আমাদের সৌরমন্ডলে উপস্থিত এক রহস্যময় গ্রহ হলো Venus বা শুক্র। অন্যান্য গ্রহের তুলনায় ভয়ানক আওয়াজ ও পৃষ্ঠ সংবলিত গ্রহ এটি। শুক্র গ্রহের পরিবেশ পৃথিবীর পরিবেশ থেকে এতোটাই আলাদা যে, সেখানে জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করাও কঠিন। শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল সালফিউরিক অ্যাসিড দ্বারা তৈরি এবং এটি এতোটাই ঘন এবং গরম (৪৭০° সেলসিয়াস) যে, সেখানে পৃথিবীর মতো জলও তরল অবস্থায় থাকতে পারে না। তাই অনেকেই এটিকে ‘ভূগর্ভস্থ নরক’ বলে আখ্যায়িত করে। শুক্র গ্রহ সম্পর্কে একটি রহস্য রয়েছে যা বিজ্ঞানীদের এখনও বিভ্রান্ত করে রেখেছে। আর সেই রহস্যটি হলো শুক্র গ্রহের বজ্রপাত এর শব্দ।
![Science Bee Science news শুক্র গ্রহের বজ্রপাত](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2023/11/VenusCharacteristics_MythologyandObservation_-300x225.jpg)
এটি একটি অদ্ভুত ধরনের গর্জন, যা শুক্রের পৃষ্ঠ থেকে আসে। এই শব্দটি এতোটাই জোরালো যে, এটি শুক্রের আবহাওয়া মন্ডলের শত মাইল উপরেও শোনা যায়। শুক্র গ্রহে বজ্রপাত কেন হয়, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনও কোনো সর্বজনীন মতামত নেই। তবে শুক্র গ্রহে বজ্রপাতের উৎস নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দুটি প্রধান মতবাদ রয়েছে। প্রথম মতবাদ হলো, শুক্র গ্রহে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয় মুক্ত ইলেকট্রনের মাধ্যমে। দ্বিতীয় মতবাদ হলো, শুক্র গ্রহে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয় উল্কার মাধ্যমে।
![Science Bee Science news শুক্র গ্রহের বজ্রপাত](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2023/11/The-science-of-thunderstorms-e1699803531352-300x194.webp)
মুক্ত ইলেকট্রনের মাধ্যমে বজ্রপাতের সৃষ্টি মতবাদ
একদল গবেষক মনে করেন, শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলে বজ্রপাত হয় যখন উচ্চ এবং নিম্নচাপের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক শক্তির পার্থক্য তৈরি হয়। এই বৈদ্যুতিক শক্তির পার্থক্য এতটাই বেশি হয় যে, এটি বায়ুমণ্ডলের অণুগুলোকে আয়নিত করে। আয়নিত বায়ুমণ্ডলীয় অণুগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে বায়ুমণ্ডলে আলোর ঝলক এবং শব্দের সৃষ্টি হয়।
উল্কার মাধ্যমে বজ্রপাত সৃষ্টি মতবাদ
একদল গবেষক মনে করেন, শুক্র গ্রহের ঘন বায়ুমণ্ডলে উল্কা প্রবেশ করলে তা খুব বেশি ঘর্ষণ এবং উত্তাপের শিকার হয়। এর ফলে উল্কাটি জ্বলতে শুরু করে এবং আলোর ঝলক তৈরি করে। এই আলোর ঝলকগুলো শুক্র গ্রহে বাজের মতো শব্দ তৈরি করতে পারে।
![Science Bee Science news শুক্র গ্রহের বজ্রপাত](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2023/11/40645_2018_181_Figa_HTML-282x300.png)
এই মতবাদ দুটির মধ্যে কোনটি সঠিক তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে, ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রতি বছর প্রায় ১০,০০০টি উল্কা প্রবেশ করে। শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের চেয়ে অনেক ঘন। এই ঘন বায়ুমণ্ডলে উল্কা প্রবেশ করলে তা খুব বেশি ঘর্ষণ এবং উত্তাপের শিকার হয়। এর ফলে উল্কাটি জ্বলতে শুরু করে এবং আলোর ঝলক তৈরি করে। এই আলোর ঝলকগুলি শুক্র গ্রহে বজ্রপাতের মতো শব্দ তৈরি করতে পারে।
এই গবেষণার ফলাফল থেকে মনে হয় যে, শুক্র গ্রহে বজ্রপাতের সৃষ্টিতে উল্কার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই শুক্রের পৃষ্ঠে বজ্রপাত নিয়ে উক্ত মতামত দুটির মধ্যে উল্কা সম্পর্কিত মতামতটিই বেশি গ্রহণযোগ্য, কারণ এটি শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তবে, এই মতবাদটি এখনও সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত হয়নি। ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে শুক্র গ্রহের বজ্রপাতের সঠিক উৎস নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। শুক্র গ্রহের বজ্রপাতের রহস্য এখনও সম্পূর্ণভাবে সমাধান করা না গেলেও বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে এই রহস্যের সমাধানের পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে এসেছি।
মো: শাহিনুল ইসলাম রাফি / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: ফিজিক্স.অর্গ, সাইন্সনিউজ, স্পেস
+1
+1
1
+1
+1
+1
+1
+1