মানুষের আচরণ এবং জ্ঞানের নানা বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি জটিল দিক হচ্ছে মানুষের বুদ্ধিমত্তা যা সহজেই পরিমাণ করা যেতে পারে। মানুষের বুদ্ধিমত্তা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা বা পরিমাপ করা গেলেও এটি অর্জন করা কঠিন।
বুদ্ধিমত্তা যেভাবে পরিমাপ করা হয় তাকে Intelligence Quotient বা IQ বলে। বুদ্ধিমত্তার একাধিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে পরিকল্পনা, সমস্যার সমাধান, জটিল ধারণা বুঝার ক্ষমতা ইত্যাদি।
এখন আসি মূল প্রশ্নে যে, বুদ্ধিমত্তা কি আসলেই জিন দ্বারা নির্ধারিত হয় কিনা?
বুদ্ধিমত্তা জিন দ্বারা নির্ধারিত হয় কিনা এ নিয়ে গবেষকরা দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়েছে। গবেষণায় মূলত কাজ করা হয়েছে কয়েকটি পরিবারের মধ্যে IQ এর মিল এবং পার্থক্যের উপর দৃষ্টি রেখে। এই ধরনের গবেষণা জটিল হয়ে থাকে। কারণ বুদ্ধিমত্তা এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার জেনেটিক এবং পরিবেশগত প্রভাব আলাদা করা কঠিন।
এক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে পালক বা দত্তক নেওয়া সন্তান অথবা যমজ সন্তানদের দিকে। Kings College, London এর গবেষকরা ৬০০০ টি যমজ সন্তানদের নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। যেখানে দেখা গিয়েছে যে, তাদের অ্যাকাডেমিক সফলতায় কিছু অংশ জিন দ্বারা প্রভাবিত হয়, যা তাদের অনুপ্রেরণা, ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস সহ আরো অনেক বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে। আর এগুলোই একত্রে মানুষের বুদ্ধিমত্তা গঠনে সাহায্য করে।
মানুষের জিনোমের কোনো নির্দিষ্ট অংশ বা ক্ষেত্র বুদ্ধিমত্তা গঠনে দায়ী কিনা তা জানার জন্য কিছু গবেষণায় একাধিক ব্যক্তির সম্পূর্ণ (Genome-wide Association Studies বা GWAS নামে একটি পদ্ধতিতে) জিনোমের পরীক্ষা করা হয়েছে। যদিও এতে কোনো আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায় নি।
দীর্ঘদিন গবেষণার পর গবেষকরা বুদ্ধিমত্তার একটি জেনেটিক উপাদান খুঁজে পেলেও তারা কোনো একক জিনকে চিহ্নিত করতে পারেনি যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার পার্থক্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষকদল দেখিয়েছেন কীভাবে স্কুলে একজন মানুষের পারফরম্যান্সের পেছনে জিনগত কারণ রয়েছে কিন্তু এই একই জিনগুলো আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে কিনা তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
এগুলো তো গেল জেনেটিক প্রভাবকের আলোচনা। এবার আসা যাক পরিবেশের দ্বারা মানুষের বুদ্ধিমত্তা প্রভাবিত হয় কিনা সেই ব্যাখ্যায়। বুদ্ধিমত্তা এমন একটি জিনিস যা পরিবেশ দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়। একটি শিশুর বিকাশ হওয়ার সাথে সাথে যেসব জিনিসের উপর তার বুদ্ধিমত্তা প্রভাব ফেলে সেগুলোর মধ্যে তার বাড়ির পরিবেশ, তার প্রতি তার অভিভাবকের দায়িত্ব, শিক্ষা এবং শেখার উৎস, স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টি অন্যতম।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রথম জন্ম নেওয়া শিশুদের পরবর্তীতে জন্ম নেওয়া ভাইবোনদের তুলনায় উচ্চ আইকিউ থাকে। কারণ অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে প্রথম জন্ম নেওয়া শিশুরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে বেশি মনোযোগ পায়। গবেষণায় এটিও বলা হয়েছে যে, বাবা-মায়েরা আশা করেন যে বড় সন্তানেরা বিভিন্ন কাজে আরো ভালো ফলাফল করবে, যেখানে পরবর্তীতে জন্ম নেওয়া ভাই-বোনরা এমন প্রত্যাশার সম্মুখীন কম হয়। একজন ব্যক্তিকে পরিবেশ ও জিন উভয়ই প্রভাবিত করে। এই জেনেটিক্স বিষয়াবলি থেকে পরিবেশের প্রভাবগুলো আলাদা করা চ্যালেঞ্জিং। উদাহরণস্বরূপ,
যদি কোনো ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তার মাত্রা ও তার পিতা মাতার বুদ্ধিমত্তার মাত্রা একই হয় তবে কি তা জিনগত ভাবে অভিভাবক থেকে সন্তানে স্থানান্তরিত ?
নাকি তা একই পরিবেশগত উপাদানে অবস্থানের কারণে?
নাকি দুই উপাদানের সংমিশ্রণ? এমন অনেক প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে।
তবে এটা পরিষ্কার যে পরিবেশগত ও জিনগত- দুই উপাদানই একজন ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তার মাত্রা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তথ্যসূত্র: সাইন্স অর্গ, মেডলিনপ্লাস
মাহফুজুর রহমান রিদোয়ান / নিজস্ব প্রতিবেদক