Cold Sores হলো তরলে পরিপূর্ণ লাল ফোস্কা, যা আমাদের দেশে ‘জ্বর ঠোসা’ নামে অধিক পরিচিত। সাধারণত এই রোগটি মুখের কাছাকাছি যে কোন স্থানে হয়। তবে আঙ্গুল, নাকে বা মুখের ভিতরেও হতে পারে। ফোস্কাগুলো বেশ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। সাধারণত এক-দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এ রোগ থাকতে পারে।
জ্বর ঠোসার কারণ: হার্পিস সিমপ্লেক্স নামক এক ধরণের ভাইরাসের সংক্রমণে ‘জ্বর ঠোসা’ হয়ে থাকে। হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস এর দুটি ধরণ রয়েছে। হার্পিস সিমপ্লেক্স টাইপ-১(HSV-1) সাধারণত Coled Sores বা জ্বর ঠোসা রোগের জন্য দায়ী। হার্পিস সিমপ্লেক্স টাইপ-২ যৌনাঙ্গে প্রদাহ সৃষ্টি করে। তবে টাইপ-২ দ্বারাও মুখের ক্ষত হতে পারে।
জ্বর ঠোসা’র যে ক্ষতগুলো দৃশ্যমান সেগুলো মারাত্মক সংক্রামক। মুখের ভেতরের অদৃশ্য ক্ষতগুলিও একস্থান থেকে অন্যত্র রোগ ছড়াতে পারে। তাই ভাইরাস যুক্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে রোগের বিস্তার ঘটার তীব্র ঝুঁকি রয়েছে। আক্রান্ত স্থান স্পর্শ, চুম্বন ইত্যাদিতে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও ব্যক্তিগত সামগ্রী যেমন রেজার, টুথব্রাশ ইত্যাদি একাধিক ব্যক্তির ব্যবহার, একই পাত্রে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ- এসব কাজে ভাইরাস সংক্রমিত হবার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
উপসর্গ: Cold Sores বা জ্বর ঠোসা দৃশ্যমান হবার কদিন আগে থেকেই ঠোঁটের উপরে পুড়ে যাওয়ার মতো সংবেদনশীলতা অনুভূত হয়। চিকিৎসা নেবার এটাই উপযুক্ত সময়। সাধারণত ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ২০ দিন পর প্রথম ঘা দেখা যায়। একবার ঘা দেখা দিলে সেখানে তরলে পূর্ণ লাল ফোস্কা দেখা দিবে। স্পর্শে এগুলো ব্যথা ও চুলকানি অনুভূত হয়। এছাড়াও সংক্রমণের সময় জ্বর, শরীর ব্যথাসহ দু একটা লক্ষণ থাকতে পারে। আতঙ্কের বিষয়, চোখে উপসর্গ দেখা দিলে তা জটিলতা তৈরি করতে পারে; এমনকি দৃষ্টিহীনতাও ঘটতে পারে। তাই চোখে ঘা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
জ্বর ঠোসা’র পর্যায়: এই রোগের প্রায় পাঁচটি পর্যায় রয়েছে।
- তরলে পূর্ণ লাল ফোস্কা দেখা দিবে।
- ফোস্কা ফেটে যাবার ২৪ ঘণ্টা আগে থেকেই জায়গাটি চুলকাতে থাকবে।
- ফোস্কা ফেটে যাবে, তরল গড়িয়ে পড়বে।
- ক্ষত শুকিয়ে যাবে এবং শিরশিরে অনুভূতি নিয়ে ক্ষতের উপর একটি পাতলা স্তর পড়বে।
- স্তরটি ঝরে যাবে ও ক্ষত নিরাময় হবে।
ঝুঁকি ও জটিলতা: একবার এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা কখনোই নিরাময় করা যায় না। তবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অর্থাৎ আক্রান্ত স্থান শুকিয়ে গেলে বুঝতে হবে ভাইরাসটি এখন সুপ্তাবস্থায় আছে। এইডস আক্রান্তদের জন্য এ ভাইরাসে বারবার সংক্রমিত হবার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও একজিমা রোগী, কেমোথেরাপি নেয়া ব্যক্তিরা, বয়স্ক লোক এবং সর্বোপরি যাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল, তারা পুনঃসংক্রমিত হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাই দুর্বল রোগীদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
‘জ্বর ঠোসা’ রোগের চিকিৎসাঃ মনে রাখতে হবে এ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূলের এখনও কোন প্রতিষেধক নেই। তবে রোগমুক্ত থাকার অনেক উপায় আছে। প্রতিকার সাধারণত দুইভাবে করা যায়। মলম বা ক্রীমের মাধ্যমে ও খাবার ওষুধ দ্বারা।
- মলম বা ক্রীম: ভাইরাসরোধী মলম Penciclovir (Denavir) ক্ষতের ব্যথা নিরাময় ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ঘা প্রথম দেখা দেবার পরপরই মলম প্রয়োগ করলে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়। আরেকটি মলম Docosanol (Abreva) যা একটি ওভার-দ্য-কাউন্টার ক্রীম। এটিও রোগের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে দিতে বেশ কার্যকরী।
- খাবার ওষুধ: মুখে খাবার ওষুধ যেমন, Acyclovir (Zovirax),
Valacyclovir (Valtrex), Famciclovir (Famvir) ইত্যাদি জ্বর ঠোসা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এগুলো গ্রহণ উচিৎ নয়। সাধারণত রোগের মাত্রা বেশি হলে ডাক্তারগণ এই ওষুধ দিয়ে থাকেন।
বাড়ির প্রতিষেধক: দ্রুত নিরাময়ের জন্য প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা বাড়িতে তৈরি প্রতিষেধক দারুণ কার্যকরী।
- ঘা এর উপর বরফ বা জলে ভেজা পরিষ্কার কাপড় চেপে ধরলে ব্যথা দূর হয়।
- অ্যালোভেরার ঠাণ্ডা জেল ক্ষতে ত্রাণ এনে দিতে পারে।
- ঠোঁটে ব্যবহৃত পেট্রোলিয়াম জেলি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি ক্ষত সারিয়ে তুলবে না তবে ফোস্কা হঠাৎ ফেটে যাওয়া রোধ করবে এবং বাহ্যিক অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু থেকে রক্ষা করবে।
- প্রাকৃতিক হেজেল এর দারুণ অ্যান্টিভাইরাল ক্ষমতা আছে। ঘা শুকাতে ও নিরাময়ে এটি কার্যকরী। তবে প্রয়োগের পর এটি কামড়ে ধরতে পারে।
বাড়ির প্রতিষেধক (ক্রীম, মলম, জেল) অবশ্যই পরিষ্কার কটন বা কাপড় দ্বারা প্রয়োগ করতে হবে।
আক্রান্ত হবার পর করণীয়: যেহেতু রোগটি সংক্রামক তাই সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধুতে হবে। মুখ স্পর্শ করে এমন কিছু কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না। সূর্যালোকে যাবার আগে zinc oxide লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে। যথাসম্ভব শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে।
মো. মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ হেলথলাইন.কম
আপনার অনুভূতি কী?
+1
3
+1
1
+1
0
+1
1
+1
1
+1
0
+1
1