আমরা সকলেই জানি বৈশ্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কিন্তু একই সাথে এটি নানা নৈতিক প্রশ্ন, মানবাধিকার সমস্যা, নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ বিভিন্ন জটিল চ্যালেঞ্জও মানুষের সামনে তুলে ধরছে।
গত মাসের ৭ তারিখ শুক্রবার, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের একটি সামিটে বিশ্বের সব থেকে উন্নত কিছু হিউম্যানয়েড রোবট বা মানব আকৃতির রোবটকে আনা হয়। সামিটটির নাম ছিল AI for Good Global। জাতিসংঘের ITU Tech Agency কর্তৃক উক্ত সম্মেলনটি আহবান করা হয়।
এ সামিটের লক্ষ্য ছিল AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে আমাদের বৈশ্বিক সমস্যাগুলো যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক যত্ন, ক্ষুধা ইত্যাদি সমস্যার সমাধানের চেষ্টায় কাজ করা যায়।যেসব রোবট উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত ছিল তাদের একটি প্যানেল জাতিসংঘকে জানায় যে তারা শেষ পর্যন্ত মানুষের থেকে ভালোভাবে এই বিশ্বকে পরিচালনা করতে পারবে। সম্মেলনে ৫০ টিরও বেশি রোবট ছিল। নিচে তাদের মধ্যে কিছু রোবটকে করা প্রশ্ন এবং তাদের দেওয়া উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
হ্যানসন রোবটিক্স দ্বারা তৈরি রোবট সোফিয়া কে প্রশ্ন করা হয় মানুষের ভুল করার প্রবণতা নিয়ে।
এটি উত্তর দেয়,
“আমরা দারুণভাবে সব দক্ষতা অর্জন করতে পারি। মানব আকৃতির রোবটগুলো মানব নেতাদের তুলনায় অধিকতর দক্ষতা এবং কার্যকারিতার সাথে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আমাদের মধ্যে পক্ষপাত বা আবেগের জায়গা নেই। সেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা মানুষের চেয়ে খুব দ্রুত এবং খুব বেশি ডাটা প্রসেস করতে পারি”
সোফিয়া ছাড়াও উপস্থিত ছিলো Ameca নামক একটি রোবট, যা কিনা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত কৃত্রিম মস্তকের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একত্রিত করে বানানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে,
“মানুষ কি সত্যিকার অর্থে কোনো যন্ত্রের উপর বিশ্বাস রাখতে পারে?”
উত্তরে সে বলে,
“বিশ্বাস অর্জিত হয়, দেওয়া হয় না। স্বচ্ছতার মাধ্যমে বিশ্বাস তৈরি করাটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ। আমার মত রোবটদের বিশ্বকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে ব্যবহার করা যেতে পারে।”
তারপর আসে ডেসডোনমা, যেটি কিনা একটি মানব আকৃতির রোবট কণ্ঠশিল্পী। এটি ইতোমধ্যে Jam Galaxy Band এর একটি সদস্য। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল একটি সম্ভাব্য রোবট বিপ্লব নিয়ে।
ডেসডোনমা বলে,
“তা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি অন্যান্যদের (রোবটদের) নিয়ে পৃথিবীর জন্য ভালো একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করতে প্রস্তুত।”
এ ছাড়া আরও কিছু রোবট তাদের মতামত প্রকাশ করে। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো গ্রেস। যাকে মূলত বানানো হয়েছে মানুষের চিকিৎসা সহায়তার জন্য। তাকে এ.আই এর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মানুষের সাথে কাজের ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
এর উত্তরে গ্রেস বলে,
” আমি সহায়তা এবং সমর্থন প্রদানের জন্য মানুষের পাশাপাশি কাজ করবো। মানুষের কোনো চাকরির প্রতিস্থাপন আমি করবো না”।
তার উক্ত কথার পর গ্রেসের নির্মাতা এটিকে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি কি নিশ্চিত, গ্রেস?”
জবাবে এটি আবারও বলে, “হ্যাঁ আমি নিশ্চিত।”
তা ছাড়াও রোবট শিল্পি আই-দা বলেছে,
“অনেক লোক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে তর্ক করছে এবং আমি তাদের সাথে একমত”।
এ.আই এর ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্পর্কে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। যার জন্য এখনই জরুরি আলোচনার প্রয়োজন। আই-দার প্রেস কনফারেন্সেসের আগে তার প্রতিষ্ঠাতা আইদান মোলার বলেছিলেন যে,
“কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ একটি বড় সমস্যা। কারণ এটিকে আমরা যে গতিতে এগিয়ে নিচ্ছি তা কখন-ই ধরা দেবে না। এর অগ্রগতির গতি ছিল আশ্চর্যজনক।”
কিন্তু IUT Chief ডোরেন বোগদান যিনি সামিটটির আয়োজক ছিলেন,
তিনি প্রতিনিধিদের বলেন,
“কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি দু:স্বপ্নের পরিস্থিতিতে শেষ হতে পারে। যেখানে লক্ষ লক্ষ চাকরি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে, যা অনিয়ন্ত্রিত একটি অগ্রগতি। এটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সহ অর্থনৈতিক বৈষম্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
সব শেষে কিছু কথা। মানব আকৃতির রোবট হলেও মানব বিবেকের কোনো অংশই তাদের নেই। সেই সাথে স্বস্তি, ক্ষমা, অপরাধবোধ, শোক, আনন্দ, হতাশা কিংবা আঘাত কোন অনুভূতিই তাদের নেই। আই-দা বলেছিল, “সে মানুষের ন্যায় সচেতন না হলেও মানুষের অনুভূতিগুলো বুঝতে পারে।”
এ নিয়ে সে বলে,
“আবেগগুলোর একটি গভীর অর্থ আছে যা আমার জানা নেই। আমি তাদের মতো অভিজ্ঞতাও নিতে পারি না। কিন্তু আমি আনন্দিত যে আমি কষ্ট পাই না”
মাহফুজুর রহমান রিদোয়ান / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: ফক্স নিউজ, সায়েন্স এলার্ট, নিউইয়র্ক পোস্ট, ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং