে আরো ছড়িয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এই ‘মিরর স্ক্র্যাচিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে আক্রান্ত স্থানে না চুলকিয়ে তার বিপরীত পাশে চুলকানোর মাধ্যমে এই ইনফেকশন বা আরো ছড়িয়ে পড়ার সমস্যা প্রতিহত করা সম্ভব।@Science Bee
মজার বিষয় হলো, এই গবেষণার জন্য ২০১৬ সালে এই গবেষণার পেছনে কাজ করা বিজ্ঞানী Christoph Helmchen, Carina Palzer, Thomas Münte, Silke Anders ও Andreas Sprenger পেয়েছেন ইগ নোবেল প্রাইজ (IG Nobel Prize)।
IG Nobel Prize এর মূল কথাই হলো- “আগে হাসুন পরে ভাবুন”। এই সম্মাননাটি প্রতিবছর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয় সেই সকল গবেষণার জন্য, যেগুলো প্রথমে মানুষকে হাসাবে ও পরে ভাবাবে। এটি মূল নোবেল পুরস্কারের প্যারোডি হলেও ব্যাপারটি কিন্তু মোটেই হাস্যরসাত্মক নয়। হাস্যকর ঘটনা গুলো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণের গবেষণার উপরেই এই পুরস্কারটি দেওয়া হয়।@Science Bee
তথ্য উৎসঃ PLOS ONE
সাদিয়া বিনতে চৌধুরী/ নিজস্ব প্রতিবেদক