মহাকাশ স্টেশন সম্পর্কে আমরা সবাই-ই কম বেশি জানি। নানা রকম বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রাণের অনুসন্ধান সহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মহাকাশে এই স্থাপনার সৃষ্টি। পৃথিবীর মূল বায়ুস্তরের উপরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে এরা অবস্থান করে। মহাকাশে এই মূহুর্তে ২টি সম্পূর্ণ নির্মিত স্টেশন রয়েছে। ইউএসএ, কানাডা, রাশিয়া, জাপান, ইউরোপিয়ান পার্টনার বর্তমানে এই স্টেশনদ্বয়ের স্বত্বাধিকারে আছে। চীন তাদের নিজস্ব স্টেশন তৈরির কাজ চালাচ্ছে এবং এটি চলমান রয়েছে। এবার রাশিয়া চায় ২০২৮ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ করতে, যার নাম হবে রাশিয়ান অরবিটাল সার্ভিস স্টেশন (ROSS)।
রাশিয়ান অরবিটাল সার্ভিস স্টেশন (ROSS):
রাশিয়া ঘোষণা করেছে তারা ২০২৪ সালের মধ্যে ISS- International Space Station থেকে নাম প্রত্যাহার করবে। যদিও সঠিক কবে করবে তা এখনো অনিশ্চিত। এখন রাশিয়া তাদের ROSS উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। Russian Federation Responsible for Space Flights, Cosmonautics Programs and Aerospace Research (ROSCOSMOS) বলেছে, এই মিশনের প্রথম ধাপ শুরু হবে ২০২৮ সালে। এবছর তারা স্টেশনের মূল মডিউল মহাকাশে পাঠাবে। দ্বিতীয়টি ২০৩০ সালে পাঠানো হবে। এই ভাবে পর পর আরো দুইটি মডিউল পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে এর ডিজাইন প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে ROSS এর অবস্থান এখনো নির্ধারণ হয়নি। এটিকে ৫১.৬ ডিগ্রির কক্ষপথে (আইএসএস-এর অনুরূপ) বা কাছাকাছি-মেরুতে, ৯৭ ডিগ্রি কক্ষপথে স্থাপন করা হতে পারে। উৎক্ষেপণের যে সাইটটি রাশিয়ার অনুকূলে মনে হবে, সেটাকেই গ্রহণ করা হবে।
ISS থেকে নাম প্রত্যাহারের কারণ:
ROSCOSMOS তাদের ISS থেকে নাম বাতিলের বিষয়টি নিজেদের জন্য ইতিবাচকই মনে করছে। ভ্লামাদির সলোভিভ (রাশিয়ান ISS বিভাগের ফ্লাইট ডিরেক্টর) বলেছেন, “ভবিষ্যতে আমরা কি করব সেটার সিদ্ধান্ত আমাদের এখনই নিতে হবে। এই পর্যায়ের পরেই আমরা মানবসম্পদকে আরো দক্ষ করার কাজ শুরু করে দিব।“ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে রাশিয়ার জন্য এই মিশন বেশ গুরুত্ত্বপূর্ণ।
বর্তমানে ISS এর রাশিয়ান মডিউলগুলো বেশ পুরনো হয়ে গিয়েছে। যেখানে সেগুলোর ডিজাইন করা হয়েছে ১৫ বছরের কার্যক্ষমতার জন্য, সেখানে তারা ২৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। এই কারণে মহাকাশচারীরা এটির রক্ষণাবেক্ষণে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছে। যার ফলে গবেষণা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত এতসব কারণেই রাশিয়ার ISS থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত।
এছাড়াও রাশিয়া চাঁদ-ভিত্তিক দিকনির্দেশনা থেকেও নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে, তবে ২০২৫ সালে চাঁদে আবারও মানুষ পাঠানোর কাজটি তারা করে যাচ্ছে। মানব মহাকাশ ফ্লাইট প্রোগ্রাম নিয়েও নাসার সাথে রাশিয়ার কাজ চলছে। কিন্তু ISS নিয়ে রাশিয়া আর কোনো মাথা ঘামাবেনা তা মোটামুটি স্পষ্ট।
“এটি এখন প্রকাশ্য যে বিভিন্ন কারণে ISS এর সাথে আমাদের মহাকাশ গবেষণার কাজগুলো ঠিকভাবে চলছে না এবং এগুলো থেকে সঠিক ফলাফল পাচ্ছিনা।“ সলোভিভ জানান, “নতুন মহাকাশ স্টেশনটি মানব মহাকাশযানের একটি নতুন দর্শন স্থাপন করবে।“
রাশিয়ান অরবিটাল সার্ভিস স্টেশনের গবেষণার বিষয়:
সমস্যাগুলো ঠিক কীভাবে সমাধান করা যাবে তা ROSCOSMOS এখনো পরিস্কার করেনি। তবে সলোভিভ জানিয়েছেন পদার্থবিদ্যা, মহাকাশবিজ্ঞান, এস্ট্রোফিজিক্স ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করা হবে। রোবট দ্বারাও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। সব কিছু মাথায় রেখে তিনি জানিয়েছেন, মহাকাশ স্টেশনটি ভবিষ্যতে চাঁদ ও মঙ্গলে ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই সুদূর পরিকল্পনা নিয়েই বর্তমানে ROSS এর কাজ চলছে।
তানভীর আহমেদ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: স্পেস ডট কম